আতপচালের গুঁড়ি তৈরি ও গুড়ি হতে বিভিন্ন পিঠা তৈরি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আতপচালের গুঁড়ি তৈরি ও গুড়ি হতে বিভিন্ন পিঠা তৈরি

আতপচালের গুঁড়ি তৈরি ও গুড়ি হতে বিভিন্ন পিঠা তৈরি

 

আতপচালের গুঁড়ি তৈরি ও গুড়ি হতে বিভিন্ন পিঠা তৈরি

প্রাসঙ্গিক তথ্য :

পিঠা তৈরির প্রধান উপাদানই হলো আতপ চালের গুঁড়ি বা আটা। চাল মেশিনে ভাজিয়ে এই গুঁড়ি তৈরি করা হয়। কিন্তু মেশিনের ভাঙানো গুঁড়ি দিয়ে ভালো গিঠা হয় না। দোকান থেকে কেনা শুকানো কিংবা বাসি ওঁড়িতেও পিঠার স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রতিদিনই চাল গুঁড়ি করে নিতে হয়।

ঢেঁকি দিয়ে চাল গুঁড়ি করলে সবচেয়ে ভালো পিঠা তৈরি হয়। শিল-পাটায় গুঁড়ি করলেও ভালো হয়। এই ভঁড়ি শুকিয়ে পানির পরিমাণ ১% বা তার কম নিয়ে আসলে ৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়।

আতপ চালের গুঁড়ি তৈরি :

উপকরণ : আতপ চাল, শিলপাটা, পানি ।
গুঁড়ি তৈরির জন্য নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।

১. উন্নতমানের পরিষ্কার ১ কেজি আতপ চাল সংগ্রহ করতে হবে।

২. উক্ত চাল পরিষ্কার পানিতে ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজানোর পর পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।

৩. শিলপাটায় অল্প অল্প করে বেটে আতপ চালের গুঁড়ি তৈরি করা যাবে। মেশিনেও গুঁড়ি করা যায়, সেক্ষেত্রে ভিজানোর প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র চাল ধুয়ে তাৎক্ষনিকভাবে মেশিনে গুড়ি তৈরি করা যাবে

৪. গুঁড়ি ঠাণ্ডা করে প্যাকেট করে সংরক্ষণ করতে হবে।

ভাপা পিঠা তৈরি :

উপকরণ : চালের গুঁড়া- ১ কেজি, পাটালী গুড় ২৫০ গ্রাম, দুধ- ২০০ মিলি., লবণ-১৫ গ্রাম, নারিকেল-১টি, ভাতের হাঁড়ি-১টি, ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা ১টি, শুঁড়ি চালনি ১টি, বাঁশের চালুনি, শিল-পাটা-১টি, ছোট বাটি- ২টি, পাতলা কাপড়-১ খণ্ড, মাটির সরা ১টি।

পিঠা তৈরির জন্য নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।

১. চালের গুঁড়ি সংগ্রহ করতে হবে। ভাপা পিঠা ও পাটিসাপটা পিঠার জন্য মেশিনের গুঁড়ির চেয়ে শিল- পাটার বাটা গুঁড়ি হলে ভালো হয়।

২. হাঁড়িতে চার ভাগের তিন ভাগ পানি নিয়ে চুলায় চড়াতে হবে।

৩. চালের গুঁড়ির সাথে লবণ, দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে চালুনিতে চেলে নিতে হবে।

৪. হাঁড়ির মুখে ঢাকনা বা সরা (মাঝখানে ছিদ্রযুক্ত) দিয়ে ঢেকে দিয়ে চতুর্দিকের মুখ আটা বা ময়দা গুলিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। এতে করে হাঁড়ির বাষ্প চারদিক দিয়ে বের না হয়ে মাঝের ছিদ্রপথে বের হবে।

৫. ছোট বাটিতে অর্ধেক চালের গুঁড়ি দিয়ে তার উপর কোরানো নারিকেল ও পাটালি গুড়ের কিছু টুকরো দিয়ে পুনরায় চালের গুঁড়ি দিয়ে বাটি ভরতে হবে।

৬. পাতলা ভেজা কাপড় দিয়ে বাটি ঢেকে হাঁড়ির উপর মাটির ঢাকনার মাঝের ছিদ্রপথের উপর উল্টো করে বসাতে হবে।

৭. খুব সাবধানে উল্টানো বাটি সরিয়ে পিঠাটি পাতলা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে হবে।

৮. তারপর একটি বড় সরা বা ঢাকনা দিয়ে সম্পূর্ণটা ঢেকে দিতে হবে।

৯. ৫ মিনিট পর কাপড়সহ পিঠা তুলে আনতে হবে। পিঠা সিদ্ধ হয়েছে কি না হাতের আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে পরীক্ষা করা যাবে।

১০. এভাবে পিঠা তৈরি করে গরম অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে।

সর্তকতা:

১. হাঁড়ির উপর পিঠা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে ভেঙে না যায়।

২. পিঠা সিদ্ধ হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে নামাতে হবে।

পাটি সাপটা পিঠা তৈরি :

প্রাসঙ্গিক তথ্য। পিঠার কথা লিখতে গেলে প্রথমেই যার নাম আসে সেটি পাটিসাপটা। পাটির মতো পেচিয়ে বানানো হয় বলে একে পাটিসাপটা পিঠা বলে। পাটির ভিতরে যে পুর দেয়া হয় তার উপর নির্ভর করে পিঠার দাম ধরা হয়। শীতকালে এ পিঠাটি খুবই চলে। ইদানীং এটি শহরের মিষ্টান্ন দোকানের মাঝে শোভা পার

উপকরণ : আতপচালের গুঁড়া, বেকিং পাউডার, দুধ, চিনি, ক্ষীরসা, এলাচ গুঁড়া, ঘি, সয়াবিন তেল, কড়াই, গোল চামচ, পাত্র, ছুরি ও পানি।

 

আতপচালের গুঁড়ি তৈরি ও গুড়ি হতে বিভিন্ন পিঠা তৈরি

চিত্র : পাটিসাপটা পিঠা ।

পিঠা তৈরির জন্য নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে :

১. পিঠা তৈরির উপকরণগুলো সংগ্রহ করে নিতে হবে।

২. ৭৫০ গ্রাম চালের গুঁড়ি ২৫০ মি.লি. পানি, সামান্য বেকিং পাউডার, ৫০ গ্রাম চিনি ও ৫০ মি.লি. দুধ মিশিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে পিঠা তৈরির পোলা তৈরি করতে হবে।

৩. এরপর একটি পাত্রে ক্ষীরসা নিয়ে তাতে চিনি ও এলাচ গুঁড়া ও ২ চামচ ঘি দিয়ে নেড়েচেড়ে গরম করে নিতে হবে।

৪. রুটির গোলা চামচ দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে হবে যাতে জমে না যায়।

৫. চুলার তাওয়া বা কড়াই গরম হলে তেলের পোচ দিয়ে নিতে হবে ।

৬. আধা কাপ গোলা নিয়ে নিয়ে কড়াইতে ঢেলে দিয়ে কড়াই ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ লেপটে দিতে হবে।

৭. গোলার উপরিভাগ শক্ত হয়ে এলে রুটির এক প্রান্তে ক্ষীরসার দিয়ে ডিমের অমলেটের মতো বা পার্টির মতো পেঁচিয়ে দিতে হবে।

৮. সামান্য তেলে ভেজে তুলতে হবে।

 

আতপচালের গুঁড়ি তৈরি ও গুড়ি হতে বিভিন্ন পিঠা তৈরি

 

৯. প্রতিবার নতুন পিঠা তৈরির পূর্বে কড়াইতে তেল লাগিয়ে নিতে হবে। ক্ষীরসার পরিবর্তে নারিকেল কুঁরিয়ে পাটালি শুঁড়ের মিশ্রিত কোরা দেয়া যায়।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment