আজ আমরা ভিটামিন এ জাতীয় খাবার নিয়ে আলাপ করবো। ভিটামিন ‘এ’ খাবারের মধ্যে থাকা এক ধরণের জৈব অনু। ভিটামিন ‘এ’ এর রাসায়নিক নাম ‘রেটিনাল’। মানব দেহে ভিটামিন ‘এ’ রেটিনোয়িক অ্যাসিড তৈরির কাজ করে। ভিটামিন ‘এ’ আমাদের খাদ্যের একটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ উপাদান।
Table of Contents
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
কি পরিমান ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন?
আমাদের শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ থাকা দরকার। একজন পূর্ণবয়স্ক মহিলার শরীরে ভিটামিন ‘এ’ থাকা দরকার দিনে অন্তত কম করে ৭০০ হলেও মাইক্রোগ্রাম। আর পূর্ণবয়স্ক পুরুষের শরীরে ভিটামিন ‘এ’ থাকা দরকার দিনে নুন্যতম ৯০০ মাইক্রোগ্রাম। মহিলাদের খাবারে ভিটামিন ‘এ’র ঊর্ধ্বসীমা দৈনিক সর্বাধিক ৩০০০ মাইক্রোগ্রাম ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩০০০ মাইক্রোগ্রাম।
ভিটামিন ‘এ’ র উৎস:
ভিটামিন ‘এ’ দুই উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজাত দুই ধরণের উৎস থেকে পাওয়া যায়।
উদ্ভিদজাত ভিটামিন ‘এ’ র উৎস:
সবুজ শাক-সবজি:
সবুজ সবজি ভিটামিন এ, সি, ই, কে ও কয়েক ধরনের ভিটামিন বি-এর উৎস। এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ ও পটাশিয়াম থাকে। সবুজ পাতাযুক্ত সবজির রং যত গাঢ় হয়, এতে তত বেশি পুষ্টি থাকে। রোগ প্রতিরোধে সবুজ শাকসবজির কোনো বিকল্প নেই।
পালংশাক:
পালংশাকে বেশি মাত্রার ভিটামিন-এ, লিম্ফোসাইট বা রক্তের শ্বেত কণিকা দেহকে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা ১০টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। পালং শাকে আছে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
![ভিটামিন এ জাতীয় খাবার 4 পালং শাক [ Palong Shak, Spinacia Oleracea ]](https://foodgoln.com/wp-content/uploads/2022/05/পালং-শাক-Palong-Shak-Spinacia-Oleracea-18-300x227.jpg)
বাধাকপি:
বাধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন- এ আছে। এছাড়া ভিটামিন সি এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যারা নিয়মিত বাঁধাকপি খায়, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।

ব্রকলি:
ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- এ এবং ই থাকে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বয়সের ছাপ রোধ করে। এছাড়া মাত্র এক কাপ টুকরো করা ব্রকলিতে ৮১ মিলিগ্রাম পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা একদিনে শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি।
![ভিটামিন এ জাতীয় খাবার 6 ব্রকলি [ Broccoli, Brassica oleracea ]](https://foodgoln.com/wp-content/uploads/2022/08/ব্রকলি-Broccoli-Brassica-oleracea-12-300x158.jpg)
সরিষা শাক:
সরিষা শাক ভিটামিন এ, সি ও কে’তে পরিপূর্ণ যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি’তে আছে শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট যা নানা রকম ভাইরাল অসুখ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দেয়। ভিটামিন- এ ভালো রাখে আপনার দৃষ্টিশক্তি আর ভিটামিন ‘কে’ দেয় হাড়ের সুরক্ষা এবং মস্তিষ্ককে রাখে দারুণ সচল।
লাল মরিচ:
লাল মরিচে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় এটি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতেও কাজ করে।
টমেটো:
টমেটো সালাদ হিসেবে ও রান্না টমেটো খুবই সুস্বাদু। টমেটোতে ভিটামিন এ কে, বি১, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭ ও ভিটামিন সিসহ নানা প্রাকৃতিক ভিটামিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে ফোলেট, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোলিন, কপার এবং ফসফরাসের মতো খনিজও থাকে।
মিষ্টি কুমড়া:
মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ উপাদান থাকে যা চোখের কর্নিয়াকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : কুমড়া হলো বিভিন্ন ধরণের ভিটামিনের ভাণ্ডার। এতে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-এ, সি, ই, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও অনেক উপাদান।
লেটুস:
লেটুস পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। এই পাতার মধ্যে থাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-৬, আয়রন, পটাসিয়াম ইত্যাদি। লেটুস পাতা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। কারণ এর মধ্যে বিটা ক্যারোটিন ও লুটিনের মত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে।
![ভিটামিন এ জাতীয় খাবার 11 লেটুস [ Lettuce ]](https://foodgoln.com/wp-content/uploads/2022/08/লেটুস-Lettuce-19-300x171.jpg)
আম:
পাকা আম ভিটামিন ‘এ’সমৃদ্ধ। আমের আয়রন, আঁশ, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও খনিজ উপাদান শরীর সুস্থ–সবল রাখতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে। কাঁচা আমে ৯০ মাইক্রোগ্রাম এবং পাকা আমে ৮ হাজার ৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে।
জাম্বুরা:
একটি পরিপক্ব জাম্বুরা থেকে ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, বায়োফ্লাভোনয়েডস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, হেলদি ফ্যাট, প্রোটিন এবং এনজাইমসের মতো নানা পুষ্টিগুণ যেমন মিলে তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি নেই। জ্বর, ঠান্ডা কিংবা কাশির মতো সমস্যাতেও জাম্বুরা ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
![ভিটামিন এ জাতীয় খাবার 13 জাম্বুরা, বাতাবি লেবু, তুরুনজা [ Pomelo, Pummelo, Pommelo ]](https://foodgoln.com/wp-content/uploads/2022/08/জাম্বুরা-বাতাবি-লেবু-তুরুনজা-Pomelo-Pummelo-Pommelo-12-300x197.jpg)
পাকা পেঁপে:
পাকা পেঁপেতে থাকা ভিটামিন এ, সি এবং ই–এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। মানবদেহের কোলেস্টেরল অক্সিডাইজড হয়ে গেলে সেটা ব্লকেজ তৈরি করে; ফলে হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখ দেখা দেয়।
![ভিটামিন এ জাতীয় খাবার 14 পাকা পেঁপে [ Ripe Papaya ]](https://foodgoln.com/wp-content/uploads/2022/08/পেঁপে-2-300x169.jpg)
গাজর:
উপকারিতা গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। গাজরের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চোখের অন্যান্য সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ইত্যাদির মতো সমস্যায় বাধা দেয়।
মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলুতে উচ্চ মাত্রায় ‘ভিটামিন এ’ থাকে। ‘ভিটামিন এ’ হচ্ছে একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে এবং সুস্থ ত্বক ও দৃষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করে। একটি মিষ্টি আলু আপনাকে দৈনিক সুপারিশকৃত ১০০ শতাংশের বেশি ভিটামিন এ সরবরাহ করে, ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার অনুসারে।
![ভিটামিন এ জাতীয় খাবার 16 মিষ্টি আলু [ Sweet potato ]](https://foodgoln.com/wp-content/uploads/2022/08/মিষ্টি-আলু-Sweet-potato-2-300x225.jpg)
প্রাণীজাত ভিটামিন ‘এ’ র উৎস:
ছোট মাছ (মলা, মলান্দি, কাজলি):
ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে যা রাতকানা, অন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও দৈনন্দিন অনেক শারিরীক সমস্যা দূর করতে সক্ষম। শিশুদের রাতকানা রোগ ঠেকাতে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ মলা, ঢেলা ও গুঁড়া মাছ খাওয়ান।
দুধ:
গরুর দুধ ভিটামিন এ, ডি এবং ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ, যা আমাদের হৃদযন্ত্রকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
মাখন:
মাখন থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এবং উৎকৃষ্ট মানের ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম ও আয়োডিন।
কড লিভার ওয়েল:
কড লিভার অয়েল এবং মাছের তেল প্রায় একই ধরনের, তবে কড লিভার অয়েলে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ডি রয়েছে। এক টেবিল চা-চামচ পরিমাণ কড লিভার অয়েলে ৪০৮০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন- এ এবং ৩৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রতিদিন ভিটামিন- এ-এর চাহিদা ৯০০ মাইক্রোগ্রাম এবং মহিলাদের ৭০০ মাইক্রোগ্রাম।
ঘি:
পুষ্টিবিদদের মতে, ঘি-য়ে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ঘি শরীরের ভিতরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য শরীরকে ভিতর থেকে হাইড্রেটেড রাখতে ভূমিকা রাখে। পুষ্টিবিদের মতে, গরমের সময় শরীরের জলের অভাব মেটায় ঘি।
টার্কির কলিজা:
টার্কি মুরগীর লিভারে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-এ এবং বি।

গরুর কলিজা:
কলিজা ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ভিটামিন এবং অ্যারাকিডোনিক অ্যাসিড, ডিএইচএ-র অন্যতম প্রধান উত্স, যেগুলো স্বাস্থ্যকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে।
ডিম:
ডিমেও আছে প্রচুর ভিটামিন এ। ডিমের কেরোটিনয়েড, ল্যুটেন ও জিয়েক্সেনথিন বয়সকালের চোখের অসুখ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এই একই উপাদান চোখের ছানি কমাতেও সাহায্য করে।
মাংস:
মাংসে রয়েছে প্রিফর্মড ভিটামিন ‘এ’।
আরও পড়ুন: