আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মাষকলাই ও খেসারি ডালের বেসন থেকে বড়া, বেগুনি, চালকুমড়ার বড়ি, কচুরি ও আমৃতি তৈরি
Table of Contents
মাষকলাই ও খেসারি ডালের বেসন থেকে বড়া, বেগুনি, চালকুমড়ার বড়ি, কচুরি ও আমৃতি তৈরি
মাষকলাই ও খেসারি ডালের বেসন থেকে বড়া, বেগুনি, চালকুমড়ার বড়ি, কচুরি ও আমৃতি তৈরি
বেসন তৈরি :
প্রথমে উত্তম মানের খেসারি অথবা মাষকলাইয়ের ডাল বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কুলা দিরে ঝেড়ে খেসারি বা মাকলাইয়ের ডালের ধুলাবালি ও অপদ্রব্য পরিষ্কার করতে হয়। পাথরের বাঁতার খেসারির ভাগের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়।
পম ভাঙানোর মেশিনে এই ভাল ভাঙারে বেসন পাওয়া যায়। ছোলার বেসনের মতোই খেসারি বেসন দিয়ে বড়া, বেগুনি, পিঁয়াজু ইত্যাদি তেলে ভেজে উপাদেয় নাস্তা হিসেবে খাওয়া হয়।
বড়া তৈরি :
পরিমাণমতো বেসন নিয়ে তাতে লবণ ও পানি দিয়ে গোলা তৈরি করে নিতে হয়। পোলার 1 সাথে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা ইত্যাদি মিশিয়ে নিতে হয়। কড়াইয়ে তেল গরম হলে ছোট ছোট বড়া তৈরি করে তেলে আস্তে আস্তে লাল করে ভাজা হয়। গরম গরম সস দিয়ে খেলে ভাল লাগে।
ৰেঙনি তৈরি :
খেসারির বেসন পরিমাপমতো নিয়ে বড়া তৈরির মতো গোলা তৈরি করতে হয়। তার পর বাজার থেকে লম্বা বেগুন কিনে পাতলা করে স্লাইস করা হয়। অতঃপর স্লাইসগুলো গোলায় ডুবিয়ে তেলে ভেজে নিলেই বেগুনি তৈরি হয়ে যায়। রমজান মাসে এই বেগুনির খুবই চাহিলা হয়।
মাষকলাই ও চালকুমড়ার বড়ি :
পরিপক্ক বড় আকারের চাল কুমড়া সংগ্রহ করে কাটতে হয়। কুমড়ার খোসা ও বিচি ফেলে মাংসল অংশ কুরানির সাহায্যে পেস্ট বা মঞ্চ তৈরি করতে হয়। এই মণ্ড একটি পাতলা কাপড়ে নিয়ে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। তারপর এই চালকুমড়ার মত পরিমাণমতো নিয়ে ডালের কাই-এর সাথে মেশাতে হয়।
এদিকে খোসা ছাড়ানো পরিষ্কার পুট মাষকলাইয়ের ডাল সংগ্রহ করে ৫-৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভেজানো ডাল পরিষ্কার পানিতে ধুরে শিল-পাটার পিষে কাই তৈরি করতে হয়। চালকুমড়ার পেস্ট ও ডালের কাই ভালো করে মিশ্রণ করে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করে তা পাটি ও বড় পলিখিন শিটে সাজিয়ে রাখতে হয়।
২-৩ দিন বড়ি রোদে শুকাতে হয়। শীতকালে এ বড়ি তৈরি করে পলিব্যাগে বা টিনের কৌটায় বায়ুরোধী করে সংরক্ষণ করতে হয়। মাষকলাইয়ের বড়ি মাছের তরকারি বা সবজির লাবড়াতে ব্যবহার করা যায়।
চিত্র : বড়া, বেক্ষনী ও মাসকলাইয়ের শাড়ি
চাল কুমড়ার বড়ি রান্নার পদ্ধতি : পদ্ধতি জানা না থাকলে রান্নার সময় চাল কুমড়ার বড়ি আস্ত থাকে না তরকারির সাথে গুলিয়ে যায়। ফলে তরকারির স্বাদ যেমন নষ্ট হয় তেমনি এর সৌন্দর্যের হানি হয়। প্রথমে বড়িগুলোকে হালকা মসলা দিয়ে মেখে নিতে হবে। কড়াইয়ের গরম তেলে বড়িগুলোকে হালকা বাদামি করে ভাজতে হবে।
অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে বাকি প্রয়োজনীয় মসলা লবণ সহযোগে ভালোভাবে কষিয়ে এর মধ্যে ভাজা বড়িগুলো ছেড়ে দিতে হবে। মাছ দিয়ে রান্না করতে চাইলে মাছ আলাদা কষিয়ে নিতে হবে। এরপর কষানো শেষে ঐ বড়িগুলোর সাথে মাছও ছেড়ে দিতে হবে।
এবার সব উপকরণ কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে কষানোর পর তাতে হালকা করে গুলানো তেঁতুলের পানি ঢেলে ১০-১৫ মিনিট উনুনে রেখে তারপর তরকারির পাতিলটি নামিয়ে এনে পরিবেশন করতে হবে।
কচুরি :
এটি একটি নাস্তা (Snacks) জাতীয় হালকা খাবার। বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যা বেলা বা গ্রীষ্মের ছুটির দিনের বিকেলে আসরকে জমজমাট করতে শিঙাড়া, কচুরি ও ডালপুরীর তুলনা নেই। কচুরি তৈরিতে ছোলার ডাল, ময়দা ও কিছু মসলা লাগবে। প্রথমে পরিমাণমতো টাটকা ছোলার ডাল নিয়ে সামান্য চুন ও পানি দিয়ে মেখে নিয়ে রেখে দিতে হবে। ডাল ভালো করে সিদ্ধ করে পানি ঝরাতে হবে।
কচুরির জন্য কালোজিরা, মৌরি, কড়াইয়ে ভেজে গরম থাকতেই থেতো করে নিতে হবে। এটাই কচুরির মসলা। পুরে খাবার সোডা মেশালে কচুরির ভিতর জালি জালি হবে। এরপর ময়দার খামির করে তা রুটির মত বেলে নিতে হবে।
এরপর পুলি পিঠার মতো কেটে তাতে কচুরীর পুর দিয়ে চারধারে এঁটে দিতে হবে। কড়াইয়ের ঘি গরম করে কাঁটা কচুরিগুলো ক্রমাগত ভেজে নিতে হবে। কচুরিগুলো বাদামি রং হলে তা নামিয়ে ঘি মথিয়ে সসসহ পরিবেশন করা যাবে। ছোলার ডাল ছাড়াও মুগ, কলাইয়ের ডাল দিয়েও কচুরি তৈরি করা যায়।
আমৃতি :
মিষ্টান্নের জগতে আমৃতি খুবই পরিচিতি নাম। এটি খেতে সুস্বাদু এবং দেখতে অনেকটা জিলাপির মতো। তবে জিলাপির চেয়ে এটি বেশ শক্ত এবং গোলাকার। এটি চিনির রসে ভিজিয়ে শক্ত করা হয়।
আমৃতির জন্য চিনির সিরা তৈরি : প্রথমে তিন ভাগ চিনি ও এক ভাগ পানি নিতে হবে। এরপর কড়াইতে চিনিসহ পানি জাল দিতে হবে। চিনির গাদ বা ফেনা উঠলে তা চামচ দিয়ে তুলে অন্য পাত্রে রাখতে হবে। তারপর জাল কমিয়ে রাখতে হবে।
সমস্ত গাদ ফেলে দেয়ার পর সিরা লালচে হয়ে উঠলে কড়াই নামিয়ে সিরা ছেকে রাখতে হবে। তারপর অল্প আঁচে চুলায় চাপলে ঘন সিরায় পরিনত হবে।
আমৃতি তৈরি : প্রথমে আমৃতি বানাবার ১০ দিন আগে ১ কেজি মাষকলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে । ডাল ভিজবার ২দিন পর ২০ গ্রাম চুনের পানি মিশাতে হয়। ১০ দিন পর ঐ ডাল বেটে আধা কেজি আতপচাল গুঁড়ি ভালো করে মিশিয়ে গোলা তৈরি করতে হবে। গোলা যেন পাতলা হয়। এরপর কড়াইতে ঘি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে।
জিলাপির মতো একটি ন্যাকড়া জোগাড় করে তাতে ছিদ্র করে গোলা ভরতে হবে। এরপর কড়াইয়ে গরম ঘিয়ের মধ্যে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমৃতির মতো পাক দিতে হবে। পাক যত সুন্দর হবে আমৃতি দেখতে তত সুন্দর লাগবে। কড়াইতে যে কটা আমৃতি আটবে ঠিক সে কঁটাই দিতে হবে।
উল্টে পাল্টে দিয়ে ভাজা লালচে রঙের হয়ে এলে ঝাঁঝরি চামচ দিয়ে তুলে আমৃতি চিনির সিরায় ডুবাতে হবে। ১০- ২০ মিনিট পর তুলে পাত্রে সাজিয়ে রাখতে হবে। অনেকে মাষকলাই ডালের পরিবর্তে সুজি দিয়ে আমৃতি তৈরি করে থাকেন ।
আরও দেখুন :