Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

গ্রামীণ পর্যায় বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সয়া খাবার

গ্রামীণ পর্যায় বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সয়া খাবার

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রামীণ পর্যায় বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সয়া খাবার

গ্রামীণ পর্যায় বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সয়া খাবার

 

গ্রামীণ পর্যায় বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে সয়া খাবার

সমস্ত সয়া খাদ্যকে দুই ভাবে ভাগ করা যায়। যথা :

(ক) গ্রামীণ পর্যয়ের সয়া খাদ্য- পেঁয়াজু, শিঙাড়া, সয়ানাট, সয়া ঘুঘনি, সয়া চটপটি ইত্যাদি।

(খ) শিল্প পর্যায়ে সয়া খাদ্য – চানাচুর, সেমাই, বিস্কুট, শিশু খাদ্য, কেক ইত্যাদি ।

গ্রামীন পর্যায়ের সয়া খাদ্য

সয়া বাটা তৈরি :

মুখ খোলা পাত্রে দুই লিটার পানি নিয়ে তাতে ০.৫% সোডিয়াম বাই কার্বোনেট ও সয়াবিন নিয়ে ২০ মিনিট ফুটিয়ে সিদ্ধ করা হয়। সিদ্ধ হলে ঠাণ্ডা পানিতে ডলে সয়াবিনের খোসা ছাড়াতে হয়। খোসা পরিষ্কার করে ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে শিল পাটায় বেটে কাই বা মণ্ড তৈরি করলে সয়াবাটা তৈরি হয়।

সয়া পিঁয়াজু :

সদ্য প্রস্তুত সয়া বাটার সাথে পিয়াজুর তৈরির সকল উপকরণ যেমন- গমের ময়দা বা চালের গুঁড়া, শুকনা মরিচ বা মরিচ বাটা, কাঁচা মরিচ কুচি, রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি, লবণ, আদা বাটা ভালো করে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করতে হয়। চুলায় কড়াই দিয়ে তেল গরম করা হয়।

তেল গরম হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য মণ্ড থেকে সামান্য কিছু নিয়ে তেলে ছেড়ে দিতে হয়। ছোট টুকরাটি যদি বুদবুদ আকারে ফুটতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে তেল গরম হয়েছে। তেল গরম হলে বেশি পাতলা না করে অর্থাৎ সামন্য মোটা করে বড় বা মাঝারি সাইজের মণ্ড তেলে ছেড়ে দিতে হবে।

অল্প আঁচে জ্বাল দেওয়ার পর পেঁয়াজু বাদামি রং ধারণ করলে তখন ছিদ্রযুক্ত চামচ দ্বারা নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে হয়।

সয়া নাট :

এটি তৈরি করতে সয়া ডাল, তেল, মরিচ গুঁড়া ও বিট লবণের গুঁড়ার প্রয়োজন হয়। প্রথমে একটি বড় পাত্রে পানি নিয়ে সয়া ডালকে ১৫-২০ মিনিট ভালোভাবে সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিতে হয়। তারপর তেল গরম করে সয়াডালকে ১০-১৫ মিনিট ডুবোতেলে ভেজে তুলতে হয়।

খবরের কাগজের উপর বিছিয়ে দিলে ডালের গায়ের অতিরিক্ত তেল শুষে যাবার পর মরিচ গুঁড়া, বিট লবণ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া ও গোলমরিচ বা এলাচ গুঁড়া মিশিয়ে প্যাকেট বদ্ধ করা হয়। এ সয়াডালকে সয়ানাট বলে।

সয়া ময়দা :

ময়দা করার জন্য পরিমাণমতো সয়াবিন সংগ্রহ করে ততে নষ্ট ও বিবর্ণ দানাগুলো বেছে বাদ দিতে হবে। পরিষ্কার পানিতে ২-৩ বার ধুয়ে ৬-৮ ঘণ্টা ভিজাতে হবে। ভেজানো সয়াবিন একটি লোহার জালের উপর রেখে হাত দিয়ে ভালোভাবে ঘষে খোসা ছড়িয়ে নিতে হবে। শুধু হাত দিয়েও খোসা ছাড়ানো যেতে পারে।

পানিতে দিলে খোসা ভেসে উঠবে এবং তা ফেলে দিতে হবে। খোসা ছাড়ানো সয়াবিন ১৫ মিনিট ধরে গরম পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। ফুটানো সয়াবিন পানি ঝরিয়ে একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড়ের স্তর বিছিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হভে। ভালোভাবে শুকানো পর তা আটা/ময়দার মিলে ভাঙিয়ে বা যাঁতায় পিষে সয়া ময়দা তৈরি করা হয়।

সয়া ভাত :

সয়া ভাত রান্নার জন্য ১ ভাগ সয়া বাটা বা সয়া ময়দা ও ৯ ভাগ চালের প্রয়োজন হয়। চাল ভালো করে ধুয়ে হাঁড়িতে চাপাতে হয়। ভাত যখন অর্ধেক সিদ্ধ হয় আসবে তখন সয়া বাটা বা ময়দা দিয়ে ভালোভাবে ভাতের সাথে চামচ দিয়ে নেড়ে দিতে হয়।

উত্তমরূপে ভাত সিদ্ধ হলে নামিয়ে নিতে হয়। ভাতের সাথে পানির পরিমাণ এমন থেকে হবে যাতে মাড় না ফেলেই ভাত ঝরঝরে অবস্থায় নামানো যায়। এই ভাতে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়।

সয়া খিচুড়ি :

পুষ্ট ও পরিপক্ব সয়াবিন ভালোভাবে ভেজে খোসা ছাড়িয়ে আধাভাঙা করে নিতে হয়। একটি পাত্রে ঘি বা ডালডা নিয়ে গরম করতে হয়। পেঁয়াজকুচি করে ভেজে নিতে হয়। তারপর হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা, আদাবাটা, তেজপাতা, এলাচি, মসলা দিয়ে ডালের সাথে ভালো করে নাড়তে হয়।

এরপর পরিমাণমতো পানি ও চাল দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। খিচুড়ি সিদ্ধ হওয়ার পূর্বে ধনে পাতা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে গরম গরম পরবেশেন করতে হয়।

 

 

সয়া চটপটি :

বিকালের নাস্তা হিসোবে সয়াবিন চটপটি পরিবেশন অতি উত্তম থেকে পারে। এ জাতীয় খাবারের যথেষ্ট পরিমাণে আমিষ বিদ্যমান আছে। চটপটির উপকরণ হিসেবে সয়াবিন ২৫০ গ্রাম, হলুদ পরিমাণমতো, আলু-মাঝারি সাইজের দুইটি, ডিম ৪টি, শুকনো মারিচের গুঁড়ো ভাজা- ১৫ গ্রাম, জিরার গুঁড়ো-১০ গ্রাম, ভিনেগার ১০ মিলি,

পেঁয়াজ কুচি ৬টি, মাঝারি সাইজের কাঁচা মরিচ কুচি ১০টি, লবণ প্রয়োজনমতো তেঁতুল বা লেবুর রস প্রয়োজনমতো, পানি পরিমাণমতো নিতে হয়। প্রথমে সয়াবিন কিছুক্ষণ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে তারপর ঠাণ্ডা পানিতে সারারাত বা কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভিজানো পর পরিষ্কার পানিতে ভাল করে ধুয়ে নিতে হয়।

ধোয়া সয়াবিনের সাথে বাটা হলুদ পরিমাণমতো মিশিয়ে চুলায় ১ ঘন্টা সিদ্ধ করতে হয়। আলু ‘ও ডিম সিদ্ধ করে খোসা ছাড়য়ে নিতে হয়। আলু ও ডিম পছন্দমতো আকারে টুকরা টুকরা করে কাটতে হয়। শুকনা মরিচ ও জিরা কড়াইতে দিয়ে অল্প জ্বালে ভেজে নিয়ে ঠাণ্ডা করে গুঁড়ো করতে হয়।

অপর দিকে সিদ্ধ সয়াবিনের সাথে বাকি আলু, সিরকা বা ভিনেগার, লবণ ও অর্ধেক পরিমাণ শুকনো ভাজা মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে আবার জ্বাল দিতে হয়। পানি এমনভাবে দিতে হবে যাতে এ মিশ্রণগুলো ডুবো ডুবো অবস্থায় থাকে। এ মিশ্রণ যখন ফুটতে আরম্ভ করবে তখন কাঁচা পেঁয়াজ ও কাটা কাঁচা মরিচ ছেড়ে দিতে হয়।

কিছুক্ষণ ফুটার পর চুলা নিভিয়ে সয়াবিন চটপটি নামাতে হয়। চটপটি খাবার জন্য অন্য পাত্রে ঢেলে নিয়ে ডিম (স্লাইস করে কাটা) লেবুর রস এবং অবশিষ্ট জিরা ও মরিচের গুঁড়ো উপরে ছিটিয়ে দিয়ে প্রস্তুত করতে হয়।

সয়া শিঙাড়া :

গমের ময়দা দিয়ে শিঙাড়া তৈরি পূর্বেই বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে সকল উপকরণ অপরিবর্তিত রেখে সয়া ডাল ও গমের ময়দা ১২০ গ্রাম করে নিতে হবে। শিঙাড়া তৈরির প্রক্রিয়া একই রকম ।

সয়া জিলাপি :

গমের ময়দা দিয়ে জিলাপি তৈরির প্রক্রিয়ার অনুরূপ এখানে শুধু সয়া ময়দা যোগ করতে হবে। ১ : ১ অনুপাতে সয়া ময়দা গমের ময়দা মিশিয়ে জিলাপি তৈরি করতে হবে।

সয়া রুটি বা পরোটা :

এক ভাগ সয়া ময়দা ও চার ভাগ গমের ময়দা সহযোগে সয়া রুটি ও পরোটা তৈরি কারা যায় । একটি পাতিলে সয়া ময়দা ও গমের ময়দা মিশিয়ে পরিমাণমতো লবণ ও পানি মাখায়ে রুটি তৈরির খামির তৈরি করতে হয়। এ খামির থেকে সাধারণ রুটি তৈরির মতো বেলে রুটি তৈরি করতে হয়।

 

 

পরোটা জন্য খামির থেকে ছোট বল নিয়ে তাতে চাপ দিয়ে ভিতরে ও বাইরে সমান্য ডালডা মাখিয়ে কয়েকবার ময়দা দিতে হয়। এরপর বেলে রুটি বানাতে হয়। তেল ব্যবহার করে মোটা শীটের মতো বানানো হলে সেটি পরোটা এবং তেল ছাড়া পাতলা করে বানানো হলে সেটি রুটি হয়।

এরপর তা ভেজে নিতে হয়। একই ভাবে সয়ালুচি, সয়া শিঙারা, সয়া পুরি, সয়া নিমকি, সয়া সেমাই ইত্যাদি সয়াখাদ্য স্বাভাবিক নিয়মে তৈরি করা যায়।

আরও দেখুন : 

Exit mobile version