ভিটামিনের কাজ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ভিটামিনের কাজ

ভিটামিনের কাজ

ভিটামিন :

শর্করা, আমিষ স্নেহ পদার্থ ছাড়াও কিছু কিছু জৈব উপাদান সুস্থতা ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয়। এগুলোকে খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন বলে। বেরিবেরি ও স্কার্ভি রোগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন আবিষ্কার হয়েছে।

বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা যেমন- অসবার্ন, মেন্ডেল, ম্যাককলাম ও ডেভিস প্রমাণ করেন যে, লেবুতে স্কার্ভি প্রতিরোধক ভিটামিন সি, মাখন ও চর্বিতে ভিটামিন-এ, দুধ, গম ও চালের কুঁড়ায় ভিটামিন বি পাওয়া যায়। খাদ্যে ভিটামিন খুবই অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয়। দ্রবণীয়তার ভিত্তিতে ভিটামিন দুই প্রকার। যেমন –

(১) চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন : ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে

(২) পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন : ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি।

ভিটামিন এ :

(ক) চোখ সুস্থ রাখে ও স্বল্প আলোতে দেখার ক্ষমতাকে রক্ষা করে।

(খ) অস্থিকোষ ও দাঁতের গঠনকে প্রভাবিত করে।

(গ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।

উৎস : সয়াবিন, চাল, ভুট্টা, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, পাকা আম, পাকা পেঁপে, পাকা কাঁঠাল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।

 

ভিটামিনের কাজ

চিত্র : ভিটামিন ‘এ’ খাদ্যের উৎস

ভিটামিন ডি এর কাজ :

(ক) শরীরের অস্ত্র ও কিডনি হতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে।

(খ) শরীরের হাড় ও দাঁত সুগঠিত ও মজবুত করে ।

(গ) শিশুদের রিকেট ও বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া (Osteomalacia) রোগ প্রতিরোধ করে।

উৎস : ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন, যকৃৎ ও তৈলাক্ত মাছ। সাধারণত উদ্ভিজ্জ উৎসে ভিটামিন ডি নেই।

 

ভিটামিনের কাজ

চিত্র: ভিটামিন ‘ডি’ এর উৎস।

ভিটামিন ই এর কাজ :

(ক) কোষের ঝিল্লি গঠন করে।

(খ) ক্যারোটিন বিপাকে সহায়তা করে।

(গ) গর্ভপাত প্রবণতা কমিয়ে দেয়।

উৎস: উদ্ভিজ্জ তেল (বাদাম, ভুট্টা, সূর্যমুখী, সয়াবিন, পাম, নারিকেল) ভিটামিন ই এর উৎকৃষ্ট উৎস। দুধ, মাখন ডিমে এই ভিটামিন পাওয়া যায় ।

 

ভিটামিনের কাজ

চিত্র: ভিটামিন ‘ই’ খাদ্যের উৎস

ভিটামিন কে এর কাজ :

(ক) রক্ত জমাটকরণ কাজে সহায়তা করে।

উৎস : লেটুস, বাধাকঁপি, ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি, ডাল, দুধ, ডিম, মাছ মাংস ইত্যাদি ।

 

ভিটামিনের কাজ

চিত্র : ভিটামিন ‘কে’ এর উৎস

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স:

ভিটামিন বি একটি একক ভিটামিন নয়। প্রায় ৮ প্রকার বি ভিটামিনকে একত্রে বি-
কমপ্লেক্স বলা হয়। এগুলোর প্রত্যেকটির আলাদা গুণ ও কাজ আছে। এগুলো হলো- (১) ভিটামিন বি১ (২) ভিটামিন বি২ (৩) নায়াসিন (বি) (8) পিরিডক্সিন (বি) (৫) পেন্টোথেনিক এসিড (৬) বায়োটিন (৭) ফলিক এসিড ও (৮) ভিটামিন বি১২ ।

ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) এর কাজ :

(১) বেরিবেরি রোগ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

(২) শর্করা জাতীয় খাদ্য বিপাকে সহায়তা করে।

(৩) পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করে।

উৎস: ঢেঁকিছাঁটা চাল, বাদাম, গম, মটরশুঁটি, মাছ, ডিম, যকৃৎ ইত্যাদি ।

 

ভিটামিনের কাজ

চিত্র: ভিটামিন ‘বি১’ এর উৎস

ভিটামিন বিং (রিবোফ্লেভিন) এর কাজ :

(১) কোষকলার শ্বসন ও বিপাক কাজে সহায়তা করে।

(২) ত্বকের সৌন্দর্য ও সজীবতা রক্ষা করে।

(৩) চোখ ও স্নায়ুর সুস্থতা রক্ষা করে।

উৎস: ঢেঁকিছাঁটা সিদ্ধচাল, ডাল, ভুট্টা, বাদাম, অঙ্কুরিত শস্য দানা, মটরশুঁটি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি।

 

ভিটামিনের কাজ

চিত্র: ভিটামিন ‘বি’ এর উৎস।

নায়াসিন বা নিকোটেনিক এসিড :

(১) নায়াসিন শর্করা, আমিষ ও স্নেহ থেকে শক্তি উৎপাদন শ্বসন কাজে সহায়তা করে।

(২) সুস্থ ত্বক, অস্ত্র ও স্নায়ুর জন্য নায়াসিন প্রয়োজন ।

উৎস: ডাল, বাদাম, ভুট্টা, তেলবীজ, ছোলা, মাছ, মাংস ও যকৃৎ ইত্যাদি।

পিরিডক্সিনের কাজ :

(১) আমিষ বিপাকে এনজাইমের সহায়তা করে।

(২) বাড়ন্ত শিশুর বর্ধনে সহায়তা করে।

উৎস: ঈস্ট, চালের কুঁড়া, গম, ছোলা, বাদাম, সবুজ শাক, মাছ, মাংস, ও যকৃৎ ইত্যাদি।

ফলিক এসিড :

(১) কোষ বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

(২) রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।

উৎস: বাদাম, ছোলা, ডাল, চাল, আটা, সবুজ শাকসবজি, কলিজা, বৃক্ক, মাছ ও মাংস ইত্যাদি।

ভিটামিন বি১২ :

(১) রক্তের লোহিত কণিকা গঠন করে।

(২) স্বাস্থ্যের উন্নতি ও ক্ষুধা বৃদ্ধিতে প্রভাবিত করে।

উৎস: একমাত্র উৎস প্রাণিজ খাদ্য যেমন- যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।

ভিটামিন সি :

(১) এটি কোলাজেন নামক আমিষ তৈরি করে হাড়, তরুণাস্থি ও ত্বকের রক্ষণাবেক্ষণ করে।

(২) রক্তের বিশুদ্ধতা ও রক্ত গঠনে সহায়তা করে।

(৩) ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্য করে।

(৪) এটি জারন প্রতিরোধক বা এন্টি অক্সিডেন্ট (Anti oxidant) হিসেবে কাজ করে।

উৎস: সব রকম টাটকা ফল ও সবজি, আমলকী, পেয়ারা, কুল, কামরাঙ্গা, আমড়া, আনারস, জাম্বুরা, লেবু কাঁচামরিচ ইত্যাদি। টিনজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ভিটামিন সি থাকে না।

 

ভিটামিনের কাজ

চিত্র: ভিটামিন ‘সি’ এর উৎস।

পানি :

আম, কাঁঠাল, ডাব, তরমুজ, পেঁপে, আনারস, জাম্বুরা, আঁখ বিভিন্ন প্রকার ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। মানব দেহের প্রায় ৬৩% পানি। শরীরে পানির ঘাটতি হলে নানাবিধ সমস্যা দেখা
দেয় ।

পানির কাজ :

(১) পানি পরিপাক ও পরিশোষণে সাহায্য করে।

(২) বিপাক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন দূষিত পদার্থ নিষ্কাশণ করে।

(৩) দেহ থেকে ঘাম নিরসন ও বাষ্পীভবনের দ্বারা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।

উৎস : খাবার পানি, চা, দুধ, কফি, সবজি ও ফল থেকে প্রাপ্ত পানি।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment