Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

ভুট্টা মিলিং এর উপজাত

ভুট্টা মিলিং এর উপজাত

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ভুট্টা মিলিং এর উপজাত

ভুট্টা মিলিং এর উপজাত

 

ভুট্টা মিলিং এর উপজাত

ভুট্টা এমনই একটি বহুমুখী ফসল যার প্রতিটি অংশই বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়। ভুট্টার আটা যেমন মানুষের খাদ্য, তেমনই পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে যেমন উপাদেয় তেমনি এর সবুজ পাতা ডাঁটা ও দানা গরু-মহিষ ও হাঁস-মুরগির অত্যন্ত উৎকৃষ্ট খাদ্য।

পশুখাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার : পশু খাদ্য হিসেবে ভুট্টা চার প্রকারের ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন –

সবুজ পাতা ও চারা গাছ :

ভুট্টার সবুজ পাতা অত্যন্ত উৎকৃষ্টমানের গো-খাদ্য। শুধু গো-খাদ্য হিসেবে সবুজ পাতা উৎপাদন করতে হলে ভুট্টা ঘন করে আবাদ করা হয়। গাছের বয়স ১ মাস হলে পর্যায়ক্রমে গাছ পাতলা করে তা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শুধুমাত্র সবুজ পাতা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় অথবা খড়ের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়।

একই জমিতে একত্রে ভুট্টার দানা ও সবুজ পাতা চাষ করা যায়। অন্য ফসলের সাথে আন্ত ফসল হিসেবেও সবুজ পাতা হিসেবে ভুট্টা চাষ করা যায়। এ ছাড়াও ভুট্টার মোচার সিল্ক কালো হয়ে গেলে মোচার নিচের পাতাগুলো গরু ও মহিষকে খাওয়ানো যায়। ভুট্টার পাতার পুষ্টিমান নিম্নের সারণিতে দেখানো হলো-

 

উৎস : জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, কৃষি স্টাডি নং ৭৯৬ (১৯৭৫) পশুপালন বিভাগ, বিধান চন্দ্ৰ বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত।

পরিপক্ক গাছ :

ভুট্টার মোচা সংগ্রহের পর গাছের ডাঁটা ও আধা পাকা পাতা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মোহর জাতের ভুট্টা এজন্য অত্যন্ত উপকারী। মোচা থেকে গেলেও এ জাতের পাতা যথেষ্ট সবুজ থাকে। গাছের ডাঁটা ও পাতাগুলো ছোট করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে নরম করে ধানের খড় বা কুঁড়া খেসারির ভুসি বা তেলের খৈল মিশিয়ে উত্তম গো-খাদ্য তৈরি করা যায়।

ভুট্টার সাইলেজ :

বায়ুরোধক অবস্থায় ঘাস সংরক্ষণ করা হলে তাকে সাইলেজ বলে। এ পদ্ধতিতে মাটির নিচে গর্ত বা পরিখা খনন করে সেখানে অনেক দিন ঘাস সংরক্ষণ করে রাখা যায়। অমৌসুমে গো-খাদ্য হিসেবে সাইলেজ ব্যবহার হয়। শুকনা ঘাস বা খড়ের সাথে ভুট্টার সাইলেজ খাওয়ানো হয়।

সে সাথে অবশ্যই আমিষ জাতীয় খাদ্যসহ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লবণ, ভিটামিন-এ, ও ভিটামিন-ডি, মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ভুট্টার সাইলেজের সাথে কলাইয়ের ভুসি যোগ করে খাওয়ালে মাংস ও দুধ উভয়ই উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ।

ভুট্টার দানা :

বিশ্বের উন্নত দেশে ভুট্টার দানা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। ভুট্টার আমিষ লাইসিন ও ট্রিপ্টোফেন নামক এমাইনো এসিডসমৃদ্ধ এবং এর হলুদ রঙের দানায় ক্যারোটিন থাকা তা পশুর দৈহিক গঠনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ভুট্টার দানা চূর্ণ করে গরু-ছাগলকে খাওয়ানো যায়। এছাড়া দানার গুঁড়ো ভেজানো ধানের খড় বা কুঁড়া, খৈল, ঝোলা গুঁড় বা খেসারির ভুসির সাথে মিশিয়েও গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার :

১। ভুট্টার ভাঙা,

২। দানাদার সুষম খাদ্য তৈরির উপকরণ।

ভুট্টার ভাঙা :

পোল্ট্রি খাদ্যে প্রায় ৫০ ভাগ দানাদার খাদ্য প্রয়োজন। ভুট্টার দানায় ক্যালরি, ভিটামিন-বি ও ক্যারোটিন বেশি থাকে। ফলে মুরগির স্বাস্থ্য বৃদ্ধি ও ডিমের কুসুম হলুদ হয়। ডিম পাড়া মুরগির খাদ্যে ২৫ ভাগ ভুট্টা ব্যবহার করলে খামারে পালিত মুরগির ডিম হলুদ করে।

আমাদের দেশে মুরগির খাদ্যে দানাদার খাদ্য হিসেবে গম ব্যবহার করা হয়, তাই ডিমের কুসুম সাদা হয়। ক্রেতা সাধারণত হলুদ কুসুমসম্পন্ন ডিম বেশি পছন্দ করে।

 

 

দানাদার সুষম খাদ্য তৈরির উপকরণ :

আমাদের দেশে পোল্ট্রির দানাদর সুষম খাদ্য উপকরণ হিসেবে শুধু গম ব্যবহার করা হয়। পোল্ট্রির সুষম দানাদার খাদ্য তৈরির জন্য বাংলাদেশে বর্তমানে গমের পরিবর্তে তেলের খৈল, শুটকি মাছের গুঁড়ো, চালের কুঁড়া, গমের চিকন ভুসি, বাদাম খৈল, সরিষার খৈল, নারিকেলের খৈল,

মাছের তেল বা সয়াবিন তেল, ঝিনুকের গুঁড়ো, লবণ, মিশ্রিত ভিটামিন ও খনিজদ্রব্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ভুট্টা পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবে উন্নতমানের কিন্তু সহজলভ্য নয়। এদিক মুরগির খামার বাণিজ্যিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দানাদার সুষম খাদ্যের উপকরণ ভুট্টার কদর দিন দিন বাড়ছে।

আরও দেখুন : 

Exit mobile version