প্রাণরসায়ন এবং খাদ্য প্রাণরসায়নের সংজ্ঞা ও শাখাসমূহের তালিকা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় প্রাণরসায়ন এবং খাদ্য প্রাণরসায়নের সংজ্ঞা ও শাখাসমূহের তালিকা ,যা খাদ্য প্রাণরসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

প্রাণরসায়ন এবং খাদ্য প্রাণরসায়নের সংজ্ঞা ও শাখাসমূহের তালিকা

জার্মান বিজ্ঞানী Carl Alexander Neuberg (1903) প্রথম biochemistry শব্দটি ব্যবহার করেন। জীবন্ত বস্তুর রসায়নকে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বা প্রাণরসায়ন বলে অভিহিত করেন।

জীবন্ত জীব (উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব) মূলত একই রাসায়নিক উপাদানসমূহ দ্বারা গঠিত। T W Goodwin and E-Mercher (1998) এর সংজ্ঞা অনুসারে, “বায়োকেমিস্ট্রি হলো জীবসমূহ দ্বারা জীব দেহের রাসায়নিক উপাদানসমূহ কীভাবে জীবন পদ্ধতিতে সংশ্লেষিত এবং ব্যবহৃত হয় তার পঠন বা পর্যালোচনা।

 

প্রাণরসায়ন এবং খাদ্য প্রাণরসায়নের সংজ্ঞা ও শাখাসমূহের তালিকা

 

এটি জীববিজ্ঞান ও রসায়নের মধ্যে সেতুবন্ধনস্বরূপ। জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং রাসায়নিক কাঠামোর সাথে আমাদের প্রাণের কী সম্পর্ক তা ব্যাখ্যা করে এই বিজ্ঞান।

খাদ্য প্রাণরসায়ন বা ফুড বায়োকেমিস্ট্রি (Food Biochemistry) হলো খাদ্য ভেঙে পুষ্টি পদার্থ কোষের ভিতর কীভাবে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও অন্যান্য গাঠনিক উপাদান প্রস্তুত করে তার পঠন বা পর্যালোচনা।

প্রাণরসায়নের শাখাসমূহের তালিকা

প্রাণরসায়নের শাখাসমূহ এবং তাদের আলোচ্য বিষয়গুলো নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

১। স্ট্রাকচারাল বায়োকেমিস্ট্রি (Structural blochemistry)

ও প্রাণরসায়নের এ শাখায় দেহের বিভিন্ন উপাদান বিশেষ করে বড় অণুসমূহ (Macromolecules) যেমন- প্রোটিন, DNA, RNA, পেপটাইড প্রভৃতির রাসায়নিক গঠন নিয়ে আলোচনা করা হয়।

২। বায়ো অর্গানিক কেমিস্ট্রি (Bio organic chemistry)

এ শাখায় জৈব যৌগ সংশ্লেষণ, গঠনগত বিশ্লেষণ, এদের মধ্যে

রাসায়নিক বন্ধন, রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

 

প্রাণরসায়ন এবং খাদ্য প্রাণরসায়নের সংজ্ঞা ও শাখাসমূহের তালিকা

 

৩। এনজাইমোলজি (Enzymology) 

এ শাখায় জৈব প্রভাবক বা এনজাইমগুলোর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য, তাদের কার্যকলাপ, বিক্রিয়া, কোএনজাইম, কোফ্যাক্টর প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

৪। মেটাবলিক বায়োকেমিস্ট্রি (Matabolic biochemistry) 

এ শাখায় জীবন্ত জীব কোষের মধ্যে জীবনধারণের জন্য।

প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পরিবর্তন ও বিক্রিয়াসমূহ আলোচিত হয়।

৫। জেনোবায়োটিকস (Xenobiotics) :

এ শাখায় বাইরে থেকে জীবদেহের ভিতরে আসা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন- মাইকোটক্সিক, সাপের বিষ প্রভৃতি রাসায়নিক গঠন, ক্ষতিকর দিক ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

৬। ইমিউনোলজি (Immunology)

এ শাখায় জীবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষ করে ক্ষতিকর এন্টিজেনকে ধ্বংস

করার জন্য এন্টিবডি তৈরি করা এবং তার জৈবিক প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

৭। এন্ডোক্রিনোলজি (Endocrinology) :

এ শাখায় জীবদেহের বিভিন্ন হরমোন, তাদের উৎপত্তি ও কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

৮। নিউরোকেমিস্ট্রি (Neurochemistry) :

এ শাখায় স্নায়ুসংক্রান্ত কার্যকলাপের সাথে জড়িত জৈব অণুগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।

 

প্রাণরসায়ন এবং খাদ্য প্রাণরসায়নের সংজ্ঞা ও শাখাসমূহের তালিকা

 

৯। কেমোট্যাক্সোনোমি (Chemotaxonomy) 

এ শাখায় বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান বিশেষ করে অ্যামাইনো অ্যাসিড,

প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড, পেপটাইড প্রভৃতির জৈবিক গঠনগত মিল এর উপর ভিত্তি করে জৈবিক শ্রেণিবিন্যাস করা হয়।

১০। কেমিক্যাল ইকোলজি (Chemical ecology) 

এ শাখায় পরিবেশ ও জীবের মধ্যে রাসায়নিক আস্তসম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

১১। ভাইরোলজি (Virology) 

এ শাখায় ভাইরাসের শ্রেণিবিভাগ, আণবিক গঠন, বিস্তার, বিবর্তন, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

১২। মলিকুলার জেনেটিক্স অ্যান্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (Molecular genetics & Genetics engineering) 

এ শাখায়, বিভিন্ন জিন, DNA, RNA-এর গঠন, জিনগত পরিবর্তন এনে নতুন ফসল উৎপাদন, জেনেটিক রোগ ও তার প্রতিরোধের ঔষধ আবিষ্কার প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

১৩। মলিকুলার বায়োলজি (Molecular biology) 

এ শাখায় জৈবিক অনুসমূহের (যেমন- DNA, RNA, প্রোটন) কার্যকলাপ, জৈব সংশ্লেষণ, আন্তবিক্রিয়া প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

১৪। সেল বায়োলজি (Cell biology)

এ শাখায় কোষস্থ বিভিন্ন উপাদানের গঠন, কাজ, কোষ বিভাজন, কোষ কর্তৃক পুষ্টি।উপাদান গ্রহণ, শ্বসন প্রভৃতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়।।

 

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment