Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

বিভিন্ন প্রকার মসলা মিলিং

বিভিন্ন প্রকার মসলা মিলিং

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় বিভিন্ন প্রকার মসলা মিলিং

বিভিন্ন প্রকার মসলা মিলিং

বিভিন্ন প্রকার মসলা মিলিং

হলুদ :

হলুদ সিদ্ধ করা ও শুকানোর পর হলুদ পলিশিং করা হয়। এতে হলুদের ত্বক মসৃণ ও আকর্ষণীয় করা হয়। তারপর হলুদের সাথে ‘সরিষা ফুলি’ রং মিশায়ে আরও আকর্ষনীয় করার পর মিলিং করা হয়। অনেক সময় সরিষার পেস্ট তৈরি করে সংরক্ষণ করে।

পেস্ট তৈরি :

সর্বপ্রথম কাঁচা হলুদ সংগ্রহ, পরিষ্কার ও বাছাই করতে হবে। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ধারালো চাকু বা ছুরি দিয়ে হলুদের ছাল বা বাকল তুলে ফেলতে হবে। হলুদের এনজাইমেটিক কার্যকারিতা দূর করার জন্য সসপ্যান বা পাতিলে ১ ঘণ্টা ব্লাঞ্চিং (Blanching) বা সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ হলুদ চপার মেশিন (Chopper Machine) বা শিল-পাটায় অর্ধপেষা করে নিতে হবে।

অর্ধপেষা হলুদকে ব্লেন্ডার মেশিনে পানি ও পেষা হলুদ ১৪৪ অনুপাতে মিশিয়ে হলুদের পেস্ট তৈরি করতে হবে। হলুদ পেস্টের সাথে ০.৫% সাইট্রিক এসিড যোগ করে pH ৬ হতে ৪ এ নামিয়ে আনতে হবে। Preservative হিসেবে সোডিয়াম বেনজয়েট (১ গ্রাম/কেজি হলুদ পেস্ট) সামান্য হালকা গরম পানির সাথে গুলিয়ে হলুদ পেস্টের সাথে যোগ করতে হবে।

এভাবে তৈরি হলুদ পেস্ট (Paste) পলিথিন ব্যাগ বা কাঁচের বোতল বা প্লাস্টিক পাত্রে বায়ুরুদ্ধ অবস্থায় ৪-৬ মাস সংরক্ষণ করা যায়।

পাউডার তৈরি :

উপযুক্ত, পরিপক্ব ও রোগমুক্ত হলুদ সংগ্রহ করে পানিতে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর বাছাই করে সিদ্ধ বা ব্লাঞ্চিং করতে হবে। রোদে শুকানোর পর পলিশ করে আস্ত হলুদ বাজারজাত করা হয়। এছাড়া বাজারে মসলা ভাঙানোর মেশিনে হলুদ গুঁড়া করা যাবে।

প্যাকেজিং :

অতঃপর ছেঁকে ময়লা বা অপদ্রব্য দূর করে পরিমাণমতো প্যাকেট করতে হবে। হলুদ গুঁড়া করার সাথে সাথেই বৈয়ামে রাখতে হবে। তা না হলে বাতাসের আর্দ্রতা গ্রহণ করে হলুদ পাউডার নষ্ট হয়ে যাবে।

মরিচ :

মরিচ শুকানোর পর ঠান্ডা করে পলিব্যাগে বা চটের বস্তায় রাখা হয়। দুইস্তর বিশিষ্ট পলিব্যাগ বা বস্তায় শুকনো মরিচ সংরক্ষণ করলে মরিচের রঙ উজ্জ্বল থাকে, বীজ অঙ্কুরোদগম বেশি হয় এবং বাজারমূল্য বেশি পাওয়া যায়। শুকনো মরিচের বোঁটা ছিঁড়ে ঢেঁকিতে বা মসলা ভাঙানোর মেশিনে মরিচের গুঁড়া করে তা বৈয়ামে সংরক্ষণ করে পারিবারিক কাজে ব্যবহার করা হয়।

বৈয়ামে বায়ুরুদ্ধ অবস্থায় রাখতে হয় অন্যথায় ছত্রাক আক্রমণ করে থাকে। এছাড়া প্রিজারভেটিভ (৭৫০ ppm পটাশিয়াম মেটা বাই সালফেট [KMS] ও সাইট্রিক এসিড ০.৫%) দিয়ে মরিচের পেস্ট তৈরি করেও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

আদা প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতি :

প্রক্রিয়াজাত আদা বা green zinger তৈরির জন্য আদাকে ধারালো ছুরির সাহায্যে খোসা ছিলে ৫০ গ্রাম লবণ, ১ গ্রাম এসিটিক এসিড (গাঢ় ভিনেগার), ১ গ্রাম পটাশিয়াম মেটা বাইসালফেট ( KMS) ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দ্রবণে ভিজানো হয়। ১ কেজি আদার জন্য ১-১.৫ লিটার দ্রবণ প্রয়োজন হয়।

খোসা ছাড়া আদাকে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে ছোট ছোট টুকরা করে কাঁচের বৈয়ামে দ্রবণসহ ভরে বায়ুরোধী অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। এভাবে রাখা আদা এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। একইভাবে চিউইং জিনজার তৈরি করে বাজারজাত করা হয়।

 

 

চিত্র : আদা সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ছক

গোল মরিচ :

কালো গোল মরিচকে প্রক্রিয়াজাত বা মিলিং করে নিম্নে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের গোল মরিচ পাওয়া যায়।

(ক) সাদা গোলমরিচ

(খ) হালকা গোলমরিচ

(গ) সবুজ গোলমরিচ

(ঘ) লাল গোলমরিচ

(ঙ) গোল মরিচের গুঁড়ো

সাদা গোলমরিচ :

গোলমরিচের ফল সম্পূর্ণ পেকে গেলে ছড়াসহ তা গাছ থেকে কেটে নেয়া হয়। পাকা ফলগুলোকে চৌবাচ্চায় বা বড় পাত্রে ৪-৬ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এ সময় যেসব বীজ পানির উপর ভেসে ওঠে সেগুলোকে সংগ্রহ করা হয়। এই গোলমরিচকে হালকা গোলমরিচ বা Light Peeper বলে। এগুলোও বাজারে বিক্রি হয়। পানিতে ডুবে থাকা ফলগুলোকে দৈনিক ২-৩ বার নেড়ে দেয়া হয়।

১০-১২ দিন পর ফলগুলো তুলে একটি ত্রিপলের উপর গাদা করে রাখা হয়। ফলের খোসা নরম হওয়ায় ত্রিপলের উপর ফলগুলো হাত দিয়ে ঘষা দিলে খোসা উঠে যায়। এরপর রোদে শুকিয়ে যে গোলমরিচ পাওয়া যায় তাকে সাদা গোলমরিচ বা White Peeper বলে।

ইন্দোনেশিয়ায় শুকানো ফলের খোসা মেশিনে অপসারণ করা হয় বলে গোল মরিচের দানা ভেঙ্গে ছোট ছোট হয়ে যায়। তুলে ফেলা খোসাও গুঁড়ো করে ব্যবহার হয়।

এই গুঁড়ো খুব কালো ও সুস্বাদু। ফল শুকিয়ে তা চূর্ণ করে তেল বা স্পিরিট আহরণ করা যায়। গোল মরিচের স্পিরিট কোমল পানীয় (Soft Drink) কোকাকোলা তৈরিতে কাজে লাগে। তেল ও প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার হয়। ইউরোপ ও চীনে গোলমরিচের গুঁড়া রান্না ও সালাদে ব্যবহার করা হয় ।

 

 

সবুজ ও লাল গোলমরিচ :

অনেক সময় কাঁচা ফলের সবুজ রঙ ঠিক রেখে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকানো হয়। একে বলে সবুজ গোলমরিচ বা green pepeer. ফলের সবুজ রঙ ধরে রাখার জন্য সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2) গ্যাস দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এরপর তা শুকিয়ে কৌটায় ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। আবার অপরিপক্ব ফলকে অনেক সময় ভিনেগারে চুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এভাবে লাল পাকা ফল সংরক্ষণ করা হলে তাকে লাল গোলমরিচ বা Red pepper বলে।

ধনিয়া :

ধনিয়া মিলিং করার পূর্বে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে ধনিয়ার আর্দ্রতা বেড়ে গেছে কি না ? পোকামাকড় ও রোগবালাই মুক্ত হলে তখন মিলিং-এর উপযোগী হয়। গুঁড়ো করার সময় ধনিয়াগুলোকে একবার রোদে ঘণ্টাখানেক শুকিয়ে মসলা ভাঙানো মেশিন দিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। গুঁড়ো করার পর সাথে সাথে ছোট ছোট পলিব্যাগে ভরে প্যাকেট করে বাজারজাত করতে হবে। অথবা বড় পাত্রে বায়ুরুদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে।

দারুচিনি :

দারুচিনি মিলিং-এর জন্য টিনের চালাবিশিষ্ট ঘরের চালার ফুট খানেক নিচে ঝুলন্ত মাচা করে সেখানে বাকল বিছিয়ে শুকানোর ব্যবস্থা করা যায়। রোদে শুকানো উচিত নয়। দারুচিনি গাছের শুকানো বাকল মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। বাকলের পুরুত্ব ০.২-১.০ মি.মি হয়ে থাকে। এই বাকল মোড়ানো অবস্থায় কাঠির মতো করে (Quill) বাজারজাত করা হয়। বাকল থেকে গুঁড়ো বা Powder তৈরি করা হয়। মিলিং এর ধারাবাহিক স্তর নিম্নে দেয়া হলো :

 

চিত্র : দারুচিনি মিলিং-এর ফ্লোচার্ট

বাজারে সারা বছরই দারুচিনি কিনতে পাওয়া যায় বিধায় দারুচিনি ঘরে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন নেই। তবে ব্যবসায়ীদের অনেক সময় গুদামে দীর্ঘদিন মজুদ বা সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। সংরক্ষণ করতে হলে দারুচিনির ভালো কাঠি রাখতে হবে। গুঁড়ো রাখা যাবে না। গুঁড়োর সাথে অনেক সময় ভেজাল থাকে। এমনকি ভালোমানের দারুচিনির সাথে নিম্নমানের দারুচিনির মিশ্রণ থাকে।

‘উঁচুমানের দারুচিনি’ হবে পাতলা, মসৃণ ও হালকা বাদামি রঙের, আর ‘নিম্নমানের দারুচিনি’ হবে গাঢ় বাদামি রঙের পুরু ও খসখসে। সংরক্ষণের সময় এর মিশ্রণযুক্ত দারুচিনি রাখা যাবে না। ঠাণ্ডা জায়গায় ঘরের শীতল ও শুষ্ক স্থানে বড় কাচের বৈয়াম বা পাত্রে মুখ ভালো করে এঁটে সংরক্ষণ করতে হবে। মুখ ভালো করে না আটকালে দারুচিনির ঘ্রাণ চলে যায়।

এভাবে সংরক্ষণ করা হলে কয়েক মাস পর্যন্ত ভালো রাখা যায়। ফ্রিজেও রাখা যায়। রপ্তানির ক্ষেত্রে বাকলগুলো শুকিয়ে চোংগার আকার বা কুইল ধারণ করে। এই অবস্থায় দারুচিনি বস্তাবন্দী করে বাজারজাত করা হয়।

আরও দেখুন : 

Exit mobile version