গাঁজন বর্ণনা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় গাঁজন বর্ণনা ,যা খাদ্য এবং পানীয় প্রক্রিয়া অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

গাঁজন বর্ণনা

গাঁজন বা ফারমেন্টেশন বা চোলাইকরণ বলতে সাধারণত মানুষ অ্যালকোহল উৎপাদনকে বুঝে। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন শস্য ও ফল থেকে বিয়ার ও মদ তৈরি করা হয়। ইংরেজি, ফারমেন্টেশন শব্দটি ল্যাটিন ফারভার (Fervere) শব্দ থেকে এসেছে।

ফারভার অর্থ হলো ফুটানো। ফল বা শস্যের নির্যাসের (Extract) উপর ঈস্ট (yeast) এর জৈব রাসায়নিক ক্রিয়ায় CO2 উৎপন্ন হয়। যখন এই CO2 বুদবুদ আকারে উপরে উঠে তখন এতে ফুটানো পানির মতো মনে হয়।

 

গাঁজন বর্ণনা

 

সংজ্ঞা : যে প্রক্রিয়ায় কোনো জটিল বা বৃহৎ জৈব যৌগকে জীবাণু নিঃসৃত এনজাইমের উপস্থিতিতে ভেঙে বিয়োজিত বা বিশ্লেষিত করে অপেক্ষাকৃত সরল যৌগে পরিণত করা হয় তাকে গাজন বা চোলাইকরণ বলা হয়।

এটি একটি অবায়বীয় (Anerobic) প্রক্রিয়া। অন্যভাবে অবায়বীয় শ্বসনকেও গাঁজন বলে। গাজন প্রক্রিয়ায় শ্বেতসার জাতীয় বস্তু হতে ঈস্ট নামক অণুজীব এর সাহায্যে অ্যালকোহল তৈরি করা হয়। শ্বেতসার জাতীয় বস্তু হতে জীবাণু দ্বারা প্রথমে গ্লুকোজ তৈরি করা হয় এবং গ্লুকোজ হতে নিম্নের বিক্রিয়ায় অ্যালকোহল প্রস্তুত করা হয়।

 

গাঁজন বর্ণনা

 

উপরের বিক্রিয়ায় ঈস্ট জটিল অণু গ্লুকোজকে জাইমেস নামক এনজাইম নিঃসৃত করে ভেঙে বিয়োজনের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত সরল যৌগ ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি করে। গাঁজন ক্রিয়া সম্পন্ন করতে নিম্নলিখিত শর্তাবলি থাকা জরুরি—

(i) তাপমাত্রা ২০°–৪০° সে. এর মধ্যে হতে হবে।

(ii) দ্রবণের ঘনমাত্রা অত্যধিক হওয়া উচিত নয়।

(iii) দ্রবণে উপযুক্ত পরিমাণ জীবাণু বা এনজাইম উপস্থিত থাকতে হবে।

উদাহরণ ঃ গাঁজন প্রক্রিয়ায় দুধ হতে দই ও পনির তৈরি, শসার পিকেল, ভিনেগার ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

 

গাঁজন বর্ণনা

 

খাদ্যে গাঁজন প্রক্রিয়ার ব্যবহার পাঁচটি উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। যেমন-

(i) খাদ্যে বহুমাত্রিক স্বাদ, ঘ্রাণ ও বুনট আনয়ন করে খাদ্যকে সমৃদ্ধ করা।

(ii) ল্যাকটিক অ্যাসিড, অ্যাসেটিক অ্যাসিড, অ্যালকোহল ও ক্ষারীয় গাজনের মাধ্যমে বেশ কিছু খাদ্যকে সংরক্ষণ করা।

(iii) আমিষ অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন সহযোগে খাদ্যের জৈবিক উপাদানের সমৃদ্ধি ঘটানো।

(iv) খাদ্য গাঁজন প্রক্রিয়ার সময় বিষক্রিয়া দূর করা।

(v) তাপ প্রয়োগ, সময় ও জ্বালানি ব্যয় কমানো।

 

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment