আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় চাল থেকে খাদ্য তৈরি
Table of Contents
চাল থেকে খাদ্য তৈরি
চাল থেকে খাদ্য তৈরি
আতপ চাল (Sundried Rice) :
মাড়াইয়ের পর ধান শুকিয়ে নিয়ে সিদ্ধ না করে মেশিনে বা ঢেঁকিতে ছাঁটাই করে যে চাল পাওয়া যায় তাকে আতপ চাল বলে। আতপ চালে চালাবরণ ও অঙ্কুর কুঁড়ার সাথে চলে যায় বিধায় পুষ্টিমূল্য অনেক কমে যায়।
আতপ চাল বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। আতপ চাল বেশি সাদা দেখায় এবং চালের গায়ে সাদা পাউডারের মতো পদার্থ থাকে। আতপচাল অধিকতর পরিষ্কার করার জন্য টেলক বা ফ্রেঞ্চচক ব্যবহার করা হয়। ততে ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি পায় ।
আতপ ও সিদ্ধ চালের বৈশিষ্ট্য :
চাল আমাদের প্রধান খাদ্য। এর ৭৬ ভাগই শ্বেতসার। খেতে সুস্বাদু ও সুপাচ্য এবং রান্নার প্রণালি সহজ হওয়ায় চাল সকলের নিকট অতি প্রিয় খাদ্য। ভারত, বাংলাদেশ, জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নেপাল, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জনগণের প্রধান খাদ্য হচ্ছে চাল।
ঢেঁকি ছাটা চাল ও কলে ছাঁটা চাল :
ঢেঁকি ছাঁটা চাল :
ঢেঁকিতে দেশীয় পদ্ধতিতে ধান ভেঙে যে চাল পাওয়া যায় তাকে ঢেঁকি ছাঁটা চাল বলে । ধানের তুষ বা খোসা ছড়ানোর পর একটি বাদামি রংঙের সূক্ষ্ম স্তর বা চালাবরণ দেখা যায়। আতপ চালের এ চালাবরণ সামান্যই থাকে। চালাবরণের অধিকাংশই পরিষ্কার হয়ে যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে।
ঢেঁকি ছাঁটা চালে এই স্তরটি কিছুটা বজায় থাকে বিধায় এ চাল পুষ্টির দিক দিয়ে কলে ছাঁটা চালের চেয়ে কিছুটা উন্নত মানের হয়।
কলে ছাঁটা চাল বা পোলিশড রাইস (Polished Rice) :
ধান কলে ভেঙে এই চাল পাওয়া যায়। যান্ত্রিক উপায়ে ধান ভাঙা হলে চালের উপরের লালচে আবরণ বা চালাবরণ দূর হয়ে সাদা হয়ে যায়। ফলে চাল পুষ্টির দিক দিয়ে নিম্নমানের হয়। বেশি ছাঁটা বা সাদা মসৃণ চাল Polished Rice শহরের লোক বেশি পছন্দ করে। এই চাল দেখতে সুন্দর, সহজে পোকা ধরে না এবং বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়।
চিত্র: ঢেঁকি ছাঁটা ও কলে ছাঁটা চাল ।
পুরাতন চাল :
পুরাতন চালের ভাত সুন্দর ঝকঝকে হয় বলে সকলের নিকট পছন্দনীয়। চাল পুরাতন হলে এর অ্যামাইলোজ নামক শর্করা কমে যায় এবং বাইরে ধুলার মতো অংশ শক্তভাবে শস্যদানার গায়ে সেঁটে যায়। পুরাতন চাল ধীরে ধীরে শক্ত ও লম্বকৃতি হয়ে যায়।
সংরক্ষণের কারণে পুরাতন চালের শর্করা কণাগুলো ঘনীভূত হয় এবং কিছুটা পানি শুকিয়ে যায়। এর ফলে ধোয়ার সময় বা রান্না করার সময় পুরাতন চালে পুষ্টি উপাদানের ক্ষয় বহুলাংশে হ্রাস পায়। রান্নার সময় পুরাতন চাল ফাটে না। পুরাতন চাল উন্নত পুষ্টিমানের হয় ।
নতুন চাল :
নতুন চাল রান্না করলে ভাত নরম ও আঠালো হয়ে যায় এবং সহজেই ফেটে যায়। নতুন চালে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। এর ফলে ধোয়া ও রান্নার সময় বেশিরভাগ পুষ্টি উপাদান চলে যায়। নতুন চালে পুষ্টি উপাদন পুরাতন চাল থেকে কম হয়।
সিদ্ধ চাল (Parboiled Rice) :
বেশিদিন সংরক্ষণের জন্য মাড়াইয়ের পর ধান সিদ্ধ করে নেওয়া হয়। এরপর সিদ্ধ ধান শুকিয়ে ভাঙানোর পর যে চাল পাওয়া যায় তাকে সিদ্ধ চাল বলে। সিদ্ধ করার পূর্বে ধান ২৪ ঘন্টা ভিজানো হয়। এতে ধানের তুষের স্তর ভেদ করে ধানের ভিতর পানি ঢুকলে অ্যালুরন স্তরের থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, পানিতে দ্রবীভূত হয়ে পানির সাথে চালের দানা বা শস্যের ভিতর প্রবেশ করে সেখানে অবস্থান করে।
এ সময় চালে পানিযোজন ও শর্করায় জেলাটিনাইজেশন ঘটে। এরপর ধান পানির বাষ্প দ্বারা অল্প সময় সিদ্ধ করা হয় বিধায় ভিটামিন নষ্ট হয় না। ধান সিদ্ধ করার ফলে ধানের ভ্রূণ চালের সাথে খুব শক্তভাবে যুক্ত হয়ে যায়। ফলে ধান ভাঙানোর সময় পুষ্টির অপচয় কম হয়। ধান ঢেঁকিতে ভাঙালে পুষ্টি অপচয়ের হার আরও কমে যায়। এ কারণে ঢেঁকি ছাঁটা সিদ্ধ চালের পুষ্টিমূল্য অন্য চাল অপেক্ষা বেশি।
সারণি : প্রতি ১০০ গ্রাম আতপ ও সিদ্ধচালের খাদ্যোপাদান
উৎস : পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থা- সিদ্দিকা কবীর
সিদ্ধ চালের বৈশিষ্ট্য :
(১) সিদ্ধ চাল দেখতে উজ্জ্বল, গা মসৃণ এবং ভাত ঝরঝরে হয়।
(২) সিদ্ধ চালের ভাতের স্বাদ মিষ্টি গন্ধযুক্ত হয়।
(৩) সিদ্ধ চালের ভাতের মাড়ে পুষ্টি কম অপচয় হয়
(৪) সিদ্ধ চালে পোকামাকড়ের আক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
(৫) সিদ্ধ ধানের চাল হজমে বেশি সহায়ক।
(৬) সিদ্ধ চালের ভ্রূণ বা অঙ্কুর সহজে অপসারিত হয় না ।
আতপ ও সিদ্ধ চাল থেকে উৎপাদিত খাদ্য :
আতপ চাল থেকে উৎপাদিত খাদ্য
আতপ চাল থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের খাদ্য দ্রব্যগুলো হচ্ছে-
(১) খিচুড়ি
(২) জাউভাত
(৩) পায়েস
(৪) ক্ষীর
(৫) জর্দা
(৬) পোলাও
(৭) বিরিয়ানি ও তেহারি
(৮) ফিরনি
(৯) চালের গুঁড়ি বা আটা
(১০) চালের স্যাঁকা রুটি
(১১) চালের পাপড়
(১২) চালের গুঁড়ি দিয়ে বিভিন্ন পিঠা
(১৩) ফ্রায়েড রাইস
চিত্র:খিচুড়ি, পায়েস, পোলাও, বিরিয়ানি
সিদ্ধ চাল থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যগুলো নিম্নরূপ :
(১) ভাঙ
(২) সাভাত বা বৌভাত
(৩) মাড় ফেলা ভাত
(৪) ভাতের মত
(৫) পান্তা ভাত
(৬) খিচুড়ি
(৭) মুড়ি
(৮) নাডু ইত্যাদি।
আরও দেখুন :