আজকের আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ভিটামিন বি১২ কমপ্লেক্স বা সায়ানোকোবালঅ্যামিন। যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।
Table of Contents
ভিটামিন বি১২ কমপ্লেক্স বা সায়ানোকোবালঅ্যামিন । Vitamin B₁2 complex or Cyanocobalamine
(ক) ভিটামিন বি১২ এর রাসায়নিক গঠন :
ভিটামিন বি১২ এর রাসায়নিক গঠন কাঠামো হবে নিম্নরূপঃ
ভিটামিন বি১২ এর গঠন আলোচনা থেকে দেখা যায় এটি চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যমূলক উপাদান দ্বারা গঠিত।
প্রথম উপাদান :
ভিটামিন B12 তে একটি কোবাল্ট পরমাণু থাকে যার জারণ সংখ্যা +3, অর্থাৎ কোবাল্ট পরমাণু সায়ানোকোবলঅ্যামিনে Co” অবস্থায় থাকে।
দ্বিতীয় উপাদান :
ভিটামিন-B12 এ যে কোবাল্ট পরমাণু থাকে তার চারদিকে চারটি পাইরোল চক্র যুক্ত থাকে যাদের পারস্পরিক সংযোগে একটি বৃহৎ আকারের চক্র তৈরি হয় যাকে কোরিন চক্র বলে।
তৃতীয় উপাদান :
ভিটামিন B12 এর তৃতীয় উপাদানটি হল রাইবোনিউক্লিওটাইড। এটি একটি জটিল জৈব অংশ। রাইবোনিউক্লিওটাইড একটি ফসফেট গ্রুপ, একটি সুগার ইউনিট এবং একটি হেটারোসাইক্লিক ক্ষারের সমন্বয়ে গঠিত।
চতুর্থ উপাদান :
ভিটামিন B12 এর চতুর্থ উপাদানটি হল সায়ানো CN লিগ্যান্ড।
(খ) ভিটামিন B12 এর উৎস
১। মাংস, মাছ, কিডনী, প্লীহা, যকৃৎ ইত্যাদি প্রাণিজ খাদ্য এর প্রধান উৎস ।
২। কয়েক প্রকার অণুজীব থেকে এ ভিটামিন দক্ষতার সাথে সংশ্লেষণ করা যায়।
৩। তৃণভোজী প্রাণীর অস্ত্রের ব্যাকটেরিয়াও এর অন্যতম প্রধান উৎস। উদ্ভিজ্জ খাদ্য উপকরণে ভিটামিন B12 নেই কিন্তু প্রাণিজ খাদ্য উপকরণে রয়েছে।
(গ) ধর্মাবলী:
১। ভিটামিন B12 স্বাদ ও গন্ধহীন কেলাস এবং পানিতে সামান্য দ্রবীভূত হয়।
২। ভিটামিন B12 অ্যালকোহল ও ইথারে সহজে দ্রবীভূত হয় কিন্তু অ্যাসিটোনে সম্পূর্ণ অদ্রবণীয় ।
৩। ভিটামিন B12 এর আণবিক ওজন 1355.37 gmol এবং কোবাল্টের পরিমাণ 4.25% ।
৪। এটি একটি চার্জহীন যৌগ এবং আলোক সক্রিয়তা প্রদর্শন করে।
৫। ভিটামিন B12 এর আণবিক সংকেত CHNOPCO
(ঘ) জৈবিক কাজ
১। ভিটামিন B12 দেহের শোষণ কার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে। যার কারণে পারনিসিয়া অ্যানিমিয়া রোগ হয় না ।
২। এটি রক্তের লোহিত কণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে দেহের রক্ত স্বল্পতা রোধ হয় এবং দেহের বৃদ্ধি সুষ্ঠু হয়।
৩। ভিটামিন B12 মস্তিষ্কের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৪। নিউক্লিইক এসিড সংশ্লেষণে এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
৫। অ্যামাইনো এসিড ও সালফার বিপাকে এবং রক্ত কণিকার পুষ্টির জন্য এর উপস্থিতি প্রয়োজন।
৬। অণুজীব কোষের বিভিন্ন জৈবিক বিক্রিয়ায় এটি কো-এনজাইম-B12 রূপে ভূমিকা পালন করে।
(ঙ) অভাবজনিত রোগ
১। এর অভাবে মানুষের মাইক্রোসাইটিক হাইপারক্রোমিক অ্যানিমিয়া রোগ দেখা দেয়। ফলে স্নায়ুবিক দুর্বলতা এবং স্নায়ুবিক ব্যথা অনুভূত হয়।
২। এর অভাবে রক্ত স্বল্পতা (বিশেষ করে প্রসূতি মায়ের) দেখা দেয়।
৩। ইঁদুরের ওয়েডিমা রোগ হয়। এছাড়াও ইসরের মূত্রাশয় প্রসারিতসহ রক্তে ইউরিয়ার স্বল্পতা দেখা দেয়।
আরও দেখুনঃ