আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সুষম খাদ্যের কাজ
সুষম খাদ্যের কাজ
সুষম খাদ্য
আমাদের পেট খালি থাকলে ক্ষুধা অনুভব করি এবং তখন খাওয়ার প্রয়োজন হয়। ক্ষুধা লাগলে পেট ভরে খেয়ে ক্ষুধা দূর করাই উদ্দেশ্য নয়, খাওয়ার উদ্দেশ্য হলো শরীর রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো পরিমিত পরিমাণে শরীরে সরবরাহ নিশ্চিত করা। পুষ্টি উপদানগুলো হলো আমিষ, শর্করা, স্নেহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি।
দেহে যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন তা তিন শ্রেণীর বিভিন্ন প্রকার খাদ্য থেকে পাওয়া যায়। একজন লোকের দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য বিভিন্ন উপাদান বহুল যেসব খাদ্যসামগ্রী পরিমাণমতো প্রয়োজন হয় তাকে সুষম খাদ্য বলে।
সুষম খাদ্য দেহে শক্তি জোগানো ছাড়াও দেহের বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দান করে। সুতরাং মাছ-ডাল, ভাত-রুটি, শাকসবজি, ফল এসব বিভিন্ন শ্রেণীর খাদ্য নিয়েই খাবার সুষম হয়। যেসব শর্ত পালনের ফলে খাবার সুষম হয় তা নিম্নরূপ-
(১) প্রতি বেলায় খাবারে তিন শ্রেণীর খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করে খাদ্যের ছয়টি উপাদানের অন্তর্ভুক্ত নিশ্চিতকরণ।
(২) প্রত্যেক শ্রেণীর খাদ্য নির্ধারিত পরিমাণে (পেশা অনুযায়ী) পরিবেশন করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহে নিশ্চিতকরণ।
(৩) খাদ্য প্রস্তুতে সতর্কতা অবলম্বন করে খাদ্য উপাদানের অপচয় রোধ।
(৪) দৈনিক মোট ক্যালরির ৬০-৭০% শর্করা জাতীয় খাদ্য, ৩০-৪০% স্নেহ জাতীয় খাদ্য এবং ১০% আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে গ্রহণ।
(৫) দৈনিক মাথাপিছু কমপক্ষে ৩০ গ্রাম তেল রান্নায় ব্যবহার এবং ২০ গ্রাম গুড়/চিনি পরিবেশন।
(৬) খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশনে যথাযথভাবে পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন।
(৭) এছাড়া প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
সুষম খাদ্যকে উপাদেয় করার জন্য খাদ্য প্রস্তুতে মশলা ব্যবহার করা যেতে পারে। মশলা শুধু খাবার উপাদেয় করে না বরং কিছু খাদ্য উপাদান যোগ করে। সুষম খাদ্যে কিছু পরিমাণে আঁশ থাকা প্রয়োজন । কারণ আঁশ খাদ্যনালীতে হজমকৃত খাদ্য চলাচল ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। সবধরনের শাকসবজি ও ফলমূলে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ থাকে।
তাই খাদ্য সুষম করার জন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ ফল ও সবজি থাকা প্রয়োজন। আর্থিক অবস্থা ও খাদ্য প্রাপ্তি সহজলভ্যতার ওপর নির্ভর করে সুষম খাদ্য তৈরি করা যাবে। সুষম খাদ্য হিসেবে যে কোনো একশ্রেণির খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে দামি বা সস্তা খাবার গ্রহণ করা হলে খাদ্যের সুষমতা নষ্ট হবে না।
এছাড়া এ তালিকায় ভিটামিন-সি যুক্ত করতে হবে। কারণ ভিটামিন-সি শরীরে জমা হয় না, প্রতিদিন তা খেতে হয়। ফল ও সবজিতে ভিটামিন-সি আছে। কিন্তু সবজি রান্নার ফলে ভিটামিন-সি তাপে নষ্ট হয়। নিমের চার্টে তিন ধরনের খাদ্যের দামি ও সস্তা খাবারের তালিকা দেওয়া হলো।
সারণি : কাজের ভাগ হিসেবে তিন শ্রেণির দামি ও সস্তা খাবার :
উপরের সারণি থেকে ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যের সমন্বয় করে সুষম খাদ্য তৈরি করতে হয়। তবে, মনে রাখতে হবে খাদ্য তালিকায় যত বেশি বিভিন্ন খাদ্যবস্তুর সমন্বয় করা যাবে, তত বেশি সুষম হবে। একজন লোক কোন শ্রেণির খাদ্য কি পরিমাণে খেলে তা সুষম হবে তা নির্ভর করে তার বয়স, পেশা, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার ওপর। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি সস্তা সুষম খাদ্যের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো-
১. চাল বা গম + ডাল + শাক (পুঁইশাক/পালংশাক/ডাঁটা) বা সবজি (টমেটো, শিম, বরবটি, ফুলকপি, লাউ, করলা ইত্যাদি)।
২. চাল বা গম + ডাল + সামান্য মাছ + শাকসবজি।
৩. মায়ের দুধ (শিশুর জন্য সুষম খাদ্য)
৪. চাল বা গম + মাংস + শাকসবজি
৫. চাল বা গম + গরুর দুধ।
ছোট বাচ্চাদের শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পায়, সে জন্য বয়স্কদের তুলনায় তাদের আমিষ জাতীয় খাদ্য বেশি প্রয়োজন হয়। যারা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে (কাঠ কাটা, মাটিকাটা, রিক্সা বা ঠেলাগাড়ি টানা ইত্যাদি) তাদের দরকার বেশি বেশি শক্তিদায়ক খাদ্য, যেমন— শর্করা।
গর্ভবতী ও প্রসূতিকালে নারীদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি পরিমাণে এবং বৈচিত্র্যময় খাবার প্রয়োজন হয়।
আরও দেখুন :