আজকে আমরা আলোচনা করবো পুষ্টিতে লৌহের ভূমিকা : লৌহের প্রাণরাসায়নিক কাজ । যা খাদ্য রসায়নের মৌলিক ধারণা অধ্যায়ের অর্ন্তভুক্ত।
Table of Contents
পুষ্টিতে লৌহের ভূমিকা : লৌহের প্রাণরাসায়নিক কাজ । The Role of Iron In Nutrition Biochemical Functions of Iron
(ক) লৌহের উৎস
লৌহের প্রধান উদ্ভিজ্জ উৎস হলো বাদাম, খেজুর, লাল শাক, কচু শাক,করলা, মুলা, বীট, তরমুজ প্রভৃতি । প্রধান প্রাণিজ উৎস হলো কলিজা বা যকৃত। এছাড়াও রয়েছে ডিম, মাছ ও মাংস ।
(খ) কাজ
১। মানব-রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে লোহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিমোগ্লোবিনের হিম পৌর পরফাইরিন অণু ।
২। লৌহ আমাদের দেহে জারণমূলক কাজে অংশ নেয় এবং খাদ্যকণার জারণে প্রোটোপ্লাজমে অন্তর্ভুক্ত করে।
৩। সাইটোক্রোম, ক্যাটালেজ, পেরন্সিডেল ইত্যাদি উৎসেচক গঠন করতে লোহা অংশগ্রহণ করে। এ সকল উৎসেচক কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিনের কারণ ঘটিয়ে শক্তি মুক্ত। করে।
৪। মাংসপেশিতে থাকা মায়োগ্লোবিন গঠনে লৌহকণা প্রয়োজন। মায়োগ্লোবিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পেশি-সংকোচন ও প্রসারণে অংশ নেয়।
৫। লোহা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয়।
৬। লোহা মস্তিষ্কের গঠন এবং মানসিক ও চেষ্টীয় বিকাশে অংশ নেয়।
৭। ভ্রুণ গঠনে ও মায়ের শরীর রক্ষার্থে লোহা অত্যন্ত প্রয়োজন।
৮। লোহা দেহের অবসন্নতা, দৈহিক দুর্বলতা দূর করে। পরোক্ষে হরমোন উৎপাদন, নিউরোট্রান্সমিটারের কার্য নিয়ন্ত্রণ এবং সিসা, ক্যাডমিয়াম শোষণে বাধা দিয়ে শারীরবৃত্তীয় কাজ চালনা করে।
৯। প্রাণীদেহে হিমোগ্লোবিনের মতই অন্য কয়েকটি শ্বসন-সহায়ক রচক বা শ্বাসক (respiratory pigment) অণুও হিম নামক লৌহ-পরফিরিন যৌগের সাথে ভিন্ন ভিন্ন প্রোটিনের মিলনে সৃষ্ট হয়।
(গ) দেহে লৌহ শোষণ ও এর কৌশল
খাদ্যের লোহা খুব কমই আমাদের শোষিত হয় । কিন্তু লৌহসমৃদ্ধ অজৈব লবণ সহজেই পৌষ্টিক নালিতে শোষিত হয়। প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত লোহার শোষণ হার উদ্ভিজ্জ থেকে প্রাপ্ত লোহার শোষণ হার অপেক্ষা বেশি। পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের উপস্থিতিতে খাদ্যস্থ জৈব লোহা ফেরিক আয়ন মুক্ত করে। এ ফেরিক আয়ন খাদ্যে উপস্থিত ভিটামিন-C, সিস্টিন, গ্লুটাথিওন ইত্যাদি পদার্থের দ্বারা বিজারিত হয়ে ফেরাস আয়ন গঠন করে। ফেরাস আয়ন পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত থেকে সক্রিয় বিশোষণ পদ্ধতিতে শোষিত হয়।
এরূপে প্রয়োজনীয় লোহার 20-30% শোষিত হয়। ক্ষুদ্রাস্ত্র কোষে লৌহ, ফেরোঅক্সিডেজ উৎসেচকের
সাহায্যে জারিত হয় ও অ্যাপোফেরিটিন নামক প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফেরিটিন গঠন করে। কোষে ফেরিটিন পর্যাপ্ত থাকলে লৌহ শোষণ হয় না।
রক্তরসে লোহার ফেরাস আয়ন (Fet”) ফেরো-অক্সিডেজ উৎসেচকের সাহায্যে জারিত হয়ে ফেরিক আ (Fe”) গঠন করে এবং গ্লোবিউল বা অ্যাপোট্রান্সফেরিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ট্রান্সফেরিন রূপে বাহিত হ অস্থিমজ্জায় রক্তরস থেকে ট্রান্সফেরিন ফেরাস আয়নে পরিণত হয়ে রক্তকণিকার জন্য হিমোগ্লোবিন গঠন করে।
(ঘ) অভাবজনিত রোগ
১। লৌহের অভাবজনিত প্রধান লক্ষণ হল রক্তাল্পতা, একে হাইপোক্রোমি রক্তাল্পতা বলে।
২। লৌহের অভাবে শরীর ফ্যাকাশে হয়। এছাড়াও চোখের পাতার ভিতরের দিক, ঠোঁট, জিহ্বা, হাতের তালু ফ্যাকাসে দেখায়।
৩। লৌহের অভাবে শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি ও অবসান আসে এবং খাবারে অরুচি দেখা যায়।
৪। পৌহের অভাবে শ্বেতকণিকার মধ্যে লিম্ফোসাইটের উৎপাদন হ্রাস পায় বে দেহের জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৫। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস পায় বলে বায়ু থেকে অক্সিজেন শরীরে বিভিন্ন অংশে পৌঁছাতে পারে না।
৬। দেহে লৌহের অভাব ঘটলে কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
৭। লৌহঘটিত লবণ দেহে কম থাকলে মানসিক ও চেষ্টীয় বিকাশ ব্যাহত হয় স্নায়ুবিক ক্রিয়ার অস্বাভাবিকতা দেখা যায় ।
৮। ভ্রুণ-বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং অনেক সময় মৃত শিশুর জন্ম হয় ।
আরও দেখুনঃ