আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ডাল মিলিং বা ভাঙানো
Table of Contents
ডাল মিলিং বা ভাঙানো
ডাল মিলিং বা ভাঙানো
ডালের আবরণ অত্যন্ত শক্ত থাকে। এতে প্রায় ১৬ ভাগ আঁশ এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ থাকে। ডালের খোসা অপসারণ করা না হলে খোসাসহ ডাল খেয়ে হজম করা কষ্টসাধ্য হয়। তাই ডালের খোসা অপসারণ (বডি হাস্কিং) করা দরকার।
ডালের খোসা অপসারণ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় ডালের খোসার সাথে আহারোপযোগী অনেকাংশ চলে যায়। তাই খোসা অপসারণ প্রযুক্তি এমন হওয়া উচিত যাতে খাদ্যোপযোগী অংশের অপসারণ কম ঘটে। এটা বিভিন্ন অবস্থার উপর নির্ভর করে। যেমন-
(১) ডাল বীজের গুণগত প্ৰকৃতি ।
(২) ডাল বীজের গঠন বা আকার ।
(৩) ডাল বীজের আয়তন।
(৪) ডাল বীজের ভৌত গুণাবলি
(৫) ডাল বীজের পরিপক্বতা
(৬) ডাল বীজের আর্দ্রতা ইত্যাদি।
ডালের খোসা বীজপত্রকে খুব শক্তভাবে আবৃত করে রাখে। ডালের খোসা মূল ডালের ৫-১০ ভাগ হয় । আবার কোনো কোনো ডালের শতকরা প্রায় ৫-১৮ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনেক ডালে এক প্রকার আবরণ থাকে যা পাতলা আঠালো পর্দার মতো খোসা ও ডালের শাঁসকে শক্ত করে আটকে রাখে। ডালের দানার আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
যেমন- গোলাকার, নলাকার, পিরামিড আকৃতি, চ্যাপ্টা, ডিম্বাকৃতি ট্যাবলেট আকৃতির এবং খোসা মসৃণ, খসখসে ও কুচকানো থাকে। ডালের এই নানা ধরনের গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে খোসা অপসারণের প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
তবে খোসা অপসারণের পদ্ধতি ও প্রয়োগ দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে খোসা অপসারণের প্রযুক্তি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। খোসা অপসারণের পদ্ধতি প্রয়োগে দক্ষতার উপর ডালের উৎপাদনের পরিমাণ বহুলাংশে নির্ভরশীল। ডাল প্রস্তকরণ বা মিলিং সাধারণত দুই ভাবে হয়ে থাকে। যথা-
(ক) খোসা আগলাকরণ ও
(খ) খোসা অপসারণ বা দূরীকরণ
খোসা আলগাকরণ
সব ডালের খোসা অপসারণের আগে আলগা করে নিতে হয়। তাছাড়া ডালের শাঁস ও খোসা সহজে পৃথক করা যায় না। ডালের খোসা সহজে আলগাকরণের জন্য ডাল শুকিয়ে নিতে হয়। ডাল ভালোভাবে শুকিয়ে না নিলে আলগাকরণের সময় ডালের শাঁস চ্যাপ্টা হয়ে শুকিয়ে গুঁড়া হয়ে যায়।
খোসা অপসারণ বা দূরীকরণ
ডালের খোসামুক্তকরণ প্রক্রিয়া গ্রামীণ পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র আকারে হস্তচালিত মেশিনে ও বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সম্বলিত মিলে আধুনিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়। পদ্ধতিদ্বয় নিম্নরূপ :
(ক) গ্রামীণ পদ্ধতি ও
(খ) আধুনিক পদ্ধতি
গ্রামীণ পদ্ধতি
গ্রামীণ পদ্ধতিতে ডাল ভাঙানোর জন্য দুইধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যেমন- হামানদিস্তা ও যাঁতা ।
হামানদিস্তা
হামানদিস্তা দিয়ে ডাল খোসামুক্তকরণ একটি প্রাচীনতম ও সাধারণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ডালকে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিয়ে কিছু পানি মিশিয়ে হামান দিস্তায় নেওয়া হয়। অতঃপর হাত দ্বারা হামান দিয়ে দিস্তায় রাখা ডালে আঘাত করে আস্ত ডালের খোসামুক্ত করা হয়। ডাল খোসামুক্ত হওয়ার পর কুলা দ্বারা ঝেড়ে ডালের আলাদা হওয়া অংশ বস্তাবন্দী করা হয়। এ পদ্ধতিতে সময় ও শ্রম বেশি লাগে।
যাঁতা
এটি পাথরের তৈরি একটি গ্রামীণ যন্ত্র। এতে পাথরের দুইটি গোলাকার ঘুরানোর উপযোগী চাকতি বা খণ্ড থাকে। নিচের চাকতিটি স্থির থাকে এবং উপরের চাকতিটি ঘুরানো যায়। তবে উভয় চাকতির ভিতরের দিকে খাঁজ কাটা থাকে।
উপরের চাকতির ঘুরানোর জন্য একটি হাতল আছে এবং ডাল প্রবেশ করানোর ছিদ্র থাকে। দুই চাকতির মাঝে ডাল দিয়ে চাকতি ঘুরালে ডালের খোসা মুক্ত হয়ে যায়। গমও এই যন্ত্র দ্বারা পিষে আটা করা যায়।
আধুনিক পদ্ধতি
(ক) এব্রেসিভ সিলিন্ডার মেশিন : বর্তমানে পাথরের প্লেট ব্যবহৃত মিল ছাড়া এব্রেসিভ সিলিন্ডার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এ মেশিনে ছিদ্রযুক্ত চালনি থেকে নির্দিষ্ট একটি গোলাকার ঘর্ষণকারী পাথর থাকে। মেশিনটি চালু হলে পাথরটি ৬৫০ আরপিএম এ ঘুরতে থাকে। উপরের হপার দিয়ে ডাল ঢেলে দেওয়া হয়।
ভালো দানা মেশিনের ভিতরে ঘূর্ণায়মান পাথরের পাশে এসে লাগে। পাথরের ঘর্ষণে ডালদানার খোসা আলাদা হয়ে যায়। দানা ছোট হলে ঘর্ষণ প্রক্রিয়া কয়েকবার চালানো হয়। যেমন- মসুরের দানা। তবে বড় দানা ১-২ বার ঘর্ষণেই খোসা আলাদা হয়ে যায়। যেমন- ছোলা বা মটরদানা ।
(খ) শুষ্ক চাকতি মেশিন : এ মেশিনে একটি সিলিন্ডারের মধ্যে অকেগুলো ঘর্ষণকারী চাকতি থাকে। এ চাকতিগুলো খুব দ্রুত গতিতে ঘুরতে থাকলে উঁচু হপার দিয়ে ডাল দানা ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। এ মেশিনে অন্যান্য মেশিনের তুলনায় খুব কম সময়ে ডালের খোসা অপসারণ বা মুক্ত করা হয়।
(গ) আধুনিক মিলিং মেশিন : এ মেশিন দ্বারা ডালের খোসায় ফাটল ধরানোর জন্য খসখসে রোলার ব্যবহার করা হয়। রোলার ঘুরতে থাকলে ডাল দানা রোলারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়।
ভালের খোসায় ফাটল ধরানোর পর অ্যাব্রেসিভ রোলারের সাহায্য খোসামুক্তকরণ করা হয়। অনেক সময় ভালে ০.১১ ভাগ পরিমাণ ভোজ্যতেলের প্রদেশ দেওয়া হয় এতে করে তেল খোসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। শাঁসকে খোসা থেকে সহজে আলাদা করে ফেলে। তারপর এই ভাল ট্যাপারিং রোলারের সাহয্যে সহজেই খোসা অপসারণ করা হয়।
তেল ব্যবহারে ডাল দানা তেল চুষে নেয় ফলে খোসা ও শাঁসের মধ্যকার শক্ত বাঁধন শিথিল হয়ে যায়। ডালের খোসা ও শাঁসের মধ্যকার বাঁধন শিথিল করার জন্য তেল বা পানি ব্যবহার করার পর ডালের টেম্পারিং করতে হয়। টেম্পারিং করার জন্য তেল বা পানি মিশানো ডাল শুকাতে হয়। ডাল নানা আর্দ্রতা কামানোর জন্য স্তূপাকারে রাখা হলে সমস্ত দানা তাপে গরম হয়ে যায়।
এ তাপ দানার মধ্যে অনেক সময় ধরে রাখতে পারে। তবে আর্দ্রতা পরিমিতকরণ করতে অনেক সময় লাগে। তাই পানি বা তেল মেশানো কাজ রাতের বেলায় করে পরিমিতকরণের কাজ করা হয়। এ ডাল দানা পরদিন সকালে মিলিং- এর উপযোগী হয়ে এবং সহজে ও অল্প সময়ে খোসাযুক্ত করা যায়। বিভিন্ন ধরনের ডালদানা মিলিং- এর বিভিন্ন অংশ কী পরিমাণে পাওয়া যায় তা নিচে দেখানো হলো-
চিত্র : আধুনিক ডাল মিলিং মেশিন
ডাল মিলিং-এর ফ্লো-চাটং
আরও দেখুন :