আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় খাদ্যের উপাদান ও কাজ। খাদ্য ছাড়া আমাদের জীবনধারণ সম্ভব নয়। দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং চলাফেরা করার জন্য সবল, রোগমুক্ত ও সুস্থ শরীর প্রয়োজন। সুস্থ শরীর বজায় রাখার জন্য আমরা যা কিছু খেয়ে থাকি তাই খাদ্য। আমরা সারাদিন অনেক রকমের খাবার খাই, তার সবটুকু আমাদের কাজে লাগে না। খাদ্যের যেটুকু কাজে লাগে সে টুকুই দেহের পুষ্টি সাধন করে। তাই আজ খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, বিভিন্ন রূপ এবং এর কাজ নিয়ে আজকের আলোচনা।
Table of Contents
খাদ্যের উপাদান ও কাজ
খাদ্যের উপাদান ও কাজ
আমরা শরীর সুস্থ রাখার জন্য যে সকল খাদ্য গ্রহণ করে থাকি তাতে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য উপাদান থাকে । অধিকাংশ খাদ্যেই এক বা একাধিক খাদ্য উপাদান থাকে। খাদ্যে যে উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে তাকে সে উপাদানযুক্ত খাদ্য বলা হয়। খাদ্যের উপাদানগুলোকে সাধারণত ছয়ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
১. শ্বেতসার বা শর্করা (Carbohydrate)
২. আমিষ (Protein)
৩. স্নেহ বা চর্বি (Fat)
৪. খনিজ লবণ (Minerals)
৫. খাদ্যপ্রাণ (Vitamin )
৬. পানি (Water)
শ্বেতসার বা শর্করা :
শ্বেতসার মূলত কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন (C, H, O) সমন্বয়ে গঠিত এক প্রকার জৈব যৌগ যা সকল প্রকার উদ্ভিদে পাওয়া যায়। শর্করার স্বাদ মিষ্টি বা মিষ্টিহীন এবং রং সাদা। উদ্ভিদে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা উৎপন্ন হয়, যা দাহ্য হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানি ও শক্তি (ক্যালরি) উৎপন্ন হয়। শর্করা প্রধানত তিন প্রকার, যথা- মনোস্যাকারাইড, ডাই স্যাকারাইড ও পলি স্যাকারাইড। প্রায় সব ধরনের শর্করাই পানিতে দ্রবণীয়। সেলুলোজ (আঁশ) শর্করার একটি অপাচ্য ধরন যা ধান, গম, যব ও শাক-সবজির উপরের খোসা বা বাকলে পাওয়া যায়। এই সেলুলোজ মানুষের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
শর্করার কাজ-
(ক) শর্করার প্রধান কাজ হচ্ছে শরীরের তাপ ও শক্তি সরবরাহ করা। (১ গ্রাম শর্করা হতে ৪ ক্যালরি তাপশক্তি পাওয়া যায়)।
(খ) শর্করা স্বল্প আমিষ যুক্ত খাদ্যকে (Low Protein diet) তাপ উৎপাদানের কাজ থেকে অব্যাহতি দেয় ।
(গ) কিছু শর্করা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অস্ত্রের স্বাভাবিক সংকোচন ত্বরান্বিত করে। যেমন- সেলুলোজ ও পেকটিন।
(ঘ) কিছু শর্করা রক্তের কোলেস্টরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
(ঙ) অতিরিক্ত শর্করা শরীরে গ্রাইকোজেন হিসেবে জমা থাকে।
(চ) দেহকে কিটোসিস নামক রোগ হতে রক্ষা করে।
শর্করার উৎস
চাল, আটা, আলু, কচু, কলা, গুড়, চিনি, মধু, কাসাভা, ভুট্টা, আম, খেজুর, নারিকেল, কাজুবাদাম, বেল, সরিষা, আতা, পেঁপে, চালতা ইত্যাদি ।
আমিষ
আমিষ হচ্ছে নাইট্রোজেন জাতীয় একপ্রকার জটিল জৈব উপাদান। কোষের প্রোটোপ্লাজমের প্রধান উপাদান হচ্ছে প্রোটিন। তাই প্রোটিনকে জীবকোষের প্রাণ বলা হয়। প্রোটিন খাওয়ার পর তা ভেঙে এমাইনো এসিডে পরিণত হয়। প্রোটিনে প্রায় ২০ ধরনের অ্যামাইনো এসিড থাকে। সবচেয়ে উন্নতমানের আমিষ হচ্ছে প্রাণিজ আমিষ।
আমিষের কাজ
(ক) প্রধান এবং প্রথম কাজ হলো- দেহ গঠন, বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণ।
(খ) খাদ্যের পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়াকে যে সকল এনজাইম প্রভাবিত করে তা প্রোটিন থেকে উৎপন্ন হয়। যেমন : পেপসিন, ট্রিপসিন ইত্যাদি।
(গ) আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে এন্টিবডি ও এন্টিজেন পদার্থ তৈরি হয় যা আমিষ হতে উৎপন্ন হয়। এরা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
(ঘ) রক্তের হিমোগ্লোবিন নামক আমিষ বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছ দেয়।
(ঙ) আমিষও তাপশক্তি উৎপাদন করে (১ গ্রাম আমিষ থেকে প্রায় ৪ ক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়)। পর্যাপ্ত শর্করা ও স্নেহের অভাব হলে আমিষ ভেঙে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয় ।
(চ) আমিষের অভাবে শরীরের কোষ থেকে পানি বের হয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমে শ্বেত রোগ ( Edema) হয়।
আমিষের উৎপত্তি :
মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, চিনা বাদাম, মাশরুম, শিমের বিচি ইত্যাদি।
আরও দেখুন :