Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার নিয়ে আজকের আলোচনা। ভিটামিন সি কোলাজেন তন্তুর উৎপাদনে সাহায্য করে। তাই ক্ষত নিরাময়ে, কোষ পুনরুদ্ধারে এবং টিস্যু তৈরিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা দেহের অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলোর (যেমন ভিটামিন- ই) ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে দেহে ফ্রি-র‌্যাডিকেলজনিত সমস্যা হয় না। এটি খাদ্য থেকে আয়রন পরিশোষণ ব্যবস্থাও শক্তিশালী করে। অর্থাৎ এই একটি ভিটামিন কিন্তু আপনার অন্য ভিটামিনগুলোর জন্যও কাজ করবে। আবার দেহের প্রতিরক্ষা তথা ইমিউনিটি সিস্টেমকেও ক্ষমতাশালী করে ভিটামিন সি।

 

আমলকী [ Amlaki, Indian Gooseberry, Phyllanthus emblica ]

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার

‘ভিটামিন-সি’ দ্বারা মূলত এর একাধিক ভিটামারকে বোঝানো হয় যেগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে ভিটামিন-সি এর মত কাজ করে। ভিটামিন-সি যার রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ( Ascorbic Acid )। এটি একটি জৈব অম্ল, যা শাকসবজি, ফল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়। যার রাসায়নিক সংকেত C6H8O6 এটি সাদা দানাদার পদার্থ। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

দেখা যাক কোন বয়সে কতটুকু ভিটামিন সি এর প্রয়োজন:

বয়স                   পুরুষ                    নারী

৬ মাস পর্যন্ত          ৪০ মিলিগ্রাম       ৪০ মিলিগ্রাম
৭ মাস -১ বছর      ৫০ মিলিগ্রাম       ৫০ মিলিগ্রাম
১-৩ বছর             ১৫ মিলিগ্রাম         ১৫ মিলিগ্রাম
৪ -৮ বছর            ২৫ মিলিগ্রাম        ২৫ মিলিগ্রাম
৯-১৩ বছর           ৪৫ মিলিগ্রাম         ৪৫ মিলিগ্রাম
১৪ -১৮ বছর        ৭৫ মিলিগ্রাম         ৬৫ মিলিগ্রাম
১৯- বয়স্ক            ৯০ মিলিগ্রাম          ৭৫ মিলিগ্রাম

এছাড়া গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মায়েদের অতিরিক্ত ভিটামিন সি নিতে হবে। গর্ভবতীদের জন্য ভিটামিন সির সুপারিশকৃত দৈনিক মাত্রা ৮৫ মিলিগ্রাম। স্তন্যদায়ী মায়েদের দিনে ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত।

ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার:

কমলা, লেবু, জলপাই, মাল্টা, স্ট্রবেরি, আঙুর, বরই, জাম্বুরা, আমলকি, জামের মতো সাইট্রাস ফল; পাকা পেঁপে, পেয়ারা, আনারস, তরমুজ, আম, লিচুর মতো মিষ্টি ফল; সরিষা শাক, পালং ও পুঁইশাক, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, ঢেঁড়স, গাজর, টমেটো, ক্যাপসিকাম, থানকুনি পাতা, ধনেপাতা ও পুদিনাপাতায় ভিটামিন সি থাকে।

কোন ফল/সবজিতে কতখানি ভিটামিন সি?

এবার জেনে নেওয়া যাক কোন ফলে কী পরিমাণ ভিটামিন সি পাবেন।

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও লেবুর চেয়েও বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায় লিচুতে। প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুতে ভিটামিন সি আছে ৫৩ মিলিগ্রাম। আর একশ গ্রাম লিচুতে আছে ৭১.৫ মিলিগ্রাম। এদিকে আপেল বেশ পিছিয়ে। ১০০ গ্রাম আপেলে আছে মাত্র ৪.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।

খেয়াল রাখবেন:

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত তাপে ও অনেকক্ষণ সেদ্ধ করলে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভিটামিন সি যুক্ত সবুজ শাক-সবজি অল্প তাপে সেদ্ধ করতে হবে বা তাজা কাঁচা অবস্থায় খেতে হবে।

ভিটামিন সে এর অভাবে যেসব সমস্যা ও রোগ হয়:

 

অধিক ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কিছু খাবারের গুনাগুণ:

পেয়ারা

বিশেষজ্ঞদের মতে পেয়ারা হল সবচেয়ে ভালো ও উৎকৃষ্ট ফল যা থেকে পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন-সি।বেশ কিছু গবেষণা থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায় এবং দেখা গেছে নিয়মিত পেয়ারা গ্রহণে সার্বিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ পেয়ারা থেকে পাওয়া যাবে ২২৮.৩ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন-সি।

পেয়ারা [ Guava ]

লিচু

মৌসুমি ও জনপ্রিয় এই ফলটি থেকেও পাওয়া যাবে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি। যা কোলাজেন সিন্থেসিস ও রক্তনালীকার স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। ভিটামিন-সি ছাড়াও লিচু থেকে আরও পাওয়া যাবে পটাশিয়াম, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচু থেকে মিলবে ৭১.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।

 

লিচু [ Lychee ]

কুল-বড়ই

আমাদের বিভিন্ন প্রজাতি, আকৃতি, স্বাদ, মানের কুল ও বড়ই পাওয়া যায়। পরিচিত এই ফলটিও ভিটামিন-সি’র অন্যতম একটি উৎস। সবচেয়ে বড় কথা হল, এই ফল থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন-সি ত্বকের স্বাস্থ্যে জন্য খুবই ভালো। পাশাপাশি টক ফল হওয়ায় ওজন কমাতেও ভূমিকা রাখে কুল ও বড়ই। প্রতি ১০০ গ্রাম কুল ও বড়ই থেকে পাওয়া যাবে ৬৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।

 

কুল, বরই বা বড়ই [Jujube , Chinese Date, Ziziphus Zizyphus]

পেঁপে

এক কাপ পরিমাণ পেঁপে থেকে পাওয়া যাবে ৮৭ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন-সি, যা খুব সহজেই এই ফলটিকে ভিটামিন-সিয়ের অন্যতম দারুন একটি উৎস হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। শুধু পাকা পেঁপে নয়, কাঁচা পেঁপেও সমানভাবে ভিটামিন-সি’র জন্য পরিচিত। এতে উপকারি ভিটামিনের পাশাপাশি আরও রয়েছে ভিটামিন-এ, ফলেট, আশ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।

 

পেঁপে [ Papaya ]

কমলালেবু

সাইট্রাস বিভিন্ন ফলের মাঝে কমলালেবুকে এই তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে। ফ্রেশ কমলালেবু খাওয়া হল সরাসরি শরীরকে ভিটামিন-সি দেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়। প্রতিদিন একটি বড় আকৃতির কমলালেবু খাওয়া হলেও ভিটামিন-সিয়ের চাহিদা অনেকখানি পূর্ণ হয়ে যাবে।

 

কমলা লেবু [ Orange, Citrus reticulata ]

আনারস

প্রচুর পরিমাণ অ্যানজাইম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিনের সমন্বয় পাওয়া যাবে আনারস থেকে। এতে বেশ ভালো পরিমাণ ভিটামিন-সি পাওয়া যায়, যা পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও খাদ্য সঠিকভাবে পরিপাক করতে কাজ করে। এছাড়া এতে উপস্থিত বিশেষ এনজাইম ব্রোমালাইন পিরিয়ডকালীন সমস্যা কমাতেও কার্যকর।

 

আনারস [ Pineapple ]

বেদানা

বেদানা বা ডালিমকে বলা হয় অন্যতম স্বাস্থ্যকর ফল। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা ও প্রদাহ কমানোসহ ভিটামিন-সি যুক্ত মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি হতে পারে অন্যতম চমৎকার একটি খাদ্য উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম বেদানা থেকে মিলবে ১০.২ মিলিগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন-সি।

 

বেদানা [ Pomegranate ]

আমলকি

বহু উপকারিতার আলমকি থেকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি পাওয়া যাবে একসাথে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও কাশির সমস্যা দূর করতে আমলকি চমৎকার। ছোট ও কিছুটা তিতকুটে স্বাদের এই ফলটিকে প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে রাখার অভ্যাস সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকার বয়ে আনতে কাজ করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকি থেকে পাওয়া যাবে ৪২.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।

 

আমলকী [ Amlaki, Indian Gooseberry, Phyllanthus emblica ]

আরও পড়ুন:

Exit mobile version