Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

আখ ও সুগারবিটের পরিচিতি ও পুষ্টিমান

আখ ও সুগারবিটের পরিচিতি ও পুষ্টিমান

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আখ ও সুগারবিটের পরিচিতি ও পুষ্টিমান

আখ ও সুগারবিটের পরিচিতি ও পুষ্টিমান

ভূমিকা :

আখ গ্রামিণী পরিবারভুক্ত বহুবর্ষজীবী ফসল। এর বৈজ্ঞানিক নাম স্যাকারাম অফিসিনেলিস। আখ প্রধানত চিনি ও গুড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আখ একটি নবায়নযোগ্য কৃষি সম্পদ, কারণ চিনি ছাড়া জৈব জ্বালানি আঁশ, সার ও বিভিন্ন ধরনের উপজাত দ্রব্য আখ থেকে উৎপাদিত হয়। আখ মানবসম্পদের জন্য শক্তির একটি পুরাতন উৎস। সাম্প্রতিককালে ব্রাজিল ও অন্যান্য দেশে ইক্ষু, গাড়ির প্রয়োজনীয় জীবাশ্ম জ্বালানীর একটি বিকল্প উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আখ-এর উৎপত্তিস্থল পাপুয়া নিউগিনিতে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশে আখের বিস্তার ঘটে। আখ দেশের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী ফসল। এটি দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান অর্থকরি ফসল। বাংলাদেশের চিনি উৎপাদনের একমাত্র কাঁচামাল হচ্ছে আখ । তবে বাংলাদেশে চিনি থেকে গুড় তৈরিতে অধিক আখ ব্যবহৃত হয়।

২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মোট ২ লক্ষ ২৭ হাজার জমিতে মোট আখের ফলন হয়েছে ৩৮ লক্ষ ৬২ হাজার মেট্রিক টন (BBS ২০১৭)। বাংলাদেশ আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ৪৪টি আখের জাত উদ্ভাবন করেছেন। জাতগুলো হলো ঈশ্বরদী ৩৯ ও ঈশ্বরদী ৪০ এবং বিএসআরআই আখ ৪১ থেকে বিএসআরআই আখ ৪৪। এর মধ্যে ঈশ্বরদী ৩৯ ও ঈশ্বরদী ৪০ এবং বিএসআরআই আখ ৪৪ এই তিনটি জাত লবণাক্ততা সহনশীল।

আখ ও সুগারবিটের পরিচিতি ও পুষ্টিমান

আখের পরিচিতি :

আখ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। গাছটি দণ্ডাকৃতি, একবর্ষ বা বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের পাতা ভুট্টা গাছের পাতার ন্যায়। আখ গাছ উচ্চতায় ১.৮-৩.৭ মিটার লম্বা, সম্পূর্ণ দণ্ডটি গিটযুক্ত। দণ্ডের রং হাল্কা বেগুনি, সবুজ বা হলদে সবুজ। শিকড় ধান, গম ও ভুট্টার ন্যায় গুচ্ছমূল। চাষের জন্য আখ দণ্ডকে টুকরা টুকরা করে বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি বীজের টুকরাতে ২-৩ গিঁট বা চোখ থাকে যা থেকে আখের চারা গজায়।

 

চিত্র : আখের বীজ ও সুগার বিট গাছের বিভিন্ন অংশ

দীর্ঘমেয়াদি ফসল আখের সাথে সাথী ফসল হিসাবে একই জমিতে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, বাঁধাকপি, পালংশাক, গাজর, টমেটো, বেবীকর্ন, লেটুস, ধনে, কালিজিরা, মেথি, মুগডাল, মৌরী, তিল, শস্য সফলভাবে আবাদ করা যায়। বিজ্ঞানীরা জানান, সফলভাবে সাথী ফসল আবাদের মাধ্যমে একটি জমির বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি বছরে একই জমি থেকে কমপক্ষে ৪টি ফসল পাওয়া যায়। কচু ইত্যাদি

সুগারবিট পরিচিতি :

সুগারবিট একটি স্বল্পমেয়াদি শীতপ্রধান দেশের মিষ্টি জাতীয় ফসল। বিশ্বের মোট চিনি উৎপাদনের প্রায় ২৫- ৩০ ভাগ সুগারবিট থেকে উৎপাদিত হয়। সর্বাধিক ৫-৫.৫ মাসের মধ্যে ফলন দেয়। সুগারবিটের ফলন ৬০- ৮৫ টন/হে, এবং চিনি আহরণের হার শতকরা ১৪-১৮ ভাগ। সুগারবিট থেকে চিনি, গুড়, ইথানল ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও সুগারবিট পাল্প থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয়।

এটি একটি উত্তম পশু খাদ্য এবং এটিকে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় । আখের চেয়ে সুগার বিটের ফলন বেশি। সময় কম লাগে তাই সরকার আখের পাশাপাশি সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটে গ্রীষ্মকালে সুগারবিটের গবেষণা কাজ চলছে। ইতিমধ্যে শুভ্রা ও কাবেরী নামে দুটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে।

আখের পুষ্টিমান :

আখের রসে পানি, চিনি, কিছু পরিমাণ গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, খনিজ পদার্থ ও নাইট্রোজেন গঠিত জৈব পদার্থ থাকে। আখের রসে মোট দ্রবণীয় কঠিন পদার্থের পরিমাণ ২০-২২ ভাগ। ডিসেম্বর মাসে আখে চিনির পরিমাণ ১২-১৪ ভাগ হয়। রিফ্লাক্টোমিটার দ্বারা আখের রসের চিনি পরীক্ষা করে আখ পরিপক্ব হয়েছে কি না দেখে আখ কাটা হয়। পরিপক্ব আখ তাড়াতাড়ি না কাটলে চিনি ও গুড়ের পরিমাণ কমে যায় ৷

 

 

প্রতি ১০০ কেজি আখ থেকে ১০ কেজি গুড় বা ৬ কেজি চিনি পাওয়া যায়। আখের রস, গুড় ও চিনিতে প্রধানত : শর্করাই পাওয়া যায়। গুড়ের পুষ্টিমূল্য চিনি অপেক্ষা বেশি, দাম উভয়েরই প্রায় সমান। আখের রস, গুড় ও চিনির খাদ্য উপাদান নিম্নে দেখানো হলো-

সারণি: প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রস, গুড় ও চিনি খাদ্য উপাদান :

 

 

সারণি : সুগারবিটের পুষ্টিমান (প্রতি ১০০ গ্রামে) :

 

 

আরও দেখুন : 

Exit mobile version