প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ । ফুড প্রসেস প্ল্যান্ট লে-আউট অ্যান্ড ডিজাইন

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ । বেশিরভাগ খাবারকে ভোজ্য করার জন্য প্রাথমিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয় যখন সেকেন্ডারি ফুড প্রসেসিং উপাদানগুলিকে পণ্যের মতো পরিচিত খাবারে পরিণত করে, যেমন রুটি। টারশিয়ারি ফুড প্রসেসিংয়ের ফলে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন পণ্যে পরিণত হয় এবং মেটাবলিক রোগ যেমন, স্থূলতা এবং অটোইমিউন রোগ সহ বেশিরভাগ অ-তীব্র প্রদাহজনিত রোগে অবদান রাখার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।

এই অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের মতো পণ্যগুলিতে যুক্ত করা মানবসৃষ্ট রাসায়নিক এবং প্রিজারভেটিভ থাকে যা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে না এবং/অথবা হাইব্রিডাইজড এবং/অথবা জেনেটিকালি ম্যানিপুলেটেড উদ্ভিদ যেমন চিনি, কর্ন সিরাপ এবং বীজের তেল থেকে সহজে বের করা হয় এবং অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলির সাথে মিলিত হয়। ফাইবার যোগ করা একটি অস্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করে যেমন পণ্যের ফলে মানুষ এবং খামারের প্রাণীদের বিপাকীয় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়।

Table of Contents

প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ

৬.১ রক্ষণাবেক্ষণের সংজ্ঞা (Definition of maintenance) :

রক্ষণাবেক্ষণ হলো এমন এক ধরনের কাজ (Function), যা কোনো ভৌত স্থাপনা বা প্ল্যান্টকে কার্যকরীভাবে সচল রাখতে সমর্থ হয়। যে-কোনো প্ল্যান্ট বা যন্ত্রপাতি স্থাপন বা সংগ্রহ করে কেউ-ই বলতে পারে না যে, এটা কখনো ভাঙ্গবে না বা নষ্ট হবে না। কালের বিবর্তন, পরিবেশগত অবস্থা ও ব্যবহারের কারণে প্ল্যান্ট কিংবা মেশিন, বিল্ডিং এবং অন্যান্য সম্পদ প্রকৃতই দিন দিন নষ্ট হয়ে যায়।

যন্ত্রপাতি বা সম্পদের এ ক্ষয়িষ্ণুতা যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবহারিক বিধি (Operating manual) অনুসরণ করে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। অতএব, মেশিন, যন্ত্রপাতি বিল্ডিং ও অন্যান্য সম্পদের নষ্ট বা ক্ষয় হয়ে যাবার প্রবণতা কমানো ও সীমিত করার জন্য এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষীয় নির্দেশনা অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাকে রক্ষণাবেক্ষণ (Maintenance) বলে। শিল্পকারখানায় কার্যকরী উৎপাদন এবং ভৌত সম্পদের যথাযথ নিরাপত্তা সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল।

 

প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ

 

 

ব্যাপক অর্থে রক্ষণারেক্ষণ হলো এমন এক গুরুদায়িত্ব, যা ভূমির যত্ন, ইমারতের রংকরণ, রুফিং (Roofing) এবং মেরামত, জানালা পরিষ্কারকরণ, সরঞ্জামাদি তৈলাক্তকরণ, মেরামত এবং পিচ্ছিলকরণ, আলোর বাল্ব পরিবর্তনকরণ, ইত্যাদি কাজগুলো যথাযথ আঞ্জাম দিয়ে থাকে। সাধারণত অদক্ষ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক্স, কারখানা শ্রমিক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, বৈদ্যুতিক শ্রমিক প্রভৃতির বেলায় রক্ষণাবেক্ষণ কার্য দরকার হয়।

বৃহৎ প্লান্টের ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কায়ে প্রায়ই আলাদা রক্ষণাবেক্ষণ শপ (Maintenance shop), টুল রুম (Tool room) এক ভাণ্ডার কক্ষ (Store room) মেরামতের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।কার্যকরী রক্ষণাবেক্ষণ যে-কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দক্ষতাপূর্ণ অপারেশন ও অবিরাম উৎপাদনের পূর্বশর্ত। শিল্পকারখানার ভৌত অবকাঠামো প্রকৃতি তথা রৌদ্র, বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, শৈত্য, তাপ ইতাদি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, আবার কলকজা ও সরঞ্জামাদি ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন কাঙ্ক্ষিত ও অনাকাক্ষিত কার্যকরণের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ক্ষতি একেবারে বন্ধ করা সম্ভন নয়। তবে কার্যকরী রক্ষণাবেক্ষণ ক্ষতির হার বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারে। তাই প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

৬.২ প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণের প্রকারভেদ (Types of plant maintenance) :

একটি প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর ও সুচারুরূপে পরিচালনের সুবিধার্থে প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়াকে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

১। অনুসূচিকৃত রক্ষণাবেক্ষণ (Scheduled maintenance)

২। পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ (Planned maintenance)

৩। ব্রেক ডাউন রক্ষণাবেক্ষণ (Breakdown maintenace)

৪। মূলধন পরিবর্তন রক্ষণাবেক্ষণ (Capital replacement maintenance) ।

১। অনুসূচিকৃত রক্ষণাবেক্ষণ (Scheduled maintenance) : কোনো পূর্বনির্ধারিত তারিখ বা সময় অনুযায়ী কলকারখানা ব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন (Inspection), ওভারহেড লুব্রিকেশন (Overhead lubrication) বা কোনো বিশেষ যন্ত্র বা মেশিনকে সার্ভিসিং করার পদ্ধতিকে অনুসূচিকৃত রক্ষণাবেক্ষণ (Scheduled Maintenace) বলে। মেশিনপত্র ওভারহলিং, ফুয়েল কিংবা পানির ট্যাংব পরিষ্কারকরণ, বিল্ডিং চুনকাম করা প্রভৃতি কার্য অনুসূচিকৃত রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্গত।

২। পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ (Planned maintenance) : প্ল্যান্টের মধ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি হঠাৎ ভেঙ্গে যাওয়া বা ত্রুটি মেরামতের জন্য জরুরিভাবে বন্ধ করে দেয়া থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ একটি সংগঠিত প্রয়াস। এটা দুটি
উপায়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে-

(ক) প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণ (Preventive maintenance)

(খ) দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ (Long term maintenance) ।

(ক) প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণ (Preventive maintenance): প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া সাধারণত পূর্বপ্রস্তুতিমূলক রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া প্রধানত সম্পদের অকেজো হওয়া, উৎপাদন ব্যাহত হওয়া অথবা অযাচিত সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। পর্যায়ক্রমে পরিষ্কার করা, সার্ভিসিং করা (লুব্রিকেটিং তেল বদলানো, গিয়ার অয়েল দেয়া, গ্রিজ দেয়া ইত্যাদি) পরীক্ষা করা, ক্ষয়প্রাপ্ত ও ভাঙ্গা যন্ত্রাংশসমূহের মেরামত বা পরিবর্তন ইত্যাদি এই রক্ষণাবেক্ষণের আওতাভুক্ত।

(খ) দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ (Long term maintenance) : দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর মেশিন বা যন্ত্রাংশের অকেজো হওয়া অংশ পরিবর্তন, পরিবর্ধনজনিত মেরামতি কার্যকে দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ বলে। প্রতিটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে নির্দেশিকা (Manual) সরবরাহ করে থাকে। এসব নির্দেশিকায় কোন যন্ত্রাংশ কতদিন পর পরিবর্তন প্রয়োজন বা মেরামত প্রয়োজন তার উল্লেখ থাকে। নির্দেশিকা (Manual) অনুযায়ী দীর্ঘদিন পর কোনো যন্ত্রাংশের বা সরঞ্জামাদির স্বল্পতম মেরামতজনিত কাজই দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ।

৩। ব্রেক ডাউন রক্ষণাবেক্ষণ (Breakdown maintenance)। কোনো বিশেষ সার্ভিসিং কাজে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামত কার্যকে ব্রেক ডাউন রক্ষণাবেক্ষণ বলে। এতে ওভার টাইম-জনিত ব্যয় এবং কারখানা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, কোনো যন্ত্রপাতি হঠাৎ নষ্ট হলে তাকে মেরামত করে কার্যোপযোগী করাই হলো ব্রেক ডাউন রক্ষণাবেক্ষণ।

৪। মূলধন পরিবর্তন (Capital replacement) : যখন কোনো মেশিন বা যন্ত্রপাতি মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণজনিত ব্যয় এমন পর্যায়ে হয় যে, উক্ত মেশিন বা যন্ত্রপাতি মেরামতজনিত ব্যয় সেটি ক্রয় করার সমপর্যায়ে এসে দাঁড়ায় অথবা উক্ত মেশিনের এই ব্যয় বহুল ব্যবহারের পরেও সন্তোষজনক সার্ভিস পাওয়া না যায় তখন উক্ত মেশিন বা যন্ত্রকে পরিবর্তন করাই উত্তম। এরূপ ক্ষেত্রে নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত মেশিন বা যন্ত্রপাতি মেরামত না করে ক্রয় করে প্রতিস্থাপনকরণকেই মূলধন পরিবর্তন (Capital replacement) বলে।

রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামত খরচ যদি নতুন ইউনিট বসানোর খরচের কাছাকাছি বা বেশি হয় এবং যখন সংশ্লিষ্ট মেশিন দ্বারা আকাক্ষিত গুণাগুণসমৃদ্ধ দ্রব্য উৎপাদন করা যায় না তখন অবশ্যই এগুলো পরিবর্তন করে নতুন ইউনিট স্থাপন করা উচিত। অতএব, বিনষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামত করলেও যদি আর্থিক দিয়ে লাভজনক কিংবা কাম্য লক্ষ্য অর্জিত না হয়, সেক্ষেত্রে নতুন যন্ত্রপাতি বসানোর জন্য মূলধনের যে বিনিয়োগ কার্য, তাকে মূলধন পরিবর্তন (Capital replacement) বলে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা প্রতীয়মান হয় যে, পরিকল্পিত প্রতিরোধমূলক রক্ষণাবেক্ষণ প্ল্যান্টের কাম্য লক্ষ্য অর্জনের জন্য তুলনামূলকভাবে উত্তম।

৬.৩ প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্য (Objectives of plant maintenance) :

প্ল্যান্টকে অপটিমাম গতিতে পরিচালনার লক্ষ্যে পূর্বপ্রস্তুতিমূলক প্রতিরক্ষা কার্যক্রমই রক্ষণাবেক্ষণ নামে অভিহিত। এ রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া যে-সব উদ্দেশ্যে নেয়া হয়ে থাকে তা নিম্নে দেয়া হলো:

১। গ্রাহক বা ক্রেতার অনুসূচি (Schedule) অনুযায়ী প্রোডাক্ট বা সেবার সরবরাহ নিশ্চিত করা।

২। উৎপাদিত পণ্য বা সেবার স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা।

৩। কারখানার ভৌত কাঠামোসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতিকে সর্বোচ্চ কার্যক্ষম রাখা।

৪। মেশিন ও যন্ত্রপাতির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

৫। মেশিনের কার্যকরী আয়ুষ্কাল দীর্ঘায়িত করা।

৬। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমিয়ে এনে কারখানার ওভারহেড খরচ কমানো।

৭। মেশিনসমূহের মেরামতের জন্য ডাউন টাইম (Down time) সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা।

৮। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মেশিন টুলসমূহের সংস্কার ও পরিবর্তন আনয়ন করা।

৯। প্রয়োজনে নতুন যন্ত্রপাতি ও ইউনিটের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

১০। বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা অপচয় হতে প্ল্যান্টকে পূর্বসতর্কতামূলক পূর্বাভাস প্রদান করা।

৬.৪ প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব (Importance of plant maintenance) :

নিম্নোক্ত কারণে প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম:

১। প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব প্ল্যান্ট ও তার উৎপাদনের ধরন ও উৎপাদিত পণ্যের ধরনের সাথে পরিবর্তিত হয়।

২। যন্ত্রপাতি বিকল (Equipment breakdown) হওয়ার ফলে উৎপাদনের অনিবার্য ক্ষতিসাধন হয়। অর্থাৎ যদি উৎপাদনশীল ফ্যাক্টরির প্রোডাকশন লাইনের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়, তবে তৎক্ষণাৎ সমগ্র প্রোডাকশন লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে ফল্ট/নষ্ট যন্ত্রাংশ মেরামত না করা পর্যন্ত অন্যান্য উৎপাদন লাইনও বন্ধ হতে পারে।

৩। এর ফলশ্রুতিতে উৎপাদনশীলতার তাৎক্ষণিক ক্ষতিসাধিত হয় এবং আউটপুট প্রতি ঘন্টায় কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হ্রাস পায়।

৪। যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া বা অবহেলিত একটি ফুড প্ল্যান্ট/প্ল্যান্ট খুব শীঘ্রই বা পরবর্তীতে বায়বহুল বা ঘন ঘন মেরামতের প্রয়োজন হবে কারণ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সকল মেশিন বা অন্যান্য সুবিধাদি (যেমন, পরিবহণ সুবিধা),
বিল্ডিং, ইত্যাদির যথাযথ কাজ করার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

৫। প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ উৎপাদন ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য/তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে কারণ প্ল্যান্ট বা প্ল্যান্টের যন্ত্রপাতি ভেঙ্গে গেলে বা নষ্ট হলে নিম্নোক্ত সমস্যা সৃষ্টি করে, যথা-

⇒ উৎপাদন সময় নষ্ট করে (Loss in production time)

⇒ উৎপাদন পুনঃনির্ধারণ করতে হয় (Rescheduling production)

⇒ উপকরণ নষ্ট করে (Spoils materials)

⇒ ওভারহেডস পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হয় (কারণ শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়)

⇒ অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন (Need for overtime)

⇒ অয়ী কাজের ঘাটতিতে কর্মীদের বিকল্প কাজ প্রয়োজন।

৬.৫ ব্রেক ডাউন রক্ষণাবেক্ষণ ও অনুসূচিকৃত রক্ষণাবেক্ষণ (Breakdown maintenance & scheduled maintenance) :

ব্রেক ডাউন রক্ষণাবেক্ষণ (Breakdown maintenance): কোনো বিশেষ সার্ভিসিং কাজে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে ⑤ রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামত কার্যকে ব্রেক ডাউন রক্ষণাবেক্ষণ বলে। এতে ওভার টাইম-জনিত ব্যয় এবং কারখানা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, কোনো যন্ত্রপাতি হঠাৎ নষ্ট হলে তাকে মেরামত করে কার্যোপযোগী করাই হলো ব্রেক ডাউন রক্ষণাবেক্ষণ।

অনুসূচিকৃত রক্ষণাবেক্ষণ (Scheduled maintenance) : কোনো পূর্বনির্ধারিত তারিখ বা সময় অনুযায়ী কলকারখানা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন (Inspection), ওভারহেড লুব্রিকেশন (Overhead lubrication) বা কোনো বিশেষ যন্ত্র বা মেশিনকে সার্ভিসিং করার পদ্ধতিকে অনুসূচিকৃত রক্ষণাবেক্ষণ (Scheduled maintenace) বলে। মেশিনপত্র ওভারহলিং, ফুয়েল কিংবা পানির ট্যাংক পরিষ্কারকরণ, বিল্ডিং চুনকাম করা প্রভৃতি কার্য অনুসূচিকৃত রক্ষণাবেক্ষণের অন্তর্গত।

৬.৬ প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রিডিকটিভ বা আগাম রক্ষণাবেক্ষণ (Perventive maintenance & predictive maintenance) :

❑ প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণ (Preventive maintenance) :

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, “Prevention is better than cure”, অর্থাৎ “আরোগ্য লাভের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক ভালো” এ প্রবাদটি সর্বক্ষেত্রে বিশেষ করে শিল্পোৎপাদনীয় প্ল্যান্ট বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ববহ। একটি প্ল্যান্ট পর্যায়ক্রমে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন করা, সার্ভিসিং করা অর্থাৎ লুব্রিকেটিং তৈল বদলানো, গিয়ার অয়েল প্রদান, গ্রিজ দিয়ে সচল করা প্রভৃতি কার্য এবং পরীক্ষ করা (Inspection), ক্ষয়প্রাপ্ত বা ভাঙ্গা যন্ত্রাংশ মেরামত (Repair) বা পরিবর্তন (Restall) ইত্যাদি প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণ কার্যে আওতাভুক্ত।

প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণ বলতে একটা পূর্বপ্রস্তুতিমূলক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যাংশকে বুঝায় যাতে কোনো যন্ত্রাংশ অনাকাঙ্কিত আচরণ চরে উৎপাদনের গতি ব্যাহত করতে না পারে। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা যাতে বিঘ্নিত না হয়, কিংবা উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হওয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে রুটিনমাফিক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করা হয়।

এ লক্ষ্যে কোনো পর্যায়ক্রমিক ঘূর্ণায়নশীল পার্টসের মধ্যে এব্রিকেটিং অয়েল, গ্রিজ, তেল ইত্যাদি প্রয়োগ করে উক্ত পার্টসের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি ও যন্ত্রপাতির নিরাপদ কার্য নিশ্চিত করা যায়। পরিদর্শন কার্যের দ্বারা যন্ত্রপাতির কোনো ত্রুটি চিহ্নিত করে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার পূর্বেই উক্ত যন্ত্রপাতিকে মেরামত কিংবা পরিবর্তন করে উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা যায়। এতে মেশিন যন্ত্রপাতি কিংবা এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীর অযাচিত জীবন ঝুঁকির হাত থেকে নিরাপদ থাকে এবং প্ল্যান্ট বড় ধরনের অপচয় বা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। তাই প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম।

প্রতিরোধী রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্য: ছোটোখাটো মেরামতের মাধ্যমে প্ল্যান্টকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যায়।

প্রিডিকটিভ বা আগাম রক্ষণাবেক্ষণ (Predictive maintenance) :

কার্যকর যন্ত্রপাতির অবস্থা মূল্যায়ন করার জন্য এ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। প্রথমত, যে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে অকার্যকর হতে পারে তা চিহ্নিত করা হয়। তারপর সেটি মেরামত বা রিপ্লেস করার ব্যবস্থা করা হয়।

সুবিধা (Advantages) !

১। সময় কমায় এবং যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে সহায়ক হয়।

২। উৎপাদন সময় কমায়।

৩। খুচরা যন্ত্রাংশের ক্ষতি ও সরবরাহ মালামালের অপচয় কমায়।

 

প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ

 

৬.৭ উত্তম রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তামূলক সাবধানতার নির্দেশিকা (Guidlines for good maintenance & safety precautions) :

যদিও ইন্ডাস্ট্রিতে রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিক ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের, তথাপি প্রত্যেকটি কর্মী ও কর্মকর্তা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করতে পারেন। সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি উৎপাদনের ক্ষতিসাধন করতে পারে অথবা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণ সুবিন্যস্তকরণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থাকবে লিখিত পরিকল্পনা ও লিখিত পদ্ধতি এবং তাদের দেখতে হবে যে, প্রতিটি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সঠিকভাবে তা অনুসরণ করছে কি না। সুবিন্যস্তকরণ ও নিরাপত্তার নিয়মকানুন এবং পদ্ধতি সম্পর্কে কর্মচারীদের যথেষ্ট পরিমাণে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাঝে মাঝে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া ইন্ডাস্ট্রিতে সুবিন্যস্তকরণ ও নিরাপত্তার প্রায়োগিক দিককে এগিয়ে নেবে। তাদের নিম্নলিখিত বিষয় লক্ষ রাখতে হবে:

১। বিপজ্জনক কাজ যেমন বয়লার চালনা, স্টিম চলাচলের পাইপ, রিটর্ট স্টিম কেটলি, চুল্লি ইত্যাদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে কি না।

২। নিরাপত্তা জিগ (Jigs) ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ব্যবহার উপযোগী আছে ও ব্যবহৃত হচ্ছে কি না।

৩। অতি জরুরি বহির্গমন পথ পরিষ্কার আছে বা ঠিকঠাক আছে কি না।

৪। মেঝেতে কোনো অপরিষ্কার সৃষ্টিকারী পদার্থ থাকবে না।

৫। সমস্ত অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা থাকবে।

৬। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার উপস্থিতি থাকবে।

৭। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জমাদি ও ব্যবস্থা সঠিক রয়েছে কি না।

৮। অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বা বস্তুগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে।

৯। কর্মস্থলে প্রয়োজনীয় বস্তুগুলো ঠিকমতো সাজানো রয়েছে কি না।

১০। বিষাক্ত পদার্থগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা আছে অথবা সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না।

বিভিন্ন রং ব্যবহার করে বিপজ্জনক এলাকা দেখানো যেতে পারে। এতে সবাই সাবধান হয়ে চলতে পারে। নিম্নলিখিতভাবে রং ব্যবহার করা যেতে পারে :

বিপজ্জনক (উচ্চবাষ্পীয় চাপ)কমলা রং
বিপজ্জনক (নিম্নবাষ্পীয় চাপ)গাঢ় হলুদ
নিরাপদ বস্তু (যেমন ঠান্ডা পানি)সবুজ
নিরাপদ বস্তু (যেমন গরম পানি)বাদামি
অগ্নিনির্বাপকলাল
প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স বা কক্ষগাঢ় সবুজ
ট্রাফিক লেনসাদা
যন্ত্রপাতি, যা সরানো যাবে নানীল

৬.৭.১ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণ (Cleanliness and sanitation) :

উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি প্রয়োগের ব্যর্থতায় যে-সব ঘটনা ঘটতে পারে সেগুলো হলো-

১। খাদ্যবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব

২। তান্ত খাদ্যসামগ্রীর গুণগত মান ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া

৩। কারখানা বন্ধ হওয়া।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণ অর্থাৎ স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন ব্যবস্থা শুরু হয় কর্মচারী, কারখানা ও কারখানার পারিপার্শ্বিক এলাকা থেকে। কাজেই এ তিনটি বিষয় বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি।

৬.৭.১.১ কর্মচারী (Employees) :

খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সফলতার সাথে স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জড়িত ব্যক্তিবর্গ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের শরীরের উন্মুক্ত অংশ ধৌত করার যাবতীয় সুবিধাদি কারখানায় বিদ্যমান থাকতে হয়। একজন কর্মচারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম সম্পর্কিত বিষয়াদি নিচে উল্লেখ করা হলো:

১। ব্যক্তির শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদ সবসময় সতেজ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়।

২। কাজের সময় সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত পোশাক (ইউনিফর্ম) পরতে হয়।

৩। মাথার চুল টুপি বা জাল দ্বারা ঢেকে রাখতে হয়।

৪। হাত-পায়ের আঙুলের নখ ছোট ও পরিষ্কার রাখতে হয়।

৫। নেইল পলিশ ও গয়না ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকে।

৬। সাবান অথবা ডিটারজেন্ট দ্বারা কাজ শুরুর আগে, ল্যাট্রিন ব্যবহারের পরে অথবা ময়লা স্পর্শ করার পরে হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হয়।

৭। বাইরের জন্য ব্যবহৃত জুতা কারখানা চত্বরে ব্যবহার না করা, বরং কারখানার ভেতরে চলাচলের জন্যে পৃথক জুতা রাখা যেতে পারে।

৮। অসুস্থ অবস্থায় কাজ করা যেতে বিরত থাকতে হয়।

৯। হাই উঠলে বা কাশি আসলে তা ঢেকে রাখতে হয়।

১০। কর্মস্থলে কখনই ধূমপান করা যাবে না।

১১। মারাত্মকভাবে চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কারখানায় কাজ করতে দেয়া যাবে না।

 

ফুড প্রসেস প্ল্যান্ট লে-আউট অ্যান্ড ডিজাইন

 

৬.৭.১.২ মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি (Machinery and equipment) :

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় যে-সব মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি খাদ্যের সান্নিধ্যে আসে সেসবকে প্রতি আট ঘণ্টার শিফটে কমপক্ষে দু’বার পরিষ্কার করতে হবে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে টেবিল, পাত্র, বেল্ট, ছুরি, চাকু বা বাট, হপার, কেটলি, মিক্সিং ট্যাংক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। এসব মেশিনারি বা যন্ত্রপাতির সাথে যদি মাটি বা খাদ্যের অবশিষ্টাংশ লেগে থাকে তবে তা অণুজীবের বৃদ্ধি ও বিষাক্ত পদার্থ সৃষ্টির জন্য উত্তম মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি প্রয়োগে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং পরিষ্কার করার পরও যে-সব অণুজীব বেঁচে থাকে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা বিদূরিত হয়। যন্ত্রপাতি ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে সেগুলোর জীবনকাল বেড়ে যায় এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণও কমে যায়।

কারখানা ঘরের মেঝে ও দেয়াল দিনে কমপক্ষে একবার পরিষ্কার করা দরকার। কিছু পাইপ ও যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত পানির তাপমাত্রা ৫৫০ থেকে ৬০° সে. হওয়া প্রয়োজন। চাপ সহকারে পানি ছেড়ে এবং ব্রাশ ব্যবহার করে যন্ত্রপাতি ও বাসনপত্র পরিষ্কার করা সহজ হয়। পানির সাথে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডিটারজেন্ট একটি অথবা কয়েকটি একসাথে ব্যবহার করা যেতে পারে। অনুমোদিত ডিটারজেন্টগুলো হলো- লাই, সোডা অ্যাশ, সোডিয়াম মেটাসিলিকেট, ট্রাইসোডিয়াম ফসফেট ও পলিফসফেট- এরা ক্ষারধর্মী এবং অ্যাসিডধর্মী ডিটারজেন্ট হচ্ছে হাইড্রক্সি অ্যাসেটিক অ্যাসিড, গ্লুকোনিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যানিভ ইত্যাদি।

অন্যান্য ডিটারজেন্ট ক্ষয়কারী হবে না এবং পানিতে সহজে ধুয়ে যাবে। জীবাণুমুক্তকরণ কাজে যে-সব পদার্থ ব্যবহৃত হয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গরম পানি, প্রবাহিত স্টিম অথবা চাপ সহকারে ব্যবহৃত স্টিম, ক্লোরিন, আয়োডিন এবং এদের উৎপাদসমূহ।

৬.৭.১.৩ কারখানা ঘরের পারিপার্শ্বিক অবস্থা (Surroundings of a plant) :

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ঘরের পারিপার্শ্বিক এলাকা যতদূর সম্ভব আকর্ষণীয় করে রাখতে হবে। কারণ আকর্ষণীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থা সৃষ্টি করে-

১। কর্মচারীর উচ্চ মনোবল এবং

২। কর্মরত ব্যক্তিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মনোভাব।

কারখানা ঘরের পারিপার্শ্বিক এলাকা বাক্স এবং কাঁচা পণ্যের সংরক্ষণ জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয়। অব্যবহৃত মেশিনারি ও যন্ত্রপাতিও এখানে রাখা দৃষ্টিকটু। কারণ এসব জিনিস থাকলে ইঁদুর, সাপ ইত্যাদির আশ্রয়স্থল হিসেবে এরা ব্যবহৃত হতে পারে।

৬.৭.১.৪ আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহার (Waste management, processing and use) :

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় আবর্জনা ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা করার দুটি উপায় আছে।

১। পৌরসভার সুবিধাদি ব্যবহার করা এবং

২। কোম্পানির নিজস্ব সুবিধাদি ব্যবহার করা।

যে-কোনো সুবিধাই ব্যবহার করা হোক না কেন, সব ধরনের ময়লা ও পরিত্যক্ত পদার্থ, যা খাদ্যের সান্নিধ্যে আসতে পারে সেগুলোকে নিশ্ছিদ্র পাত্রে ঢাকনা লাগিয়ে রাখতে হয়। ময়লা বা পরিত্যক্ত পদার্থ ফেলে দেয়ার পর প্রতিটি পাত্র পরিষ্কার করতে হবে এবং পরিষ্কারকরণে ব্যবহৃত পানি নালা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হয়। ধৌত করা এসব পাত্র-বাসনপত্রকে যন্ত্রপাতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়। ময়লা ফেলার জন্য কারখানা এলাকার বাইরে কোনো এলাকা বা কক্ষ থাকবে। কক্ষ হলে তার দেয়াল পানি অপ্রবেশ্যধর্মী হবে। মাঝে মাঝে কক্ষটি পরিষ্কার করতে হয়। পরিত্যক্ত পদার্থ বা বর্জ্য পদার্থ সংরক্ষণ এলাকা এমনভাবে তৈরি করা দরকার, যেখানে কীটপতঙ্গ, ইঁদুর, বিড়াল, শিয়াল, পাখি, কুকুর ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে। বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের পূর্বে অবশ্যই ছেঁকে নিতে হবে।

আবার খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা এমন জায়গায় অবস্থিত হতে পারে, যা পৌর এলাকার বাইরে। সেক্ষেত্রে কোম্পানির নিজস্ব ময়লা বা বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকবে। বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কোম্পানির থাকা দরকার, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যকর পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ:

১। অ্যাকটিভেটেড স্লাজ (Activated sludge)

২। ট্রিকলিং ফিলট্রেশন (Trickling filtration)

৩। অবায়বীয় আত্তীকরণ (Anaerobic assimilation)

৪। জারণ পুকুর বা লেগুন (Lagoon)।

কোন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে তা নির্ভর করে নিম্নলিখিত বিষয়ের ওপর:

১। ব্যবস্থাপনা মাত্রা

২। বর্জ্য পদার্থের প্রকৃতি

৩। বর্জ্য পদার্থের মধ্যে জৈব পদার্থের ঘনমাত্রা

৪। বর্জ্য পদার্থের আয়তন বা পরিমাণ এবং তাদের পরিবর্তনশীল প্রবাহ

৫। মূলধন ও জড়িত কর্মব্যয়

৬। পরিবেশনীতির চাহিদা পূরণের দক্ষতা।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment