ধান থেকে মুড়ি তৈরি অনুশীলন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ধান থেকে মুড়ি তৈরি অনুশীলন। মুড়ি হলো একপ্রকারের ভাজা চাল যা বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকায় প্রচলিত একটি জনপ্রিয় খাদ্য। এটি সাধারণত স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া হয় এবং নানা রকম চাট, ভর্তা, বা ঝালমুড়ি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। মুড়ি হালকা, সহজপাচ্য এবং স্বল্প ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় এটি বেশ স্বাস্থ্যসম্মত একটি খাবার হিসেবেও বিবেচিত।

 

মুড়ি
মুড়ি

 

ধান থেকে মুড়ি তৈরি অনুশীলন

দেশীয় পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরি :

চাল থেকে যত খাদ্য উৎপন্ন হয় তার মধ্যে মুড়ি অন্যতম। মুড়ি একটি মজাদার ও পুষ্টিকর খাবার। মুড়ির পুষ্টিমান চালের মতোই। মুড়ি থেকে মোয়া, মুড়কি, ঝালমুড়ি, মিষ্টি মুড়ি ইত্যাদি খাবার তৈরি করা যায়।

 

ধান থেকে মুড়ি তৈরি অনুশীলন

 

উপাদান:

১. ১০ কেজি ধান

২.৭৫ গ্রাম লৰণ

৩. ৩-৪ কেজি শুকনা বালু

৪. ধান ভিজানো, সিদ্ধ ও লবণের দ্রবণের জন্য পানি।

 

মুড়ি ভাজা
মুড়ি ভাজা

 

মুড়ি তৈরি করার জন্য নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

১) পরিপক্ব ও রোগমুক্ত ধান পরিষ্কার করে নিতে হবে।

২) ধানকে দুই পর্যায়ে সিদ্ধ করতে হবে প্রথমে বড় পাত্র বা সসপ্যানে ধান নিয়ে কিছু বেশি পরিমাণ পানি দিয়ে 70°C তাপমাত্রায় ২০ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে।

৩) ধান ২০ মিনিট পর্যন্ত অল্প সিদ্ধ করে চুলা থেকে নামিয়ে গরম পানিসহ ১২ ঘণ্টা বা ১ রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।

৪) ভিজানো ধানের পানি ঝরিয়ে আবারও অল্প পরিমাণ পানি নিয়ে ধান ফেটে যাওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ করতে হবে।

৫) সিদ্ধ ধান চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ৩-৪ ঘণ্টা রোদে শুকিয়ে ছায়ায় ঠাণ্ডা করতে হবে।

৬) পরদিন ধান এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে ধানের আর্দ্রতা ২০% এ নেমে আসে। পরীক্ষার জন্য
ধানের চাল বের করে চিবুলে শক্ত ও মৃদু কট শব্দ হবে।

৭) এরপর শুকিয়ে ঠাণ্ডা করে ঢেঁকিতে বা কলে ভেঙে মুড়ির চাল তৈরি করতে হবে।

৮) মুড়ি তৈরির জন্য দুই চুলায় একসাথে চাল ও বালু গরম করতে হবে। বড় মুখওয়ালা মাটির ছোট পাতিলে ৫০০ গ্রাম চাল এবং বড় পাতিলে প্রায় ১.৫-২ কেজি বালু নিতে হবে। চাল গরম করার সময় চালের সাথে ১ টেবিল চামচ লবণ দ্রবণ (৩০% লবণ ও ৭০% পানি) মিশাতে হবে।

৯) লবণ মিশানোর সাথে সাথে চাল ঘন ঘন নাড়তে হবে। যাতে সমস্ত চালের সাথে লবণ পানি মিশে যায় এবং চাল সমভাবে ভাজা হয়।

১০) বালু ঠিকমতো গরম হয়েছে কিনা তা পাটখড়ি দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। এজন্য একটি পাটখড়ি গরম বালুতে চেপে ধরলে সামান্য ধোঁয়া উঠবে এবং খড়ির আগা কালচে হবে। এরূপ অবস্থা হলে বুঝতে হবে যে বালির তাপমাত্রা 250°C-270°C হয়েছে।

১১) চাল ২/১টি ফুটে উঠলে অন্য পাত্রের বালুতে চাল ঢেলে ঘন ঘন নাড়তে হবে।

১২) গরম বালির মধ্যে সমস্ত চাল দেওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যে চাল ফুটে মুড়ি তৈরি হবে। তারপর বালুসহ মুড়ি ঝাঁঝারিতে ঢেলে শলার ঝাটার সাহায্যে নাড়াচাড়া করে বালি পরিষ্কার করতে হবে ।

১৩) ঝাঝরি একটু ঝাঁকি দিলে ছিদ্রের মধ্য দিয়ে সমস্ত বালু নিচে পড়ে যাবে। তারপর এ মুড়ি গামলায় নিয়ে ঠাণ্ডা করে পলিব্যাগে প্যাকেট করে বাজারজাত করতে হবে।

 

ধান থেকে মুড়ি তৈরি অনুশীলন

 

চিত্র : মুড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ

 

আধুনিক পদ্ধতি : মেশিনে মুড়ি তৈরি পর্যবেক্ষণ ও কারখানা পরিদর্শন:

প্রাসঙ্গিক তথ্য :

মুড়ি তৈরির কারখানা দুইটি অংশে বিভক্ত থাকে। যথা ডায়াল ও রোস্টার ।ডায়ালে প্রায় ১৫টি বড় বড় পাতিল একিট লৌহদণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে। হাতলের মাধ্যমে এ পাতিলগুলো ঘুরানো যায় এবং এতে গ্যাস লাইনের চুলা সংযুক্ত থাকে।

 

মুড়ি তৈরির পদ্ধতি :

১) প্রথমে প্রতিটি পাতিলে ৫০ কেজি বা এক বস্তা করে মুড়ি তৈরির চাল ঢালা হয় ।

২) ১টি মগে এক লিটার লবণ পানি তৈরি করা হয়।

৩) প্রথমে ১৫ মিনিট এই লবণ পানি ঘুরন্ত হাতলের মাধ্যমে ১৫টি পাতিলে দিয়ে চুলায় জ্বাল দিতে হয়।

৪) পরবর্তী ৪৫ মিনিট হাতলের সাহায্যে লবণ পানি ও চাল ভাল করে মিশানো হয়।

৫) ১ ঘন্টা পর চাল মুড়ি হওয়ার উপযোগী হলে তা ছোট বলে করে উঠিয়ে রোস্টারের ভিতর দিতে হয়।

৬) ১ মিনিটে রোষ্টারের মধ্যে মুড়ি তৈরি হয়ে যায়।

৭) বের হবার সময় মুড়ি ও বালু আলাদা আলাদা দুই জায়গায় পতিত হয়।

৮) এভাবে ১৫X৫০= ৭৫০ কেজি মুড়ি অতি অল্প সময়ে উৎপাদন করা সম্ভব। (১৫টি ডায়ালের প্রতিটিতে ৫০ কেজি করে মোট ৭৫০ কেজি)

 

মুড়ি
মুড়ি

 

সতর্কতা:

১) বালু গরম হয়েছে কিনা তা সঠিকভাবে নিশ্চিত থেকে হবে।

২) মুড়িতে যেন বালু না থাকে তা লক্ষ্য করতে হবে।

 

ঝাল বাদাম মুড়ি
ঝাল বাদাম মুড়ি

 

আরও দেখুন : 

 

ধান থেকে মুড়ি তৈরি অনুশীলন

Leave a Comment