গম ভাঙানোর বিভিন্ন পদ্ধতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়  গম ভাঙানোর বিভিন্ন পদ্ধতি

গম ভাঙানোর বিভিন্ন পদ্ধতি

গম ভাঙানো বা মিলিং

গম দানাকে যান্ত্রিক উপায়ে আটা বা ময়দা করার পদ্ধতিকে মিলিং বলে। মিলিং এরপর আমরা পদ্ম থেকে আটা, ময়দা ও সুজি পেয়ে থাকি। পম যিলিং করার সময় যে ভূসি পাওয়া যায় তাতে গমের বহিঃস্তর ও অ্যালুরেন স্তর ছেটে যায়। এমনকি গমের অঙ্কুরও বাদ পড়ে যায়। গম ভাঙানোর পদ্ধতি দুই প্রকার। যথা- প্রচলিত পদ্ধতি ও আধুনিক পদ্ধতি।

 

গম ভাঙানোর বিভিন্ন পদ্ধতি

চিত্র : বাঁতার ব্যবহার

প্রচলিত পদ্ধতি :

এ পদ্ধতিতে পাথরের চাকতি দ্বারা তৈরি যন্ত্র যাঁতা ব্যবহার করা হয়। পরপর পুরু দুইটি চ্যাপ্টা ও গোল গাথরের চাকতির মাঝে পম দানা প্রবেশ করিয়ে উপরের চাকতি হাতল দিয়ে ঘুরানো হয়ে থাকে। নিচের চাকতিটি স্থির থাকে। যাঁতা একজনই ঘুরাতে পারে। যাঁতা ঘুরানোর ফলে আটা দুই চাকতির চারদিক দিয়ে পড়িয়ে নিচে পড়তে থাকে। পরে তা সংগ্রহ করে নিতে হয়।

চাকতি দুটি পরস্পর সমান্তরাল অবস্থানে থাকে। এ পদ্ধতিতে যে আটা করা হয় তা দিয়ে স্যাঁকা রুটি করা যায় কিন্তু ভূমির পরিমাণ বেশি হওয়ায় কেক, বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি এ আটা দিয়ে করা যায় না। কেননা এ পদ্ধতিতে আটার কণা মিহি মা হওয়ার ফলে ময়লা তৈরি করা যায় না।

আধুনিক পদ্ধতি :

এ পদ্ধতিতে পম ভাঙ্গানোর কাজ তিন পর্যায়ে হয়ে থাকে। যথা:

ক. গম পরিষ্কারকরণ

খ. গম কন্ডিশনিং ও

গ. মিলিং করা

গম পরিষ্কারকরণ :

মাঠ থেকে গম সংগ্রহের পর গমের সাথে বিভিন্ন প্রকার শস্যদানা, ধুলাবালি, খড়কুটা, কীটপতঙ্গের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মলমূত্র ইত্যাদি মিশে থাকে। এগুলো অপসারণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের চালনি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যেগুলো গমের দানার চেয়ে ছোট সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য নিম্নের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়। যেমন:

১. বিভিন্ন প্রকার চালনি : ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসযুক্ত ছিদ্রের চালনি ব্যবহার করে পষ পরিষ্কার করা হয়।

২. ভিক্ষ সেপারেটর : বিভিন্ন আকৃতির গমের দানা এই যন্ত্র দ্বারা শ্রেণিবিন্যাস করা হয় ।

৩. পানিতে ভিজিয়ে : পানিতে ভিজালে পম ও হালকা দ্রব্যগুলো পানিতে ভেসে উঠবে এবং পাথর ও ভারী ময়নাগুলো নিচে পড়ে যাবে। উপর থেকে গম বীজ তুলে নিচের ময়লা তলানী ফেলে দিতে হবে।

৪. বাঙালের সাহায্যে :  গম ধোয়ার পর শুকিয়ে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার (Vaccum Cleaner) যারা গমের সাথে হালকা দ্রব্যগুলো পরিষ্কার করতে হবে। যেমন- খড়কুটা ও ধুলাবালি ।

৫. চুম্বক দ্বারা : পম মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকানো যান্ত্রিকভাবে করা হলে গমের সাথে কিছু চুম্বকীয় পদার্থ মিশে যেতে পারে। ম্যাগনেটিক স্ক্রিন ব্যবহার করে এসব চুম্বকীয় ধাতব পদার্থ গম থেকে দূর করা সম্ভৰ ।

 

গম ভাঙানোর বিভিন্ন পদ্ধতি

গম কন্ডিশনিং :

গম গুঁড়া করার পূর্বে হালকাভাবে পানিতে ভিজানোকে কন্ডিশনিং বলা হয়। গমের আটার গুণাগুণের ওপর নির্ভর করে গমের ত্বক বা ভুলি ছাঁটা হয়। পম ভিজানোর সাথে সাথে উঠিয়ে কারবারে করে পাত্রে স্তরে ২৪-৭২ ঘণ্টা আবদ্ধ করে রাখা হয়। এটা নির্ভর করে গমের দানার গঠনের ওপর যথা-শক্ত ও নরম গম। গম ভিজালে ১৫-১৭% পানি শোষণ করে ত্বক নরম হয় এবং সহজেই ছাঁটা যায়।

গম মিলিং:

যিলিং করে গম থেকে ময়লা পেতে নিম্নের কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। যেমন-

১. ব্রেকিং : রোলার মিলে ভিজানো গম ভাঙানো হয়। এই যন্ত্রে সুইটি রাবার রোলার থাকে যাতে দুই ধরনের ঘূর্ণন গতি থাকে। এর ফলে গমগুলো ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হরে যায়। এরপর চালনি দিয়ে ঢেলে বড় আকৃতির টুকরোগুলো পুনরায় হপার দিয়ে যন্ত্রে প্রবেশ করিয়ে ভাঙা হয়।

২. চালা ও ছাল ঝাড়া : ক্রাশিং রোলার দ্বারা গমের ত্বক বা ছাল আলাদা করার সময় কিছু গমের এন্ডোস্পার্ম বা শস্য সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয়ে ময়দা হয়ে যায়। এগুলো সূক্ষ্ম চালনি দিয়ে চেলে আলাদা করা হয়।

৩. সূক্ষ্ম গুঁড়াকরণ : গম মিলিং যন্ত্রে ৮-১০ জোড়া রোলার থাকে এগুলোকে রিডাকশন রোলার বলে । ভাঙ্গা গমকে পর্যায়ক্রমে কয়েকবার মসৃণ রোলার দ্বারা ভেঙ্গে সূক্ষ্ম বা মিহি গুঁড়ায় পরিণত করা হয়।

৪. পিউরিফিকেশন : বড় বড় মিলে রিডাকশন রোলার ব্যবহারের ফলে গমের কণা বেশি সূক্ষ্ম হয়ে ময়দায় পরিণত হয়। এ সূক্ষ্ম কণাকে বায়ু প্রবাহের দ্বারা ভ্যাকুয়াম স্থানে উঠিয়ে দেওয়া হয়।

 

গম ভাঙানোর বিভিন্ন পদ্ধতি

 

কণার আকার ও ওজনের ভিত্তিতে উড়ন্ত অবস্থা থেকে ময়দার কণা পৃথক করা হয়। এই পৃথক করার পদ্ধতিতে পিউরিফিকেশন বলে।

আরও দেখুন : 

Leave a Comment