আজকের আলোচনার বিষয়ঃ চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ই বা টোকোফেরল। যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।
Table of Contents
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ই বা টোকোফেরল । Fat soluble Vitamin D or tocopherol
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Evan et al গমের অঙ্কুরের তেল হতে ভিটামিন ই বা টোকোফেরল (Tocopherol, tokos Childbirth, pheros = to bear ol an Alcohol) আলাদা করেন এবং এর নাম দেন টোকোফেরল ।
(ক) ভিটামিন ই এর রাসায়নিক গঠন :
ভিটামিন ই হলো টোকলের (6-হাইড্রোক্সিক্রোম্যান) একটি জাতক ভিটামিন-E বা টোকোফেরল একটি ক্রোম্যান বলয় ও একটি ফাইটল গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত। যেমন
ভিটামিন E বা টোকোফেরলে ফাইটল গ্রুপটি ক্রোম্যান বলয়ের C-2 এর সাথে যুক্ত থাকে।
ভিটামিন E বা টোকোফেরল বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । যেমন আলফা-টোকোফেরল, বিটা-টোকোফেরল,গামা-টোকোফেরল,ডেল্টা-টোকোফেরল,ইপসিলন-টোকোফেরল,
জেটা-টোকোফেরল ও ইটা-টোকোফেরল । এদের প্রত্যেকের রাসায়নিক গঠন প্রায় আলফা-টোকোরোলের ন্যায়। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ফাইটল গ্রুপটি অপরিবর্তিত থাকে এবং ক্রোম্যান বলয়ের C-5, C-7ও C-8 এর সাথে যুক্ত গ্রুপ বা পরমাণু পৰিৰির্তিত হয়। নিম্নের ছকে বিভিন্ন ধরনের টোকোফেল এবং C-5, C-76 C-8 এর সাথে যুক্ত গ্রুপ বা পরমাণুর তালিকা দেয়া হলঃ
উপরের তালিকা অনুসারে নিম্নে আলফা-টোকোফেরল, বিটা-টোকোফেরল ও গামা-টোকোফেরল এর গঠন দেখানো হলঃ
(খ) ভিটামিন ই এর উৎসঃ
দানাশস্য, যকৃত, ভোজ্য তৈল, ফল, বিভিন্ন ধরনের ফল, মাছ-মাংসের চি ডিমের কুসুম, মটরশুঁটি, দুখে (গোদুগ্ধের চেয়ে মাতৃসুদ্ধে টোকোফেরল এর পরিমাণ বেশি থাকে) প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন E বা টোকোফেরল পাওয়া যায়। তবে ভোজ্য তেল ভিটামিন E বা টোকোফেরল এর প্রধান উৎস।
(গ) ভিটামিন ই এর সাধারণ ধর্মাবলী :
ভিটামিন-E বা টোকোফেরলের সাধারণ ধর্মাবলীসমূহ নিম্নরূপ
১। ভিটামিন E হালকা হলুদ বর্ণের এক প্রকার আঠালো তৈলজাতীয় পদার্থ।
২। এটি পানিতে অদ্রবণীয় কিন্তু জৈব প্রাবকে দ্রবণীয় এবং এটি স্নেহপদার্থে দ্রবীভূত ।
৩। ক্ষার ও জারক উপাদানের প্রভাবে এর সক্রিয়তা নষ্ট হয়।
৪। অভিবেগুনী রশ্মি ও ভাপে এর সক্রিয়তা নষ্ট হলেও অক্সিজেনের অবর্তমানে এটি দীর্ঘকাল কর্মক্ষম থাকে।
৫। প্রচুর পরিমাণ তৈলে ভিটামিন B সমৃদ্ধ খাদ্য ভেজে রান্না করলে প্রায় 75% ভিটামিন E নষ্ট হয় কিন্তু সাধারণ পদ্ধতিতে রান্না করলে ভিটামিন E নষ্ট হয় না।
(ঘ) ভিটামিন ই এর জৈবিক কাজ:
ভিটামিন E এর অভাবে ইঁদুরে, এজনন ক্ষমতা লোপ পায়। এছাড়াও ভিটামিন E এর অভাবে বানরসহ অন্যান্য প্রাণীর পেশির খিঁচুনি, শূন্যতা ও ক্রিটিনিউরিয়া প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হয়। এটি মানবদেহে নিম্নরূপ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করে । যেমন
১। এটি কোষের বাহিরের ও ভিতরের গঠন কাজে সহায়তার মাধ্যমে বেশ কিছু শারীরবৃত্তিক কাজে অংশগ্রহণ করন।
২। ভিটামিন E মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর বন্ধ্যাত্ব বোধ করে।
৩। এ ছাড়াও ভিটামিন E মাংসপেশির গঠন যথাযথ রাখতে ভূমিকা রাখে।
(ঙ) ভিটামিন ই এর অভাবজনিত রোগ :
ভিটামিন-E এর অভাবজনিত রোগসমূহের মধ্যে রয়েছে-
১। শিশুদের রক্ত স্বল্পতা রোগ দেখা দেয়। এর রোগ সদ্যজাত শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি পরিলক্ষিত হয়। সদ্যজাত শিশুদের ভিটামিন-E এর অভাবে লোহিত কণিকা নষ্ট হওয়ার কারণেই শিশুদের রক্ত স্বল্পতা রোগ দেখা দেয়।
২। ভিটামিন-E এর অভাবে বয়স্ক পুরুষের শুক্রাণু কম তৈরি হয় এবং অনেক শুক্রাণু নষ্ট হয়।
৩। ভিটামিন-E এর অভাবে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হতে পারে ।
৪। ভিটামিন-E এর অভাবে চুল পড়া ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়।
৫। অনেক গবেষণায় বলা হয়, ভিটামিন-E এর অভাবে মায়োপ্যাথি হয়।
৬। ভিটামিন-E এর ঘাটতি হলে শরীরে ভারসাম্যহীন বোধ হয়। মূলত ভিটামিন-E এর অভাবে স্নায়ুগুলোতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেড়ে যায়।
৭। আপনি যদি প্রায়ই ঝাপসা দেখে, বিশেষ করে রাতে। ভিটামিন-E-এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান
চোখের রেটিনাকে সুরক্ষা দেয়।
আরও দেখুনঃ