আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ডাল বীজের পুষ্টিমান
Table of Contents
ডাল বীজের পুষ্টিমান
ডাল বীজের পুষ্টিমান
বিভিন্ন প্রকার ডাল বীজের বিভিন্ন অংশের পরিচিতি :
চিত্র : মসুর বীজের বিভিন্ন অংশ
ডালের পুষ্টিমান :
ডাল অত্যন্ত পুষ্টিকর দানাদার খাদ্যশস্য। এই শস্যে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে। অন্যান্য দানা জাতীয় শস্যের তুলনায় যে কোনো ডালে আমিষের পরিমাণ বেশি। ডাল ও চাল মিশ্রিত খিচুড়ি শিশু ও বয়স্কদের রেরি বেরি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। অঙ্কুরিত ডালের অঙ্কুরে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে।
ডালের পুষ্টি উপাদান :
প্রোটিন :
ডালে ১৮-২৫% প্রোটিন থাকে। ডালের প্রোটিনের মধ্যে গ্লোবিউলিন ৬৬%, অ্যালবুমিন ১৪%, গ্লুটোনিন-৪.৮% ও প্রোলামিন থাকে। ডালের প্রোটিন গমের চেয়ে দ্বিগুণ এবং কলে ছাঁটা চালের ১৪ গুণ। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি প্রোটিন প্রধান খাদ্যের তুলনায় ডালে প্রোটিনের পরিমাণ কম নয়। কিন্তু এই প্রোটিন মাছ ও মাংসের মতো উৎকৃষ্ট শ্রেণির নয়।
১০০ গ্রাম ডালের প্রোটিন ১০০ গ্রাম মাংসের প্রোটিনের সমান, ১০০ গ্রাম ডিমের প্রোটিনের দ্বিগুণ এবং ১০০ গ্রাম দুধের প্রোটিনের ৭ গুণ সমান। সুতরাং আমাদের মতো দরিদ্র দেশে অল্প ব্যয়ে ডাল থেকেই অধিকাংশ প্রোটিনের অভাব পূরণ করা যেতে পারে।
কিন্তু ডালের প্রোটিনে কোনো কোনো অ্যামাইনো এসিড কম থাকায় এর সহিত কিছু প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। বিভিন্ন প্রকার ডালে আবার বিভিন্ন রকমের অ্যামাইনো এসিড থাকে তাই প্রতিদিন একই ডাল না খেয়ে একেক দিন একেক রকম ডাল বা পাঁচ মিশালী ডাল খাওয়া উচিত। চাল ও ডালের প্রোটিন পরস্পরের পরিপূরক ।
শর্করা :
ডালে শর্করা থাকে ৬০%-৬৫%, স্টার্চ থাকে ৪৭-৫৩% এবং চিনি থাকে ৭.৯% । শ্বেতসার ও আমিষের জন্য ডাল দানাশস্যের ন্যায় ক্যালরিযুক্ত খাদ্য। ১০০ গ্রাম ডাল থেকে ৩৪৬ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায় ।
স্নেহ পদার্থ :
ডালে
স্নেহ পদার্থ
স্নেহ পদার্থ খুব কম থাকে, মাত্র ১-২%। তবে ছোলার ডালে ৫% স্নেহ পদার্থ থাকে।
ভিটামিন :
ডাল ভিটামিন-বি১ (থায়ামিনের) এর ভালো উৎস। এ ছাড়া ভিটামিন-এ, রিবোফ্লাবিন ও নায়াসিন ভিটামিন পাওয়া যায়। ছোলা, মুগ, মাষকলাইয়ের বীজ খোসাসহ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে অঙ্কুরিত হয়ে ভিটামিন-সি তৈরি করে অঙ্কুরিত ডালের পুষ্টিমূল্য বেশি। ভিজানোর ফলে থায়ামিন পানিতে মিশে ডালের দানার ভিতরে প্রবেশ করে। মসুর ডালে ক্যারোটিন পাওয়া যায়। রান্না করার সময় ডালে ‘বি’ ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় ।
মিনারেলস বা খনিজ পদার্থ :
প্রতি ১০০ গ্রাম ডালে ৮-১০ মি: গ্রাম লৌহ, ১০০-২০০ মি: গ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৪২০ – ৬২০ মি: গ্রাম ফসফরাস থাকে। মসুর ও মটর ডালে অন্যান্য ডালের চেয়ে লৌহ কম থাকে। অন্যদিকে মাষকলাই, ছোলার ডাল ও সয়াবিনে লৌহের পরিমাণ বেশি থাকে।
ডালের পুষ্টি উপাদানগুলো দেহের বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ এবং রক্তশূন্যতা, বেরি বেরি ও স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতা, প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডালের খোসা বা ভুসিতে সিলিকার পরিমাণ খুব বেশি নয়। ভুসিতে আঁশ জাতীয় খাদ্য থাকে ১৬% এবং প্রোটিনের পরিমাণ ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে থাকে।
কাজেই ডালের খোসা গরু ছাগলের খাদ্য হিসেবে কাজে লাগে। ডাল জাতীয় শস্যের সাথে অন্যান্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের তালিকা নিম্নের ছকে দেখানো হলো-
উৎস : বাংলাদেশে মসুরের চাষ-বি.এ.আর.আই
ডালে উপস্থিত পুষ্টিবিরোধী উপাদান : ডালে সাধারণত নিম্নলিখিত পুষ্টিবিরোধী উপাদান বা জৈব বিষ দেখা
যায় ৷
এগুলো নিম্নরূপ-
(১) সয়াবিন – ট্রিপসিন ও হেমাগ্লুটানিন।
(২) শিমের বিচি- গয়টেরোজেনিক ফ্যাক্টর।
(৩) খেসারি ডাল- ল্যাথাইরাস।
উপরোক্ত বিষগুলো তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব।
ল্যাথাইরিজম :
খেসারির ডালে ল্যাথাইরিজম রোগের জন্য দায়ী ল্যাথাইরাস উপাদান পাওয়া যায়। একনাগাড়ে ২-৩ মাসের বেশি সময় শুধু খেসারির ডাল খাওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া প্রতিদিন ২০০ গ্রাম বা তার বেশি পরিমাণ খেসারির ডাল দীর্ঘদিন খেলে ল্যাথাইরিজম রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ রোগে হাত ও পা অবশ হয়ে প্যারালাইসিস বা অবশ রোগ হয়ে থাকে।
চিত্র : ল্যথাইরিজমে আক্রান্ত কিশোর
তবে খেসারির ডাল ৮- ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পানি নিংড়ে ফেলে দিলে ক্ষতিকর ল্যাথাইরাস উপাদান কমে যায়। তাছাড়া ডাল গুঁড়া করে অন্য খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাবার তৈরি করা হয়। গোটা ডালের চেয়ে গুঁড়া করে বেসন হিসেবে খেলে সহজে হজম হয়।
আরও দেখুন :