আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ময়দা থেকে বেকারি খাদ্য
Table of Contents
ময়দা থেকে বেকারি খাদ্য
ময়দা থেকে বেকারি খাদ্য
বিস্কুট তৈরি :
আমাদের দেশে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নতমানের বিস্কুট তৈরি হচ্ছে। কোন কোন ইন্ডাস্ট্রিতে রপ্তানিযোগ্য বিস্কুটও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু মফস্বল শহর ও গ্রামে ইট ও মাটি নির্মিত চুল্লিতেও বিস্কুট তৈরি হয়ে থাকে । বিস্কুট তৈরির অনেক ফর্মুলা আছে। নিম্নে একটি সাধারণ পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া হলো-
উপকরণ :
প্রস্তুতপ্রণালি :
একটি পাত্রে ময়দা, লবণ, দুধ ও বেকিং পাউডার মিশানো হয়। মিশানোর পর চালুনিতে ছাঁকা যেতে পারে। ভ্যানিলা, অরেঞ্জ অয়েল, ডিম ও ঘি দুই মিনিট ধরে উত্তমভাবে মেশানো হয়। আগের তৈরি শুষ্ক মিশ্রণ এতে আস্তে আস্তে যোগ করা হয়। প্রায় ৩ মিনিট ধরে মেশানোর কাজ চলে।
চিত্র : বিস্কুট কাটার
খামির বা ডো তৈরি হলে তা ১৫ মিনিট রেখে দেওয়া হয় এবং তারপর এমনভাবে ঘূর্ণায়মান যন্ত্র দ্বারা চাপ প্রয়োগ করা হয় যাতে ৩ মি.মি. পুরু হয়। তারপর বিস্কুট কাটার দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাটা হয়। অয়েল পেপার বিছানো বা তৈলাক্ত ট্রেতে বিস্কুটগুলোকে সাজিয়ে রাখা হয়।
এবং বিস্কুটের উপরিভাগে ডিম বা দুধ বা চর্বি দ্বারা হালকা প্রলেপ দেওয়া হয় এবং ১০ মিনিট এভাবে রেখে দেওয়া হয়। চুল্লিতে ২০৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় হালকা বাদামি বর্ণ হওয়া পর্যন্ত ১০ মিনিট তাপ দেওয়া হয়। তারপর কক্ষ তাপমাত্রায় বিস্কুট ঠাণ্ডা করা হয়।
পলিথিন কাগজের মোড়ক বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে সম্পূর্ণ বায়ুরোধী করে বিস্কুট সিল করা হয়। চুল্লির পরিবর্তে ঘরোয়া ওভেনে বিস্কুট তৈরি করা যায়।
কেক তৈরি :
কেক তৈরির উপাদানগুলো নিম্নরূপ-
প্রস্তুতপ্রণালি :
একটি পাত্রে ময়দা, বেকিং পাউডার ও লবণ মেশানো হয়। বাটার বা মাখনের সাথে ভ্যানিলা যোগ করে ভালোভাবে মিশানো হয়। এর সাথে আস্তে আস্তে চিনি যোগ করে এমনভাবে নেড়ে মেশানো হয় যাতে সম্পূর্ণ চিনি গলে যায় এবং মিশ্রণ অনেকটা হালকা হয়ে যায়। দুধ ও ডিম উপরোক্ত মিশ্রণে যোগ করে এমনভাবে নেড়ে মেশানো হয় যাতে মিশ্রণটি আরও হালকা হয়।
প্রথম ধাপে তৈরিকৃত শুষ্ক মিশ্রণ এবং পরে তৈরি হালকা মিশ্রণে যোগ করে ভালোভাবে মিশানো হয়। কেকের ফর্মা বা ছাঁচে অয়েল পেপার সহকারে ভরা হয়। ১৭৬ ডিগ্রি ফরেনহাইট তাপমাত্রায় ৪০-৪৫ মিনিট ওভেনে তাপ দেওয়া হয়। কেক তৈরি হলে কক্ষ তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করা হয়। তারপর প্যারাপিন কাগজের মোড়কে রাখা হয় ।
পাউরুটি তৈরি :
পাউরুটি আমাদের দেশের শহর এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা পর্যন্ত অত্যন্ত জনপ্রিয় খাদ্য। পাউরুটি তৈরি কৌশল সহজ ও নিরাপদ এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে ঝামেলামুক্ত।
বর্তমানে পাউরুটি তৈরির অনেক আধুনিক যন্ত্র এসেছে এবং প্যাকেজিং-এর গুণগতমানের উন্নতি ঘটেছে। পাউরুটি তৈরির প্রধান উপাদানগুলো হচ্ছে (১) ময়দা (২) পানি (৩) ইস্ট (৪) লবণ এবং ঐচ্ছিক উপাদানগুলো হচ্ছে-
প্রস্তুতপ্রণালি :
চালুনি ছ্যাঁকা : ময়দা থেকে অপদ্রব্য পরিষ্কার করে, ঝরঝরে করে ও ময়দায় বাতাস প্রবেশ করানো হয়।
ওজন দেওয়া : সব উপাদানসমূহ (প্রধান ও ঐচ্ছিক) পরিমাণমতো মেপে নিতে হয়।
মেশানো : একটি মিক্সিং মেশিনে বা পাত্রে সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মেশানো হয়। মিশ্রণটি বেশি শক্ত হবে না, আবার বেশি পাতলাও হবে না। মেশানোর অনুমোদিত সময় হচ্ছে ৩ মিনিট।
ফারমেন্টেশন (চোলাইকরণ) : মিশ্রণ বা খামির ফারমেন্টশন চেম্বারে ২৬-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস
তাপমাত্রায় ২ ঘণ্টা রাখা হয়। এ খামিরের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। যেমন- চিনির সাথে ইস্ট ক্রিয়া
করে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়ে ময়দার পরতে পরতে জমা হয়। ফলে খামিরের
আয়তন বেড়ে যায়।
নক-ব্যাক বা গ্যাস দূরীভূতকরণ : ফুলে ওঠা খামিরের উপর বাহির থেকে চাপ প্রয়োগ (হাত দিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে) করতে হয় যাতে খামির থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস দূরীভূত হয়। চাপ প্রয়োগ করতে হয় কয়েকবার।
মধ্যবর্তীকালীন প্রুফ : নক ব্যাকের পর প্রায় ২৫ মিনিট কাল এমনি রেখে দিতে হয়।
মোল্ডিং : আবার কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং পাকানো হয়। প্রেসার বোর্ডের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। তারপর মোল্ডের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাপে রাখতে হয়।
চূড়ান্ত প্রুফ : মোল্ডে ভর্তি করার পর ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৮০% আর্দ্রতায় প্রায় ৫৫ মিনিট রাখতে হয়। এ সময় খামিরের অভ্যন্তরে গ্যাস উৎপন্ন হয়ে রুটির আয়তন বাড়ে। তাছাড়া ময়দার গ্লুটেন নরম ও কোমল হওয়ার কারণে রুটির সর্বত্র গ্যাস ধারণ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়।
রুটির ভেতরের গঠন সুন্দর ও স্পঞ্জি হয়। তবে এটা ময়দার শক্তি, জারণ দ্রব্যের প্রকৃতি এবং কন্ডিশনের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে।
চিত্র : মোল্ড বা প্যানে খামির ১ ঘণ্টা সংরক্ষণ
বেকিং বা তাপন : বেকিং সাধারণত বৈদ্যুতিক ওভেনে করা হয়। চুল্লিতে ২৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ২৫ মিনিট রাখা হয়। এসময় রুটির উপরিভাগ বা ক্রাস্ট এর রং সোনালি হলে রুটি তৈরি সম্পন্ন হয়। বেকিং-এর সময় ওভেনের মধ্যে একটি পাত্রে পানি রেখে স্টিম বা বাষ্প তৈরি করা হয়। এতে রুটির উপরিভাগ উজ্জ্বল হয়, ফাটার সম্ভাবনা থাকে না।
কুলিং ও ঠাণ্ডা করা : কক্ষ তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করা হয় বলে জলীয় কণা ঘনীভূত হতে পারে না । ফলে রুটি সহজে স্টেলিং বা নষ্ট হয় না।
টুকরা বা ফালিকরণ : ছুরি দিয়ে ছোট ছোট স্লাইস করা হয়।
প্যাকেজিং : পলিথিন ব্যাগের মোড়কে ভর্তি করে সিল করা হয়।
পাউরুটি তৈরির ফ্লোচার্ট দেওয়া হলো-
আরও দেখুন :