আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় উৎপাদন ব্যয় বিশ্লেষণ। বেশিরভাগ খাবারকে ভোজ্য করার জন্য প্রাথমিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয় যখন সেকেন্ডারি ফুড প্রসেসিং উপাদানগুলিকে পণ্যের মতো পরিচিত খাবারে পরিণত করে, যেমন রুটি। টারশিয়ারি ফুড প্রসেসিংয়ের ফলে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন পণ্যে পরিণত হয় এবং মেটাবলিক রোগ যেমন, স্থূলতা এবং অটোইমিউন রোগ সহ বেশিরভাগ অ-তীব্র প্রদাহজনিত রোগে অবদান রাখার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।
এই অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের মতো পণ্যগুলিতে যুক্ত করা মানবসৃষ্ট রাসায়নিক এবং প্রিজারভেটিভ থাকে যা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে না এবং/অথবা হাইব্রিডাইজড এবং/অথবা জেনেটিকালি ম্যানিপুলেটেড উদ্ভিদ যেমন চিনি, কর্ন সিরাপ এবং বীজের তেল থেকে সহজে বের করা হয় এবং অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলির সাথে মিলিত হয়। ফাইবার যোগ করা একটি অস্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করে যেমন পণ্যের ফলে মানুষ এবং খামারের প্রাণীদের বিপাকীয় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়।
Table of Contents
উৎপাদন ব্যয় বিশ্লেষণ
৫.০ ভূমিকা (Introduction)
কোনো দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয়ের উপাদানসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ১। প্রত্যক্ষ ব্যয়, ২। পরোক্ষ ব্যয়।
পণ্য উৎপাদন বা কার্যসম্পাদনের মোট ব্যয়কে খরচের ভিত্তিতে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। উৎপাদন ব্যয়ের এ প্রত্যেক ভাগকে উৎপাদন ব্যয়ের উপাদান বলে।
❑ উৎপাদন ব্যয়ের উপাদানসমূহঃ
১। প্রত্যক্ষ ব্যয় এবং ২। পরোক্ষ ব্যয়।
⇒ উৎপাদন ব্যয়ের এই প্রত্যক্ষ ব্যয়কে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
(ক) প্রত্যক্ষ কাঁচামাল, (খ) প্রত্যক্ষ শ্রম এবং (গ) প্রত্যক্ষ খরচ।
⇒ পরোক্ষ ব্যয়কেও আবার ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা-
(ক) কারখানা খরচ, (খ) প্রশাসনিক খরচ এবং (গ) বিক্রয় এবং বিলি খরচ।
নিম্নে উপাদানসমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করা হলোঃ
১। প্রত্যক্ষ ব্যয়: উৎপাদন ক্ষেত্রে পণ্যের উৎপাদনে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহৃত কাঁচামাল, মজুরি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচকে প্রত্যক্ষ ব্যয় বলে।
(ক) প্রত্যক্ষ কাঁচামাল। যে কাঁচামাল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এবং তার খরচ সহজে ও সরাসরিভাবে উৎপাদিত দ্রব্যের ব্যয়রূপে স্বীকার করা হয়, তাকে প্রত্যক্ষ কাঁচামাল বলে। যেমন- আসবাব তৈরিতে কাঠ, বিস্কুট তৈরিতে ময়দা, দালান তৈরিতে ইট, সিমেন্ট ইত্যাদি।
(খ) প্রত্যক্ষ শ্রমঃ যে শ্রম দ্বারা সরাসরিভাবে প্রত্যক্ষ মাল হতে দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়, তাকে প্রত্যক্ষ শ্রম বলে। কোনো দ্রব্য উৎপাদন কাজে প্রত্যক্ষভাবে যে-সব শ্রমিক নিযুক্ত থাকে, তাদের দ্বারা প্রদত্ত শ্রমই প্রত্যক্ষ শ্রমের উদাহরণ।
(গ) প্রত্যক্ষ খরচঃ প্রত্যক্ষ খরচ বলতে বুঝায় সে সকল বিশেষ বিশেষ ব্যয়, যা একটি নির্দিষ্ট দ্রব্য উৎপাদনের জন্য প্রত্যক্ষভাবে ব্যয় করা হয় এবং সে কারণে উক্ত দ্রব্যটির মোট ব্যয়ের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত করা হয়, যেমন- উৎপাদন শুল্ক, উৎপাদন ডিজাইন খরচ ও স্থপতির ফি ইত্যাদি।
২। পরোক্ষ খরচঃ প্রত্যক্ষ কাঁচামালের জন্য ব্যয়, প্রত্যক্ষ প্রমের জন্য মজুরি এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষ ব্যয় বাদে সকল প্রকার ব্যয়কে পরোক্ষ ব্যয় বলে। যেমন- বিমার প্রিমিয়াম, অফিস খরচ, টেলিফোন খরচ ও বিজ্ঞাপন খরচ ইত্যাদি। (ক) কারখানা খরচঃ কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং প্রত্যক্ষ শ্রম ছাড়া অন্যান্য যাবতীয় খরচকে কারখানার খরচ বলে।
(খ) প্রশাসনিক খরচঃ উৎপাদন কাজ পরিচালনার জন্য অফিস ও প্রশাসন সংক্রান্ত যাবতীয় খরচকে প্রশাসনিক খরচ বলে। যেমন- অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ, অফিস ভাড়া, অফিসে আলোক ও তাপ সরবরাহ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার খরচ। অফিস সংক্রান্ত অন্যান্য সকল প্রকার খরচ যেমন- কাগজপত্র, দলিলপত্র, ছাপা, ডাক, তার, টেলিফোন, যাতায়াত প্রভৃতি বাবদ খরচ।
(গ) বিক্রয় ও বিলি খরচঃ তৈরি দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ এবং বিক্রিত সামগ্রী খরিদ্দারগণের কাছে পৌছে দেবার জন্য বিভিন্ন খরচসমূহকে বিক্রয় ও বিলি খরচ বলে। যেমন- দ্রব্য প্রেরণ সংক্রান্ত বিমা, গাড়ি বা জাহাজে প্রেরণ ভাড়া, প্রেরিত গাড়ি চালকের বেতন এবং প্রেরিত গাড়ির যাবতীয় খরচ, দ্রব্য প্যাকিং ইত্যাদি।
৫.১ উৎপাদন ব্যয় বিশ্লেষণ (Cost analysis) :
মোট উৎপাদন ব্যয়কে বিভিন্ন উপাদানে ভাগ করার কাজকে উৎপাদন ব্যয় বিশ্লেষণ বলা হয়। উৎপাদনের মোট ব্যয়কে নিম্নলিখিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়।
১। প্রাথমিক ব্যয় (Prime cost),
২। কারখানা ব্যয় (Works or Factory cost),
৩। উৎপাদন ব্যয় (Production cost),
৪। বিক্রয় ব্যয় (Selling cost) ।
১। প্রাথমিক ব্যয় (Prime cost): প্রত্যক্ষ কাঁচামালের ব্যয়, প্রত্যক্ষ শ্রমের জন্য মজুরি এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষ ব্যয়ের সমষ্টিকে প্রাথমিক ব্যয় বা মুখ্য ব্যয় বলে।
সূত্র হলোঃ মুখ্য ব্যয় = প্রত্যক্ষ মাল প্রত্যক্ষ মজুরি + প্রত্যক্ষ খরচ (Prime Cost = Direct Materials + Direct Labour + Direct Expenses)
২। কারখানা ব্যয় (Works or Factory cost): প্রাথমিক ব্যয় এবং কারখানার সাধারণ ও এর অন্তর্গত বিভিন্ন সহায়ক কাজ সরবরাহ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ের সমষ্টি হলো কারখানার ব্যয়।
সূত্র হলোঃ কারখানার ব্যয় বা উৎপাদন ব্যয় মুখ্য ব্যয় কারখানার উপরি খরচ (Work Cost or Factory Cost = Prime Cost + Factory Overhead)
৩ । উৎপাদন ব্যয় (Production cost) : কারখানার ব্যয় এবং অফিস ও প্রশাসনিক খরচের সমষ্টিকে উৎপাদন ব্যয় বলে।
সূত্র হলোঃ উৎপাদন ব্যয় কারখানার ব্যয়+ অফিস ও প্রশাসনিক ব্যয় (Production Cost Factory Cost + Office and Administrative Overhead)
৪। বিক্রয় ব্যয় (Selling cost) : উৎপাদন ব্যয় এবং বিক্রয় ও বণ্টন সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ের সমষ্টিকে বলা হয় বিক্রয় ব্যয়।
সূত্র হলোঃ বিক্রয় ব্যয় = উৎপাদন ব্যয় বিক্রয় ও বিলি খরচ Selling Cost Production Cost + Selling and Distribution Overhead) বিক্রয় ব্যয়কে মোট ব্যয়ও বলা হয়ে থাকে। বিক্রয় বা মোট ব্যয়ের সাথে মুনাফার পরিমাণ যোগ করলেই বিক্রয়মূল্য (Selling price) পাওয়া যায়। অপরদিকে যদি ক্ষতিতে বিক্রয় করা হয়, তাহলে মোট ব্যয় বা বিক্রয় হতে উক্ত ক্ষতির পরিমাণ বাদ দিলেই বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায়।
৫। রূপান্তরযোগ্য ব্যয় (Conversion cost) : প্রত্যক্ষ শ্রম ও কারখানা উপরি খরচকে একত্রে রূপান্তরযোগ্য ব্যয় বলে। সূত্র হলোঃ রূপান্তরযোগ্য ব্যয় প্রত্যক্ষ মজুরি কারখানার উপরি খরচ
(Conversion cost = Direct labour + Factory overhead.)
৫.২ সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ ও সমচ্ছেদ তালিকা (Break-even analysis and break-even chart) :
সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ (Break-even analysis)। ব্যবসায় বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মুনাফা পরিকল্পনা ও এর নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে সমচ্ছেদ বা ব্রেক ইভেন বিশ্লেষণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ মুনাফা বা ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে অনুমান গ্রহণ এবং তৎসংশ্লিষ্ট উৎপাদন স্তর, উৎপাদন ব্যয়, বিক্রয়ের পরিমাণ ইত্যাদি নির্ধারণ করার যে কৌশল, তাকেই ব্রেক ইভেন বা সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ বলে। এক্ষেত্রে সমচ্ছেদ বা ব্রেক ইভেন বলতে এমন একটি স্তরকে বুঝায়, যে পরিমাণ উৎপাদন করলে মোট উৎপাদন খরচ এবং বিক্রয়লব্ধ আয় সমান হয়।
উৎপাদন বা বিক্রয়ের মাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে তা ব্যয় ও মুনাফাকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা সমচ্ছেদ বিশ্লেষণে জানা যায়। এ থেকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বা উৎপাদন পর্যায়ে কতটুকু মুনাফা অর্জন সম্ভব তার পূর্বানুমান করা সম্ভব হয়।মোটকথা, কোনো ব্যবসায় বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বা বিক্রিত পণ্যের ব্যয়, পরিমাণ ও মুনাফার পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণকে সমচ্ছেদ বা ব্রেক ইভেন বিশ্লেষণ (Break-even analysis) বলে অভিহিত করা হয়।
সমচ্ছেদ তালিকা (Break-even chart) ও তালিকা বা লেখচিত্রের মাধ্যমে সমচ্ছেদ বিন্দু বিশ্লেষণ করা যায়। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণকে যখন লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় তখন তাকে সমচ্ছেদ তালিকা বা ব্রেক ইভেন চার্ট (Break-even chart) বলা হয়। সমেেচ্ছদ তালিকায় স্থির খরচ, পরিবর্তনীয় খরচ এবং বিক্রয়ের পরিমাণকে এমনভাবে দেখানো হয় যাতে করে উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে মুনাফার পরিমাণ কীরূপ হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
সমচ্ছেদ তালিকা গ্রাফ বা লেখচিত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়ের পরিমাণ ও খরচের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে এবং কাঙ্ক্ষিত মুনাফার উপর এদের ফলাফল প্রকাশ করে থাকে। এ চার্টে বা তালিকায় সমচ্ছেদ বিন্দু বা ব্রেক ইভেন বিন্দু দেখানো হয়। বলা যায়, যে চার্ট বা রেখাচিত্র উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বা লোকসানের সম্ভাবনা প্রকাশ করে এবং সেই উদ্দেশ্যে এমন একটি বিন্দু নির্দেশ করে, যে বিন্দুতে মুনাফা বা লোকসান কোনোটাই হয় না, তাকে সমচ্ছেদ তালিকা বা ব্রেক ইভেন চার্ট বলে।
বস্তুত লেখচিত্র বা চার্টে সমচ্ছেদ বিন্দু প্রদর্শিত হয় বলেই এটি সমচ্ছেদ তালিকা বা ব্রেক ইভেন চার্ট নামে পরিচিত।অতএব, আমরা বলতে পারি, যে রেখাচিত্রের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়ের পরিমাণ স্থির খরচ, পরিবর্তনশীল খরচ এব। উৎপাদনের বিভিন্ন স্তরে মুনাফা বা লোকসানের পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ক প্রদর্শন করা হয়, তাকে সমচ্ছেদ তালিকা বা ব্রেক ইভেন চার্ট বলে।
৫.২.১ সমচ্ছেদ বিন্দু (Break-even point) :
সমচ্ছেদ বা ব্রেক ইভেন বিন্দু বলতে সেই বিন্দুকে বুঝায়, যে বিন্দুতে প্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ সমান হয়। অর্থাৎ এটি এমন একটি বিন্দু, যেখানে মোট খরচের পরিমাণ ও মোট বিক্রয়ের পরিমাণ সমান থাকে। এ বিন্দু মূলত প্রতিষ্ঠানের মোট উৎপাদন খরচ এবং বিক্রয়লব্ধ আয়ের সমতা নির্দেশ করে। উক্ত বিন্দুতে মুনাফার পরিমাণ শূন্য হয়। এ বিন্দুর অধিক বিক্রয় হলে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা হবে এবং এর কম বিক্রয় হলে প্রতিষ্ঠানের লোকসান হবে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সমচ্ছেদ বা ব্রেক ইভেন বিন্দু হচ্ছে উৎপাদন বা বিক্রয়ের মাত্রার এমন একটি অবস্থান, যেখানে প্রতিষ্ঠানের লাভ বা লোকসান কোনোটাই হয় না। অন্যভাবে বলা যায়, মোট ব্যয় রেখা ও বিক্রয় রেখা যে বিন্দুতে ছেদ করে, তাকে সমচ্ছেদ বিন্দু বলে। উক্ত বিন্দুতে উৎপাদন করা সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানের একদিকে যেমন কোনো লাভ হবে না, অন্যদিকে লোকসানও হবে না।
৫.২.২ সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের গুরুত্ব (Importances of break-even analysis) :
কোনো প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা পরিকল্পনায় সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ একটি কার্যকর ও বহুল ব্যবহৃত নিয়ন্ত্রণ কৌশল। নিম্নে সংক্ষেপে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কী পরিমাণ পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করলে প্রতিষ্ঠান সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে, তা সহজে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। এটি প্রতিষ্ঠানের সঠিক মুনাফা পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করে।
২। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ বিক্রয়ের এমন একটি মাত্রা নির্দেশ করে, যার নিচে বিক্রয়-আয় হলে প্রতিষ্ঠান লোকসানের আওতায় পড়বে। ফলে এ ব্যবস্থা হতে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও মুনাফার মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে ব্যবস্থাপক যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
৩। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ব্যয়, পরিবর্তনশীল ব্যয় ও অন্যান্য যাবতীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪। প্রতিষ্ঠানে পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়েও সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ কার্যকর ভূমিকা রাখে। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন মূল্যে প্রান্তিক মুনাফা, প্রান্তিক ব্যয়, বিক্রয় মাত্রা, মোট মুনাফা, মোট ব্যয় ইত্যাদি নির্ণয় করে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের জন্য পণ্যের যথার্থ বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।
৫। প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্যসামগ্রী বা পণ্যাংশসমূহ নিজস্ব কারখানায় প্রস্তুত করা হবে, নাকি বাইরের কোনো সরবরাহকারীর কাছ থেকে ক্রয় করা হবে কিংবা পুরাতন কোনো যন্ত্রপাতির পরিবর্তে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে কি না- এ জাতীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ ব্যবস্থাপনাকে সহায়তা দান করে থাকে।
মোটকথা, সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন, ব্যয়, বিক্রয়ের পরিমাণ, মূল্য ইত্যাদির পরিবর্তনে মুনাফার উপর তার প্রতিক্রিয়া কী হয় তা সহজে জানা যায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপক সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকর কর্মপন্থা গ্রহণ করতে পারেন।
৫.২.৩ সমচ্ছেদ তালিকা প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি (Method of preparing break-even chart) :
সমচ্ছেদ বা ভারসাম্য বিন্দু নির্ণয় অর্থাৎ কোন স্তরে উৎপাদন করলে প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান কিছুই হবে না তা নির্ণয়ের জন্য তালিকা বা সারণি প্রস্তুত করতে হলে নিম্নলিখিত তথ্যগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।
১। বিভিন্ন বিক্রয় স্তরে মোট বিক্রয়ের পরিমাণ
২। মোট পরিবর্তনশীল খরচ
৩। মোট স্থায়ী খরচ।
উক্ত তথ্যগুলোকে সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদনী ক্ষমতা পর্যন্ত উৎপাদনের একক অনুযায়ী পর্যায়ক্রমিকভাবে তালিকায় উপস্থাপন করতে হয়। এক্ষেত্রে যে স্থানে বা যে স্তরে মোট ব্যয়, মোট বিক্রয়ের টাকার সমান হবে সেখানেই সমচ্ছেদ বিন্দু বা ব্রেক ইভেন পয়েন্ট নির্ধারিত হবে।
মনে করি, কোনো প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন উৎপাদনের পরিমাণ ২০০০ একক পণ্য এবং সর্বাধিক উৎপাদন ক্ষমতা ৮০০০ একক পণ্য। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মোট স্থায়ী খরচ ২০,০০০ টাকা, প্রতি এককের মূল্য ১০ টাকা এবং প্রতি এককে চলমান পরিবর্তনশীল খরচ ৫ টাকা।
উপরোক্ত তথ্যের মাধ্যমে নিম্নোক্ত তালিকায় সমচ্ছেদ বিন্দু দেখানো হলো:
উৎপাদনের পরিমাণ একক | মোট বিক্রয়মূল্য প্রতি (একক ১০ টাকা) | মোট পরিবর্তনশীল খরচ (প্রতি একক ৫ টাকা) | মোট স্থায়ী খরচ ২০,০০০ টাকা | মোট ব্যয় (টাকায়) | লাভ/ক্ষতি (টাকায়) |
২০০০ | ২০,০০০ | ১০,০০০ | ২০,০০০ | ৩০,০০০ | ১০,০০০ ক্ষতি |
৪০০০ | ৪০,০০০ | ২০,০০০ | ২০,০০০ | ৪০,০০০ | লাভ বা ক্ষতি কিছুই। হয় না |
৬০০০ | ৬০,০০০ | ৩০,০০০ | ২০,০০০ | ৫০,০০০ | ১০,০০০ লাভ |
৮০০০ | ৮০,০০০ | ৪০,০০০ | ২০,০০০ | ৬০,০০০ | ২০,০০০ |
উপরোক্ত তালিকায় দেখা যাচ্ছে যে, ৪,০০০ একক পণ্য উৎপাদন করলে মোট ব্যয় হয় ৪০,০০০ টাকা এবং মোট বিক্রয়মূল্য
দাঁড়ায় ৪০,০০০ টাকা। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের লাভ বা লোকসান কিছুই হয় না। অতএব সমচ্ছেদ বিন্দু হচ্ছে ৪০০০ একক পণ্য। সমচ্ছেদ বিন্দুর চেয়ে বেশি পণ্য উৎপাদন করলেই প্রতিষ্ঠানের লাভ হতে থাকবে।
৫.২.৪ সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতি (Different methods of break-even analysis) :
সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ মৌলিকভাবে নির্দিষ্ট ও বিভিন্ন ব্যয় এবং মুনাফা স্তরের মধ্যকার সম্পর্ক পর্যালোচনা করে থাকে। কোনো প্রতিষ্ঠানের’ উৎপাদন ব্যয়, স্থির ব্যয় ও বিক্রয়ের মধ্যে বিরাজিত সম্পর্কসমূহের বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে সমচ্ছেদ বিন্দু (Break-even point) নির্ণয়ের প্রয়োজন হয়। সমচ্ছেদ বিন্দু বা ভারসাম্য অবস্থান নির্ধারণের জন্য প্রধানত নিম্নলিখিত তিনটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:
১। তালিকা বা সারণি প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি
২। গ্রাফ বা লেখচিত্র পদ্ধতি ও
৩। বীজগাণিতিক পদ্ধতি।
১। তালিকা বা সারণি প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ, উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয় সংক্রান্ত তথ্যাদি নির্দিষ্ট ছকে বা সারণিতে এমনভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করা হয়, যা দেখে কী পরিমাণ উৎপাদন ও বিক্রয় করলে প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান কোনোটাই হবে না এবং কোনো পর্যায়ে উৎপাদন বা বিক্রয় ও মোট ব্যয় কত হলে কী পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হবে কিংবা লোকসান হবে তা স্পষ্টরূপে বুঝা যায়।
২। গ্রাফ বা লেখচিত্র পদ্ধতি: গ্রাফ বা লেখচিত্রের সাহায্যেও সমচ্ছেদ বিন্দু নির্ণয় করা যায়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদনের পরিমাণ নির্দেশক একটি সমতল অক্ষরেখা (X) এবং মোট ব্যয় ও বিক্রয়ের পরিমাণ নির্দেশ করে একটি উল্লম্ব রেখা (Y) টানা হয়।
অতঃপর স্থায়ী খরচ রেখা এবং বিভিন্ন এককের জন্য বিক্রয়কৃত মোট ব্যয়ের পরিমাণ ও বিক্রয়ের পরিমাণের ভিত্তিতে রেখাচিত্র অঙ্কন করা হয়। এক্ষেত্রে যে বিন্দুতে মোট ব্যয় রেখা, মোট বিক্রয় রেখাকে ছেদ করে, তা-ই সমচ্ছেদ বিন্দু বা ব্রেক ইভেন পয়েন্ট।
৩। বীজগাণিতিক পদ্ধতি: বীজগাণিতিক সূত্রের সাহায্যে সমচ্ছেদ বিন্দু নির্ণয় করা যায়। এ পদ্ধতিতে মূলত প্রতি ইউনিং দত্তাংশ (Contribution) এবং মোট দত্তাংশের মাধ্যমে সমচ্ছেদ বিন্দু বের করা হয়। নিম্নে সমচ্ছেদ বিন্দু নির্ণয়েজ বীজগাণিতিক সূত্র উল্লেখ করা হলো:
সূত্রঃ ১। BEP (Units) = F/S-V
এখানে, BEP (Units) = সমচ্ছেদ বিন্দু (একক)
F = স্থায়ী খরচ (Fixed cost)
S = প্রতি ইউনিটের বিক্রনামূল্য (Selling price per unit)
V = প্রতি ইউনিটের পরিবর্তনশীল ব্যয় (Variable cost per unit)
অথবা, সমচ্ছেদ বিন্দু (BEP) = মোট স্থায়ী খরচ (Total fixed cost) / ইউনিট দত্তাংশ (Unit contribution)
সূত্রঃ ২। সমচ্ছেদ বিন্দু (BEP) = মোট স্থায়ী খরচ (Total fixed cost) / একক প্রতি প্রান্তিক আয় (Marginal income per unit)
সূত্রঃ ৩। সমচ্ছেদ বিন্দু (টাকায়) BEP = F / 1 – v/s
সূত্রঃ ৪। সমচ্ছেদ বিন্দু (টাকায়)
BEP = মোট স্থায়ী খরচ (Total fixed cost) / ইউনিট দত্তাংশ (Unit contribution) * ইউনিট বিক্রয়মূল্য (Unit selling price)
৫.২.৫ সমচ্ছেদ চার্ট বা রৈখিক চিত্র অঙ্কন প্রণালি (Drawing method of break-even chart) :
সমচ্ছেদ চার্ট বা রৈখিক চিত্র অঙ্কনের জন্য সর্বপ্রথম দুটি বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন হয় :
(ক) বিক্রয়ের পরিমাণ
(খ) স্থায়ী ও পরিবর্তনশীল ব্যয়।
নিম্নে সমচ্ছেদ চার্ট বা রৈখিক চিত্র অঙ্কন প্রণালি উল্লেখ করা হলো:
১। লেখচিত্রে প্রথমেই একটি অনুভূমিক বা সমতল অক্ষরেখা X টানা হয়। X অক্ষে কার্যমাত্রায় উৎপাদনের একক দেখানো হয়।
২।. X অক্ষের বাম প্রান্তে ব্যয় ও বিক্রয়মূল্য নির্দেশক অক্ষরেখা Y উল্লম্বভাবে টানা হয়।
৩। X অক্ষ বা অনুভূমিক রেখার নির্দিষ্ট দূরত্বকে নির্দিষ্ট কার্যমাত্রা বুঝানোর জন্য রেখাটিকে সুবিধামতো সমদূরত্ব বিশিষ্ট এক একটি ভাগে ভাগ করা হয়।
৪। Y অক্ষ বা উল্লম্ব রেখাটিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যয় বা বিক্রয়মূল্য বুঝানোর জন্য সুবিধামতো সমদূরত্ব বিশিষ্ট এক একটি ভাগে ভাগ করা হয়।
৫। X অক্ষের ডান প্রান্তে Y অক্ষের সমরূপ একটি উল্লম্ব রেখা টানা হয়।
৬। Y অক্ষের যে বিন্দুতে স্থায়ী ব্যয় রেখা নির্দেশ করে উক্ত বিন্দু হতে X অক্ষের সমান্তরাল করে X অক্ষের ডান প্রান্ত পর্যন্ত একটি সরল রেখা টানা হয়। একে স্থায়ী খরচ রেখা (Fixed cost line) বলা হয়।
৭। Y অক্ষের যে প্রান্ত থেকে স্থায়ী খরচ রেখা টানা হয়েছে উক্ত বিন্দুতে X অক্ষের ডান প্রান্তের উল্লম্ব রেখার মোট ব্যয় নির্দেশক বিন্দু পর্যন্ত একটি সরল রেখা টানা হয়। একে মোট ব্যয় রেখা বলা হয়।
৮। চিত্রের বাম প্রান্তে ‘৫ (শূন্য) বিন্দু হতে X অক্ষের ডান প্রান্তে উল্লম্ব রেখার নির্ধারিত কার্যমাত্রার বিক্রয়মূল্য নির্দেশক বিন্দু পর্যন্ত একটি সরল রেখা টানা হয়। একে মোট বিক্রয় রেখা বলা হয়।
৯। মোট ব্যয় ও বিক্রয় রেখা ও মোট বিক্রয় রেখা যে বিন্দুতে পরস্পর ছেদ করবে সেটাই হবে ব্রেক ইভেন পয়েন্ট বা সমচ্ছেদ বিন্দু।
১০। সমচ্ছেদ বিন্দুর বামে এবং মোট ব্যয় রেখা ও বিক্রয় রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে ক্ষতি বা লোকসান এলাকা (Loss area) এবং সমচ্ছেন বিন্দুর ডানে মোট ব্যয় রেখা ও বিক্রয় রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে মুনাফা এলাকা (Profit area) বলা হয়ে থাকে।
১১। সমচ্ছেদ বিন্দু হতে নির্ধারিত বিক্রয় মাত্রা পর্যন্ত দূরত্বকে নিরাপত্তা প্রান্ত (Margin of safety) বলা হয়ে থাকে। নিম্নে লেখচিত্রের সাহায্যে সমচ্ছেন বিন্দু দেখানো হলো:
উপরের চিত্রে OX অক্ষে কার্যমাত্রায় উৎপাদনের পরিমাণ (এককে) এবং OY অক্ষে বিক্রয় ও মোট ব্যয়ের পরিমাণ দেখানো হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ যাই হোক না কেন এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন খরচ ২০,০০০ টাকা বহন করতেই হয়। এ ২০,০০০ টাকা হলো স্থায়ী খরচ। এরপর উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবর্তনশীল খরচ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবে এক সময় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান যখন তার উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করে ৫.২৫ হাজার একক উৎপাদন করে তখন উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় লব্ধ আয় সমান হয়। উক্ত বিন্দুতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ ৫০,০০০ টাকা, আবার বিক্রয়লব্ধ আয়ও ৫০,০০০ টাকা। এ বিন্দুটিই হলো সমচ্ছেন বিন্দু বা ব্রেক ইভেন বিন্দু।
৫.২.৬ সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের সুবিধা (Advantages of break-even analysis) :
সমচ্ছেন বিশ্লেষণ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত সুবিধাসমূহ ভোগ করতে পারে:
১। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ থেকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সমচ্ছেদ বিন্দু জানতে পারে এবং তা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবস্থাপকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে লাগাতে পারে।
২। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ ব্যবস্থাপনাকে বিক্রয় পরিমাণের মাত্রা থেকে মুনাফা বা লোকসানের পূর্বানুমান সম্পর্কে ধারণা দেয়।
৩। সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের জন্য উৎপাদন কোন স্তরে থাকা প্রয়োজন তা সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ থেকে সহজেই জানা যায়।
৪। সমচ্ছেন বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ উৎপাদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিক্রয় বা বিক্রয় অনুযায়ী উৎপাদন বাড়াতে বা কমাতে সমর্থ হয়।
৫। সমচ্ছেল বিশ্লেষণ ব্যবস্থাপনাকে প্রতিষ্ঠানের পণ্যের জন্য সবচেয়ে লাভজনক মূল্যস্তর কোনটি হবে তা নির্ধারণে সহায়তা করে।
৬। সরকারি নীতি পরিবর্তনের ফলে পরিব্যয় বা খরচের কী কী বিষয়ের উপর প্রভাব পড়বে তা সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ থেকে পূর্বেই অনুমান করা যায়।
৭। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ থেকে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও মুনাফার মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে ব্যবস্থাপক যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এতে সহজে আয়ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
৮। বাজারে কাঁচামালের ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পেলে মুনাফার ফলাফল কীরূপ হবে তা নিরূপণেও সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ সহায়তা করে।
৯। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কাজের বিভিন্ন স্তরের ইউনিট খরচের পূর্বাভাস পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে উৎপাদন স্তরের একক প্রতি মোট ব্যয় নিরূপণ করা সহজ হয়।
১০। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রয়, বিক্রয় খরচ এবং মুনাফার সাথে বাজেটকৃত বিক্রয় খরচ ও মুনাফার তুলনামূলক বিচার করা সম্ভব হয়। মোটকথা, সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কী পরিমাণ পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় করলে প্রতিষ্ঠান সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে তা ব্যবস্থাপক সহজে জানতে পারেন এবং ব্যয়-মুনাফা-পরিমাণ সম্পর্ক পর্যালোচনা করে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
৫.২.৭ সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাসমূহ (Disadvantages or limitations of break- even analysis) :
সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো:
১। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ কতকগুলো মৌলিক পূর্বানুমান বা শর্তের উপর নির্ভরশীল। এ পূর্বানুমান বা শর্তগুলো সঠিক না হলে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ ভুল ফলাফল প্রদান করতে পারে।
২। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণে বিনিয়োগকৃত মূলধনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ মূলধনের উপর প্রদেয় সুদ বহনের উদ্দেশ্যে বিক্রয়ের পরিমাণ নির্ধারণে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করা হয়।
৩। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণে নির্ধারিত কার্যমাত্রায় স্থায়ী খরচ অপরিবর্তিত থাকবে বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়।
৪। এক্ষেত্রে একক প্রতি পরিবর্তনশীল ব্যয় স্থির থাকে বলে ধরা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদনের ফলে একক প্রতি পরিবর্তনশীল ব্যয় হ্রাস পেয়ে থাকে।
৫। সমচ্ছেদ বিন্দু নির্ণয়ের জন্য আধা-পরিবর্তনশীল ব্যয়সমূহকে স্থায়ী ও পরিবর্তনশীল ব্যয়ে বিভক্ত করা খুবই জটিল বিষয়। ফলে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ বাধার সম্মুখীন হয়।
৬। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ সঠিক না হলে এবং যে-সমস্ত অনুমান বা শর্তের উপর এটি প্রতিষ্ঠিত হয় তা ভুল হলে সমচ্ছেদ রৈখিক চিত্র বিকৃত রূপ ধারণ করতে পারে।
৭। পণ্য মূল্যের স্থিতিশীলতার অভাবে সমচ্ছেদ বিন্দু বিশ্লেষণ দীর্ঘকালীন সময়ের পরিকল্পনা বা কার্যের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।
৮। সমচ্ছেদ বিশ্লেষণে স্থায়ী ব্যয় পরিচালন ক্ষমতা, উৎপাদন প্রণালি, বিক্রয় নীতি ও বিক্রয়মূল্য ইত্যাদি অপরিবর্তিত থাকবে বলে ধরা হয়, কিন্তু বাস্তবে তা সবসময় অপরিবর্তিত থাকে না। ফলে সমচ্ছেদ রৈখিক চিত্রে সমচ্ছেদ বিন্দু ভুল ফলাফল প্রকাশ করতে পারে।
উপরোল্লিখিত সীমাবদ্ধতাগুলো সমচ্ছেদ বিশ্লেষণের কার্যকারিতা ও উপযোগিতা হ্রাস করতে পারে। ফলে প্রতিষ্ঠানে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণ ব্যবহারে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। তবে উল্লিখিত সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আগে থেকে সতর্ক থাকলে সমচ্ছেদ বিশ্লেষণকে ভুল পথে চালনার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করা যাবে।
৫.৩ স্থায়ী খরচ, পরিবর্তনশীল খরচ ও অবচয় (Explain fixed cost, variable cost & depreciation) :
ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ওয়ার্কস অ্যাকাউন্ট্যান্টস এর মতে, “উৎপাদনের পরিমাণের তারতম্য হওয়ার ফলে যে-সমস্ত খরচগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে, তাকে স্থায়ী খরচ বলে।”
অবচয় সম্পর্কে প্রখ্যাত হিসাবশাস্ত্রবিদগণের দেয়া কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

৫.৪ ফুড প্ল্যান্টের মুনাফা/লাভজনকতা বিশ্লেষণ (Profitability analysis of a food plant) :
৫.৫ সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ (Feasibility cost estimates) :
৫.৬ খাদ্য সংবেদনশীলতা এবং ঝুঁকি বিশ্লেষণ (Explain the sensitivity and risk analysis) :
৫.৭ অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ (Economic analysis) :
৫.৭.১ অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের পদ্ধতি (Methods of economic analysis) :
The following steps were undertaken to analyse each option financially.
৫.৭.২ প্রকল্প মূল্যায়ন (Project evaluation) :
মূলধনের দক্ষ ব্যবহার মূল্যায়ন এবং তুলনার জন্য নিম্নের সূত্র প্রয়োগ করা হয়। যথা-
মূলধনের দক্ষতা ηç= বর্তমান নীট মূল্য / ছাড়কৃত মূলধনের খরচ
মূলধন ও উৎপাদন দক্ষতার মধ্যবর্তী বন্ধ বাণিজ্যকে উৎপাদন দক্ষতা ও খরচ হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
ηç= মূলধন দক্ষতা উৎপাদন দক্ষতা
আরও দেখুন :