আজকে আমরা আলোচনা করবো পুষ্টিতে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা : ক্যালসিয়ামের প্রাণরাসায়নিক কাজ । যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।
Table of Contents
পুষ্টিতে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা : ক্যালসিয়ামের প্রাণরাসায়নিক কাজ । The Role of Calsium In Nutrition: Biochemical Functions of Calsium
(ক) উৎস-
১। দুধ ও দুধ জাত খাদ্য যেমন দই, পনির, মাখন, মিষ্টি, পায়েশ ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস
২। কাঁটাসহ ছোট মাছে এবং বড় মাছের কাঁটায় প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে।
৩। ডাল, গাজর, সবুজ শাক, কলমি শাক, সরিষা শাক, লাল শাক ও ডাঁটা শাক ক্যালসিয়ামের উৎসরূপে কাজ করে।
৪। ডিমের কুসুম ও আখের গুড়েও বেশ ক্যালসিয়াম থাকে।
(খ) কাজ
১। কোষপর্দার পানি ও আয়ন ভেদ্যতা হ্রাস করে পরোক্ষে পানি ও আয়ন সাম্য বজায় রাখে।
২। হৃদপেশি সংকোচন, প্রসারণ এবং অন্যান্য পেশির কর্মক্ষমতা বজায় রাখে।
৩। ক্যালসিয়াম নার্ভের উত্তেজনা হ্রাস করে।
৪। ফসফোলাইপেজ, ফসফোডাই এস্টারেজ ইত্যাদি উৎসেচকের ক্রিয়াশীলতা রক্ষার্থে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
৫। খাদ্যের লিপিড ও লৌহ ঘটিত লবণ শোষণে ক্যালসিয়াম অংশ নেয়।
৬। রতনের জন্য ক্যালসিয়ামের ক্রিয়া অপরিহার্য ।
৭। ক্যালসিয়াম আয়ন নার্ভ, পেশি প্রভৃতি টিস্যুর উদ্দীপনশক্তি (excitability) ও উত্তেজনা হ্রাস করে।
৮। স্তন হতে দুগ্ধক্ষরণের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। কারণ দুধে প্রায় 0.12% ক্যালসিয়াম থাকে।
৯। রক্তে প্রোটিন প্রোথ্রোমিন ক্যালসিয়ামের আয়নের (Cath) সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনুচক্রিকার পর্দায় সংযুক্তিতে অংশ নেয়।
(গ) মানবদেহে ক্যালসিয়ামের শোষণ
খাদ্যের সাথে গৃহীত ক্যালসিয়ামের মাত্র 25% শোষিত হয়। বাকি অংশ মলের সঙ্গে দেহ থেকে বর্জিত হয়। ক্যালসিয়াম ক্ষুদ্রাস্ত্রের ডিওডেনামে সক্রিয় পরিবহন পদ্ধতিতে শোষিত হয়, আর ইলিয়াম ও জেজুনাম অংশে নিষ্ক্রিয় ব্যাপন পদ্ধতিতে শোষিত হয় এবং পোর্টাল সংবহন তন্ত্রে প্রবেশ করে। এই শোষণে 1.25 – ডাইহাইড্রোক্সিকোলেক্যালসিফেরল অংশগ্রহণ করে। দেখা গেছে, ক্ষারীয় মাধ্যম অপেক্ষা আম্লিক মাধ্যমে ক্যালসিয়াম শোষণ দ্রুতগতিতে হয়। রক্তে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়, দাঁত ও হরমোন সংগঠনে অংশ নেয় ।

(ঘ) ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত রোগঃ
আমাদের দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ 1200 gm, এই পদার্থ কঙ্কালতন্ত্র ও নরম কলার গঠনে অংশ নেয় এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনা করে। ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত ফল
১। রক্তে ক্যালসিয়াম আয়নের অভাবে হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয়ে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং শিশুদের দাঁত ওঠে না একে রিকেট বলে। তবে রিকেট রোগে ক্যালসিয়াম ছাড়াও ফসফরাস ও ভিটামিন D এর অভাব হতে দেখা যায়।
২। শুধু ক্যালসিয়ামের অভাবে পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রের আক্ষেপ বা টিট্যানি রোগ হয়।
৩। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নিষ্কাশিত হয়ে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। একে অস্টিওম্যালেসিয়া বলে।
৪। মহিলাদের ক্ষেত্রে 10% এরও বেশি ক্যালসিয়াম হাড় থেকে নির্গত হলে অস্টিওপোরেসিস নামক রোগ হয় ।
৫। প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
আরও দেখুনঃ