তেল রিফাইনিং ও হাইড্রোজেনশন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় তেল রিফাইনিং ও হাইড্রোজেনশন

তেল রিফাইনিং ও হাইড্রোজেনশন

তেল রিফাইনিং ও হাইড্রোজেনশন

 

তেল রিফাইনিং ও হাইড্রোজেনশন

 

বর্তমানে আমাদের দেশে ১০টি রিফাইনিং কারখানা আছে। যেখানে ভোজ্যতেলের হাইড্রোজিনেশন ইউনিট কাজ করছে। তেলবীজ মিলিং এর উপরোক্ত ৪টি পদ্ধতির মধ্যে কোন তেলবীজ কীভাবে মিলিং করা হয় তা নিম্নে বর্ণিত
হল-

সরিষা মিলিং :

সরিষা ব্যবহারের পূর্বে যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা এবং ভাঙা ও অপরিপক্ব দানা চালনি দ্বারা চেলে ফেলতে হবে। প্রচলিত ঘানি এবং বৈদ্যুতিক এক্সপেলার দ্বারা সরিষা তেল নিষ্কাশন করা হয়। প্রচলিত ঘানির চেয়ে ভালোভাবে ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করলে এক্সপেলার দ্বারা ৩-৪% বেশি তেল পাওয়া যায়।

দেশীয় ঘানিতে সরিষা ভাঙলে ৩৩ ভাগ তেল, বিদ্যুৎ চালিত ঘানি বা এক্সপেলারে ভাঙলে ৩৫ ভাগ তেল এবং রাসায়ানিক পদ্ধতিতে ভাঙালে ৩৬-৩৮ ভাগ তেল পাওয়া যায়। ঘানি দ্বারা নিষ্কাশিত তেলে আইসোথিওসায়ানেট বেশি এবং এক্সপেলার দ্বারা নিষ্কাশিত তেলে আইসোথিওসায়ানেট কম থাকে।

তিল মিলিং :

আমাদের দেশে তিল প্রধানত দেশীয় ঘানির দ্বারা নিষ্কাশন করা হয়। এখানে খোসাসহ তিল ব্যাহারের ফলে তেল ঘোলা, তিতা স্বাদ, উচ্চ আঁশ ও অক্সালেট দ্বারা দূষিত হয়। উচ্চমান সম্পন্ন তিল তেল ও খৈল পাওয়ার জন্য খোসা অপসারণ করে তেল নিষ্কাশন করা উচিত।

খোসাহীন বীজে তেলের পরিমাণ বাড়ে কিন্তু আঁশ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, থায়ামিন, ও রিবোফ্লোবিনের পরিমাণ কমে। বীজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে সামান্য পানি ব্যবহার করে ঘানিতে তেল নিষ্কাশন করতে হয়। ময়লা ও অন্যান্য পদার্থ তেলের নিচের দিকে তলানিতে জমার জন্য নিষ্কাশনের পর একটি পাত্রে ২-৩ দিন রেখে দিতে হয়।

শুকনা কাপড়ের সাহায্যে তেল ছাঁকা যেতে পারে। কোনো কোনো সময় পাত্রে জমা তলানি আবার ঘানিতে দিয়ে অধিক তেল নিষ্কাশন করা যায়। আধুনিক উপায়ে হাইড্রোলিক পদ্ধতি ও দ্রাবক নিষ্কাশন পদ্ধতির সাহায্যে ঘানির চেয়ে বেশি পরিমাণ তেল পাওয়া সম্ভব। ফিল্টারের মাধ্যমে প্রাপ্ত তেল উচ্চ মানসম্পন্ন হয়।

পরিশোধিত তেলের রং হালকা হলুদ, যা সরাসরি সালাদ তেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয় বারের নিষ্কাশিত তেল অতি উজ্জ্বল রং বিশিষ্ট। এই তেল শোধনের পর খাওয়া যায়। তলানি থেকে তৃতীয় বারে নিষ্কাশিত তেল নিচু মানের যা খাওয়া যায় না। তবে সাবান কারখানায় ব্যবহার করা যায়।

চীনাবাদাম মিশিং :

চীনাবাদাম থেকে তেল বের করতে হলে প্রথমে বাদামের খোসা ছাড়াতে হবে। হাতে বা মেশিনে খোসা ছাড়ানো সম্ভব। হাতে খোসা ছাড়ালে ১ জন লোক দৈনিক প্রায় ১০ কেজি বাদামের খোসা ছাড়াতে পারে যান্ত্রিক পদ্ধতিতেও খোসা ছাড়ানো যায় ।

 

তেল রিফাইনিং ও হাইড্রোজেনশন

চিত্র: ক্রু প্রেস যন্ত্র দ্বারা চীনাবাদামের তেল নিষ্কাশন

খোসাহীন বাদামের উপরে লাল রঙের পর্দাজাতীয় আবরণ তুলে ফেললে সহজে হজম হয়। চীনাবাদামের তেল নিষ্কাশনের পর যে খৈল উপজাত হিসেবে থাকে তাকে চীনাবাদামের ময়দা বলে। এটি আমিষের একটি ভালো উৎস।

বাদামের তেল থেকে মার্জারিন, মাখন, বনস্পতি তৈরি করা যায় । চীনাবাদাম মিলিং করে ময়দা তৈরির প্রাবাহচিত্র নিম্নে দেওয়া হলো-

 

তেল রিফাইনিং ও হাইড্রোজেনশন

চিত্র : চীনাবাদাম মিলিংএর ফ্লোচার্ট

সূর্যমুখী বীজ মিলিং :

সূর্যমুখীর বীজ থেকে তিন পদ্ধতিতে তেল নিষ্কাশন করা যায়। যথা- ঘানি, এক্সপেলার ও কায়িকভাবে। দেশীয় পদ্ধতিতে তেল নিষ্কাশনের হার ৩৫%, ঘানিতে তেল নিষ্কাশনের হার ২৫% এবং এক্সপেলার দ্বারা নিষ্কাশনের হার ৪০%। ঘানিতে ভাঙিয়ে সরাসরি এ তেল ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই তেলে কোলেস্টরলের পরিমাণ খুবই কম থাকে।

এ তেলের লিনোলেনিক এসিডের পরিমাণ খুবই কম। তাই হাইড্রোজিনেশন না করলেও ক্ষতি নেই। এ তেল বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়, এতে কোনো বাজে দুর্গন্ধ হয় না। দৈনিক রান্নার কাজে পৃথিবীর বহু দেশে সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার হচ্ছে। সূর্যমুখী বীজ খোসাসহ চূর্ণ করে পানি দ্বারা মণ্ড তৈরি করা হয়। খোসা ছাড়িয়েও করা যায়।

মণ্ড বা দ্রবণ গরম করতে হয়। দ্রবণে গরম পানি দিতে হবে ও আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। এ ঠাণ্ডা দ্রবণের উপর তেল ভেসে উঠবে। ফিল্টারের সাহায্যে উপর থেকে তেল ছেঁকে নিতে হবে।

তেলের বোতলে বা পাত্রে এক চিমটি লবণ ফেলে দিলে অনেকদিন ভালো থাকে। বনস্পতি, মার্জারিন, মেয়োনেজ তৈরিতে বিশ্বব্যাপী এই তেল ব্যবহার হয়। কনফেকশনারি ও স্ন্যাকস জাতীয় খাবারে সূর্যমুখীর বিশেষ জাতের বীজের শাঁস ব্যবহার হয়।

কুসুম ফুলের বীজ মিলিং :

এর তেল নিষ্কাশন করা খুবই কঠিন। সরিষা বা অন্যান্য তেলের মতো দেশি ঘানিতে এর তেল নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় না। ভালো এক্সপেলার দিয়ে ২৮% এর বেশি উৎপদান সম্ভব নয়। কুসুম ফুলের বীজের খোসা মোটা হওয়ায় এক্সপেলার দিয়ে তেল ভাঙানো সহজ হয়।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment