গর্ভাবস্থায় কী খাওয়া উচিত আর উচিত না: এটি খুব গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়। আপনি যদি গর্ভবতী হন কিংবা গর্ভধারণের চেষ্টা করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনার একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য গ্রহণ গর্ভের সন্তানের দৈহিক বিকাশ ও গঠনেও সাহায্য করবে। গর্ভাবস্থায় ক্ষুধা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়, তবে এর জন্য আপনার দুজনের খাবারের সমপরিমাণ খাবার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি আপনি যমজ বা একত্রে একাধিক সন্তান ধারণ করে থাকলেও খুব বেশি অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার দরকার নেই।
Table of Contents
গর্ভাবস্থায় কী খাওয়া উচিত আর উচিত না
সাধারণ অবস্থার চেয়ে গর্ভাবস্থায় আনুমানিক ৩০০ ক্যালরির মত বেশি খেলেই যথেষ্ট। তবে এক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে যে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সব ধরনের খাবার সুষম পরিমাণে উপস্থিত আছে। একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত এখানে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় কোন ফল ও সবজি খাওয়া উচিত?
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফল ও নানান ধরনের শাকসবজি থাকা উচিত। কারণ এগুলোতে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, এমনকি আঁশও থাকে। এসময় যত বেশি পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খাওয়া যায় ততই ভালো। এসব উপাদান হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী কিছু সবজি হলো—
- গাজর
- মিষ্টি আলু
- মিষ্টি কুমড়া
- পালং শাক
- টমেটো
- মটরশুঁটি
- ক্যাপসিকাম
এছাড়া এসময় বেশি বেশি রঙিন ফলমূল খাওয়ার পরামর্শও দেয়া হয়। এসব ফলমূলে নানান ভিটামিন, ক্যারোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে থাকে যা গর্ভের শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় রাখা যায় এমন উপকারী কিছু ফলমূল হলো—
- আম
- কলা
- কমলা
- মাল্টা
- জাম্বুরা
- বাঙ্গি
- বাদাম
গর্ভাবস্থায় শর্করা জাতীয় কোন খাবার খাবে?
শর্করা জাতীয় খাবার আমাদের শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস। গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা রাখা যায় এমন কিছু শর্করা জাতীয় খাবার হলো—
- রুটি
- ভাত
- আলু
সকালের নাস্তার সিরিয়াল বা কর্ন ফ্লেকস
- নুডলস
- পাস্তা
- ভুট্টা
- ওটস
এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত শর্করার বদলে পূর্ণ শর্করা, অর্থাৎ বাদামি আটা, বাদামি চাল বা খোসাসহ আলু খেলে অধিক শক্তি, পুষ্টি ও ফাইবার পাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন জাতীয় কোন খাবার খাবে?
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় প্রতিদিন কিছু আমিষ জাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করুন। গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের কিছু উল্লেখযোগ্য উৎস হলো—
- মাছ
- মাংস
- ডিম
- ডাল
- মটর ও অন্যান্য বীনস
- বাদাম
মাংসের মধ্যে চর্বিছাড়া মাংস, চামড়া ছাড়ানো মুরগির মাংস বেছে নিন। এসব রান্না করার সময় বেশি তেল ব্যবহার করবেন না। তবে কলিজা এড়িয়ে চলুন। কলিজায় অত্যধিক পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে তাই কলিজা বেশি খেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে৷।
সপ্তাহে অন্তত দুইদিন মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন। এর মাঝে একদিন সামুদ্রিক মাছ খেতে পারলে ভালো। তবে মাছ, মাংস, ডিম যাই খান না কেন, কোনোটিই যেন কাঁচা বা আধসিদ্ধ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কারণ কাঁচা বা পুরোপুরি সিদ্ধ হয়নি এমন খাবারে অনেক ধরনের জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে, যা খাবারের সাথে আপনার শরীরে গিয়ে আপনার ও গর্ভের শিশুর দেহে রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় দুধ জাতীয় কোন খাবার খাবে?
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় দুধ, দই, পনির ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবার থাকা অত্যন্ত জরুরি। এসব খাবারে ক্যালসিয়ামসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, যা গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যেমন, ক্যালসিয়াম শিশুর দাঁত ও হাঁড় সুগঠিত করতে সহায়তা করে। দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন লো-ফ্যাট বা কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার। যেমন ১% ফ্যাটযুক্ত দুধ, স্কিমড মিল্ক, কম ফ্যাট ও কম চিনিযুক্ত দই, কম ফ্যাটযুক্ত শক্ত পনির ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকায় যে বিশেষ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে
গর্ভধারণের আগে থেকে, অর্থাৎ সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকে শুরু করে গর্ভধারণের পরের প্রথম তিন মাস বা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম করে ফলিক এসিড সেবন করা আবশ্যক। ফলিক এসিড গর্ভের সন্তানের বৃদ্ধিজনিত নানান সমস্যার ঝুঁকি কমায়। বিশেষত এটি ‘স্পাইনা বিফিডা’ নামক মেরুদণ্ডের গঠনজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমায়। গর্ভধারণের আগে যদি আপনি ফলিক এসিড সেবন না করে থাকেন, সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথেই ফলিক এসিড সেবন করা শুরু করুন।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না?
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকার নিচের খাবারগুলো রাখা থেকে বিরত থাকুন—
- গরু, ছাগল কিংবা ভেড়ার অপাস্তুরিত দুধ
- অপাস্তুরিত দুধ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার
- কাঁচা বা পর্যাপ্ত রান্না হয়নি এমন মাংস
- কলিজা ও কলিজা দিয়ে তৈরি খাবার
- কাঁচা বা আধসিদ্ধ সামুদ্রিক মাছ বা তা দিয়ে তৈরি খাবার (যেমন, সুশি)
- কাঁচা বা আধসিদ্ধ ডিম (সাদা ও হলুদ উভয় অংশ)
- ভালোভাবে রান্না না করে ফ্রোজেন বা প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন, সসেজ, সালামি, পেপারনি)
- এছাড়া কারো যদি মদ পান বা মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় (যেমন, চা, কফি, কোলা) খাওয়ার অভ্যাস থাকে, সেটিও বাদ দিতে হবে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত দিনে ২০০ মিলিগ্রাম এর বেশি ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় বা খাবার খেতে মানা করা হয়।
গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তৈরির সময় বিবেচ্য বিষয়সমূহ
- রান্নায় ব্যবহার কিংবা খাওয়ার আগে ফল, শাকসবজি ভালোমতো পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। মাটির কণা লেগে থাকলে সেটির মাধ্যমে নানা ধরনের জীবাণু সংক্রামণের ঝুঁকি থাকে।
- কাঁচা খাবার (যেমন, মাছ, মাংস, ডিম, শেলফিশ, কাঁচা সবজি) রান্নার পর অবশ্যই প্লেট, থালাবাসন, রান্নার পাত্রসহ হাত ভালো মত ধুয়ে নিবেন।
- কাঁচা মাংস কাটার জন্য আলাদা ছুরি ও কাটার বোর্ড ব্যবহার করুন।
- কাঁচা ও রান্না করা খাবার ফ্রিজে আলাদা করে, ভালোভাবে সংরক্ষণ করুন।
- বাইরে থেকে আনা খাবার কিংবা তৈরি করা খাবার ফ্রিজ থেকে বের করে ঠিকমত গরম না করে কখনো খাওয়া উচিত না।
আরও পড়ুন: