আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ওয়াইনের গাঁজন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা ,যা খাদ্য এবং পানীয় প্রক্রিয়া অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
ওয়াইনের গাঁজন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা
বাধ্যবাধকতা না থাকলে মদ (wine) শব্দটি বলতে আঙ্গুর বা ফলের রসকে ইস্ট নামক জীবাণু দ্বারা গাজন প্রক্রিয়াকেই বুঝায়। এ কাজে অন্যান্য ফলের রসও ব্যবহার করা যেতে পারে। খোসাসহ লাল অথবা বেগুনি রঙের আঙ্গুর ফল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাদা মদ (white wine) তৈরিতে খোসাছাড়া সাদা আঙ্গুর ফল ব্যবহার করা হয়।
নিচে ওয়াইন তৈরির প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হলো-
কাজের ধাপ ঃ ফল সংগ্রহ → রস তৈরিকরণ → গাঁজন → ক্ল্যারিফিকেশন → পরিপক্বতা (Aging) → মজুতকরণ বা বোতলজাতকরণ ।
ফল সংগ্রহ (Harvesting) : ওয়াইন তৈরির প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো ফল সংগ্রহ করা। একমাত্র আঙ্গুর ফলই, যা যথাযথভাবে প্রয়োজনীয় অ্যাসিড, এস্টার এবং ট্যানিন (Tannin) পাওয়া যায় প্রাকৃতিক এবং স্থিতিশীল ও ওয়াইন তৈরি করতে।
ট্যানিনই ওয়ানইকে শুষ্ক করে এবং তিক্ততা যোগ করে। কাজেই, ভালোজাতের মিষ্টি এবং পরিপক্ব আঙ্গুর সংগ্রহ করতে হবে। আঙ্গুরে চিনি গাঢ়ত্ব শতকরা ১৫–২৫ ভাগ অবশ্যই থাকতে হবে। চিনির গাঢ়ত্ব ফলের পরিপক্বতার উপর এবং আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল।
রস তৈরিকরণ (Juice making) : ফল সংগ্রহের পর একে চূর্ণন বা ক্রাশ করতে হবে। আগের দিনে এই কাজটি করা হবে পুরুষ বা নারীর পা দ্বারা । আজকাল এই পদ্ধতি ব্যবহার না করে যান্ত্রিকভাবে করা হয়।
আঙ্গুরকে ক্রাশিং করে রস সংগ্রহ করা হয়। ওয়াইন উৎপাদনে অন্যান্য প্রতিযোগী ঈস্টগুলোকে দমনের জন্য পটাশিয়াম মেটাবাইসালফাইট (KMS) ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত ৭৫–২০০ পিপিএম KMS মিশাতে হয়।
গাঁজন (Fermentation) ঃ আঙ্গুর ফলকে চূর্ণন করে যে রস তৈরি করা হয় তাকে মাস্ট (Must) বলে। প্রাকৃতিক ঈস্ট রসে থাকতে পারে তবে ভালো গাঁজনের জন্য ২-৫% মদ্য ঈস্ট মাস্টে যোগ করতে হয়।
প্রথমে ট্যাংকের মাস্টকে বায়ু সঞ্চালিত করে ঈস্টের বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে। পরে অবায়বীয় অবস্থার সৃষ্টি করে মাস্ট গাঁজনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সক্রিয় গাজনে তাপমাত্রা ২৪–২৭°C এবং সময় ৩-৫ দিন। লাল এবং সাদা মদ তৈরিতে ১০–২৭°C তাপমাত্রায় ৭–১৪ দিন সময় প্রয়োজন।
অতি উচ্চ তাপমাত্রা মদ্যপ ঈস্টকে প্রতিহত করে এবং প্রতিযোগী জীবাণু যেমন— ল্যাকটোব্যাসিলি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আবার তাপমাত্রা অত্যধিক কম হলে মদ্যপ ঈস্টের বৃদ্ধিকে মন্থর করে। মাস্টকে গাঁজিয়ে তোলার সময় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ।
তাই কৃত্রিমভাবে ট্যাংকের তাপমাত্রা কমিয়ে ঠান্ডা করা প্রয়োজন হয়। প্রাথমিক গাঁজন শেষে চোলাইকৃত রস বের করে নেয়া হয় এবং রক্ষিত ট্যাংকে CO2 এর হালকা চাপে মাধ্যমিক গাঁজনের জন্য ৭-১৪ দিন ২১–২৯° সেঃ তাপমাত্রায় রাখতে হবে।
ক্ল্যারিফিকেশন (Clarification) : যখন গাঁজ শেষ হয়, তখনই ক্ল্যারিফিকেশন শুরু হয়। ক্ল্যারিফিকেশন প্রক্রিয়ায় কঠিন পদার্থ যেমন- মৃত ঈস্ট, ট্যানিন এবং আমিষ প্রভৃতিতে দূরীভূত করা হয়।
এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা হয় ফিল্টার (ছাকনি) এর মাধ্যমে। ক্ল্যারিফিকেশন সম্পূর্ণ হলে অ্যালকোহলকে বা মদকে অন্য একটি ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয়। পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত করা হয় ।
পরিপক্ব (Aging) বোতলজাতকরণ (Bottling) পরিপক্করণের পূর্বে প্রোটিন অধঃক্ষেপণের জন্য মনকে ফ্ল্যাশ পাণ্ডুরয়েন করতে হবে। ঠাণ্ডা করে কিছুদিন রেখে আবার ছাঁকনের পর কাঠের বা প্লাস্টিক আবৃত কংক্রিট ট্যাংকে পূর্ণ করে আবদ্ধ অবস্থায় পরিপক্ব করার জন্য রাখতে হবে।
ওয়াইনে প্রয়োজনীয় সুগন্ধি আনয়নের জন্য তলানি অপসারণ করে মাঝে মাঝে ট্যাংক হতে ট্যাংকে স্থানান্তর করতে হবে। পরে পরিস্রোত করে বোতলে ভর্তি করে চূড়ান্তভাবে পরিপক্বতার জন্য একমাস হতে এক বছর কাল পর্যন্ত গাঁজানো হবে। পরে বোতলগুলোকে মজুদ করতে হবে।
কোনো কোনো ওয়াইন পরিপক্ক করার পূর্বে বোতলে ভর্তি করে পাস্তুরায়ন করা হয়। চূড়ান্তভাবে উৎপন্ন ওয়াইনে পরিমাণে তারতম্য ঘটে। তবে এর পরিমাণ সাধারণত ওজনে শতকরা ৬৯% অথবা আয়তনে শতকরা ৮–১৩% হয়। প্রবাহ চিত্র নিচে দেয়া হলো—
আরও পড়ূনঃ