আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় তেলবীজ ভাঙানো বা মিলিং
Table of Contents
তেলবীজ ভাঙানো বা মিলিং
তেলবীজ ভাঙানো বা মিলিং
তেলৰীজ মিলিং :
তেলবীজ মিলিং বা ভাঙানোর পর আমরা তেল পেয়ে থাকি। তেলৰীজ মিশিং এর চারটি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-
(১) ঘানি (২) এক্সপেলার (৩) সলভেন্ট এক্সট্রাকশন প্লান্ট ও (৪) রিফাইনারি ও হাইড্রোজিনেশন ইউনিট।
খানি :
এটি তেলবীজ অানোর গ্রামীণ ও পুরাতন পদ্ধতি। খানি সাধারণত মানুষ বা পশু চালিত হয়ে থাকে। সরিষা ও তিল সাধারণত খানিতে ভাঙানো হয়ে থাকে। খানিতে সর্বাধিক ৭০% তেল নিষ্কাশন হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ কাঠের অবকাঠামোতে হামান দিস্তার ন্যায় ঘানি দ্বারা বীজ চূর্ণকরণ ও পেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তেলবীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়।
যানির তেলে বাঁঝালো গ্লুকোসিনোলেট (Glucosinolate) এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সুগন্ধ সৃষ্টি হয়। এখনো গ্রামীণ এলাকার মাঝে মাঝে ঘানির অস্তিত্ব দেখা যায়। তবে বর্তমানে বৈদ্যুতিক তেল নিষ্কাশন যন্ত্র বা এক্সপেলার (Expeller) এর প্রচলনে যানির ব্যবহার বিলুপ্তপ্রায়। ঘানির অবকাঠামোগত উন্নতি করা গেলে এ পেশার নিয়োজিত শ্রমিকের কর্মসংস্থান বজায় রাখা সম্ভব হবে।
চিত্র : (দেশীয় পদ্ধতিতে) তেল খানিতে নিষ্কাশন ।
এক্সপেলার :
খানির উন্নত ও আধুনিক যান্ত্রিক সংস্কারণই হচ্ছে এক্সগেলার। এটি বিদ্যুৎ বা ভিলে জাতীয় জ্বালানি যারা চালিত। বর্তমানে এই নিষ্কাশন যন্ত্র দ্বারাই বেশির ভাগ তেলবীজ মিলিং করা হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় পাঁচ হাজার এক্সপেলার ব্যবহৃত হচ্ছে। এ যন্ত্রে তেল নিষ্কাশনের হার প্রচলিত ঘানি অপেক্ষা বেশি।
এ যন্ত্রে তেল নির্গমন পথে ফিল্টার দিয়ে তেল পরিষ্কার করা হয়। এক্সপেলারের তেল নিষ্কাশন পদ্ধতি প্রচলিত ঘানির অনুরুপ। বাংলাদেশে চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার নিজস্ব দুইটি তেল নিষ্কাশন এক্সপেলার ইউনিট রয়েছে যা নারায়ণগঞ্জ ও কুলিয়ারচরে অবস্থিত । এখানে শুধু চীনাবাদম তেল নিষ্কাশন করা হয়।
চিত্র: এক্সপেলার
সলভেন্ট এক্সট্রাশন প্লান্ট :
তেল বীজ থেকে তেল নিষ্কাশনের পর যে অবশিষ্ট খৈল পড়ে থাকে তা থেকে সলভেন্ট এক্সট্রাকশন বা দ্রাবক আহরণ পদ্ধতিতে বাকি তেল নিষ্কাশন করা হয়। প্রাপ্ত খৈলকে গুঁড়া করে তাতে ফুড গ্রেড হেক্সেন দ্রাবক যোগ করা হয়। অতঃপর ৯৩-১০৪°C তাপমাত্রায় ভালো করে মিশ্রিত করা হয়। পাতন পদ্ধতিতে তেল ও দ্রাবক আলাদা করা হয়।
এভাবে প্রাপ্ত তেলকে ক্রুড ওয়েল (Crude oil) বা অপরিশোধিত তেল বলে। এ ধরনের দুটি প্লান্ট বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে চালু রয়েছে। চট্টগ্রামে সরিষার খৈল থেকে এবং দিনাজপুরে চালের কুঁড়া থেকে তেল নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
আরও দুইটি এ ধরনের প্লান্ট একটি নারায়ণগঞ্জ ও অপরটি পাবনায় বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ দুইটি দ্বারা চীনাবাদাম, তিল, নারিকেল ও চালের কুঁড়া থেকে তেল নিষ্কাশন করা হবে। তুলাবীজ থেকে তেল নিষ্কাশন প্লান্ট কুষ্টিয়ায় চালু আছে।
রিফাইনারি ও হাইড্রোজিনেশন ইউনিট :
এ ধরনের প্লান্টে সাধারণত তেল বা চর্বি থেকে ফ্রি ফ্যাটি এসিড (Free fatty Acid) কমানো হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম ধাপে ছাঁকন বা আশ্রাবণ পদ্ধতি দ্বারা নিষ্কাশিত তেল থেকে অদ্রাব্য পদার্থ দূর করা হয়। ছাঁকার জন্য ফিল্টার প্রেস (Filter Press ) যন্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং প্রাণিজ কয়লা বা অ্যাক্টিভেটেড কার্বন (Activated Carbon) তেলের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
গাম জাতীয় পদার্থ দূরীকরণ বা ডিগামিং (Deguming) এর জন্য ৮২°C তাপমাত্রায় উপর থেকে পানি ঢেলে দেওয়া হয় ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রের দ্বারা নাড়া হয়, তাতে বিজলা ও ঘোলা পদার্থ বা কলয়েডস ও ফসফো লিপিডস (Colloids, Phospholipids) নিচে পতিত হয়।
তেল নিরপেক্ষ বা অ্যালকালি রিফাইনিং (Alkali refining) কাজে NaOH (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড) দ্রবণ বা চুনের পানি দ্বারা নিরপেক্ষ কারা হয়।বিরঞ্জন বা Bleaching (ব্লিচিং) করতে ফুলার্স আর্থ ও অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ব্যবহার করে এন্থোসায়ানিন, ক্যারটিনয়েড, ক্লোরোফিল, লেসিথিন, পিগমেন্ট দূর করা হয়।
তেল সাদা ও বর্ণহীন করে ভোজ্যতেলে, সালাদ তেলে ও মার্জারিনে ব্যবহার করা হয়। নির্গন্ধকরণ বা ডিওডোরাইজেশন (Deodorization ) তেলের জন্য বাঞ্ছনীয়। অপরিষ্কার, ময়লা, নিকৃষ্ট গুদাম ও তেলের মৌলিক অংশ থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ তেলে অবস্থানের কারণে তেল দুর্গন্ধ হয়।
বন্ধ নলে উচ্চ তাপের স্টিম (Steam) দ্বারা উত্তাপ দিয়ে বাষ্পপাতন বা স্টিম ডিস্টিলেশন (Steam distallation) করে নির্গন্ধকরণ করা যায়। অতঃপর হাইড্রোজিনেশন (Hydrogenation) করে তেলের রাসায়নিক পরিবর্তন করা হয়। এতে তেলের বর্ণ ও গন্ধ দূর হয়।
এটা তেলকে বিশোধন করে এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির সাথে মিশ্রণ বা ইমালশন ঘটিয়ে কোমল করে যাতে কোনো তেল রান্নার কাজে, কোনো তেল রুটি বিস্কুট, কেক, পেস্ট্রি ইত্যাদি শিল্পের উপযোগী করা হয়। তেলকে হাইড্রোজিনেশন করে মার্জারিন বা ডালডা তৈরি করা হয়।
চিত্র: আধুনিক রিফাইনারি মেশিন ।
আরও দেখুন :