স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

আজকে আমরা স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য সম্পর্কে আলোচনা করবো । যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

চর্বি হলো ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্য উপাদান যা অন্যান্য খাদ্য উপাদান অপেক্ষা সবচেয়ে বেশি তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে চর্বিজাতীয় খাদ্যে অন্যতম প্রধান উপাদান ফ্যাটি এসিড কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত। চর্বিজাতীয় খাদ্যের ক্যালোরি মূল্য প্রোটিন অথবা কার্বোহাইড্রেটের তুলনায় বেশি (দ্বিগুণেরও বেশি)। যেমন 1g ফ্যাট বা চর্বি 9kcal শক্তি উৎপাদন করে, যেখানে 1g প্রোটিন বা কার্বোহাইড্রেট 4kcal শক্তি উৎপাদন করে। বিভিন্ন পশুর চর্বি, মাখন, বনস্পতি, সরিষার তেল, নারিকেল তেল, সয়াবিন তেল, ঘি, মাছের তেল, কডলিভার ওয়েল স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্যের উৎস।

ফ্যাটি এসিডের গ্লিসারল এস্টারকে ফ্যাট বা চর্বি বলে। কক্ষ তাপমাত্রায় তরল থাকে এমন ফ্যাটকে তেল বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ ঘি, মাখন, নারকেল তেল, বাদাম তেল, অলিভ তেল ইত্যাদি।

অন্যভাবে, সম্পৃক্ত বা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ও ট্রাইহাইট্রিক অ্যালকোহলের (যেমন গ্লিসারিন) এস্টারকে তেল ও চর্বি বলে। যেমন স্টিয়ারিক, পামিটিক, অলিক, লিনোলিক প্রভৃতি উচ্চতর ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারিনের ট্রাই এস্টারের প্রত্যেকটি তেল ও চর্বি।

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

চর্বিজাতীয় খাদ্যের উৎস

১। প্রাণিজ উৎস –

 গৃহপালিত পশু যেমনঃ শুকর, ভেড়া, মেষ এবং গবাদি পশু থেকে প্রচুর পরিমাণে চর্বি পাওয়া যায়।

২। সামুদ্রিক উৎস

সামুদ্রিক মাছও চর্বি বা তৈলের অন্যতম প্রধান উৎস। যেমন তিমি, হাঙ্গর প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছ তেল বা চর্বির উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে। 

৩। উদ্ভিদ উৎস

উদ্ভিদের বীজ (যেমনঃ সয়াবিন, তুলা বীজ, সরিষার বীজ ইত্যাদি), উদ্ভিদের ফল (যেমনঃ জলপাই, তাল, নারিকেল ইত্যাদি) এবং উদ্ভিদের মূল, শাখা-প্রশাখা, কান্ড তেল বা চর্বির উৎস হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।

চর্বিজাতীয় খাদ্যের রাসায়নিক গঠন ও প্রকারভেদ :

চর্বির রাসায়নিক গঠন কাঠামো নিবরূপ-

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

সাধারণত তিন অণু ফ্যাটি এসিড ও এক অণু গ্লিসারিন পরস্পর বিক্রিয়া করে এস্টার অর্থাৎ গ্লিসারিন ট্রাই এস্টার বা ট্রাই এস্টার গ্লিসারল বা গ্লিসারাইড বা তৈল ও চর্বি উৎপন্ন করে। যেমন

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

চর্বিজাতীয় খাদ্যের ধরন

 দু ধরনের হতে পারে।

১। সরল

তিন অণু একই ধরনের ফ্যাটি এসিড এবং এক অণু গ্লিসারিনের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তেল ও চর্বি বা গ্লিসারাইডকে সরল তেল ও চর্বি বা গ্লিসারাইড বলে । যেমন

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

২। মিশ্র 

তিন অণু ভিন্ন ধরনের ফ্যাটি এসিড এবং এক অণু গ্লিসারিনের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তেল ও চর্বি বা গ্লিসারাইডকে মিশ্র তেল ও চর্বি বা গ্লিসারাইড বলে ।

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

চর্বিজাতীয় খাদ্যের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলী

(ক) ভৌত ধর্মাবলী :

১। তেলসমূহ কঠিন এবং চর্বিসমূহ তরল অবস্থায় অবস্থান করে এবং নিম্ন গলনাংক বিশিষ্ট। 

২। বিশুদ্ধ তেল ও চর্বিসমূহ কর্ণহীন, স্বাদহীন এবং গন্ধহীন।

৩। তেল ও চর্বিসমূহ পানিতে অদ্রবণীয় এবং জৈব দ্রাবকে সহজেই দ্রবণীয়।

8। এরা পানি অপেক্ষা হালকা।

৫। এরা গরম অ্যালকোহলে সহজে দ্রাব্য হলেও ঠান্ডা অ্যালকোহলে স্বল্প দ্রাব্য। 

৬। সাবান বা জিলেটিনের উপস্থিতিতে এরা সহজেই পানিতে ইমালসন তৈরি করে।

৭। এরা মৃদু তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী।

৮। এরা পানির কঠিন পৃষ্ঠতলে সমভাবে বিস্তৃত থাকে ।

(খ) রাসায়নিক ধর্মাবলীঃ

তেল ও চর্বির গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ধর্মাবলী বা বিক্রিয়া সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো- 

১। লিপেজ (Lipase) এনজাইমের উপস্থিতিতে তেল ও চর্বিকে আর্দ্রবিশ্লেষণ করলে গ্লিসারিন ও ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন হয়। যেমন

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

২। জলীয় ক্ষারের উপস্থিতিতে তেল ও চর্বিকে উত্তপ্ত করলে (আর্দ্রবিশ্লেষণ) গ্লিসারিন ও ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন হয়। যেমন

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

৩। নিকেল প্রভাবকের উপস্থিতিতে গ্লিসারাইল ট্রাইওলিওয়েট, হাইড্রোজেনেরে সাথে বিক্রিয়া করে গ্লিসারাইল ট্রাইস্টিয়ারেট উৎপন্ন করে। যেমন

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

৪। উচ্চ চাপে ও উচ্চ তাপে কপার ক্রোমাইট প্রভাবকের উপস্থিতিতে গ্লিসারাইল ট্রাইওলিওয়েট, হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে গ্লিসারল ও অ্যালকোহল উৎপন্ন করে। যেমন

 

স্নেহজাতীয় বা চর্বিজাতীয় খাদ্য । Fats

 

চর্বিজাতীয় খাদ্যের গুরুত্ব বা প্রয়োগ

(ক) সাধারণ গুরুত্ব :

১। অনেক শুদ্ধ তেল বা ড্রাইং তেল (যেমনঃ তিসির তেল) রয়েছে যারা পেইন্ট ও বর্নিস তৈরির কাজে ভূমিকা রাখে।

২। অর্ধ-শুদ্ধ তেল বা অর্ধ-ড্রাইং তেল যেমনঃ সরিষার তেল, চিনাবাদাম তেল ইত্যাদি রান্না করার কাজে লাগে। 

৩। অতষ্ক বা ননড্রাইং তেল সাবান, গ্লিসারিন, পেইন্ট ও বার্নিস শিল্পকারখানায় পিচ্ছিলকারক পদার্থ হিসেবে ভূমিকা পালন করে । ৪। তেল ও চর্বিসমূহ ভেষজ গবেষণাগারে ব্যবহৃত হয়।

(খ) ফিজিওলোজিক্যাল গুরুত্ব:

১। তেল ও চর্বির যথেষ্ট পুষ্টি থাকায় এটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ প্রতি গ্রাম তেল বা চর্বি সাত কিলোক্যালরি শক্তি যোগান দেয়।

২। তেল ও চর্বি শরীরের তাপ হারানোর জন্য উত্তম ধারক হিসেবে ভূমিকা পালন করে । 

৩। তেল ও চর্বি অর্থাৎ ট্রাইঅ্যাসাইল গ্লিসারল প্রাণীজগতে সঞ্চিত জ্বালানী হিসেবে কাজ করে ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment