আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আলু সংরক্ষণ
Table of Contents
আলু সংরক্ষণ
আলু সংরক্ষণ
উৎপাদন মৌসুমে আলু প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় বিধায় আলু সংরক্ষণ করতে হয়। আলু দুইভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যথা:
স্থানীয়ভাবে ঘরে সংরক্ষণ :
মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে আলু-উত্তোলন করা ঠিক নয়। আলু সকালের দিকে উত্তোলন করতে হয়। আলু সম্পূর্ণভবে পরিপক্ব হলে তুলতে হয়। আলু তোলার ৭-১০ দিন আগে আলু গাছের গোড়া কেটে ফেলে আলুর ছাল বা চামড়া শক্ত করতে হয়। তাতে সংরক্ষণ গুণ বাড়ে।
আলু তোলার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন কোদাল বা লাঙ্গলের আঘাতে আলু কেটে না যায়। আলু তোলা শেষে পরিবহনের জন্য চটের বস্তা ব্যবহার করাই ভালো। সাধারণত বস্তায় আলু ভরার সময় প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা গামলা ব্যবহার করা উত্তম।
যদি বাঁশের ঝুড়ি ব্যবহার করতে হয় তাহলে ঝুড়ির মাঝখানে চট বা ছালা বিছিয়ে সেলাই করে নিতে হয়। আলু সংগ্রহ শেষে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। যদি কোনো কারণে আলু ক্ষেতে রাখতে হয় তা হলে ছায়াযুক্ত জায়গায় বিছিয়ে পাতলা কাপড় বা খড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
বাড়িতে এনে আলু পরিষ্কার, শুকনো ছায়াযুক্ত জায়াগায় রাখতে হবে। আলু ঢালার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেনে বেশি জোরে বেশি উঁচু থেকে আলু ঢালা না হয়। আলু সংগ্রহ শেষে ১-৭ দিন পরিষ্কার ঠাণ্ডা জায়গায় আলু বিছিয়ে রেখে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে ‘কিউরিং’ করতে হয়। এতে আলুর পায়ের ক্ষত সেরে যাবে ও পোকার আক্রমণ থেকে আলু রক্ষা পাবে।
এভাবে আলু রেখে দেওয়ার পদ্ধতিকে আলু কিউরিং (Curing) বলে। আলু সংরক্ষণ করার আগে কাটা, সবুজ, রোগাক্রান্ত আলু বাছাই করতে হয়। সংগ্রহের ৭-১০ দিনের মধ্যে আলু পরিষ্কার করে আকার অনুযায়ী বড়, মাঝারি ও ছোট গ্রেড করতে হয়। বাছাই করা আলু ঠাঙা ও বাতাসযুক্ত ঘরে সংরক্ষণ করতে হয়। আলু সংরক্ষণের জন্য ছনের ছাউনি দেয়া ও বড় গাছের ছায়ায় অবস্থিত ঘর সবচেয়ে উপযোগী।
মেঝেতে বা বাঁশের মাচায় প্রথমে পাতলা করে ঔষধ মিশ্রিত বালু (৩ টন শুকনা বালুর সাথে ১ কেজি সেভিন পাউডার কীটনাশকের গুঁড়া মিশাতে হবে) বিছিয়ে তার উপর আলুর অনধিক ১৫ সে.মি. পুরু স্তর বসাতে হবে এবং তা আবার বালু দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
এছাড়া ঘরের তাকে ও চৌকির নিচে আলু বিছিয়ে রাখা যায়। সংরক্ষিত আলু ১০-১৫ দিন পর নিয়মিত বাছাই করতে হয়। রোগাক্রান্ত, পোকা লাগা ও পচা আলু দেখা মাত্র ফেলে দিতে হবে। আলুর সুতলি পোকা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বাছাই করে অনেক দূরে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হয়ে।
হিমাগারে আলু সংরক্ষণ :
আলু মাঠের উচ্চ তাপমাত্রা থেকে এনে সরাসরি হিমাগরে রাখা সমীচীন নয়। আলু উঠানোর পর পরিষ্কার করে ৭-১০ দিন শুকানোর পর মূল হিমকক্ষে না দিয়ে ২৪ ঘন্টা প্রিকুলিং (Precooling) করতে হয়। হিমকক্ষের র্যাকে ৫-৬টি স্তর করে আলু রাখা হয়। আলু উঠিয়ে শুকানো পর হিমাগারে ৭-১০ দিনের মধ্যে আলু বস্তায় রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।
চিত্র: হিমাগারে আলু সংরক্ষণ
হিমাগারে প্রথম ১৫-২০ দিন প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৫-১০ মিনিট করে হিমকক্ষগুলোতে যুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হয়। এ কাজটি রাতের বেলায় করা উচিত। পরবর্তী ৩ মাসে ৫ দিন অন্তর ১ বার এবং অবশিষ্ট সময়ে ৭ দিন অন্তর ১ বার করে উপরোক্ত কাজটি করতে হয়।
যে সব জাতের আলু ঠাণ্ডা তাপমাত্রায়ও গজানো প্রবণতা আছে তা র্যাকে সর্বনিম্নে রাখা উচিত। কারন হিমাগারের নিচের দিকে উপরের তুলনায় বেশি ঠাণ্ডা থাকে। এছাড়া হিমাগারের আলু জুন মাসে ও আগস্ট মাসে বস্তাগুলোর স্থান পরিবর্তন করে নিচের র্যাকের আলু উপরে ও উপরের আলু নিচে রাখা হয়। অবশ্য যে জাতের আলু ঠাণ্ডায়ও গজায় তা অবশ্যই স্থান পরিবর্তন করে নিচেই রাখা হয়।
হিমাগারে বীজ আলু খাবার আলুর চেয়েও নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় কারণ নিম্ন তাপমাত্রায় খাবার আলু মিষ্টি ভাবাপন্ন হয়ে যায়। হিমাগার থেকে বের করে আলু সরাসরি উচ্চ তাপমাত্রায় না নিয়ে অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় (১৩° – ১৮°C) প্রি হিটিং (Pre heating) চেম্বারে ২৫ ঘন্টা রাখতে হয়।
এ ছাড়া আলু ভালো অবস্থায় রাখার জন্য গুদামঘরের মেঝে ও দেওয়ালসমূহে কপার সালফেটের (CuSO4) দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
সংরক্ষিত আলুর ক্ষতিকারক পোকামাকড় :
বাংলাদেশে বসতবাড়িতে সংরক্ষিত আলুতে যে পোকা সবচেয়ে ক্ষতি বেশি করে থাকে তার নাম হচ্ছে আলুর সুতলি পোকা (Potato tuber worm) । এরা খাদ্য হিসেবে শুধু আলুই খেয়ে থাকে। সুতলি পোকার ক্রীড়া বা লার্ভা আলুর ভেতরে সুড়ঙ্গ করে খায়। এবং এতে আলু নষ্ট হয়ে যায়। শুধু লার্ভা অবস্থাতেই এরা আলুর ক্ষতি করে থাকে।
এ ছাড়া সুতলী পোকার তৈরি করা সুড়ঙ্গ দিয়ে ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক আলুর ভেতর প্রবেশ করে আলুকে পঁচিয়ে দেয়।
পূর্ণাঙ্গ সুতলী পোকা একটি মথ। এটি দেখতে অত্যন্ত ছোট। পাখা ছড়ানো অবস্থায় ১৫ মি.মি. চওড়া।
এদের দেহের রং রুপালি বা হাল্কা গোলাপি বর্ণের। এদের পাখায় গাঢ় বর্ণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোটা ও কিনারায় সরু লোমের ঝালর যুক্ত। স্ত্রী মথ গুদামে রক্ষিত আলুর চোখে বা তার আশপাশে ডিম পাড়ে। এ ছাড়া এরা রক্ষিত আলুর বস্তায়ও ডিম পাড়ে।
প্রতিকার :
চিত্র : আলুর সুতলি পোকার জীবন চক্র
১। বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ অথবা কাঠের গুঁড়ায় একটি স্তর (আলুর উপরে ০.৫ সে.মি.) দিয়ে দিতে হবে।
২। আলু সংরক্ষণ করার আগে সুতলি পোকা আক্রান্ত আলু বেছে ফেলে দিতে হবে। চিত্র : আলুর সুতলি পোকার জীবন চক্র
আরও দেখুন :