সিদ্ধ চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, নাডু ও ফ্রায়েড রাইস তৈরি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সিদ্ধ চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, নাডু ও ফ্রায়েড রাইস তৈরি

সিদ্ধ চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, নাডু ও ফ্রায়েড রাইস তৈরি

 

সিদ্ধ চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, নাডু ও ফ্রায়েড রাইস তৈরি

 

সিদ্ধ চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, নাডু ও ফ্রায়েড রাইস তৈরি

সিদ্ধ চালের ভাত :

ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। এটি শস্যদানার মধ্যে পড়ে বলে কীভাবে রান্না করতে হয় তা সকলের জানা উচিত। প্রথমে পরিমাণমতো চাল বেছে ধান, কাঁকর, ময়লা ইত্যাদি ফেলে দিতে হয়। এরপর ডেকচিতে পরিমাণমতো পানি নিয়ে গরম করতে হয়। চাল ভালো করে ধুয়ে পানির সাথে ছেড়ে দিয়ে পাত্রের মুখ বন্ধ করে দিতে হয়।

ভাত যখন টগবগ করে ফুটে ওঠে তখন ঢাকনা খুলে হাতল বা খুন্তি দ্বারা সমভাবে নেড়ে দিতে হয়। এর ফলে সকল জায়গায় সমানভাবে তাপ লাগে এবং চাল সমভাবে সিদ্ধ হয়। চাল সমভাবে সিদ্ধ হয়েছে কিনা জানবার জন্য কয়েকটি ভাত টিপে দেখলে খুব ছোট শক্ত দানা হাতে যখন অনুভূত হয়, তখন মনে করতে হবে যে ভাত হয়েছে এবং এর কিছুক্ষণ পর নামিয়ে মাড় ফেলতে হয়।

মাড় ফেলে ভাতের হাঁড়ি বা ডেকচি উপুড় করে রাখলে আস্তে আস্তে সব মাড় পড়ে যায় এবং ভাত খুব ঝরঝরা সুন্দর হয়। কিন্তু এভাবে ভাত রাধলে ভাতের মূল্যবান পুষ্টি উপাদান ভিটামিন-বি এর অনেক অপচয় হয়।

বসাভাত বা বৌভাত :

মাড় না ফেলে যে ভাত রান্না করা হয় তাকে বসাভাত বলে। এভাবে ভাত রান্নার জন্য যতটুকু চাল তার দেড় গুণ পানি নিতে হয়। যেমন এক কাপ চাল হলে দেড় কাপ পানি। নতুন চাল সিদ্ধ হতে কম পানি ও পুরানো চাল সিদ্ধ হতে বেশি পানি প্রয়োজন হয়। চাল ধুয়ে পানিতে নিতে হয়। তারপর জ্বাল দিলে কিছুক্ষণ পরে সিদ্ধ হয়ে এলে দম বা হালকা আঁচে বসাতে হবে।

দমে থাকাকালীন চামচ দিয়ে নেড়ে অর্থাৎ ওপরের ভাত নিচে, নিচের ভাত উপরে করে দিতে হয়। অথবা ডেকচি ঝাঁকিয়ে ভাত ওলট-পালট করতে হয়। কয়েকদিন এভাবে রাঁধলে পানি দেওয়ার আন্দাজ হয়ে যাবে। পরে আর মাপতে হবে না। মাড় না ফেললে ভাতের খাদ্যগুণ অনেক বেড়ে যায়। ভাত খুব সুস্বাদু হয়। অবশ্য খারাপ চালের ভাত খুব গন্ধ লাগে ।

পান্তা ভাত :

ভাতের মাঝে পানি দিয়ে রেখে অতঃপর তা খাওয়াকে পান্তাভাত বলে। পান্তা ভাতের সাথে লবণ, পোড়া-মরিচ, পেয়াজ, আলুভর্তা ও শুটকি রান্না দিয়ে ভোর বেলা খাওয়া হয়ে থাকে। শহরে পহেলা বৈশাখের সময় এর সাথে যোগ হয় ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ ও লতির তরকারি। ভাত ও পান্তা ভাতের মধ্যে পুষ্টির তেমন পার্থক্য নেই। দুটোতেই শর্করা থাকে তবে পান্তার পরিবেশনের উপর নির্ভর করে এর পুষ্টি।

পাস্তার উপাকারিতা –

১। মানবদেহের জন্য উপকারী বহু ব্যাক্টেরিয়া পাস্তার মধ্যে বেড়ে ওঠে,

২। এর ফলে পেটের রোগ ভালো হয় এবং শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে।

৩। গরমে শরীর ঠাণ্ডা হয়,

৪। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে,

৫। অ্যালার্জি জনিত রোগ ভালো হয়।

৬। আলসার ভালো হয় ।

পুরনো সিদ্ধ চালের ভাত :

পুরনো সিদ্ধ চাল বেছে ধুয়ে নিতে হয়। ফুটন্ত পানিতে চাল ঢেলে দিতে হয়। চাল সিদ্ধ হলে নামিয়ে নিতে হয়। চাল ও পানি একসাথে চুলায় দিলে কোন ক্ষতি হয় না। পুরনো সিদ্ধ চালের ভাত খুব নরম করে নামাতে হয়। এই ভাত ঠাণ্ডা হলে শক্ত হয়ে যায়।

নতুন সিদ্ধ চালের ভাত :

ভাত রান্নার ১ ঘণ্টা আগে চাল ধুয়ে রাখতে হয়। ফুটন্ত পানিতে চাল ঢেলে দিতে হয়। এই চাল সিদ্ধ হতে অল্প সময় লাগে। এই চালের ভাত একটু শক্ত থাকতে নামিয়ে মাড় বা ফেন ঝরিয়ে রাখতে হয়। তা না হলে জাউ ভাতের মতো হয়ো যাবে। নতুন চালের ভাত পেটে অসুখ হওয়ার কারণে এই ভাতের মাড় ফেলে খাওয়া উচিত।

 

সিদ্ধ চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, নাডু ও ফ্রায়েড রাইস তৈরি

 

ভাজা ভাত :

ঘরে অনেক সময় ভাত বাসি হয়ে যায়। এই ভাত ভেজে খাওয়া যায়, তবে ভাত যেন নরম না হয়। নরম হলে ভাত বেশ ঝরঝরে থাকে না। কড়াইয়ে অল্প তেল দিয়ে চুলায় বসিয়ে তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুঁচি ও শুকনা মরিচ দিতে হয়। এগুলো ভাজা ভাজা হলে পরিমাণমতো বাসিভাত কড়াইতে দিয়ে খুব সামান্য হলুদ, লবণ, গরম মসলা ও তেজপাতা দিয়ে নাড়তে হয়।

ভাত ভাজা হলে নামিয়ে ফেলতে হয়। এই ভাত গরম গরম খেলেই ভালো লাগে। বেশি দেরি করলে, আর যদি আবহাওয়া গরম থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

খিচুড়ি :

চাল ও মুগডাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হয়। কড়াইয়ে ঘি, আদা, তেজপাতা নিয়ে চুলায় অল্প ভাজতে হয়। ডাল একটু ভেজে নিতে হয়। তারপর চাল, দারুচিনি, লবঙ্গ দিয়ে ভেজে পরিমাণমত পানি দিতে হয়। এরপর লবণ দিয়ে নেড়ে দিতে হয় । মিনিট পনেরো পর ফুটে উঠলে ঢেকে দিতে হয়। মৃদু জ্বালে ২০-২৫ মিনিট ফুটানোর পর হলুদ ও মরিচ দিলে ঝাল ভুনা খিচুড়ি তৈরি হয়।

পরিবেশনের সময় পেঁয়াজ কুচি ভাজা ও ডিমের স্লাইস বা ডিম ভাজি দিলে উত্তম হবে। খিচুড়ির মধ্যে সবজির টুকরা, মটরশুঁটি, গাজর কুচি দিয়েও সবজি খিচুড়ি তৈরি করা যায়। অনেকে খিচুড়িতে পানির ভাব রেখে পাতলা খিচুড়ি করেন। তবে ঝরঝরা খিচুড়িরই বেশি চাহিদা ।

খুদ ভাজা :

চাল ভাঙ্গানোর পর মিল বা কল থেকে যে খুদ পাওয়া যায় তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে চুলায় ভেজে নিতে হয় । ভাজা খুদ ঠাণ্ডা করে বায়ুরোধী পাত্রে পিঠা বা চালের গুড়ি তৈরি করার জন্য সংরক্ষণ করা যায়।

নাডু :

পরিবারের বিভিন্ন শুভ অনুষ্ঠানে নাড়ু তৈরি করা হয়। নাড়ু সকলের প্রিয় খাবার। শুকনো খাবার হিসেবে এটি বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়। চাল থেকে অনেক ধরনের নাড়ু হয়। যেমন- আনন্দ নাড়ু, মনোহর নাডু, তিলের নাড়ু, ঝাল নাড়ু ইত্যাদি।

প্রথমে পরিষ্কার সিদ্ধ চালের গুড়োর সাথে দই মিশিয়ে নিতে হয়। গোলা তৈরি হলে কড়াইয়ে ঘি দিয়ে ভেজে নিতে হয়। তারপর চিনির রসে ফেলে তা থেকে গরম অবস্থায় পাকিয়ে নিতে হয়। ঠাণ্ডা হলে নাড়ু করা যায় না।

ফ্রায়েড রাইস :

কড়াইয়ে পানি ফুটে উঠলে পোলাও চাল দিতে হয়। সাথে লবণ মিশিয়ে মাঝারি আঁচে ভাত সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ফুটাতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে ভাত যেন গলে না যায় এবং প্রত্যেকটি ভাত আলাদা থাকে। মাড় ফেলে ভাত শক্ত ঝরঝরে করে নিতে হবে। গাজর ও ওলকপি ছোট ছোট টুকরা করে ও মটরশুঁটি আলাদা ভাবে সিদ্ধ করতে হয়।

পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ কলি কুচি করতে হয়। মাংস স্লাইস করতে হয়। একটি থালায় মাংস এবং সবজিগুলো নিয়ে তাতে ভাত রেখে, লবণ, গোল মরিচের গুঁড়ো ও স্বাদ লবণ ছিটিয়ে দিতে হয় এরপর ডিম ভেঙ্গে স্বাদ লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে ফেটতে হয়।

 

সিদ্ধ চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, নাডু ও ফ্রায়েড রাইস তৈরি

চিত্র : ফ্রায়েড রাইস

বড় হাঁড়ি বা কড়াইয়ে তেল গরম করতে হয়। তেলে মাংস দিয়ে ৫-৬ মিনিট এবং গাজর ও ওলকপি দিয়ে ৪-৫ মিনিট ভাজতে হয়। তারপর পেঁয়াজ ও ফেটানো ডিম দিয়ে নাড়তে হয়। ৭-৮ মিনিট ভাজার পর ডিম কিছুটা জমাট বাঁধলে ভাত দিয়ে নাড়তে হয়। সয়াসস দিতে হয়। পেঁয়াজ কলি দিয়ে ফ্রায়েড রাইস নামিয়ে নিতে হয়। শুধু চিংড়ি মাছ, ডিম, মুরগির মাংষ দিয়েও ফ্রায়েড রাইস রান্না করা যায়।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment