আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পরিবেশের উপর জৈবিক প্রভাব ,যা খাদ্য প্রাণরসায়ন নিরাপত্তা অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
পরিবেশের উপর জৈবিক প্রভাব
পরিবেশগত ঝুঁকি নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১। শারীরিক ঝুঁকি ঃ বস্তু এবং শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে সাধারণত এই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়ে থাকে ।
• অত্যধিক শব্দ
• অপর্যাপ্ত আলো
• অত্যধিক তাপমাত্রা
• অত্যধিক চাপ
• ভাইব্রেশন রেডিয়েশন
• অপর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন
• এলোমেলো জায়গা
• শ্রমিকের অসাবধানতা
২। রাসায়নিক ঝুঁকি : বাষ্প, গ্যাস, ধুলা, উগ্র বা ঝাঁঝালো গন্ধের ধোঁয়া, কুয়াশা ইত্যাদি নিঃশ্বাসের সাথে এগুলো শরীরে প্রবেশ করে ঝুঁকির সৃষ্টি করে। শরীরের ত্বকে এগুলো লেগে ঝুঁকির সৃষ্টি করে ।
• হালকা কুয়াশা : তরল পদার্থের ক্ষুদ্র কণিকা যা বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
• গ্যাস ঃ বস্তু যা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। কিন্তু কক্ষের তাপমাত্রায় এটি ভাসমান থাকে।
• বাষ্প : তরল বস্তু যখন কক্ষের তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হয়।
• ধুলা : ক্ষতিকর কঠিন বস্তু যখন মেশিন দ্বারা গুঁড়ো করা হয়, কাটা হয় কিংবা চূর্ণ করা হয়।
• উগ্রগন্ধের ধোঁয়া ঃ বাতাসে গ্যাস ঘন অবস্থায় থাকে। রাসায়নিকভাবে এটি পরিবর্তিত হয়ে সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয়। এটি বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
শরীরে ক্ষতিকর বস্তু প্রবেশের চারটি পথ ঃ
১। নিঃশ্বাস নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বিষাক্ত গ্যাস শরীরে প্রবেশের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। এটি সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ।
২। গলাধঃকরণ ঃ বিষাক্ত বস্তু খাদ্যনালির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
৩। বিশোষণ ও বিষাক্ত বস্তু ত্বকের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে।
৪। ইনজেকশন ঃ বিষাক্ত বস্তু ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। যেমন— সূচের মাধ্যমে। তবে এটা সাধারণত কম ঘটে থাকে। এ পথেই শরীরে সরাসরি বিষাক্ত বস্তু প্রবেশ করে।
৩। জৈবিক ঝুঁকি ঃ জীবন্ত বস্তু থেকে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয় সেটি হলো জৈবিক ঝুঁকি। যেমন- পোকামাকড়, ছত্রাক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট দূষণ, স্যানিটেশন, হাউজকিপিং ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে। যেমন— পানযোগ্য পানিতে, কারখানার বর্জ্য চ অপসারণ, খাদ্য এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে এ ধরনের দূষণ হতে পারে।
জৈবিক ঝুঁকির উপাদানসমূহ :
১।তাত্ত্বিক । ব্যাকটেরিয়া ঃ সাধারণত এককোষী জীবটা ক্ষতিকর হতে পারে। আবার নাও হতে পারে ।
২। ভাইরাস ঃ এই অণুজীবের বিকাশ এবং প্রজনন পোষক কোষের ওপর নির্ভরশীল।
৩। ছত্রাক ঃ ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ পরজীবী অরগানিজম, যা জীবন্ত অথবা মৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর ওপর জন্মে।
৪। রিকেটসিয়া ঃ দণ্ড আকৃতির ক্ষুদ্র অণুজীব। এটা ব্যাকটেরিয়ার চাইতেও ক্ষুদ্র। বংশবৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য যার আশ্রয়ের দরকার পড়ে। ক্ষুদ্র অণুজীবের সঞ্চার ঘটে মূলত মশা, পরজীবী কিট এবং উকুনের মাধ্যমে।
জৈবিক ঝুঁকি থেকে সৃষ্ট সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা ঃ
• যক্ষ্মা
• ধনুষ্টংকার
• ভাইরাসজনিত হেপাটাইটিস
• এইচআইভি এবং এইডস
ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ ঃ
• উচ্চ শ্বাসনালি সংক্রমণ
• হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ
• এইডস
• জলাতঙ্ক
৪। কর্মদক্ষতার ঝুঁকি ঃ কর্মক্ষেত্রে সাধারণত কর্মদক্ষতার ঝুঁকি পরিলক্ষিত হয় তা হলো- কর্মক্ষেত্র বা যন্ত্রপাতির অনুপযুক্ত ডিজাইন, অসঙ্গত লিফটিং, দুর্বল দৃশ্যমান অবস্থা, অকওয়ার্ড অবস্থা এবং গতির পুনরাবৃত্তি ইত্যাদি। এগুলোই মৃত্যু ঝুঁকির জন্য দায়ী। কর্মক্ষেত্রে পেশাগত পরিবেশে চাপ বা ক্লান্তি সাধারণত দুর্ঘটনা ঘটায়।
কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিণতি ঃ
• উৎপাদন হ্রাস পায়
• ভুলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়
• উপকরণ এবং সরঞ্জামের অপচয় হয়।
কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণে স্বাস্থ্যগত যে সমস্যা হতে পারে :
• হাড় ও মাংসপেশির সমস্যা
• নালিঘটিত সমস্য দৃষ্টি সমস্যা
• শ্রবণ সমস্যা
• ত্বকের সমস্যা
• মানসিক সমস্যা।
আরও পড়ূনঃ