Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

সয়া খাদ্যের পরিচিতি ও শ্রেণিবিন্যাস

সয়া খাদ্যের পরিচিতি ও শ্রেণিবিন্যাস

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সয়া খাদ্যের পরিচিতি ও শ্রেণিবিন্যাস

সয়া খাদ্যের পরিচিতি ও শ্রেণিবিন্যাস

ভূমিকা :

সয়াবিন বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি তৈলবীজ ফসল। এটি লিগুমিনেসি গোত্রের প্যাপিলিয়নেসি উপগোত্রের অন্তর্ভুক্ত ফসল। এর বীজ থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্যতেল ও প্রোটিন পাওয়া যায়। সয়াবিনের খৈল প্রোটিন সমৃদ্ধ। গবাদি পশু, মাছ এবং পোল্ট্রি ফিড হিসেবে সয়াবিন বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

সয়াবিন বীজে ৪২-৪৫% প্রোটিন এবং ২০-২২% তেলে থাকে। এই তেলে শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যেমন- অলিক এসিড ও লিনোলিক এসিড উচ্চ মাত্রায় থাকে। ক্ষতিকর লিনোলেনিক এসিড থাকে মাত্র ৯%। সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ অন্যান্য ডালের তুলনায় দ্বিগুণ, গমের চেয়ে চারখন ও দুধের চেয়ে বারোগুন বেশি।

সয়াবিনের তেল নিষ্কাশনের পর খৈল (Oil Cake) গুঁড়া করে ময়লা পাওয়া যায় এতে ৫৫-৬০% আমিষ থাকে। এই আমিষ দিয়ে উন্নত বিশ্ব বিভিন্ন খাদ্য তৈরি করে প্রানিজ আমিষ পরিহার করতে চেষ্টা করছে। ভারতে সরাবিন থেকে নিউট্রিনার্গেট ও নিউট্রেলা (প্রোটিন স্ন্যাক্স) জাতীয় খাদ্য তৈরি করছে। চীনা জনগণের কাছে সয়াবিনের দুধ, পনির, অঙ্কুরিত বীজ, ময়দা, কাচা সয়াবিন বহুল প্রচলিত।

জাপানিসের নিকট সয়াসস, টফু (দই) অধিক পছন্দীয়। ইন্দোনেশিয়দের নিকট সয়াবিনের ফার্মেন্টেড কেক অতি লোভনীয়। তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে কোমল পানীয় মতো সয়াদুধ অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের দারিদ্র্যতা ও অপুষ্টির হাত হতে রক্ষার জন্য এদেশে সয়াবিনের আবাদ বাড়ানো খুবই প্রয়োজন।

এদেশের আবহাওয়া ও মাটি সয়াবিন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বহু খাদ্য ও পুষ্টিগুণের অধিকারী সয়াবিনকে আগামী দিনের বিস্ময়কর খাবার (Wonder Food) বলা হয়ে থাকে।

 

চিত্র সয়াবিনের টি ও সরাবিন গাছ।

সয়া খাদ্যের পরিচিতি ও শ্রেণিবিন্যাস :

সয়া খাদ্য :

সয়াবিনে আমিষ ও তেল অন্যান্য ডাল জাতীয় শস্য থেকে প্রচুর পরিমাণে বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু কম পরিমাণে শ্বেতসার পাওয়া যায় বিধায় এটি বহুমূত্র ও হৃদরোগীরা বেশি খেতে পারে। অন্যান্য ডালের চেয়ে সয়াবিনে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ক্যারোটিন ও আয়রন অত্যন্ত বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

অন্যান্য ডালের সাথে সয়াবিন মিশিয়ে রান্না করলে যে কোনো একক ডালের চেয়ে এর পুষ্টিমান বেড়ে যায়। সয়াবিনের পুষ্টিবিরোধী পদার্থ দূরীকরণের জন্য সয়াবিন অধিক সময় ধরে নিয়মানুযায়ী রান্না করতে হয়। সয়াবিন মেশিনে ভেঙে সহজেই খাদ্যে ব্যবহার করা যায়। সয়াবিন রান্না করার সময় আয়োডাইজড লবণ ব্যবহার করা উচিত। সয়াবিন থেকে প্রস্তুতকৃত খাদ্যগুলো নিম্নরূপ :

সয়াবিনের খাদ্য :

(১) সয়া ময়দা

(২) সয়া ছাতু

(৩) সয়া ময়দা ও আটা মিশ্রিত চাপাতি

(৪) সয়া ডাল

(৫) সয়াবিনের মিশ্রডাল

(৬) সয়াবিনের সবজি বা তরকারি

(৭) সয়া খিচুড়ি

(৮) সয়া তেহারি

সয়াবিনের নাস্তা এবং মিষ্টান্ন :

(১) সয়া ময়দার নাড়ু

(২) সয়া বাদাম বরফি

(৩) জিলাপি

(৪) সয়া বুন্দিয়া

(৫) সয়াবিন বাদামের বিস্কুট

(৬) সয়াবিনের সমুচা

(৭) সয়াবিনের বড়া ও পেঁয়াজু

(৮) সয়া মিশ্র ডালের চাপড়ি।

সয়াবিন খাদের শ্রেণিবিন্যাস :

পূর্বেই বলা হয়েছে সয়াবিন একটি উঁচুমানের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। সয়াবিন দিয়ে নানা রকম পুষ্টিকর খাবার ঘরে ও শিল্প পর্যায়ে তৈরি করা যায়। এই সব পদ্ধতির মধ্যে ৫০টির বেশি খাবার তৈরি করা যায়। নিম্নে সয়াবিন থেকে তৈরি খাদ্যের শ্রেণিবিন্যাস দেখানো হলো। সাধারণত সয়া খাদ্যকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(১) গাজন ছাড়া সয়া খাদ্য (Non fermented)

(২) গাজন প্রক্রিয়াজাত সয়া খাদ্য (fermented)

(৩) সয়া আমিষযুক্ত খাদ্য ও

(৪) সয়া তেলজাত খাদ্য

নিম্নে প্রত্যেক প্রকার খাদ্যের উদাহরণ দেওয়া হলো

গাজন ছাড়া সয়া খাদ্য

(১) কাঁচা সয়াবিন

(২) সয়াদুধ

(৩) অঙ্কুরিত সয়াবিন

(৪) সয়া নাট

 

চিত্ৰ: টফু বা সয়া দৈ

গাজন প্রক্রিয়াজাত সয়া খাদ্য

(১) সয়া সস

(২) মিসো

(৩) টেমপেহ

(৪) টফু বা সয়া দৈ

(৫) সয়া নাগেটস

(৬) নাটো

 

চিত্র: মিসো

সয়া আমিষযুক্ত আধুনিক খাদ্য

(১) সয়া ময়দা, ফ্লেকস

(২) সয়া আমিষ কনসেন্ট্রেট

(৩) টেক্সচারড সয়া আমিষ খাদ্য

 

চিত্র : টেমপেহ

সয়া তেলজাত খাদ্য

(১) সয়া সালাদ তেল এবং রান্নার তেল

(২) সয়া তেলের মার্জারিন

(৩) সয়া তেলের সটের্নিং

(৪) সয়া লেচিথিন ইত্যাদি

সাশ্রয়ী মূল্যে সয়া খাবার সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় যে, গমের ময়দার সাথে সয়া-ময়দা মিশিয়ে তৈরি খাবারের স্বাদ গমের ময়াদার মতোই অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু খাবারে পুষ্টিমান বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া বেসন হিসেবেও সয়া-ময়দা ব্যবহার করা যেতে পারে।

ময়দার বিকল্প হিসেবে নির্দিষ্ট অনুপাতে ব্যবহার করে পুষ্টিকর পাউরুটি, বিভিন্ন প্রকার বিস্কুক, বনরুটি, কেক তৈরি করা হয়। সারনিতে বিভিন্ন সয়া খাদ্যের গঠন পুষ্টি উপাদান দেখানো হলো ।

সারণি : সয়াবিন থেকে প্রস্তুতকৃত সয়া খাদ্যের গঠন উপাদান (গ্রাম/১০০ গ্রাম)

 

উৎস : বাংলাদেশে তেলজাতীয় ফসলের চাষাবাদ-মানিক লাল দাস ২০০৭ ইং

সারণি : সয়াবিন থেকে প্রস্তুতকৃত সয়াখাদ্যের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান (মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম)

 

উৎস : বাংলাদেশে তেল জাতীয় ফসলের চাষাবাদ-মানিক লাল দাস- ২০০৭ ইং

আরও দেখুন : 

Exit mobile version