আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় তালের পুষ্টি
Table of Contents
তালের পুষ্টি
তালের পুষ্টি
বাংলাদেশে প্রায় সর্বত্র মাঠে প্রান্তরে তালগাছ দেখা যায়। তাল পামেসি পরিবারভুক্ত গাছ। তাল, নারিকেল, খেজুর, সুপারি এরিকা, এগুলো সব পামেসি পরিবারের গাছ। বর্তমান আমাদের দেশে এই গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। খেজুর গাছের মতো তাল গাছ যত্ন ছাড়াই জন্মে। খেজুরের তুলনায় তালের বীজ অনেক বড়। চারা গজাতে দীর্ঘদিন সময় লাগে।
গাছ গজানোর ১২-১৩ বছর পর ফল ধরে বলে এটি অনেকে লাগাতে চায় না। তবুও অনেক শৌখিন ব্যক্তিকে জমির আইলে পুকুর পাড়ে, অফিসে চার দিকে রাস্তার দুইধারে তাল গাছ লাগাতে দেখা যায় ।
তালের পরিচিতি:
গাছ ৬০-৭০ ফুট লম্বা, কাণ্ড গোলাকার, সরল ও দীর্ঘ, পাতা পাখার ন্যায় ও বড়। সাধারণত জানুয়ারি-মার্চ মাসে তালের ফুল ধরে এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে তাল পাকে । পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ তাল গাছের ফুলের ছড়াতে টেপিং (Tapping) করে রস সংগ্রহ করা হয়। ছোট ছোট হাঁড়ি বেশ কয়েকটি এক সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে রস সংগ্রহ করা যায়। তবে স্ত্রী গাছ ফল ধরে সেজন্য স্ত্রী গাছে টেপিং করা হয় না ।
তালের ব্যবহার :
পাকা তালের রস, গুড় বা চিনি, নারিকেল কোরা এবং দুধ সহযোগে রান্না করে উত্তম মিষ্টান্ন তৈরি করা যায়। তালের পিঠা সুঘ্রাণযুক্ত ও উপাদেয়। কচি তালের শাঁস শর্করাসমৃদ্ধ একটি আকর্ষণীয় খাদ্যবস্তু। অঙ্কুরিত তালের ভিতরের শ্বাস খেতে সুস্বাদু। এটি থেকে উৎকৃষ্ট মোরব্বা তৈরি করা যায়। তালের রস একটি সরস পানীয়। এর রস থেকে গুড় তৈরি করা যায়।
তালের গুড় অতি মূল্যবান। তালের গুড় খেজুরের গুড়ের মতো উন্নত না হলেও দানা বাঁধা চিনি যা বাজারে ‘তাল মিছরি’ নামে পরিচিত। বাজারে তাল মিছরি যথেষ্ট দাম রয়েছে। আয়ুর্বেদী মতে তাল মিছরি শিশুদের সর্দি কাশি নিরাময়ে অতীব উপকারী।
চিত্র : তাল গাছ
তালের পুষ্টিমান :
কাঁচা তালের শাঁস, পাকা তালের ফল, রস, গুড় এমনকি অঙ্কুরিত তালের আঁটির শাঁস সবই সুস্বাদু ও প্রিয় খাবার। তালের পুষ্টিমান নিয়ে দেওয়া হলো-
সারণি : তালের পুষ্টিমান (আহার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে)
তালের বিভিন্ন খাদ্য :
ভাদ্র মাসে তাল পাকে। আমাদের দেশে গ্রামেগঞ্জে এ সময়ে গৃহিণীরা পাকা তাল দিয়ে বিভিন্ন মজাদার খাবার তৈরি করে থাকে। তাল থেকে সে সকল খাবার তৈরি করা যায় তা হলো-
১. তালের গোলা
২. তালের বড়া পিঠা
৩. তালের খেজুর পিঠা
৪. তালের মাল পোয়া
৫. তালের জিলাপি
৬. তালের ভাপা পিঠা
৭. তালের কেক
৮. তালের পুলি ও নকশি পিঠা
৯. তালের ক্ষীর
১০. তালের চুষী পিঠা
১১. তালের রোল
১২. তালের রসমালাই
১৩, তালের জ্যাম ও জেলি
১৪. কচি তালের প্রিজার্ভ ও ক্যান্ডি ।
১৫. তাল দুধ
তালের গোলা তৈরি :
প্রথমে পাকা তাল সংগ্রহ করতে হবে। পাকা তালের ফল থেকে সুন্দর ঘ্রাণ বের হবে, চকচকে ও চামড়া নরম হবে। পাকা তাল গাছ থেকে আপনা-আপনি নিচে পড়ে। তাল যদি একটু শক্ত থাকে তাহলে দুইদিন ঘরে রাখলেই নরম হয়ে যায়। পাকা তালের চামড়া হাত দিয়ে টেনে ছিলে ফেলা যায়। ভিতরের নরম আঁটি যদি একটু শক্ত হয় তাহলে হাত দিয়ে কোয়া তিনটি ঢিলা করে নিয়ে কিছুক্ষণ পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হয়।
তারপর তলায় ডেকচি রেখে বেতের চালুনির উপর তালের আঁটি ঘষে রস বা গোলা বের করে নেওয়া হয় । গোলার তিতা দূর করার জন্য পাতলা কাপড়ে সম্পূর্ণ গোলা নিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখলে সমস্ত কষ নিচে ঝরে গিয়ে গোলা মিষ্টি হয়ে যায়। ঝুলিয়ে না রেখে, চালুনির উপর পুঁটলিটা আনুমানিক ৪-৫ ঘণ্টা বসিয়ে রাখলেও কষ ঝরে যায়। এরপর মিষ্টি গোলা দিয়ে বড়া, ক্ষীর, মালপোয়া তৈরি করা যায় ।
তালের বড়া :
প্রথমে পাকা তালের রস পানি দিয়ে চিপে সংগ্রহ করে ছেঁকে নিতে হয় । তারপর চুলায় দিয়ে তালের রস জ্বাল দিতে হয়। রস একটু ঘন হয়ে এলে নামাতে হয়। অতঃপর ঘন রসের সাথে পরিমাণমতো চালের গুঁড়া, গুড় বা চিনি ও প্রয়োজনমতো মসলা দিয়ে ভালো করে মিশাতে হয় । এতে তালের গোলা রুটির খামিরের মতো না হয়ে পাতলা হবে। চুলায় তেল গরম করে চামচ তিয়ে গোলা নিয়ে ডুবো তেলে তালের বড়া পিঠা ভেজে নিয়ে গরম গরম খাওয়া যায় ।
আরও দেখুন :