Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

ভিটামিন বা খাদ্যপ্ৰাণ । Vitamins

ভিটামিন বা খাদ্যপ্ৰাণ

ভিটামিন বা খাদ্যপ্ৰাণ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়ঃ ভিটামিন বা খাদ্যপ্ৰাণ । যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।

 

 

ভিটামিন বা খাদ্যপ্ৰাণ । Vitamins

(ক) সংজ্ঞা :

খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ অন্যতম। যে সকল জটিল জৈব যৌগ বা জৈব রাসায়নিক পদার্থ প্রাকৃতিক খাদ্যবস্তুতে স্বল্প পরিমাণে থাকে, প্রাণীদেহে সংশ্লেষিত হয় না বলে অন্যান্য খাদ্যের সাথে গ্রহণ করতে হয়, প্রাণীদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও শরীর রক্ষার জন্য একান্ত প্রয়োজন, প্রাণীদেহে শক্তি সরবরাহ করে না অথচ শক্তি রূপান্তর এবং বিপাকীয় নিয়ন্ত্রণ করে, সে সকল জটিল জৈব যৌগ বা জৈব রাসায়নিক পদার্থকে ভিটামিন (Vitamins) বলে। 

দেহে ভিটামিনের চাহিদা খুব কম থাকা সত্ত্বেও এর অভাবে দেহে স্বাভাবিক কর্মদক্ষতা ও পুষ্টিবিধান ব্যাহত হয়। এছাড়াও এর অভাবজনিত রোগে আক্রান্তসহ মৃত্যুও ঘটতে পারে।

 

 

(খ) বৈশিষ্ট্য

১। ভিটামিন এক ধরনের ক্ষুদ্র জীব অণু (Microbiolecules)

২। ভিটামিনসমূহ খুব ঘনত্বে বেশ কার্যকরী।

৩। ভিটামিনসমূহের গঠন জটিল প্রকৃতির এবং কোনো একটি ভিটামিনের রাসায়নিক গঠনের সাথে অন্যটির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।

৪। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ভিটামিনসমূহ উৎপত্তিস্থানেই কাজে করে। 

৫। ভিটামিনসহ সহ-অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। কেননা এরা এনজাইম নিয়ন্ত্রিত জৈব রাসায়নিক বিশ্লেষণে ভূমিকা পালন করে।

৬। অধিকাংশ ভিটামিনই উদ্ভিদদেহে সংশ্লেষিত হয়। এছাড়াও অনেক ভিটামিন রয়েছে যারা কৃত্রিম উপায়েও সংশ্লেখিত হয়। 

৭। ভিটামিনসহ খাদ্যের সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন জীবের বৃদ্ধিতে খুব অল্প পরিমাণ প্রয়োজন।

৮। কোষীয় বিপাকে ভিটামিনসমূহ প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। 

৯। ভিটামিনসহ দু ধরনের হতে পারে। যথা পানিতে দ্রবণীয় এবং চর্বিতে দ্রবণীয়। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনসহ যকৃতে সঞ্চিত থাকে। 

১০। ভিটামিনসমূহ নন-এন্টিজেনিক। অর্থাৎ এরা দেহস্থ বিষাক্ত বা ক্ষতিকর পদার্থ নষ্টকারী পদার্থকে সক্রিয় বা চাঙ্গা করেনা ।

 

 

(গ) মানবদেহে গুরুত্ব :

১। ভিটামিনসমূহ খাদ্যের সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন জীবের বৃদ্ধিতে খুব অল্প পরিমাণ প্রয়োজন । 

২। ভিটামিনসসমূহ প্রাণীদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও শরীর রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। 

৩। ভিটামিনসসমূহ দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে ।

৪। এরা স্নায়ুর দৃঢ়তা বাড়ায়।

৫। পরিপাক ক্রিয়া বজায় রাখে।

৬। প্রাণীদেহে খনিজ লবণ ব্যবহারে সাহায্য করে।

৭। বাড়ন্ত অবস্থায় স্বাস্থ্য অটুট রাখে। 

৮। ভিটামিনসসমূহ স্বাস্থ্যবান সন্তান উৎপাদনে ক্ষমতা প্রদান করে ।

৯। কিছু সংখ্যক ভিটামিন রোগ প্রতিরোধে এবং কিছু সংখ্যক ভিটামিন রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

উপরে বর্ণিত ভিটামিনের এ সকল কাজ জীবদেহের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে,

ভিটামিনসসমূহ দ্বারা জীবদেহের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এ কারণে ভিটামিনসমূহকে জৈব প্রভাবক বলা হয়।

(ঘ) রাসায়নিক প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য : 

ভিটামিনের রাসায়নিক প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। ভিটামিনের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি তাদের রাসায়নিক গঠনের উপর নির্ভরশীল। ভিটামিনের রাসায়নিক গঠনই এ বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির জনা দায়ী। কারণ বিভিন্ন শ্রেণির ভিটামিনের রাসায়নিক গঠন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো ভিটামিনের সাথে কোনো ভিটামিনের রাসায়নিক গঠনের সাদৃশ্য পাওয়া যায় না ।

বহু পর্যালোচনা ও গবেষণা করে দেখা যায় যে, কোনো ভিটামিনের গঠন অত্যন্ত সরল প্রকৃতির, আবার কোনটির গঠন জটিল প্রকৃতির। যেমন নায়াসিন তথা ভিটামিন B, এর গঠন সরল প্রকৃতির এবং ফোলিক এসিড তথা ভিটামিন-Bg এর গঠন জটিল প্রকৃতির। ভিটামিন B, ও ভিটামিন B, এর রাসায়নিক গঠন কাঠামো হতে বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা যায়। যেমন

 

 

ভিটামিন B5, ও ভিটামিন B9, এর রাসায়নিক গঠন কাঠামো হতে দেখা যায় যে, ভিটামিন B5, একটি একক অণু কিন্তু ভিটামিন B9, এর তিনটি এককের সমন্বয়ে গঠিত। 

ভিটামিন B9 এর এককত্রয় হচ্ছে 2- অ্যামাইনো-4-হাইড্রোক্সি-6-মিথাইলটেরিন, প্যারা- অ্যামাইনোবেনজোয়িক এসিড এবং গ্লুটামিক এসিড। সুতরাং বলা যায় ভিটামিন B. এর গঠন সরল প্রকৃতির এবং একটি ভিটামিন B, এর গঠন জটিল প্রকৃতির।

এভাবে ভিটামিসমূহের একটির সাথে অন্যটির তুলনা করলে এ বৈসাদৃশ্য উপলব্ধি করা যায়। ভিটামিনসমূহের পরস্পরের মধ্যে শুধু রাসায়নিক বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় না বরং ভৌত বৈসাদৃশ্যও পরিলক্ষিত হয়। যেমন কিছু সংখ্যক ভিটামিন রয়েছে পানিতে দ্রবণীয় কিন্তু চর্বিতে নয়।

আবার কিছু সংখ্যক ভিটামিন রয়েছে যারা চর্বিতে দ্রবণীয় কিন্তু পানিতে নয়। ঔষধিক কার্যকারিতায়ও এদের যথেষ্ট তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন কিছু সংখ্যক ভিটামিন বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসায় এবং কিছু সংখ্যক ভিটামিন শারীরিক বৃদ্ধিতে আবার কিছু সংখ্যক ভিটামিন রোগ প্রতিরোধে এবং কিছু সংখ্যক ভিটামিন রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version