আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আলু থেকে ঝাল জাতীয় খাদ্য
Table of Contents
আলু থেকে ঝাল জাতীয় খাদ্য
প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়া
আলু এমন এক খাদ্য যা বহুবিধ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে হিমায়িত (Frozen ) অবস্থায় বহুদিন রাখা যায়। প্রক্রিয়াজাত আলু সংরক্ষণ ও পরিবহন খুবই সহজ। নিম্নে প্রক্রিয়াজাতকৃত আলুর খাদ্যের বর্ণনা দেয়া হলো।
আলুর চপ্স (Potato Chips) :
আলু ছিলে পরিষ্কার পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আলু বঁটি বা ছুরি দিয়ে ১.৫ মিমি. পুরু গোল করে কেটে লবণ পনিতে (১ লিটার পানিতে ১ চা চামচ লবণ ১০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। ফুটন্ত সয়াবিন তেলে কাটা আলু ভেজে আলু চিপস তৈরি করা যায়।
শুকনো চিপস বানাতে হলে লবণ পানি থেকে আলুর টুকরোগুলো পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। পরিষ্কার পাতলা কাপড় বা মশারির নেটের উপর রেখে কড়া রেদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর বায়ুরোধী টিন বা পলিব্যাগে ভরে ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। খাওয়ার সময় তেলে ভেজে লবণ ছিটিয়ে নিতে হবে।c
ফেঞ্চ ফ্রাই (French Fry) :
আলুর প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে ফেঞ্চ ফ্রাই-এর ব্যবহার সর্বাধিক। প্রথমে বড় ও লম্বা আলু ছিলে পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। খোসা ছাড়ানো আলু ৫-১০ সেমি লম্বা ফালি করে কেটে নিয়ে লবণ, মরিচ বাটা ও গোল মরিচের গুঁড়ো মাখিয়ে ৫-১০ মি. রেখে দিতে হবে। অনেক সময় ফালি সোজা না করে খাঁজ কাটা অবস্থায় কাটা হয়।
অতঃপর এ ফালিগুলো ফুটন্ত জ্বালে ডুবো তেলে ভাজা হয়। তেল ঝরিয়ে মাংস সহযোগে পরিবেশন করলে উপাদেয় হয়। ১০০ কেজি আলু থেকে ৫০-৭৫ কেজি ফ্রাই তৈরি হয়। হিমায়িত অবস্থায় এই ফ্রাই বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়।
চিত্র : ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও আলুর চিপস
আলু ভাজি :
আলু চিকন ফালি করে কেটে ধনে, হলুদ, জিরা, পেঁয়াজ ইত্যাদি মসলা সহযোগে তেলে ভেজে নিতে হয়। প্রথমে বাটা মসলাসহ আলু তেলে কষিয়ে পানি যোগ করতে হবে। পানির পরিমাণে এমন হবে যেন এটা শুকিয়ে আসার সাথে সাথে আলুও সিদ্ধ হয়ে যায়।
কোনো কোনো সময় আলুর সাথে শিম, বেগুন, করলা ইত্যাদি সবজি মিশানো হয়। আলু ভাজি আমাদের অতি প্রিয় খাদ্য, যা ভাত, রুটি ও পরোটার সাথে খাওয়া যায় ।
আলু ভর্তা :
সিদ্ধ আলু খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ডলে কাই করা হয়। এরপর এর সাথে কাঁচামরিচ বা শুকনো ও পোড়া মরিচ, পেঁয়াজ এবং সরিষার তেল ভালো করে মিশিয়ে সুস্বাদু ভর্তা (Mashed potato) তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে ভর্তা শুধু ভাতের সাথে খাওয়া হয় কিন্তু এটা প্রধান খাবার এবং নাস্তা হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
মাখন, সিদ্ধ কাঁচা মরিচ, গাজরের কুচি ইত্যাদি দিয়ে ভর্তা তৈরি করা যেতে পারে। এতে স্বাদ ও পুষ্টিমান বৃদ্ধি হয়। বিদেশে এরূপ ভর্তা প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হয় এবং দোকানে হিমায়িত বা ফ্রোজেন (Frozen) অবস্থায় পাওয়া যায়।
আলুর দম :
ছোট আলু সিদ্ধ করে মসলা সহযোগে তেলে কষাতে হয়। তারপর সামান্য পানি দিয়ে কিছুক্ষণ পর চুলা থেকে নামালে তা আলুর দম হয়। আলুর দম আসলে আলুর একক নিরামিষ তরকারি ছাড়া কিছুই নয় ।
আলুর চপ :
সিদ্ধ আলু ভালো করে ডলে কাই তৈরি করে তাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ লবণ, রসুন, কাঁচা মরিচের কুঁচি, ধনিয়া বা পুদিনা পাতা, গোল মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি মিশিয়ে নেওয়া হয়। আলাদাভাবে মাংসের কিমা সিদ্ধ করে মসলা দিয়ে তেলে ভেজে নেওয়া হয়। তারপর নির্দিষ্ট আকৃতির চপ তৈরি করে ভিতরে পুর হিসেবে ভাজা কিমা বা সিদ্ধ ডিমের টুকরা ব্যবহার করা যেতে পারে।
আলুর রুটি ও পরোটা :
আটা এবং ময়দার সাথে সিদ্ধ আলুর কাই বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে রুটি ও পরোটা তৈরি করা যেতে পারে। আলুর পরিমাণ শতকরা ৫০ ভাগের বেশি হবে না, অন্যথায় কাই বা মিশ্রণের আঠালোভাব নষ্ট হয়ে রুটি তৈরি হবে না।
আলু-মাংস স্যুপ :
কোনো খাবারের প্রারম্ভে যে তরল বা পানীয় জাতীয় আইটেম খেতে দেয়া হয় তাই স্যুপ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্যুপ ক্ষুধা বৃদ্ধির জন্য দেয়া হয়। প্রথমে মাংস তেলে ভেজে বাদামি করতে হয়। তারপর পানি দিয়ে সিদ্ধ করতে হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত মাংস হাড় থেকে খুলে আসে। এরপর মাংসের পানি ছেঁকে নিয়ে তাতে মাংস ভেঙে মেশাতে হয়।
আলুর টুকরা, গাজর, টমেটো কাটা, লবণ, পেঁয়াজ, বরবটি তেজপাতা, মরিচ সব মিশ্রণের সাথে এক সাথে মিশিয়ে আধা ঘণ্টা জ্বাল দিতে হয়। এরপর তৈরি স্যুপের সাথে ধনে পাতার কুচি দিয়ে ১৫ মিনিট জ্বাল দিয়ে গরম অবস্থায় পরিবেশন করা যায়।
আলুপুরি :
আলুপুরি তৈরিতে ময়দা, সিদ্ধ আলু, আদাবাটা, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ, শুকনা মরিচ ইত্যাদি দিতে হয়। প্রথমে আলু পরিমাণমতো পানি, আদা, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ দিয়ে মৃদু আঁচে সিদ্ধ করতে হয়। আলু সিদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে নেড়ে নামাতে হয়। মরিচ ভেজে গুঁড়া করতে হয়। পেঁয়াজ বেরেস্তা করে গুঁড়া করতে হয়।
আলুর সঙ্গে গুড়া মরিচ, পেঁয়াজ, পুদিনা পাতা ও লবণ মিশাতে হয়। আদার সঙ্গে ২ চামচ লবণ ও ৬ টেবিল চামচ তেল বা ডালডা দিয়ে মাখাতে হয়। আধা কাপ পানি দিয়ে ময়দা মাখাতে হয়। তবে খামির নরম করা যাবে না। ময়দা এবং আলু সমান ভাগ নিতে হয়। এক ভাগ গোল করে মাঝে আলু ভরে মুখ বন্ধ করতে হবে।
পিঁড়িতে হালকা ময়দা ছিটিয়ে পুরির মুখ বন্ধ দিক নিচে রেখে বেলতে হয়। সাবধানে বেলতে হবে যেন আলু বের না হয়। আলুপুরি ডুবো তেলে কম আঁচে মচমচে করে ভাজতে হয়। সস, চাটনি বা আচার দিয়ে পরিবেশন করলে খেতে সুস্বাদু হয়।
আরও দেখুন :