কাজু বাদাম এর উপকারিতা

কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু এক ধরণের বাদাম। এই বাদামের বৈজ্ঞানিক নাম – Anacardium occidentale; প্রতিশব্দ Anacardium curatellifolium A.St.-Hil। এটা সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ। বাদাম মুলত, বাদাম গাছের ভোজ্য বীজের নাম। কাজুর ফল এর বাইরে একটি শক্ত খোসা থাকে। উপরের শক্ত খোসা ছাড়াবার পরে যা থাকে তাই কাজু বাদাম। কাজু খোসা সহ বা খোসা ছাড়া বিক্রি হয়। কিডনি আকৃতির বীজ কাজুর গন্ধ ও স্বাদে মিষ্টি-জাতীয়। পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।

কাজু বাদাম [ Cashew Nuts ]
কাজু বাদাম [ Cashew Nuts ]

কাজু বাদামের উৎপত্তিস্থল:

এক ধরনের বিজ্ঞানিরা বলেন এই বাদামের উৎপত্তিস্থল মূলত ইরান। তারা বলেন ইরান এবং আশেপাশের দেশগুলির এক প্রজাতির গাছ থেকে এই বাদাম শুরুতে পাওয়া যেত। এই বাদামের প্রাচীন অবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে লেভান্ট এলাকায়। আবার কেউ বলেন কাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল সহ মধ্য আমেরিকা এবং উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর পূর্ব ব্রাজিল। বর্তমানে সারা পৃথিবীর সবখানেই কম বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে প্রধানত ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, মাদাগাস্কার বেশি পরিমাণে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে।

কাঁচা কাজু ফল, Young cashew nuts
কাঁচা কাজু ফল, Young cashew nuts

কাজু খাবার পদ্ধতি:

কাজু বাদাম সচরাচর ভেজে খাওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায় যে কাজুবাদামকে দা দিয়ে কেটে খুঁচিয়ে শাঁস বের করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়। লবণ-জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়। এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। আর মিষ্টি স্বাদের কাজুবাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্যও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়।

কাজু বাদামের গাছ
কাজু বাদামের গাছ

কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ:

কাজুতে বিবিধ পুষ্টিপদার্থ রয়েছে, যেমন – তামা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, ফসফরাস, আয়রন, সেলেনিয়াম, থায়ামিন। এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিপদার্থ যেমন – ভিটামিন কে, ভিটামিন বি ৬ ইত্যাদিতে ঠাসা কাজুতে। এটি একটি ফাইবার জাতীয় খাবার যা কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে। ১ আউন্স বা প্রায় ২৮.৩ গ্রাম কাজু থেকে মোটামুটিভাবে ১৫৭ গ্রাম ক্যালরি, ৫.১৭ গ্রাম প্রোটিন, ১২.৪৩ গ্রাম ফ্যাট, ৮.৫৬ গ্রাম শর্করা, ০.৯ গ্রাম ফাইবার, ১.৬৮ গ্রাম চিনি পাওয়া যায়।

কাজু ওজন হ্রাস, রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর হৃদয় গঠন, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধ, ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় কার্যকরী খাবার। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, কাজুতে প্রায় রান্না করা মাংসের সমান প্রোটিন রয়েছে। এ ছাড়া এতে অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী। আবার সেই সাথে শর্করার পরিমাণও কম থাকে।

এতসব পুষ্টি উপাদানের কারণে মানব শরীরে এর উপকারিতাও অনেক। হাড়ের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ওজন কমাতে, হার্টকে ভালো রাখতে এবং ডায়াবেটিস রোগের উপকারেও সহায়তা করে কাজু বাদাম। আসুন জেনে নিই কাজু বাদামের কিছু অসাধারণ উপকারী সম্পর্কে—

কাজু ফল
কাজু ফল

১. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ

কাজু বাদামকে অনেকেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস বলে থাকেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একদিকে যেমন হৃদরোগ প্রতিরোধে জরুরী, তেমনই চোখের বিভিন্ন রোগ ও স্মৃতিশক্তিজনিত সমস্যাদি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে এবং দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দরকার।

২. ওজন কমায়

অন্যান্য বাদামের তুলনায় কাজু বাদামে ক্যালোরি এবং ফ্যাট কম থাকে। তাই অন্যান্য বাদামে ওজন বাড়ার যে সমস্যা থাকে, সেটা কাজুতে নেই। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাজুতে যে পরিমাণ ক্যালোরি থাকে, তার ৮৪ শতাংশই হজম করতে এবং শুষে নিতে পারে মানব দেহ। এ ছাড়া এটি প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা কমাতে এবং পেটভরা রাখতে সহায়তা করে বলে ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে অনেক।

৩. হার্টের জন্য উপকারী

কাজু বাদাম স্ট্রোক বা অন্য সব হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে খুবই উপকারী হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাজু নিয়মিত খেলে রক্তচাপ ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।

৪. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে

ডায়াবেটিস রোগের জন্যও উপকারী হিসেবে কাজ করে কাজু। এতে থাকা ফাইবার রক্তের শর্করার স্পাইক প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং এতে শর্করার পরিমাণও অনেক কম থাকে। আর এ কারণে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

৫. হাড়ের জন্য উপকারী

কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকার কারণে এটি হাড়ের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় কপারের অভাব পূরণ করে এটি। আর কপারের অভাবে বিভিন্ন হাড়ের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই কাজুহাড়ের জন্য উপকারী হিসেবে কাজ করে।

কাজু বাদাম [ Cashew Nuts ]
কাজু বাদাম [ Cashew Nuts ]

বাংলাদেশে কাজু বাদাম:

বাংলাদেশে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টার খেজুরবাগান, সেনানিবাস, হর্টিকালচার সেন্টার নারানখাইয়া, পানখাইয়া পাড়া, কমলছড়ি ও জামতলী এলাকায় কাজুবাদামের গাছ চোখে পড়ে। এ ছাড়া, রামগড় উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টারেও রয়েছে কাজুবাদামের বাগান। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঝারি আকারে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে কাজুবাদাম চাষের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে খাগড়াছড়ির কৃষিপণ্যের মধ্যে কাজুবাদামও একটি বিশেষ স্থান করে নিতে পারে।

আরও পড়ুন:

 

Leave a Comment