Site icon Food & Culinary Arts Gurukul [ খাদ্য ও রন্ধনশিল্প গুরুকুল ] GOLN

আখ থেকে রস ও গুড় তৈরি অনুশীলন

আগ থেকে রস ও গুড় তৈরি অনুশীলন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় আখ থেকে রস ও গুড় তৈরি অনুশীলন। আখ বা ইক্ষুর বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum officinarum। আখ পোয়াসি পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। আখের রস থেকে চিনি ও গুড় তৈরি করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে আখের চাষ করা হয়। আখ শব্দটি এসেছে “ইক্ষু” শব্দ থেকে। আখের জাতের সাথে বাঁশ ও ঘাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে যে প্রজাতির আখ চাষ হয়, তার বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum officinarum।

আখ থেকে রস ও গুড় তৈরি অনুশীলন

প্রাসঙ্গিক তথ্য :

পানির অপর নাম জীবন। তাই খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান হচ্ছে পানি। তবে সব সময় শুধু পানি খেতে হবে তাই নয়। পানীয় হিসেবে অনেক ধরনের খাদ্য রয়েছে। যেমন- ফল ও সবজি, ডাব, তরমুজ, আখ, লাউ ইত্যাদি শাক সবজিও পানির বড় উদ্দস। এর মধ্যে আখের রস পানীয় হিসেবে খুবই উৎকৃষ্ট।

শরীরের রোগ নিরাময়ে এর গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে জন্ডিস রোগে আখের রস খুব উপকারে আসে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমরা চাকচিক্যময় বিজ্ঞাপনের কারণে

 

চিত্র : আখের রস নিষ্কাশন

কৃত্রিম ভুলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি। কিন্তু এর চাইতে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ঘরের বানানো লেবুর শরবত, স্কোয়াশ, ডাবের পানি, আখের শরবত-এর তুলনা নেই।

উপকরণ :

১. বাছাইকৃত পরিপুষ্ট রোগমুক্ত আখ। ৪. রস সংগ্রহের পরিষ্কার পাত্র।

২. পরিষ্কার ছাঁকনি।

৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মাড়াই যন্ত্র ।

৫. পরিষ্কার গ্লাস।

 

আরেক রস নিষ্কাশন ও পরিবেশনে নিম্নের যাপগুলো অনুসরণ করতে হবে :

১. পরিপুষ্ট সতেজ ও রোগ ও ত্রুটিমুক্ত আখ বাছাই করে নিতে হবে।

২. আখ সংগ্রহ করার পরপরই মাড়াই করার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা আখ রোদে ফেলে রাখলে বা দেরিতে মাড়াই করলে রসের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

৩. আখ ভালো করে পরিষ্কার করে ছিলে নিতে হবে।

৪. ছিলা আখ নিষ্কাশন যন্ত্রেও দুই চলন্ত রোলারের মাঝ দিয়ে প্রবেশ করালে আখ থেকে রস বের হতে নিচে পড়বে। নিচে একটি টিনের প্লেট এমনভাবে বসানো থাকে যাতে সব রস মণের মধ্যে জমে সংগৃহীত হবে।

৫. মাড়াই করার পর রস সংগ্রহ করে পরিষ্কার ছাঁকনি নিয়ে হেঁকে তাড়াতাড়ি পরিবেশন করতে হবে।

 

সতর্কতা:

১. রস হিসেবে খাওয়া আখ পরিপুষ্ট ও নির্দোষ হতে হবে।

২. আখ কাটার পর রোদে ফেলে রাখা যাবে না।

৩. আখের রস বেশি দেরি করে পরিবেশন করলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় ।

৪. আখের রস পরম স্থানে রাখলে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।

 

আখের গুড় তৈরি প্রাসঙ্গিক তথ্য :

আখ হতে চিনি ও গুড় হয়ে থাকে। গ্রামের কৃষকেরা নিজেরাই আখ থেকে অতি সহজেই গুড় তৈরি করে থাকে। চিনি মিলে তৈরি হয়। পুষ্টিমানের দিক দিয়ে গুড় চিনি হতে উন্নত কারণ গুড়ে ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ক্যারোটিন অত্যন্ত বেশি যা চিনিতে নেই বললেই চলে। তবে চিনিতে ক্যালরির পরিমাণ গুড় থেকে অনেক বেশি যা আমাদের প্রতিনিয়ত শরীরের জয়পুরণের জন্য খুবই প্রয়োজন।

উপকরণ :

১. সতেজ ও পুরিপুষ্ট আখ।

২. রস পরিষ্কারক (উদ্ভিজ্জাত বা রাসায়নিক)

৩. রস নিষ্কাশন যন্ত্র।

৪. কড়াই

৫. গুড় তৈরির উপযোগী চুলা।

৬. ঘনীভূত সিরাপ যার হাতা।

৭. সিরাপ খবার উপযোগী মাটির পাত্র বা ভাওয়া।

৮. গুড় ঢালার কাঠের পাত্র বা মাটিতে গর্তে তৈরি করা ফর্মা বা ছাঁচ।

 

চিত্র : প্রপ্তকৃত গুড়ের ব্লক

 

আখ থাকে গুড় তৈরির জন্য নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করলে হবে :

১. প্রথমে মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে সতেজ ও পরিপুষ্ট আখ মাড়াই করে রস বের করে নিতে হবে।

২. কাপড়ের সাহায্যে রস ছেঁকে নিলে বাহ্যিক ময়লা পরিষ্কারক হয়।

৩. ছাকার পর এ রস কড়াইতে নিয়ে জ্বাল দিতে হবে।

৪. রসের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য রসের সাথে রস পরিষ্কারক মিশাতে হবে।

৫. রস কড়া জ্বালে জ্বাল দিয়ে ঘন সিরাপের ন্যায় করতে হবে। তবে জ্বাল দেওয়ার সময় মাঝে মাঝেই রসের ময়লা বা গাদ ছেকে উঠাতে হবে। এর ফলে গুড়ের রং পরিষ্কার হবে।

৬. রস জ্বাল দিয়ে ঘন হতে থাকলে প্রাথমিকভাবে ছোট ছোট ফুট হবে।

৭. রস যখন ঘন সিরাপের ন্যায় হতে থাকবে তখন বড় বড় ফুট হবে।

৮. রস জ্বাল দেয়ার সময় যাতে উতলে পড়তে না পারে সেজন্য কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল ব্যবহার করা যাবে।

৯. রস বা সিরাপ ঘন হয়ে গুড় তৈরির উপযোগী হয়েছে কিনা তা পানিতে ফোঁটা আকারের ঢেলে পরীক্ষা করে নিতে হবে।

১০. এক ফোঁটা সিরাপ যদি পাত্রের পানির মধ্যে ফেলা হয় যদি তা পাত্রের তলায় বসে যায় বা জমে যায় তাহলে বুঝতে হবে সিরাপ গুড় তৈরির উপযোগী হয়েছে।

১১. সিরাপ ঘন হওয়ার সময় বার বার কড়াইতে নাড়াচাড়া করতে হবে। তা না হলে পাত্রের তলদেশে বা গায়ে সিরাপ পুড়ে লেগে যেতে পারে।

১২. সিরাপ গুড় তৈরির উপযোগী হলে নাড়াচাড়া করে প্রায় ঠাণ্ডা করে নির্দিষ্ট টিনে বা মটকায় ঢালতে হয়। তবে অনেক সময় কড়াই হতে অন্য কোন পাত্রে সিরাপ ঢেলে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা করে সংরক্ষণ পাত্রে ঢালা হয়।

১৩. এছাড়া গুড় জমিয়ে আকৃতি দিতে হলে ঘন সিরাপ মাটির পাত্রে বা তাওয়ায় নিতে হয়। কাঠের বা লোহার হাতার সাহায্যে তাওয়ায় মণ্ডের মতো তৈরি হবে। এ মণ্ড সম্পূর্ণ সিরাপের সাথে নেড়ে মিশানো হলে সম্পূর্ণ সিরাপ সহজেই জমাট বাঁধবে।

১৪. মাটিতে গর্ত করে চতুর্ভুজাকার, ত্রিভুজাকার বা গোলাকার গর্ভের তলদেশে ছাই বা তুষ বিছিয়ে দিয়ে তার উপর কাপড় বিছাতে হবে।

১৫. মণ্ড মিশানো ঘন সিরাপ ও কাপড়ের উপর ঢেলে দিয়ে ঠান্ডা করে নিলে গুড় শক্ত হয়ে কাঙ্খিত আকার ধারণ করবে।

 

 

সতর্কতা :

১. রস জ্বাল দেয়ার সময় বারবার গাদ ওঠাতে হয়। তা না হলে গুড়ের রং খারাপ হয় ।

২. রস বা সিরাপ ঘন ঘন নাড়াচাড়া করতে হয়। অন্যথায় সিরাপ পুড়ে পাত্রের গায়ে লেগে যেতে পারে।

৩. সিরাপ খুব গরম থাকা অবস্থায় পাত্রে ঢালা উচিত নয় ।

 

আরও দেখুন : 

Exit mobile version