আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় উৎপাদন ক্ষেত্র ও পদ্ধতিভেদে ফসলের শ্রেণিবিভাগ
Table of Contents
উৎপাদন ক্ষেত্র ও পদ্ধতিভেদে ফসলের শ্রেণিবিভাগ
ভূমিকা:
খাদ্য জীবের জন্য অপরিহার্য। শরীরের ক্ষয়পূরণ, স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং কর্মশক্তির জন্য আমরা খাদ্য গ্রহণ করি। খাদ্যের প্রধান উৎস হলো কৃষি। প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহের মধ্যে কেবলমাত্র পানি ও লবণই বাহির থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব। অপরাপর সকল খাদ্যের জন্য নির্ভর করতে হয় কৃষির ওপর । কৃষি বলতে আমরা কৃষির ৪টি উপখাত বুঝে থাকি। এ খাতগুলো হলো-
(ক) ফসল উপখাত
(খ) প্রাণী সম্পদ উপখাত
(গ) বনজ সম্পদ উপখাত
(ঘ) মৎস্য সম্পদ উপখাত ।
উপরোক্ত ৪টি উপখাত থেকে আমরা খাদ্যের সব উপাদানগুলো পেয়ে থাকি। ধান, গম, ভুট্টা, যব, জোয়ার, বাজরা, চীনা, কাউন ইত্যাদি প্রধানত শর্করা বা শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য। অল্প পরিমাণ, আমিষ, খনিজ লবন এবং ভিটামিনও এসব খাদ্যে পাওয়া যায়। মাছ, মাংস, ডিম ও দুধে আছে আমিষ ও তেল জাতীয় খাদ্য। টাটকা শাক-সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, সহজলভ্য আমিষ এবং খনিজ লবণ।
বিভিন্ন প্রকার ফলমূল সরবরাহ করে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও বিবিধ খাদ্য উপাদান। সরিষা, তিল, রাই, সয়াবিন, সূর্যমূখী, চীনাবাদাম, রেড়ি প্রভৃতি গাছের বীজ থেকে স্নেহজাতীয় উপাদান পাওয়া যায়। ডালডা, বনস্পতি, মার্জারিন প্রভৃতি কৃত্রিম ঘি ও মাখনের উৎসও উদ্ভিজ্জ তেল। আখ, বীট, তাল, খেজুর থেকে শর্করা পাওয়া যায়। চা গাছের পাতা এবং কোকো ও কফির বীজ থেকে তৈরি করা হয় উত্তম পানীয়।
কচি নারিকেলের পানি একটি সুস্বাদু ও উৎকৃষ্ট পানীয়। খাদ্যদ্রব্যকে মুখরোচক ও সুস্বাদু করার জন্য ব্যবহার হয় পেঁয়াজ রসুন, হলুদ, মরিচ, আদা, ধনিয়া, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, তেজপাতা ইত্যাদি উদ্ভিদের বীজ বা গাছের অংশ। মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি সরবরাহ করে শরীরের জন্য অপরিহার্য প্রোটিন বা আমিষ। বনজ সম্পদ থেকে আমরা পাই ফলমূল, জ্বালানি ও আসবাবপত্র ইত্যাদি।
কৃষি ফসলের শ্রেণিবিভাগ
সাধারণত সমগ্র কৃষি ফসলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. উৎপাদন ক্ষেত্র ও পদ্ধতি ভেদে ফসলের শ্রেণিবিভাগ
২. মৌসুমভেদে কৃষি ফসলের শ্রেণিবিভাগ
৩. ব্যবহারভেদে কৃষি ফসলের শ্রেণিবিভাগ
উৎপাদন ক্ষেত্র ও পদ্ধতিভেদে ফসলের শ্রেণিবিভাগ
উৎপাদন ক্ষেত্রভেদে : উৎপাদন ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য ও পরিচর্যার উপর নির্ভর করে কৃষি ফসলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) মাঠফসল বা কৃষিতাত্ত্বিক ফসল ।
(খ) বাগান ফসল বা উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল ।
মাঠ ফসল
যে সমস্ত ফসল বা শল্যকে একসাথে বড় এবং বিস্তীর্ণ মাঠে চাষাবাদ করা হয় এবং প্রতিটি গাছকে এককভাবে যত্ন নেওয়া হয় না, তাকে মাঠ ফসল বলে। যেমন- ধান, গম, ডাল, ভুট্টা, আখ, আলু ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে ফসলের যত্ন নেওয়া হয়। জমিতে প্রতিটি গাছের জন্য আলাদাভাবে ও নিখুঁতভাবে যত্ন নেওয়া হয় না ।
ৰাগান বা উদ্যান ফলল
সাধারণত যে সমস্ত ফসলের প্রতিটি গাছকে রোপণ বা বপনের সময় থেকে কর্তন বা ফসল সংগ্রহ করা পর্যন্ত পৃথকভাবে যত্ন নেওয়া হয় তাকে উদ্যান ফসল বলে। যেমন- আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, পেঁপে, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি। উদ্যান ফসলের প্রতিটি চারা গাছের বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া হয় এবং খুব সতর্কতার সাথে জমি প্রস্তুত করা হয়।
চিত্র : মাঠকসন ও উদ্যানফসল
উৎপাদন পদ্ধতিভেদে
উৎপাদন পদ্ধতিভেদে কৃষি ফসলকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
(ক) বৃষ্টি নির্ভর ফসল ও
(খ) আর্দ্র বা সেচ প্রাপ্ত ফসল।
বৃষ্টিনির্ভর বা শুল্ক ফসল :
যে সকল ফসলে সেচের জন্য প্রাকৃতিকভাবে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে চাষ করা হয় সে ফসলকে বৃষ্টিনির্ভর বা শুল্ক ফসল বলে। যেমন- আউশ ও আমন ধান, গম, ডালশস্য, সরিষা, তিল, পাট, ভুট্টা, চিনা, কাউন ইত্যাদি। বার্ষিক বৃষ্টিপাত যেখানে ৫০০ মিলিমিটার সেসব এলাকার এ ফসল ভালো জনে ।
আর্দ্র বা সেচ প্রাপ্ত ফসল :
যে সকল ফসল বা শস্য সেচ ছাড়া চাষাবাদ করা যায় না সেগুলোকে সেচ প্রাপ্ত ফসল বলে। এ সকল ফসল আবাদে কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। যেমন- উচ্চ ফলনশীল ধান, বোরো ধান, আলু, শীতকালীন সবজি যেমন- টমেটো, ঢেঁড়স, মরিচ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক ইত্যাদি।
বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৭৬০ মিলিমিটারের বেশি এবং যেখানে পানি আটকিয়ে সেচ দেওয়া যায়, সেখানে এ ফসল ভালো হয়।
এ ধরনের কৃষিকাজ ব্যয়বহুল। এ জন্য গভীর নলকূপ ও অগভীর নলকূপ বসিয়ে ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সেচকাজ করা হয়। তাছাড়া খাল, বিল, নদী নালার পানি সেচের মাধ্যমেও ফসল উৎপাদন করা হয়।
আরও দেখুন :