Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ও যত্ন

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ও যত্ন

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা : আমরা প্রতিজন মায়ের গর্ভে ছিলাম। আমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি থেকে বাইরের পরিবেশ সহ্য করার মতো সময় পর্যন্ত মায়ের গর্ভের নিরাপত্তার মধ্যেই বসবাস ছিল। জন্মের এই অত্যাশ্চর্য ও জটিল প্রক্রিয়া গর্ভ ধারণের মাধ্যমেই ঘটে। তাই গর্ভবতী মায়ের সঠিক যত্নআত্তি অত্যন্ত জরুরী। আর যত্নের মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় হল সঠিক পুষ্টি-যুক্ত খাবার। আমরা এই পর্বে গর্ভবতী মায়ের খাবার নিয় বিস্তারিত কথা বলবো।

গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা, ব্যায়াম এবং বিশ্রামের জন্য সঠিক নির্দেশনা সম্পর্কে অবগত থাকা খুবই জরুরি। একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা বজায় রাখলে সেটি শুধু যে সংক্রমণ থেকেই দূরে রাখবে, তা নয়। পাশাপাশি মানসিক দিক দিয়েও প্রফুল্লতা আনবে। গর্ভাবস্থার আগে, গর্ভকালীন সময়ে এবং গর্ভাবস্থার পরবর্তী সময়ে পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা মেনে খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা জীবনের অন্য সব সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। আপনি যদি গর্ভাবস্থার পরিকল্পনা করেন বা গর্ভবতী হন, তাহলে আপনার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু খাদ্য তালিকা নিয়ে আমরা এ প্রবন্ধে আলোকপাত করবো।

আপনি যদি গর্ভবতী হন কিংবা গর্ভধারণের চেষ্টা করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনার একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য গ্রহণ গর্ভের সন্তানের দৈহিক বিকাশ ও গঠনেও সাহায্য করবে। গর্ভাবস্থায় ক্ষুধা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়, তবে এর জন্য আপনার দুজনের খাবারের সমপরিমাণ খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি আপনি যমজ বা একত্রে একাধিক সন্তান ধারণ করে থাকলেও খুব বেশি অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার দরকার নেই।

সাধারণ অবস্থার চেয়ে গর্ভাবস্থায় আনুমানিক ৩০০ ক্যালরির মত বেশি খেলেই যথেষ্ট। তবে এক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সব ধরনের খাবার সুষম পরিমাণে উপস্থিত আছে। একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত এখানে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

Table of Contents

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা ও যত্ন:

 

সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানের প্রধান শর্ত গর্ভবতী মায়ের যথাযথ পরিচর্যা। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় প্রসূতি নারীর খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়া ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তাই পরিবারের সদস্যদের হবু মায়ের সুস্বাস্থ্য এবং সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে পাঁচ মাস থেকে ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য মায়ের খাবারটা হওয়া চাই সুষম। সঙ্গে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পর্যাপ্ত পানি যাতে থাকে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।

যেমন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও পুষ্টি বোর্ড গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের শেষের দুই মাস তাদের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদার সঙ্গে অতিরিক্ত ২০ গ্রাম আমিষ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। এসব আমিষ উৎকৃষ্ট অর্থাৎ প্রাণীজ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি খাবারে যাতে ৫০০ মিলিগ্রাম অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ৫ মিলিগ্রাম লোহাও থাকে। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত দুধ ও বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’–এর অভাবে এ সময় অস্টিওম্যালেসিয়াম নামের অস্থি বা হাড়ের রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া এ সময় আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ গর্ভবতী মায়ের খাদ্যে থাকা উচিত। কারণ আয়োডিন শিশুর বুদ্ধি বা মস্তিষ্কের বর্ধনের জন্য জরুরি। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যেখানে গর্ভস্থ শিশুর ওজন প্রতিদিন বড়জোর ১ গ্রাম করে বৃদ্ধি পায়, সেখানে পাঁচ মাসের পর থেকে প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে ওজন বাড়তে শুরু করে। গর্ভাবস্থার শেষ দুই মাস শিশুর মোট ওজনের অর্ধেক বৃদ্ধি পায়। সে জন্য মায়ের পুষ্টির দিকটা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা:

সকাল আটটা থেকে সাড়ে আটটা—রুটি চারটি অথবা পরোটা দুটি, একটি ডিম ও দুই কাপ সবজি। ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা—২৫০ মিলিগ্রাম দুধ অথবা বাদাম ৬০ গ্রাম, বিস্কুট দুটি অথবা মুড়ি, যেকোনো একটি মৌসুিম ফল। দুপুর—ভাত তিন কাপ (মাঝারি চায়ের কাপে), মাছ বা মাংস দুই টুকরো, সপ্তাহে একদিন সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি, সালাদ ও লেবু, ডাল এক কাপ। বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টা—দুধ ২৫০ মিলিগ্রাম বা স্যুপ অথবা ৬০ গ্রাম বাদাম, বিস্কুট অথবা মুড়ি ৩০ গ্রাম অথবা নুডলস এক কাপ। রাত—ভাত চার কাপ, মাছ বা মাংস অন্তত দুই টুকরো, সপ্তাহে একদিন সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি এবং এক কাপ ডাল।

খাদ্য সম্বন্ধে কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা:

বাড়ির অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন যিনি হবু মাকে বাড়তি খাবার খেতে নিষেধ করেন। তাঁদের ধারণা বাড়তি খাবার খেলে পেটের সন্তান বড় হয়ে যাবে। আর বড় হয়ে গেলে সিজার করতে হবে। ফলে মা অপুষ্টিতে ভোগেন এবং শিশু কম ওজন নিয়ে অপরিণত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এ ছাড়া মাকে কিছু পুষ্টিকর খাবারের বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা দেওয়া হয়।

যেমন মৃগেল মাছ খেলে সন্তানের মৃগী রোগ হয়। বোয়াল মাছ খেলে সন্তানের চোয়াল অনেক বড় হয়। শিং বা শোল মাছ খেলে সন্তানের দেহ সর্পাকৃতির হয়। শসাজাতীয় কোেনা সবজি খেতে দেওয়া হয় না, বলা হয়—সন্তানের দেহের চামড়া ফাটা ফাটা হবে। কলা খেলে ঠান্ডা লাগবে।চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণের সময়সারা দিন মাকে না খাইয়ে রাখা হয়। ইত্যাদি অগণিত ভ্রান্ত ধারণা আছে—যা শুধু ভ্রান্তই। তা হবু মায়ের অপুষ্টিরও একটি কারণ।

 

 

মাস অনুযায়ী খাদ্য তালিকা:

১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা:

গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে গর্ভবতী মা যে খাবার খান, তা গর্ভের অনাগত সন্তানের বেড়ে ওঠাকে সরাসরিভাবে প্রভাবিত করে থাকে। গর্ভাবস্থার উপসর্গগুলো গর্ভাবস্থার আড়াই সপ্তাহ পরেই লক্ষনীয় হয়ে ওঠে। নিচে উল্লেখিত এক মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা অনুসরণ করা যেতে পারে।

১. দুগ্ধজাত পণ্য:

দুগ্ধজাত পণ্য, বিশেষ করে ফোর্টিফাইড দ্রব্যাদি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফলিক এসিডের একটি দুর্দান্ত উৎস। ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় দুধ ও টকদই যোগ করা যেতে পারে।

২. ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার:

ভ্রুণের প্রাথমিক বিকাশের সময়, ফলিক এসিড নিউরাল টিউব গঠনে সাহায্য করে। ফলিক এসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিশুর মস্তিষ্ক (এনেনসেফালি) এবং মেরুদন্ডের (স্পাইনা বিফিডা) কিছু বড় জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনি ফোলিক এসিড সম্পূরক ( সাপ্লিমেন্ট) গ্রহণ করলেও আপনার খাদ্যতালিকায় ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার যোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরণের খাবারের উদাহরণ হলো টকজাতীয় বা সাইট্রাস ফল, মটরশুঁটি, মটর, মসুর ডাল, চাল এবং ফোর্টিফাইড সিরিয়াল জাতীয় খাবার।

৩. হোল গ্রেইন বা গোটা শস্য জাতীয় খাবার:

গোটা শস্য জাতীয় খাবারগুলো কার্বোহাইড্রেট, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের স্বাস্থ্যকর উৎস। গর্ভের শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য এগুলো অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। হোল গ্রেইনের উদাহরণ হলো যব, বাদামী চাল, বাজরা, ওটমিল ইত্যাদি।

৪. ডিম ও মুরগি:

ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি২, বি৬, বি১২, ডি, ই, কে এবং ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও জিংক রয়েছে। হাঁস মুরগি প্রোটিনের চমৎকার উৎস। পাশাপাশি ভিটামিন বি, জিংক ও আয়রন ও থাকে। ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ডিম ও মুরগী অবশ্যই রাখা উচিত।

৫. মাছ:

মাছে কম চর্বিযুক্ত এবং উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে। এটি ওমেগা – ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি২, ডি, ই এবং পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাসের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের একটি সহজলভ্য ও উৎকৃষ্ট উৎস।

৬. শাকসবজি:

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ব্রোকলি, পালংশাক, গাজর, কুমড়া, মিষ্টি আলু, টমেটো, ভুট্টা, বেগুন, বাঁধাকপি রাখা যেতে পারে।

৭. বাদাম ও বীজ:

বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারে আছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ফ্লাভোনয়েড এবং ডায়েটারি ফাইবার। নিশ্চিত করুন যে, গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকায় এই পুষ্টিকর খাবারগুলো উপস্থিত আছে।

৮. কড লিভার ওয়েল:

কড লিভার ওয়েল ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যা ভ্রূনের মস্তিষ্ক এবং চোখের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এতে ভিটামিন ডি ও থাকে, যা প্রিক্ল্যাম্পশিয়া প্রতিরোধে সহায়ক।

৯. আয়োডিনযুক্ত লবণ:

গর্ভাবস্থায় শুধুমাত্র আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করুন। আয়োডিন গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে আপনার শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। হরমোনগত কারণে আপনার স্বাভাবিক মেজাজের পরিবর্তন, ক্লান্তি এবং সকালে সাময়িক অসুস্থবোধ হতে পারে। নিয়মিত বিরতিতে স্বাস্থ্যকর খাবার খান, প্রচুর পানি পান করুন, হালকা ব্যায়াম করুন এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকুন।

 

 

২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা:

২ মাসের গর্ভবতী মা সকালের অসুস্থতা এবং বমি বমি ভাবের কারণে অস্বস্তিবোধ করতে পারেন। এই পর্যায়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সহায়তা করে। এই সময়ে ভ্রূণের নিউরাল টিউব বিকশিত হয়, যা পরে মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতে বিকশিত হয়। ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় যা যা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে তা নিচে দেওয়া হলোঃ

১. ফলিক এসিড:

প্রথম ত্রৈমাসিকে ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার অনাগত শিশুকে নিউরাল টিউবের ত্রুটি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। সবুজ শাকসবজি, ডিম, আখরোট, মসুর ডাল ইত্যাদি হলো গর্ভবতী মায়ের জন্য ফলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পূরক।

২. আয়রন:

২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় আয়রন একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। এই পর্যায়ে একজন গর্ভবতী মায়ের শক্তিশালী রক্ত প্রবাহের প্রয়োজন হয়। ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় পালংশাক, মেথি, বিটরুট, মুরগি, ডিম ইত্যাদি যোগ করুন।

৩. ক্যালসিয়াম:

২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যোগ করা অতীব গুরুত্ববহ। এই পর্যায়ে যদি শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম এর সরবরাহ না হয়, তাহলে গর্ভবতী মায়ের অস্টিওপোরোসিস হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শালগম, বাধাঁকপি, শাকসবজি ক্যালসিয়াম এর চমৎকার উৎস।

৪. প্রোটিন

গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই প্রোটিন অপরিহার্য। ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় মুরগি, ডিম, দুধ, মাছ, মসুর ডাল থাকলে তা প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহ করবে।

৫. জিংক

অ্যাসিড বিপাক এবং জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য জিংক এর প্রয়োজন। মুরগি, মাছ, শাকসবজি, মটরশুঁটি সবই জিংকের সমৃদ্ধ উৎস। নিশ্চিত করুন যে, ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় এগুলো অন্তর্ভুক্ত আছে।

৬. চর্বি

ঘি এবং সরিষার তেলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি ভ্রূণের চোখ, মস্তিষ্ক, প্লাসেন্টা ও টিস্যু গঠনে সাহায্য করে।

৭. ফাইবার

ফাইবার জাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গাজর, বাঁধাকপি, সিরিয়াল, কলা, কমলা প্রভৃতি ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় যোগ করলে তা রক্তচাপ বজায় রাখতে এবং গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।

 

 

৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা:

গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাস (৯ থেকে ১২ সপ্তাহ) মায়ের জন্য একটি কঠিন সময় হতে পারে কারণ এই সময়ে সকালের অসুস্থতা, ক্লান্তি এবং মেজাজের পরিবর্তন বা মুড সুয়িং অত্যন্ত বেড়ে যায়। এই সময়েই সবচেয়ে বেশি গর্ভপাতের খবর পাওয়া যায়। তাই এই সময়ে মায়ের মানসিক চাপমুক্ত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় এমন সব খাবার রাখতে হবে যা ভ্রুণের সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করবে।

১. ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ খাবার:

ভিটামিন বি-৬ বমিবমি ভাব এবং বমি প্রতিরোধে সহায়তা করে। ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আছে চর্বিহীন মাংস, হাঁস, মুরগি, সাইট্রাস ফল, সয়াবিন, বাদাম, বীজ ও অ্যাভোকাডো।

২. ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার:

শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের সঠিক বিকাশের জন্য ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় অবশ্যই ফোলেট সমৃদ্ধ খাবারের প্রাকৃতিক উৎস যোগ করতে হবে।

৩. ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার:

সয়াবিন, ক্যানোলা তেল, আখরোট, চিয়া বীজ, ফ্লাক্স বীজ ইত্যাদি।

৪. টাটকা ফল:

ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য। ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় অ্যাভোকাডো, ডালিম, কলা, পেয়ারা, কমলা, আপেল, স্ট্রবেরি রাখতে পারেন।

৫. শাকসবজি:

৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ভিন্ন রং এর সবজি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে গর্ভবতী মা বিস্তৃত পরিসরে পুষ্টি উপাদানগুলো পান। পালংক শাক, ব্রোকলি, মিষ্টি আলু, টমেটো, গাজর, কুমড়া, ভুট্টা, বেগুন, বাঁধাকপি ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় রাখা যেতে পারে।

৬. কার্বোহাইড্রেট:

কার্বোহাইড্রেট শরীরের জন্য শক্তি যোগায়। জটিল কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় গোটা শস্যে। আলু ও মিষ্টি আলুতে স্টার্চ থাকে, যা গর্ভবতী মায়ের শরীরের জন্য ভালো।

৭. প্রোটিন:

ভ্রুণের সঠিক বিকাশের জন্য গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে।

৮. দুগ্ধজাত পণ্য:

শক্তিশালী হাড় গঠনে ক্যালসিয়াম কাজ করে থাকে, যা দুগ্ধজাত পণ্যে ভরপুর থাকে। ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় দুধ, দই, পনিরের মতো খাবারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

৯. ভিটামিন ডি:

ভিটামিন ডি ইমিউন সিস্টেমের বিকাশ, সুস্থ হাঁত ও হাড়ের বিকাশ এবং শিশুর স্বাভাবিক কোষ বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার হলো চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, কড লিভার ওয়েল ইত্যাদি।

 

 

৫ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা

গর্ভধারণের পঞ্চম মাসে (১৭ থেকে ২০ সপ্তাহ), আপনাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৪৭ অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে এবং প্রায় এক বা দুই পাউন্ড ওজন বাড়াতে হবে। এই ক্যালোরি প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার থেকে আসা উচিত।

৫ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় যেসব খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে-

১. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।

৫ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় ডাল, সিরিয়াল, বীজ, বাদাম, ছোলা, পনির, টোফু ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার থাকা বাঞ্ছনীয়।

২. গোটা শস্য বা হোল গ্রেইন

গোটা শস্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে।

৩. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

৪. উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

৫. সালাদ

৬. ফল ইত্যাদি

 

 

৭ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা:

গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে আপনার শরীর ও আপনার গর্ভের শিশু নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। আপনার গর্ভাবস্থা যাতে ঠিকভাবে অগ্রসর হয়, তা নিশ্চিত করতে আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অন্তত অতিরিক্ত ৪৫০ ক্যালরির সুপারিশ করে থাকেন। তবে আপনাকে অবশ্যই পরিমিতভাবে খেতে হবে। অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ৭ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় নিচে উল্লেখিত খাবার থাকা জরুরিঃ

১. আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

২. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

৩. ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

৪. ডি এইচ এ সমৃদ্ধ খাবার

ডি এইচ এ এক ধরণের ফ্যাটি এসিড, যা গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। মাছের তেল, চর্বিযুক্ত মাছ, আখরোট, ফ্লাক্স বীজে ডি এইচ এ থাকে।

৫. ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার

৬. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

৭. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ইত্যাদি

 

গর্ভবতী মা, Pregnant Mother

 

৯ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা:

গর্ভাবস্থার নবম মাসে আপনার যতটা সম্ভব বিশ্রাম করা উচিত। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আপনার খাদ্য ও জীবনধারা আপনার ও আপনার শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। নবম মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মতো স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। ৯ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় যা যা থাকা প্রয়োজনঃ

১. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:

২. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:

৩. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার:

৪. ভিটাসিন সি সমৃদ্ধ খাবার:

৫. ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার:

৬. ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার:

সুষম খাদ্য গর্ভাবস্থার সাধারণ উপসর্গ গুলো দূর করে। পাশাপাশি ভ্রূণের সঠিক বিকাশও নিশ্চিত করে। ৯ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় স্ট্রবেরি ও কমলার মতো তাজা ফল, টাটকা সবজি যেমন টমেটো, ফুলকপি, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, গাজর, গোটা শস্য, মসুর ডাল, দুগ্ধজাত পণ্য যেমন পনির, দই, ডিম, মুরগি, মাছ, পালংক শাক, বাদাম, কিশমিশ প্রভৃতি থাকা প্রয়োজন।

 

আরও পড়ুন:

Exit mobile version