আজকে আমরা খাদ্যের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করবো । যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।
Table of Contents
খাদ্যের শ্রেণিবিভাগ । Classification of Food
খাদ্যকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যস্ত করা যায়। যেমন
(ক) উৎস অনুসারেঃ
উৎস অনুসারে খাদ্যকে নিম্নরূপ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন
১। প্রাণিজ খাদ্যঃ
প্রাণিজ উৎস হতে প্রাপ্ত খাদ্যই হলো প্রাণিজ খাদ্য। যেমন মাংস ও মাংসজাত খাদ্য, মাছ,মাছজাত ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাদ্য, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য, ডিম ও পোল্ট্রি প্রভৃতি।
২। উদ্ভিজ্জ খাদ্যঃ
উদ্ভিদ উৎস হতে প্রাপ্ত খাদ্য-ই হলো উদ্ভদ খাদ্য যেমন ফল ও ফলজাত খাদ্য, দানাশস্য ও দানাশস্যজাতীয় খাদ্য, শাকসবজি, চিনি ও চিনিজাত খাদ্য প্রভৃতি।
(খ) পচনের উপর নির্ভর করেঃ
পচনের উপর নির্ভর করে খাদ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন
১। পচনশীল খাদ্যঃ
যে সকল খাদ্য খুব সহজেই পচে যায়, তাদেরকে পচনশীল খাদ্য বলে। যেমন মাছ, দুধ প্রভৃতি।
২। অর্থ- পচনশীল খাদ্যঃ
যে সকল খাদ্যের স্থায়িত্বকাল পচনশীল খাদ্যের তুলনায় বেশি অর্থাৎ যে সকল খাদ্য ধীরে ধীরে পচে, তাদেরকে অর্ধ-পচনশীল খাদ্য বলে। যেমন শাকসবজি, ফল-মূল প্রভৃতি।
৩। অপচনশীল খাদ্যঃ
যে সকল খাদ্যের স্থায়িত্বকাল পচনশীল বা অর্ধপচনশীল খাদ্যের চেয়ে অনেক বেশি, তাদেরকে অপচনশীল খাদা বলে। যেমন দানাজাতীয় শস্য (ধান, গম, ভুট্টা প্রভৃতি)
(গ) দেহে কাজের ধরন অনুসারেঃ
দেহে কাজের ধরন অনুসারে খাদ্যকে নিম্নরূপ চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন:
- পুষ্টিসাধক, ক্ষয়পূরক ও বৃদ্ধি সহায়ক খাদ্য
- তাপশক্তি উৎপাদক খাদ্য
- দেহের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া পরিচালনাকারী খাদ্য
- দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনকারী খাদ্য
(ঘ) উপাদান অনুসারেঃ
উপাদান অনুসারে খাদ্যকে নিম্নরূপ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন:
১। দেহ পরিপোষক খাদ্যঃ
যে সকল খাসা দেহ গঠন, ক্ষয়পূরণ ও শক্তি উৎপাদনে অংশ নেয় তাদেরকে দেহ পরিপোষক খাদ্য বলে। যেমন
- কার্বোহাইড্রেটঃ ভাত, রুটি, চিনি, আলু প্রভৃতি
- প্রোটিনঃ মাছ, মাংস, দুধ ডাল ইত্যাদি
- লিপিডঃ বাদাম, তেল, চর্বি, ঘি, মাখন প্রভৃতি
২। দেহ সংরক্ষক খাদ্যঃ
যে সকল খাদ্য দেহের রোগ সংক্রমণ ক্ষমতা অর্জনে ও বিপাকে অংশ নেয় তাদেরকে দেহ সংরক্ষক খাদ্য বলে। যেমন
- ভিটামিন ফল, মাছ, সবুজ সবজি, ডিম, দুধ প্রভৃতি
- খনিজ পদার্থ সবুজ শাকসবজি, ফল, মাছ, ডিম ইত্যাদি
- পানি বিভিন্ন খাদ্যের পানি, ডাবের পানি, শরবত প্রভৃতি
(ঙ) এসিডের উপস্থিতি অনুসারেঃ
খাদ্যে বিদ্যমান এসিডের উপস্থিতি অনুসারে খাদ্যকে নিম্নরূপ কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে।
১। এসিডযুক্ত খাদ্য :
যে সকল খাদ্যে pH 4.5:37 তাদেরকে এসিডযুক্ত খাদ্য বলে। যেমন কমলা, লেবু, টমেটো প্রভৃতি। এ সব খাদ্যে তাপ সহাকারী ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট, মোল্ড জন্মাতে পারে যাদেরকে ধ্বংস করতে ফুটন্ত পানির তাপমাত্রাই যথেষ্ট।
২। উচ্চ এসিডযুক্ত খাদ্যঃ
যে সকল খাদ্যে pH 3.7-2.3 তাদেরকে উচ্চ এসিডযুক্ত খাদ্য বলে। যেমনঃ জ্যাম, আচার, বিভিন্ন ধরনের গাঁজনকৃত খাদ্য। এ সব খাদ্যেও ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট, মোল্ড জন্মাতে পারে যাদের তাপসহ্য ক্ষমতা খুব কম। পাস্তুরাইজেশন তাপমাত্রা অর্থাৎ 60-80°C তাপমাত্রা এদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।
৩। মধ্যম এসিডযুক্ত খাদ্যঃ
যে সকল খাদ্যে pH 4.5-5.0 তাদেরকে মধ্যম এসিডযুক্ত খাদ্য বলে। যেমনঃডুমুর প্রভৃতি।
৪। স্বল্প এসিডযুক্ত খাদ্যঃ
যে সকল খাদ্যে pH 5.0-6.8 তাদেরকে স্বল্প এসিডযুক্ত খাদ্য বলে। যেমন মাছ, মাংস, দুধ, শাকসবজি প্রভৃতি। এসব খাদ্যকে জীবাণুমুক্ত করতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ও বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় ।
৫। ক্ষারযুক্ত খাদ্যঃ
যে সকল খাদ্যে pH 7 এর উর্ধ্বে তাদেরকে মধ্যম ক্ষারযুক্ত খাদ্য বলে। যেমন
বেশি বয়সী সামুদ্রিক মাছ, পুরাতন ডিম প্রভৃতি।
(চ) ব্যাপন ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে :
ব্যাপন ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে খাদ্যকে নিম্নরূপ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে।
১। ব্যাপনযোগ্য খাদ্য :
যে সকল খাদ্য পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং ব্যাপনক্রিয়ায় ক্ষুদ্রাস্ত্র প্রাচিরে শোষিত হয়ে রক্তে বা লসিকায় মিশে তাদেরকে ব্যাপনযোগ্য খাদ্য (Diffusible food) বলে। যেমন বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, সরল কার্বোহাইড্রেট, অ্যামাইনো এসিড ভিটামিন। এ জাতীয় খাদ্যের পরিপাকের প্রয়োজন হয় না।
২। অব্যাপনযোগ্য খাদ্য :
যে সকল খাদ্য পানিতে দ্রবীভূত হয় অথবা আংশিক দ্রবণীয় এবং সরসরি ব্যাপনক্রিয়ায় রক্তে বা লসিকায় শোষিত হতে পারে না তাদেরকে অব্যাপনযোগ্য খাদ্য (Non-Diffusible food) বলে। যেমন প্রোটিন, পলিস্যাকারাইড, ফ্যাট, অলিগোস্যাকারাইড প্রভৃতি। এ জাতীয় খাদ্যের পরিপাকের প্রয়োজন হয় । খাদ্যের প্রতিন্যাজাতকরণে এ শ্রেণিবিভাগ অতি তাৎপর্যপূর্ণ ।
আরও দেখুনঃ