খনিজ পদার্থ ভূমিকা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় খনিজ পদার্থ ভূমিকা , যা খনিজ পদার্থ অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

খনিজ পদার্থ ভূমিকা

খাদ্যের গুণগত মানের অন্যতম শর্ত হলো, খাদ্যে প্রয়োজনানুপাতে খনিজ পদার্থসমূহের উপস্থিতি। আমরা জীবনধারণের জন্য খাদ্য গ্রহণ করি। আমিষ, শ্বেতসার, স্নেহ ছাড়াও দেহের সুস্থতা ও কার্যকারিতার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য খাদ্যে খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। খাদ্যের খনিজ পদার্থসমূহের তালিকা বেশ লম্বা।

বিভিন্ন ধরনের মৌলিক পদার্থ ও জটিল আয়ন খাদ্য খনিজের আওতায় পড়ে। এদের অনেকগুলো মানুষের পুষ্টির জন্য প্রয়োজন। অনেকগুলো বিশেষত বিরল মৌলকণা (Trace elements); সে সব অধিক মাত্রায় গ্রহণ বিপজ্জনক।

খাদ্যে খনিজ পদার্থগুলো অজৈব বা জৈব লবণ কিংবা জৈব পদার্থের সাথে সংযুক্ত আকারে যেমন, উৎসেচকের সঙ্গে ধাতব পদার্থ, ফসফো-আমিষের সঙ্গে ফসফরাস থাকতে পারে। খাদ্যে কমপক্ষে ৫০টি মৌলিক পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। আমাদের শরীরের গঠন উপাদানের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ২৪টি খনিজ পদার্থ।

 

খনিজ পদার্থ ভূমিকা

 

খনিজ পদার্থগুলো আমাদের শরীরে খুব কম পরিমাণে দরকার হয়। কিন্তু দেহের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য খনিজ পদার্থগুলো আবশ্যক।

(ক) হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়াম, (খ) যকৃৎ, মাংসপেশির কোষ-কলা গঠনে ফসফরাস (গ) কোষ বিনির্মাণ, দেহ-তরলের উপাদান, স্থায়িত্ব ও জীবনধারণের সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদি, (ঘ) রক্ত রঙ (haemoglobin) গঠনে লোহা ও তামা,

(ঙ) থাইরোক্সিনের উপাদান হিসেবে আয়োডিন, (চ) উৎসেচক ও প্রাণরসের (Hormone) উপাদান দত্তা (Zinc), (হু) ভিটামিন বি-১২ এর গাঠনিক উপাদান কোবাল্ট এবং (জ) কতিপয় উৎসেচকের কাজের জন্য আরো কিছু মৌলিক পদার্থ বিশেষ বিশেষ কার্যসম্পাদন করে।

সব খাদ্যে সব রকম খনিজ পদার্থ থাকে না। সব জায়গায় একই প্রজাতির উদ্ভিদে সব উপাদানও সমান পরিমাণ থাকে না। মাটিতে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি; খাদ্য হিসেবে গৃহীত প্ৰাণী-খাদ্যোপাদান ( nature and content of animal feed), গাছে প্রযুক্ত “রাসায়নিক সার-কীটনাশক, প্রক্রিয়াজাতকরণ কালে খনিজ উপাদানের বিনষ্ট ও সংযোজন প্রভৃতির উপর নির্ভরশীল।

খাদ্যে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদানের আন্তঃবিক্রিয়া খাদ্যে খনিজ পদার্থের জৈব প্রাপ্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।

ভূমণ্ডলীয় অবস্থান, পরিবেশ, স্বাস্থ্য- সচেতনতা, শিক্ষা, আর্থসামাজিক অবস্থা প্রভৃতির পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের দৈনন্দিন খাবারে খনিজ পদার্থের পরিমাণ ও প্রকৃতিতে হেরফের ঘটতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, সাগর তীরবর্তী লোকদের তুলনায় দূরবর্তী শুষ্ক অঞ্চলে আয়োডিনের প্রাপ্তি কম।

খাদ্যরন্ধন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকালে সাধারণত অজ্ঞতা বশে খাদ্যের অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বা খনিজ পদার্থ নষ্ট হয়ে যায়। পানির সংস্পর্শ বা বার বার পানিতে আন্দোলিত করার ফলে পানিতে দ্রবণীয় অনেক খনিজ উপাদান নষ্ট হয়ে যায়।

মাছের ৮০% আয়োডিন অতিমাত্রায় জ্বালানোর কারণে নষ্ট হয়। শিম, মটরশুঁটি ও বরবটি রান্নার সময় বিভিন্ন মৌলিক উপাদানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়।

খাদ্যশিল্পের ক্রমাগত উন্নতি ও প্রসারের ফলে খাদ্যে খনিজ পদার্থের ঘাটতি পূরণের নতুন পন্থা-পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকালে শরীরের উপযোগী ও আবশ্যক খনিজ যোগ করা হয়।

খাদ্যকে এভাবে শক্তিবন্ড (Fortified) ও সমৃদ্ধ (Enriched) করে খনিজ পদার্থের জৈব প্রাপ্তিকে (bioavailabity) নিশ্চিত করা হয়। ফলে দৈনিক সুপারিশকৃত পুষ্টি উপাদান (RDA, Recommended Dietary Allowances) সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান সম্ভব হয়।

 

খনিজ পদার্থ ভূমিকা

 

এ অধ্যায়ে খাদ্যের বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, মৌলিক উপাদান, বিরল মৌলের পরিচিতি, মানব পুষ্টিতে মৌলসমূহের গুরুত্ব, দুধ, মাছ, উচ্ছি খাদ্যে খনিজের উপস্থিতি ও প্রকৃতি;

কৌটাজাত খাবারের মাধ্যমে ধাতব পদার্থ গ্রহণের পরিমাণ প্রভৃতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। তা ছাড়া খাদ্য সংরক্ষণ, প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে খনিজ উপাদানের যে হেরফের বা পরিবর্তন হয় সে সম্পর্কে ধারণা দেবার চেষ্টা করা হয়েছে।

 

খনিজ পদার্থ ভূমিকা

 

সারণি : ৬.২ শিমজাতীয় খাদ্য রান্নার ফলে খনিজ ঘাটতির শতকরা হার

 

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment