Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

তেল ফসলের পুষ্টিমান

তেল ফসলের পুষ্টিমান

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় তেল ফসলের পুষ্টিমান

তেল ফসলের পুষ্টিমান

 

 

তেলের পুষ্টিমান :

তেল ফসল বা তেলবীজ উদ্ভিজ চর্বির একটি উৎকৃষ্ট উৎস। অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের আধিক্যের উপরই উদ্ভিজ্জ তেলের গুণাগুণ নির্ভর করে। ১ গ্রাম তেল থেকে ৯ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। উদ্ভিজ্জ তেল প্রয়োজনীয় অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড সরবরাহ করে যা শরীরে উৎপন্ন হয় না এবং দীর্ঘদিন এর অভাবে একজিমা, চামড়ার অন্যান্য ও অস্বাভাবিকতা, রাতকানা রোগ হয় এবং দেহের ওজন বাড়ে না।

চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বিশেষ করে ভিটামিন ‘এ’ শরীরে গ্রহণ উপযোগী করার জন্য তেল বা চর্বি খুবই প্রয়োজন। নিচে বিভিন্ন প্রকার তেলের পুষ্টিমানের বর্ণনা দেওয়া হলো:

সরিষার তেল :

সরিষা সাধারণত ৪০-৪৪% তেল এবং ২৪-২৫% আমিষ থাকে। এজন্য সরিষা থেকে প্রচুর তেল পাওয়া যায়। তেল নেওয়ার পর যে সরিষার ছোবড়া বা খৈল পাওয়া যায় তা একটি উত্তম গোখাদ্য। এতে ৪০ ভাগ আমিষ থাকে। সরিষার তেলের বর্ণ হলুদ এবং একটি বিশেষ গন্ধযুক্ত। অনেক স্থানে সরিষার তেল Salad Oil এবং কাসুন্দি হিসেবেও ব্যবহার হয়।

সরিষার তেলে ইউরোসিক এসিড ছাড়া অন্যান্য যেসব ফ্যাটি এসিড আছে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। ইউরোসিক এসিড বিষাক্ত এবং সহজে অপসারণ করা যায় না । সরিষা চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং রাতাকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সেজন্য খাদ্যের সাথে সরিষা তেল সংযোজন করা ভালো।

তিলের তেল :

তিলে সাধারণত ৪২-৪৫ ভাগ তেল এবং ২ ভাগ আমিষ থাকে। তিলে ৩৫-৫০ ভাগ সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে যা স্বাস্থের জন্য ভালো। খোসা ছাড়ানো তিলে প্রায় ১৮.২ ভাগ আমিষ থাকে। তিল বীজে ভিটামিন-এ এবং খনিজ পদার্থ আছে যা রক্তশূন্যতা, রাতকানা ও একজিমা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

তিল বীজে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ খুব সামান্য। তিলের তেল মাধা ঠাণ্ডা রাখে। তিল তেল ঔষুধ ও কসমেটিক শিল্পেও ব্যবহার হয়।

তিসির তেল :

তিসির বীজে ৩৫-৩৮% তেল ও তিসির খৈল ৭-১০% তেল থাকে। তিসির তেল ভোজ্য নয়।

গর্জনতিলের তেল :

গর্জনতিল একটি ভোজ্যতেল ফসল। বীজে শতকরা ৩৮-৪২ ভাগ তেল, ২০-২৫ ভাগ আমিষ, ৪.৫ ভাগ নাইট্রোজেন থাকে। এ তেলে মানব দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডের মধ্যে লিনোলিক এসিডের পরিমাণ ৫০ ভাগ এবং ফলিক এসিডের পরিমাণ ৩০ ভাগ। গর্জন তিলের গুণাগুণ ভোজ্য তেল হিসেবে খুবই ভালো।

তবে এ দেশে গর্জন তিলের তেলের এখনও বেশি প্রচলন হয়নি। সরিষার বীজের মতো গর্জন তিল বা গুজির বীজ ঘানিতে ভাঙিয়ে তেল নিষ্কাশন করা যায়। এটি গন্ধহীন তেল। এ তেলের খৈল গবাদি পশুর জন্য উপাদেয় খাদ্য ।

চিনা বাদামের তেল :

চিনাবাদাম একটি পুষ্টিকর তেলজাতীয় খাদ্য। চীনাবাদামের তেলকে এরাকিস তেল বা পিনাট তেল বলে যা দেখতে হালকা হলুদ বর্ণের। এর বীজে ৪৮-৫০ ভাগ শর্করা, তেল ২৫-৩০ ভাগ, আমিষ ৪০-৪৫ ভাগ সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ১৫-২০ ভাগ, শর্করা এবং ৫-৭ ভাগ ছাই রয়েছে। এই তেলে প্রচুর পরিমণে অলিক এসিড, লিনোলিক এসিড ও ফরমিটিক এসিড থাকে।

চীনাবাদামে যথেষ্ট ভিটামিন-বি, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন-ই এবং অল্প পরিমাণে ভিটামিন-এ, সি ও ডি রয়েছে। গুণাগুণের দিক দিয়ে চীনাবাদামের তেল সরিষার তেলের চেয়ে ভালো। কিন্তু রান্নার তেল হিসেবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার নাই। ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশে এখনও চীনাবাদাম তেল ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বাদামের বর্তমান বাজার দরে চীনাবাদাম থেকে তেল নিষ্কাশন লাভজনক নয় বিধায় সরাসরি খাওয়া হয়। সুতরাং বাদাম তেল খাওয়ার চেয়ে আস্ত বাদাম খাওয়া অধিক লাভজনক । উৎপাদিত্ব চীনাবাদাম প্রধানত ভাজা বাদাম, মার্জারিন এবং বিভিন্ন কনফেকশনারি দ্রব্যে যেমন- চানাচুর, বিস্কুট তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে।

 

 

সূর্যমুখী তেল :

সূর্যমুখী বীজে ৪২-৪৪ ভাগ তেল এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ থাকে। এ তেলে ৪০-৪৫ ভাগ লিনোলিক এসিড এবং ২৫-৩০ ভাগ অলিক এসিড থাকে। সূর্যমুখীর বীজে ১৫-২০ ভাগ আমিষ ও ২৫-৩০ ভাগ শর্করা থাকে। সূর্যমুখী বীজের খৈলে প্রচুর আমিষ থাকে, ফলে এটি উন্নতমানের গো-খাদ্য। সূর্যমুখী ফুলের বীজ কাঁচা ভেজে, লবণ দিয়ে বা গুঁড়া করে ময়দা বনিয়ে খাওয়া যায়।

এ তেলের রং সরিষা তেলের চেয়ে হালকা রঙের। সূর্যমুখী তেল চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের একটি ভালো দ্রাবক। এ তেল রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগীদের অত্যন্ত উপকার করে। এছাড়া দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে। এ তেল ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ ।

সয়াবিন তেল :

সয়াবিন বাংলাদেশে একটি সম্ভাবনাময় তেল শস্য। সয়াবিন বীজে ৪০-৪৫ ভাগ আমিষ ২১-২২ ভাগ তেল এবং ২৪-২৬ ভাগ শ্বেতসার এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ক্যারোটিন রয়েছে। অন্য কোনো ফসলে সয়াবিনের মতো এত আমিষ নাই। সয়াবিনে অন্যান্য ডালের চেয়ে কম পরিমাণে শ্বেতসার পাওয়া যায়, বিধায় এটি বহুমূত্র রোগীদের জন্য উপকারী।

এ তেল রক্তের কোলেস্টেরল কমায় বলে এটি হৃদরোগীদের জন্য উপকারি। সয়াবিনের কিছু পুষ্টিবিরোধী উপাদান বা জৈব বিষ আছে। তবে অন্যান্য ডালের সাথে সয়াবিন মিশিয়ে রান্না করলে যে কোনো একক ডালের চেয়ে এর পুষ্টিমাণ বেড়ে যায়। সহজপাচ্য করতে হলে সয়াবিন অধিক সময় ধরে রান্না করতে হয়। সয়াবিন রান্না করার সময় আয়োডাইজড লবণ ব্যবহার করা উচিত।

পাম অয়েল :

পাম গাছের বীজের মাংসল অংশ থেকে ৯ ভাগ ও বীজের শাঁস থেকে ১ ভাগ পাম কার্নেল তেল পাওয়া যায়। পাম তেল স্বাদহীন, গন্ধহীন ও এর রং স্বল্গাভ হলুদ। পাম তেলে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন-ই বেশি থাকে। পাম তেলে ১১% লিনোলিক এসিড ৪০% অলেয়িক এসিড আছে। মানুষের খাদ্যে কোলেস্টেরল বৃদ্ধিকারক মাইরিস্টিক এসিড পাম তেলে নগণ্য পরিমাণে আছে। Palm oil research instititute of malayasia (PORIM ) এর মতে পাম তেলে কোলেস্টরল নেই।

নারিকেল তেল :

বাংলাদেশে নারিকেল তেল মাথার চুলে মাখলেও ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিনস, শ্রীলংকা, মালায়েশিয়া ও ভারতের কর্ণাটক, কেরালা এবং তামিলনাডুর বিভিন্ন প্রদেশে ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

চালের কুঁড়ার তেল বা রাইস ব্রান অয়েল :

বর্তমানে বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালের কুঁড়া থেকে উন্নতমানের ভোজ্য তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে। চালের কুঁড়া ২০-২৫% তেল থাকে। এই তেলে শূন্য মাত্রায় কোলেস্টেরল এবং আমিষ পাওয়া গেছে। এ তেল ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ। এতে শরীরে এন্টিবডি তৈরিসহ চর্মরোগ প্রতিরোধ করে।

চাল তৈরির ৮ ঘণ্টার মধ্যে কুঁড়া থেকে তেল আহরণ করলে তেলের মান ভালো হয়। ভারতে চালের কুঁড়া থেকে সয়াবিনের চেয়ে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্যতেল উৎপদান হচ্ছে। নিম্নে সারণিতে তেল বীজের পুষ্টিমানের তালিকা দেওয়া হলো ।

 

 

আরও দেখুন : 

Exit mobile version