আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় চিড়া তৈরি দেশীয় পদ্ধতি। চিড়া হল এক ধরনের পাতলা শুকনো খাদ্যশস্য, যা সাধারণত চাল থেকে তৈরি হয়। এটি ভেজানোর পর দুধ, দই বা বিভিন্ন ধরনের সবজির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। চিড়া সহজপাচ্য এবং দ্রুত প্রস্তুত করা যায় বলে এটি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় নাশতার উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
Table of Contents
চিড়া তৈরি দেশীয় পদ্ধতি
চিড়া তৈরি দেশীয় পদ্ধতি
চিড়া তৈরির জন্য ধান প্রথমে ভাপে সিদ্ধ ( 60°-70° C) করা হয়। তবে চাল করার মতো খোসা ফাটিয়ে সিদ্ধ করা হয় না। তারপর উক্ত ধান ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর ধান থেকে পানি ঝরিয়ে খোলা বা কড়াইয়ে নিয়ে চুলায় হালকা আঁচে গরম করা হয় বা টালা হয়। এরপর গরম ধান ঢেঁকিতে খুব সাবধানে ধীরে ধীরে কুটে তুষ বা খোসা আলাদা করা হয়।
ধান যেহেতু গরম থাকে তাই কোটার সময় চাল চ্যাপ্টা হয়ে যায়। তারপর তুষ ও কুঁড়া ঝেড়ে বাদ দিয়ে পরিষ্কার চিড়া পাওয়া যায়। মেশিনে চিড়া করার জন্য ধান শুধু ভিজিয়ে রাখা হয়, সিদ্ধ করা হয় না। চিড়া দিয়ে বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবার বানানো যায়। নাস্তা হিসেবে তা চায়ের সাথে পরিবেশন করা যায়।
চিড়া দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবারগুলো নিম্নরূপ :
চিড়ার পোলাও :
এ পোলাও তৈরিতে পরিমান মত চিড়া, কিসমিস, কাজুবাদাম, সিদ্ধ গাজর, সিদ্ধ মটরশুঁটি, ঘি, চিনি, তেজপাতা, দারুচিনি ছোট এলাচ, লবঙ্গ ও লবণ নিতে হয়। প্রথমে চিড়া দ্রুত পানিতে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হয়। কড়াইতে ঘি নিয়ে উক্ত চিড়া ভেজে নিতে হয়। অন্য কড়াইতে পরিমাণমতো চিনি, বাদাম, গাজর, মটরশুঁটি, মশলা ও পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হয়।
শীতের সময় ফুলকপি, বরবটি দেওয়া যেতে পারে। অতঃপর সামান্য ঘি দিয়ে পেঁয়াজ কুঁচি লাল করে ভেজে চিড়া ও সবজি সব একত্রে সামান্য নেড়ে দিলে সুন্দর চিড়ার পোলাও তৈরি হবে। ধনে পাতা দিয়ে পরিবেশন করা যায় ।
চিড়ার পায়েস :
এ পায়েস তৈরিতে চিড়া, ঘি, চিনি বা খেজুরের গুড়, দুধ, কিসমিস, গোলাপ জল বা ভ্যানিলা ও এলাচের গুঁড়া পরিমাণমতো নিতে হয়। প্রথমে দুধের সাথে চিনি বা গুড় মিশিয়ে জ্বাল দিতে হয়। ঘন হয়ে এলে কিসমিসগুলো দিতে হয়। আরও ঘন ক্ষীরের মতো হলে নামিয়ে নিতে হয়।
ঘি গরম করে সবটা চিড়া অল্প অল্প করে হালকা করে (এমনভাবে ঘিতে ভাজতে হবে যেন ফুলে উঠে) ভেজে নিতে হয়। ক্ষীর ঠাণ্ডা হলে গোলাপজল বা ভ্যানিলা বা এলাচের গুড়া ক্ষীরের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে মিলিয়ে নিতে হয়। চিড়াগুলো পরিবেশনের খুব বেশি আগে ক্ষীরের সাথে মেশালে তা ভিজে নরম হয়ে যাবে।
এজন্য খেতে বসার ঠিক আগে ভাজা চিড়া ক্ষীরের সাথে মিশিয়ে পরিবেশন করলে অত্যন্ত উপাদেয় হয়।
চিড়া ভাজা :
চিড়া ভাজা তৈরির জন্য চিড়া, আলুর কুঁচি, ভাজা চিনাবাদাম, সিদ্ধ মটরশুটি, পেঁয়াজ কুঁচি, কাঁচামরিচ কুঁচি, সয়াবিন তেল, ধনেপাতার কুঁচি, লেবুর রস, গোল মরিচের গুঁড়া ও লবণ পরিমাণ মতো নিতে হয়। কড়াইতে তেল গরম করে নিতে হয়। তেল গরম হলে অল্প অল্প করে চিড়া গরম তেলের মধ্যে ছেড়ে হালকা ফোলা ফোলা করে ভাজতে হবে।
এক্ষেত্রে লম্বা হাতলওয়ালা তারের জালিতে চিড়া ভাজা হলে ভালো হয়। সব চিড়া ভাজা হয়ে গেলে আলুর কুঁচিতে লবণ মাখাতে হবে। তারপর আলুর কুঁচি তেলে ভেজে নিতে হবে। একটা বড় কাঁচের প্লেটে সমস্ত ভাজা চিড়া ভেজে ঢেলে রাখতে হবে।
আলু ভাজা ও সমস্ত উপকরণ পরিমাণ মতো লবণ, লেবুর রস ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে। চায়ের সাথে চিড়া ভাজা পরিবেশন করা যায়। চানাচুর তৈরিতেও চিড়া ভাজা দেওয়া হয়।
এছাড়া মুড়ির মোয়ার মতো চিড়ার মোয়া, মুড়কি, চিড়ার বরফি, চিড়ার চাকতি ও চিড়ার পুলি ইত্যাদি খাবার তৈরি করা যায়।
ধান থেকে খৈ তৈরি :
নাস্তা হিসেব থৈ অতুলনীয়। এখনও গ্রামাঞ্চলে খৈ-এর কদর অনেক বেশি। রোদে শুকানো ধান থেকে খৈ তৈরি করতে হয়। সিদ্ধ ধান থেকে খৈ তৈরি করা যায় না। বালু উত্তপ্ত হলে বালুর পরিমাণের এক-চতুর্থাংশ ধান হাঁড়িতে উত্তপ্ত বালুর মধ্যে দিয়ে তাড়াতাড়ি নাড়লে কিছুক্ষণের মধ্যে ধান ফুটে খৈ-এ পরিণত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
তখন হাড়ির মুখে ঢাকনা দিয়ে ধরে নেড়ে সব ধান ফুটিয়ে খৈ-এ পরিণত করতে হয়। খৈ ফুটা শেষ হলে চালুনিতে সব ঢেলে তাড়াতাড়ি চালা হয়। বালু চেলে এবং ধানের খোসা বা তুষ বাদ দিয়ে পরিষ্কার থৈ সংগ্রহ করতে হয়। বিন্নি ও কনকচুর জাতের ধান থেকে খৈ তৈরি করা যায়। মুড়ির মতো খৈ থেকে মুড়কি, মোয়া তৈরি করা যায়। এছাড়া দই সহযোগে খৈ একটি মজাদার খাবার।
আরও দেখুন :