আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সোডিয়ামের প্রাণরাসায়নিক কাজ , যা খনিজ পদার্থ অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
সোডিয়ামের প্রাণরাসায়নিক কাজ
উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনধারণে যে কয়টি মৌল বা উপাদান জড়িত তার মধ্যে সেডিয়াম অন্যতম। সাধারণ খাদ্য লবণে সোডিয়াম
সবচেয়ে সঠিক উপায়ে পাওয়া যায়।
১। রক্তরস (Blood plasma) এবং বিভিন্ন জীবকোষ আবরণের বহিঃস্থ তরলে Na আয়ন-ই হলো প্রধান ক্যাটায়ন। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতিদিন তার খাবার থেকে প্রায় কয়েক গ্রাম Na* আয়ন গ্রহণ করে। ঘামের মাধ্যমে শরীরে লবনের সাম্যতা বজায় থাকে।
অতিরিক্ত Na আয়ন গ্রহণ করলে তা ঘামের সাথে বেরিয়ে যায়, কিন্তু অন্যান্য কোনো আয়ন- এভাবে নির্গত হয় না। তবুও খাবারের সাথে প্রতিদিন অতিরিক্ত খাদ্যলবণ গ্রহণ করলে তা উচ্চ রক্ত চাপের কারণ হতে পারে।
২। Na জীবকোষের বহিঃস্থ তরলের অসমোটিক চাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত কোষকলাসমূহের মাঝখানে পানির পরিমাণ সঠিক রাখে।
৩। Na* জীবকোষে বাইকার্বোনেট বাফার সিস্টেমের মাধ্যমে কোষের বহিঃস্থ তরলের অ্যাসিড-ক্ষার মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ
করে।
৪। স্নায়ু ও মাংসপেশির সংবেদনশীলতা ও হার্ট এর কাজ স্বাভাবিক রাখার জন্য সঠিক ঘনমাত্রার Na’ আয়নের উপস্থিতি আবশ্যক।
৫। Na* দেহে অম্ল-ক্ষার ভারসাম্য রক্ষায় অংশ নেয়।
৬। Na’ বহিঃকোষীয় তরলের প্রধান ইলেকট্রোলাইট হিসেবে স্বাভাবিক অভিস্রবণ চাপ ও পানিসাম্য বজায় রাখে।
৭। Na” কোষপর্দার ভেদ্যতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাচক রস ক্ষরণের জন্য নির্দিষ্ট pH মান রক্ষা করে। ৮। আন্তঃকোষীয় ও বহিঃকোষীয় তরলের ইলেকট্রোলাইট পার্থক্য রক্ষা করে।
ম্যাগনেশিয়ামের প্রাণরাসায়নিক কাজ
দেহের প্রধান দুইটি দ্বিযোজী (bivalent) ধনাত্মক আয়নের (cation) মধ্যে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ অস্থি, দম্ভ প্রভৃতি কঠিন কলায় ও কোষবহির্ভূত রসে (extracellular fluid) ক্যালসিয়ামের তুলনায় কম।
কিন্তু আবরক কলা, পেশি প্রভৃতি কোমল কলায় ক্যালসিয়ামের তুলনায় বেশি। নিম্নে কয়েকটি রস ও কলার প্রতি 100 গ্রাম বা 100 মিলিলিটারে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ দেয়া হলো-
১। ম্যাগনেশিয়াম এনজাইমের সক্রিয়তা আনে অর্থাৎ এটি একটি কো-ফ্যাক্টর। মানবদেহের অধিকাংশ এনজাইম যেমন পাইরিডক্সিন কাইনেজ, হেক্সোকাইনেজ, এনোলেজ, অ্যাসেটাইল-CoA, থায়োকাইনেজ প্রভৃতি বহু এনজাইমের ক্রিয়ার জন্য সহায়ক উপাদান বা কো-ফ্যাক্টর (cofactor) হিসেবে ম্যাগনেশিয়াম আয়নের প্রয়োজন।
২। ম্যাগনেশিয়াম আয়ন নিউক্লিক অ্যাসিডের ত্রিমাত্রিক কাঠামোকে সুস্থিত রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ৩। ম্যাগনেশিয়াম আয়নসহ আরো তিনটি আয়ন কোষের অভিস্রবণ ক্রিয়া ও দেহের অ্যাসিড অম্ল সাম্যতা নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। ক্যালসিয়ামের মতোই ম্যাগনেশিয়াম আয়ন দেহে পেশি ও নার্ভের উদ্দীপনশক্তি (excitability) ও উত্তেজনা হ্রাস করে।
এক্ষেত্রে ম্যাগনেশিয়ামের ক্রিয়া সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের বিপরীত। ৫। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন C বিপাকে ম্যাগনেশিয়ামের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে।
৬। ম্যাগনেশিয়াম মাংসপেশির কার্যকলার নিয়ন্ত্রণ করে। ৭। হৃদস্নায়ুর কার্য নিয়ন্ত্রণ দ্বারা হৃদগতি বজায় রাখতে ম্যাগনেশিয়াম কাজ করে।
৮। রক্ত শর্করা থেকে শক্তি নির্গমনে ম্যাগনেশিয়াম অংশগ্রহণ করে।
৯। অস্থি ও দন্তের গাত্রে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট ঘটিত অ্যাপাটাইট যৌগে ম্যাগনেশিয়ামও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বর্তমান।
আরও পড়ূনঃ