ভিটামিন সি বা এল অ্যাসকরবিক এসিড । Vitamin C or L ascorbic acid 

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ভিটামিন সি বা এল অ্যাসকরবিক এসিড। যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।

 

ভিটামিন সি বা এল অ্যাসকরবিক এসিড । Vitamin C or L ascorbic acid 

 

ভিটামিন সি বা এল অ্যাসকরবিক এসিড । Vitamin C or L ascorbic acid

(ক) ভিটামিন C এর রাসায়নিক গঠনঃ

ভিটামিন সি  একটি সরল জৈব এসিড। ভিটামিন C বা অ্যাসকরবিক এসিড L গুলোজ নামক হেক্সোজের জাতক । ভিটামিন C  এর রাসায়নিক গঠন নিম্নরূপঃ

 

ভিটামিন সি বা এল অ্যাসকরবিক এসিড । Vitamin C or L ascorbic acid 
ভিটামিন C বা সেভিটামিন এন্টিস্করনিউটিক ফ্যাক্টর

(খ) উৎস :

১। লেবু, আমলকি, পেয়ারা, আনারস, গোলআলু, কমলা লেবু এবং পত্রজাত বিভিন্ন শাকসবজি ভিটামিন C এর প্রধান উৎস ।

২। পরিপক্ক ও শুকনো বীজে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C পাওয়া যায়।

৩। বীজের অঙ্কুরোদগমের সময় অঙ্কুরে ভিটামিন C পাওয়া যায়।

৪। মাতৃদুগ্ধের ভিটামিন C  শিশুর চাহিদা পূর্ণ করে।

(গ) বৈশিষ্ট্য

১। ভিটামিন সি সাদা বর্ণের স্ফটিক, এটি এসিডধর্মী ও পানিতে দ্রবণীয়।

২। ভিটামিন C তাপে খুব দ্রুত নষ্ট হয়।

৩। অক্সিজেনের প্রভাবে এটি খুব দ্রুত জারিত হয় ও বিজারি হতে পারে।

৪। ক্ষার জাতীয় পদার্থের সাথে উত্তাপে এবং তামার সংস্পর্শে ভিটামিন C নষ্ট হয়

৫। ভিটামিন C ডানঘূর্ণী ও বামঘূর্ণী এ দু’অবস্থায় অবস্থান করে।

 

ভিটামিন C বা L- অ্যাসকরবিক এসিড বা সেভিটামিন এন্টিস্করনিউটিক ফ্যাক্টর

 

(ঘ) জৈবিক ক্রিয়া

১। কার্বোহাইড্রেট এবং এমাইনো এসিডের বিপাকে এর ভূমিকা রয়েছে।

২। এটি কো-এনজাইমরূপে এবং স্টেরয়েড হাইড্রোক্সিপেজ এনজাইমরূপে কাজ করে।

৩। দেহের সংযোজক কোষের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ভিটামিন C ভূমিকা রাখে।

৪। দেহের ফাইবার (সাধারণত কেটে বা পুড়ে তত্ত্ব ক্ষতিগ্রস্থ হয়) পুনর্গঠনে ভিটামিন C র ভূমিকা রয়েছে।

৫। ভিটামিন C ছাড়া কোলাজেন তৈরি হয় না। কোলাজেন আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক প্রকার প্রোটিন ত্বক, হাড়, দাঁত, পেশিপ্রান্ত প্রকৃতির কোষসমূহতে পরস্পরের সাথে মজবুতভাবে সংযোগ স্থাপন করে।

৬। ভিটামিন- C এর সাহয্যে হিমোগ্লোবিন তৈরী হয় এবং যকৃতের কোষে আয়রন সঞ্চয় হয়।

৭। দেহে বিভিন্ন ধরনের হরমোন তৈরীতেও এর ভূমিকা রয়েছে। যেমনঃ থাইরোক্সিন ও এডরিনালিন নামক হরমোন ভিটামিন C এর সাহয্যে তৈরি হয়।

 

ভিটামিন C বা L- অ্যাসকরবিক এসিড বা সেভিটামিন এন্টিস্করনিউটিক ফ্যাক্টর

 

(ঙ) ভিটামিন C এর অভাবজনিত রোগঃ

১। ভিটামিন C এর অভাবজনিত রোগের মধ্যে স্কার্ভি অন্যতম। কোলাজেন আমাদের শরীরের ত্বক, হাড়, দাঁত, পেশিপ্রান্ত প্রভৃতির কোষসমূহকে পরস্পরের সাথে মজবুতভাবে সংযোগ স্থাপন করে। কোলাজেন ভিটামিন- C বা এর সাহয্যে তৈরি হয়।

সুতরাং ভিটামিন C বা এর অভাব হলে দেহে কোলাজেন সুষ্ঠুভাবে তৈরি হবে না। আর কোলাজেন তৈরি না হলে আমাদের শরীরের ত্বক, হাড়, দাঁত, পেশিপ্রাপ্ত প্রভৃতির কোষসমূহকে পরস্পরের সাথে মজবুতভাবে সংযোগ স্থাপন করে না। ফলে ধীরে ধীরে কোষসমূহ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং স্কার্ভি রোগের নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। স্কার্ভি রোগে দাঁতের গোড়া নরম হয়, মাড়ি ফুলে যায়, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে এবং খুব ব্যথা অনুভূত হয়।

২। ভিটামিন সি বা এর অভাবে দেহের সংযোজক কোষের রক্ষনাবেক্ষণ কাজে এবং দেহের ফাইবার পুনর্গঠনে ব্যাঘাত ঘটে। ।

৩। ভিটামিন সি এর অভাবে হিমোগ্লোবিন তৈরী খুব মন্থর গতিতে হয়।

৪ । এর অভাবে দেহে বিভিন্ন ধরনের হরমোন তৈরীতেও বাধা সৃষ্টি হয় ।

৫। এছাড়াও এর অভাবে হাড় নমনীয় ও ভঙ্গুর হয়, হাত পায়ের গাঁট ফুলে যায়, ত্বকের বাহিরে ও ভিতরে রক্ত ক্ষরণ হয়, ত্বক সখসে, চুলকায়, যা হয় এবং ক্ষত শুকাতে অনেক সময় লাগে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment