আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মাশরুমের সংরক্ষণ। মাশরুম হলো এক ধরনের ফাঙ্গাস যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং খাদ্য হিসেবে প্রচুর জনপ্রিয়। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। মাশরুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, এবং এটি বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা হয়, যেমন স্যুপ, স্যালাড, ও তরকারিতে।
Table of Contents
মাশরুমের সংরক্ষণ
প্যাকেটকৃত তাজা মাশরুম গরমের দিনে ১ থেকে ২ দিন এবং শীতের দিনে ২ থেকে ৩ দিন সাধরণভাবে রেখে খাওয়া যায়। রেফ্রিজারেটরের মধ্যে নরমাল চেম্বারে (১০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায়) সিলিং অবস্থায় ৭/৮ দিন রেখে খাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে প্যাকেটটি রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে একবারেই পুরো প্যাকেটের মাশরুম খেয়ে ফেলতে হবে।
তাই প্যাকেট করার সময় পারিবারিক প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট ছোট প্যাকেট করা উচিত। মাশরুম রোদে অথবা ইলেকট্রিক ড্রায়ারে শুকিয়ে এয়ার টাইট প্যাকেটে ৫-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়।
মাশরুম সংগ্রহের সময়
যথাসময়ে মাশরুম সংগ্রহ করতে পারলে মাশরুমের সংরক্ষণকাল বেড়ে যায় এবং চাষি লাভবান হয় ।
ওয়েস্টার মাশরুম সংগ্রহের সময়:
মাশরুম যথেষ্ট বড় হয়েছে কিন্তু মাশরুম পিলিয়াসের শিরাগুলো ঢিলা হয়নি অথবা কিনারা পাতলা হয়ে ফেটে যায়নি এমতাবস্থায় মাশরুম সংগ্রহ করতে হবে।
মিল্কি হোয়াইট মাশরুম সংগ্রহের সময়:
এ মাশরুমের সংরক্ষণকাল সবচেয়ে বেশি। সাধারণ রুম তাপমাত্রায় একে ৪-৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়। এই মাশরুম সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো মাশরুমের আকার প্রায় ৪-৫ ইঞ্চি হলে এবং মাশরুম যথেষ্ট রসালো থাকবে। এ সময় সংগ্রহ করলে প্যাকেটে মাশরুমের পরিমাণ বেশি পাওয়া যাবে এবং মাশরুমের বাজারমূল্য বেড়ে যাবে ।
স্ট্র মাশরুম মাশরুম সংগ্রহের সময়:
সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। এর সংরক্ষণকাল ২৪ ঘণ্টারও কম। মাশরুমের ক্যাপ ফোটে যায়নি অর্থাৎ বাটন/এগ অবস্থায় সংগ্রহ করা উপযুক্ত সময়।
মাশরুম সংগ্রহ কৌশল
১. প্যাকেটের মাশরুম পাঁচ আঙ্গুলের সাহায্যে আলতো মোচড় দিয়ে তুলে নিতে হবে।
২. সংগৃতীত মাশরুম গোড়া কেটে পরিচ্ছন্ন করে গ্রেডিং করতে হবে ।
৩. গ্রেড অনুযায়ী মাশরুমগুলোকে ০.২-০.২৫ মি.মি. পুরুত্বের পিপি ব্যাগে ভরে সিলিং করে বাজারজাত করতে হবে ।
মাশরুম কেন সংরক্ষণ করা উচিত
তাজা মাশরুমে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এর সংরক্ষণ কাল (Shelf Life) খুবই কম। মাশরুম তুলে আনার পরপরই এর রং এবং গঠনের দ্রুত পরিবর্তন শুরু হয়। তাই সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করলে রং ও গঠন ঠিক রেখে বেশিদিন ব্যবহার করা যায়। মাশরুম ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হলে কিছু বিষয় সব সময় মেনে চলতে হবে যেমন-
ক) মাশরুম সঠিক সময়ে অর্থাৎ পরিপক্ব অবস্থায় তুলতে হবে।
খ) যথা নিয়মে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
গ) সংরক্ষণ অবশ্যই ঠাণ্ডা বায়ুরোধী অবস্থায় করতে হবে।
