আজকের আলোচনার বিষয়ঃ চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ। যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।
Table of Contents
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ । Fat soluble Vitamin-A
আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, ভিটামিন A1 ও ভিটামিন A একই। ভিটামিন-A বা A1 চর্বিতে গুলী অপরিহার্য খাদ্য উপাদান। 1913 সালে বিজ্ঞানী Mccolion Davis ভিটামিন A বা A1 আবিষ্কার করেন।
তাঁরা ডিমের কুসুমে ও মাখনে এর অস্তিত্ব খুজে পেয়েছেন এবং তাঁরাই ভিটামিন A1 বা A কে চর্বিতে দ্রবণীয় বলে চিহ্নিত করেন।
(ক) ভিটামিন এ এর রাসায়নিক গঠন:
রাসায়নিকভাবে ভিটামিন এ হল একটি B- আয়োনোন নিউক্লিয়াস বা চক্র এবং চারটি আইসোপ্রিন এককের সমন্বয়ে গঠিত একটি অসম্পৃক্ত যৌগ । ভিটামিন- A1 এর আণবিক সংকেত C20H30O এবং এর রাসায়নিক গঠন নিম্নরূপ-
citro
(খ) ভিটামিন এ এর উৎস:
উদ্ভিদ ও প্রাণীজ উভয় প্রকার উৎস হতে ভিটামিন A পাওয়া যায়। যেমন
উদ্ভিজ্জ উৎস :
১। সবুজ পত্রবহুল ক্যারোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজি যেমন স্পেনিজ, মেদি, ক্যাবেজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A থাকে।
২। হলুদ, কমলা ও লাল রংবিশিষ্ট এবং ক্যারোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন- A বা A1 পাওয়া যায়।
৩। বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটিন সমৃদ্ধ ফল যেমন পাকা আম, মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে,গাজর, বিট এ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A বা A1 থাকে।
প্রাণীজ উৎস :
হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মাছ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটিন সমৃদ্ধ লতাপাতা খায় অর্থাৎ এসব প্রাণী ক্যারোটিন পায় যা দেহে ভিটামিন A তৈরি করে। এসব প্রাণীর কলিজা, ডিম, দুধে ভিটামিন-A জমা থাকে। উল্লেখ যে, সামুদ্রিক মাছের যকৃত ভিটামিন A, এর অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করে। আবার মিঠা পানির মাছ ও মাছরাঙ্গা, বক ইত্যাদি ভিটামিন-A এর উৎসরূপে কাজ করে।
(গ) ধর্মাবলী:
১। কঠিন ভিটামিন- A বা A1 এর স্ফুটনাংক 63-64°C (Baxter et al. 1940) এবং কঠিন ভিটামিন A, এর স্ফুটনাংক 63-65° C
২। এটি আলোক সক্রিয়তা প্রদর্শন করে না এবং আলো ও বাতাস উভয়ের প্রতি সুগ্রাহী এবং তাপ রোধক।
৩। অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে ভিটামিন A বা A, ধ্বংস হয়ে যায়।
৪। ভিটামিন A বা A1 হলো এক প্রকার অসম্পৃক্ত অ্যালকোহল যাহা ক্যারোটিন হতে উদ্ভূত। ক্যারোটিন সবুজ গাছে পাওয়া যায়। তবে গাছের কমলা ও হলুদ রঞ্জক পদার্থ এর প্রধান উৎস।
৫। ভিটামিন A বা A, সিস্-ট্রান্স সমাণুতা প্রদর্শন করেন।
(ঘ) ভিটামিন এ এর জৈবিক কাজ :
ভিটামিন A এর গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক ক্রিয়াগুলি নিম্নরূপ
১। ভিটামিন A এর সাহায্যে দৃষ্টি চক্র সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই।
এছাড়াও আমাদের দেহে ভিটামিন A নিম্নরূপ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করে । যেমন
২। আবরক কোষ রক্ষণাবেক্ষণ :
নাক, চোখ ইত্যাদির পাতলা বহিঃআবরণ, ত্বক, গ্রন্থিসহ গ্রন্থির পাতলা আচ্ছাদন সুস্থ রাখার জন্য এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া রক্ত, মুত্রাশয় প্রকৃতি বহিঃ আবরণ সুস্থ রাখার জন্যও ভিটামিন A কাজ করে।
৩। দেহের গঠন ও বর্ধন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়াতে :
দেহের গঠন ও বর্ধন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য ভিটামিন-এ কাজ করে। দেহের বৃদ্ধির সময় ভিটামিন A এর অভাব হলে দেহের গঠন ও বর্ধন সুষ্ঠু হয় না। এ ছাড়াও এটি ত্বকের কোমলতা রক্ষা করে ।
৪। হাড় ও দাঁতের স্বাভাবিক গঠন ও বিকাশ:
ভিটামিন A হাড় ও দাঁতের স্বাভাবিক গঠনই না বরং হাড় ও দাঁতের বিকাশেও ভূমিকা রাখে।
৫। এটি কার্বোহাইড্রেটের বিপাকে সাহায্য করে।
৬। বিভিন্ন খাদ্য পরিপাক ও ক্ষুধা বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা রয়েছে।
৭। এটি এপিথেলিয়াল কোষের অখন্ডতা রক্ষা করে এবং আবরক কলাকে সুস্থ ও সজীব রাখে।
৮। ভিটামিন-A পরিপাক ও ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য এবং যে কোনো স্থানের ক্ষত প্রতিহত করে।
(ঙ) ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ :
ভিটামিন এ এর গুরুত্বপূর্ণ অভাবজনিত রোগগুলি নিম্নরূপ-
১। দেহে ভিটামিন এ এর অভাব দেখা দিলে রেডোপসিনের বিভক্তিকরণ ও পুনঃসংশ্লেষণ সুসম্পন্ন হয়না এবং স্বল্প আলোতে দেখতে পাওয়া যায়না। এ অবস্থাকে রাতকানা বলা হয়।
২। অনেক দিন থেকে দেহে ভিটামিনের অভাব হলে চোখের কর্ণিয়ার আচ্ছাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে কর্ণিয়ার উপর একটি শুষ্ক স্তর পড়ে। যার কারণে চোখ শুকিয়ে পানি পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং চোখে আলো সহ্য হয় না । একে চোখের শুষ্কতা বা জেরপথালমিয়া (Xerophthalmia) বলে।
৩। অনেক দিন থেকে দেহে ভিটামিনের অভাব হলে চোখের কর্ণিয়া নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ফলে এতে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে। এ কারণে আলসার দেখা দেয় এবং পরিশেষে কর্ণিয়া ফেটে যায়। এতে দৃষ্টি শক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরনের রোগকে কেরাটোমেলাসিয়া (Keratomalacia) বলে।
৪। ভিটামিন এ এর উপরোক্ত অভাজনিত রোগ ছাড়াও ভিটামিন A এর অভাবে হাড়ের বিকৃতি দেখা দেয়, দেহের সুষ্ঠু গঠন ও বর্ধন ব্যাহত হয়, মিউকাস পর্দা নষ্ট হয়, ডায়রিয়া হতে পারে, প্যারালাইসিস বা স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
(চ) ভিটামিন A1 এবং ভিটামিন-A2 এর মধ্যে পার্থক্য :
ভিটামিন-A1 এবং ভিটামিন A2এর রাসায়নিক গঠন হতে দেখা যায় যে, ভিটামিন A, হল ভিটামিন- A এর ডিহাইড্রোজেনেটড গঠন (Dehydrogenated form)। অর্থাৎ ভিটামিন A তুলায় ভিটামিন- A2 এ দুটি হাইড্রোজেন কম রয়েছে ৷ এদের মধ্যে এ মৌলিক পার্থক্য তাদের শুধু -আয়োনোন নিউক্লিয়াসে ভিটামিন A, এর ক্ষেত্রে B-আয়োনোন নিউক্লিয়াসে একটি মাত্র দ্বি-বন্ধন যেখানে ভিটামিন A এর ক্ষেত্রে দুটি দ্বি-বন্ধন বিদ্যমান অর্থাৎ ভিটামিন A এর তুলনায় ভিটামিন A তে একটি কনজুগেট দ্বি-বন্ধন বেশি রয়েছে।
আরও দেখুনঃ