তাজা মাশরুম সংরক্ষণ:
১. তাজা মাশরুম তোলার ১২ ঘণ্টা পূর্বে সরাসরি গায়ে পানি স্প্রে না করলে সেই মাশরুম তুলে, কেটে গ্রেডিং করে পিপি ব্যাগের মধ্যে সিলিং করে ঘরে ঠাণ্ডা জায়গায় ২ থেকে ৩ দিন রেখে খাওয়া যায়।
২. রেফ্রিজারেটরে মধ্যে নরমাল চেম্বারে (১০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায়) সিলিং অবস্থায় ৭/৮ দিন রেখে খাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে প্যাকেটটি রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে একবারেই পুরো প্যাকেটের মাশরুম খেয়ে ফেলতে হবে। তাই প্যাকেট কারার সময় পারিবারিক প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট ছোট প্যাকেট করা উচিত।
৩. বাসাবাড়িতে দীর্ঘ দিন রেখে খাওয়ার জন্য ২% ফুটন্ত লবণ পানিতে ২ থেকে ৩ মিনিট সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে টিফিন বক্সে অথবা ঢাকনাযুক্ত কৌটায় ডিপ ফ্রিজের মধ্যে ৫ থেকে ৬ মাস রাখা যাবে।
৪. এছাড়া মাশরুম ব্লানচিং করে লবণ দ্রবণে ৫-৬ মাস রেখে খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ব্লানচিং করা পদ্ধতি হচ্ছে ২% ফুটন্ত লবণ পানিতে ২ থেকে ৫ মিনিট মাশরুম সিদ্ধ করে বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ২% লবণ (সোডিয়াম পটাসিয়াম মেটাবাইসালফাইট) ও ১% সাইট্রিক এসিড মিশ্রিত লবণ দ্রবণে বায়ুরোধী করে জীবাণুমুক্ত করার পর ঠাণ্ডা করে ৫-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায় ।
শুকনা মাশরুম সংরক্ষণ:
মাশরুম রোদে, ডিহাইড্রেশন পদ্ধতিতে অথবা ইলেকট্রিক ড্রায়ারে শুকিয়ে এয়ার টাইট প্যাকেটে ৫-৬ মাস রেখে সংরক্ষণ করা যায় । শুকনা মাশরুম ব্লেন্ডার মেশিনে পাউডার করে এয়ার টাইট প্যাকেটে রেখে একই ভাবে ৫-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়।
মাশরূম শুকানোর পদ্ধতি :
গ্রামীণ পর্যায়ে মাশরুম শুকিয়ে পলিথিন ব্যাগে প্যাকেট করে ৫-৬ মাস অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়। তাজা মাশরুমে ৭০-৯৫% আর্দ্রতা রাখতে হয়। সোলার ড্রায়ারে মাশরুম শুকানো যেতে পারে। মাশরুম শুকানো পদ্ধতি নিম্নরূপ-
১. প্রথমে মাশরুমের ডাঁটার নিচের অংশ কেটে পরিষ্কার করতে হয় ।
২. পানি ফুটিয়ে তাতে ২ ভাগ লবণ দিতে হয় ।
৩. তারপর লবণ পানিতে ৩ মিনিট মাশরুম ডুবিয়ে রাখতে হয় ।
৪. তারপর মাশরুমগুলো তুলে একটি ট্রেতে রেকে ঠান্ডা করা হয় ।
৫. ট্রেতে মাশরুম ছড়িয়ে সাজিয়ে রাখা হয় যাতে একটি মাশরুম অন্যটির উপর না পড়ে ।
৬. ২-৩ দিন পরপর রোদে শুকাতে হয় ।
৭. মাশরুম শুকনো পাতার মতো মচমচে হয়ে যাবে ।
৮. এরপর পলিব্যাগে ভরে মুখ সিল করতে হবে ।
৯. শুকনো মাশরুম ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে ।
সাধারণত ১০০ গ্রাম তাজা মাশরুম থেকে ১০ গ্রাম শুকনো মাশরূম পাওয়া যায়। শুকানো ছাড়া মাশরুম সংরক্ষণের একটি সহজ পদ্ধতি হলো ১৮-২০% লবণের দ্রবণে ১% সাইট্রিক এসিড দিয়ে রাখা যায় । এভাবে মাশরুম দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। শুকানো মাশরুম খাবার আগে প্যাকেট থেকে বের করে হালকা গরম পাণিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে মাশরুমগুলোকে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে পূর্বের ন্যায় তাজা হয়ে যাবে।
আরও দেখুন :